শুচিবায়ু ছাড়াও অনেক রকম আচ্ছন্ন অবস্থার সঙ্গে আমাদের পরিচয় আছে। এক জন ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ার তাঁর কাগজপত্র ড্রয়ারে ঢুকিয়ে অন্তত পাঁচ মিনিট ধরে তালাটা টানাটানি করে দেখতেন ড্রয়ার ঠিকমতো বন্ধ হয়েছে কি না। তার পর বাইরে বেরিয়ে কিছু দূর গিয়ে আবার ফিরে আসতেন কোনও একটা অছিলায়। দারোয়ানকে দিয়ে বাইরের তালা খুলিয়ে আবার তাঁর ড্রয়ার সুরক্ষিত কি না এটা কয়েক মিনিট ধরে তাঁকে দেখতে হত। ইনিও যে আচ্ছন্ন রোগে ভুগছেন এ কথা নিশ্চয়ই আপনাদের বলে দিতে হবে না। কোনও ব্যক্তি হয়তো কথা বলতে গিয়ে প্রতিটি বাক্য অন্তত পাঁচ-সাত বার উচ্চারণ করেন। বার বার ধমকানি খাওয়া সত্ত্বেও তিন-চার বার আগে বলা কথার পুনরাবৃত্তি করতে থাকেন। প্রায় জোর করে তাঁকে নিবৃত্ত করতে হয়। ইতিহাস ঘাঁটলে হয়তো জানা যাবে প্রতি সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে এই এক কথা বারবার বলার জন্য স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ঝগড়া এবং মারামারি প্রায় প্রতি রাত্রেই ঘটে। তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে বলেন যে তাঁর মনে হয় অন্য লোক তাঁকে অবহেলা করছে, তাঁর কথা মন দিয়ে শুনছে না। তাঁর সন্দেহ শুধু এই ব্যাপারেই নিবদ্ধ নয়। ভাতে ডাল মাখতে মাখতে তাঁর মনে হয় খাচ্ছেন সেটা ভাত ও ডাল নয়, অন্য জিনিস। বারবার এই কথা স্ত্রীকে বলার ফলে তুমুল কাণ্ড ঘটে।
সন্দেহ ও অবিশ্বাস এই ধরনের রোগীর একটি বিশেষ ধর্ম। কিন্তু মনে রাখা দরকার, এই সন্দেহ ও অবিশ্বাসের সঙ্গে প্যারানইয়া রোগীর সন্দেহ ও অবিশ্বাসের বড় রকমের পার্থক্য আছে। অবসেশনের রোগী নিজে জানে যে এই সন্দেহ দুর্বলতা তার স্বভাবধর্ম, সে জানে সে ডাল ভাত খাচ্ছে, সে জানে অন্য লোক একবারেই তার কথা শুনতে পেয়েছে ও বুঝতে পেরেছে। তা সত্ত্বেও সেই একই কথার পুনরাবৃত্তি না করে সে থাকতে পারে না। প্যারানইয়া বা ডিলউশানের রোগীরা কিন্তু কখনও এ রকম মনে করে না। তারা মনে করে তাদের সন্দেহ, অবিশ্বাস পুরোপুরি সত্য এবং এ নিয়ে কোনও বিতর্কের অবকাশ নেই। মস্তিষ্ককোষের বিকারতত্ত্বের দিক থেকে এই দুই ধরনের রোগীর পার্থক্য এই রকম – দু’জনেরই মস্তিষ্কর এক গুচ্ছ কোষ উত্তেজিত অবস্থায় অনড় হয়ে আছে। তার চার পাশে নিস্তেজনা-বলয় সৃষ্টি হয়েছে; অবসেশনের রোগীর এই বলয়ের গভীরতা কম, তাই অন্যের যুক্তিধর্মী কথা সে বুঝতে পারে এবং স্বীকার করে। অপর দিকে প্যারানইয়া রোগীর বলয়ের গভীরতা বেশি। যুক্তিতর্ক সেই বলয় লঙ্ঘন করতে পারে না। তাই তার ভ্রান্তিতে সে অটল ও অবিচল।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/20/2020