এই লেখায় যথাসাধ্য সহজ ভাষায় বড় দরের মনের অসুখ (psychosis) এবং মৃদু ধরনের মনের রোগ (neurosis) সম্পর্কে আলোচনা করেছি। তত্ত্বকথা তুলিনি, কিন্তু মনের রোগ সম্পর্কে যে সব ভুল ও ভ্রান্ত ধারণা শিক্ষিত সাধারণের মধ্যে প্রচলিত আছে সে সম্পর্কে দু-একটি কথা না বললে বোধ হয় আমাদের কী কর্তব্য সেটা ঠিক করতে গিয়ে আমরা রোগীর উপকারের পরিবর্তে হয়তো অপকার করে বসতে পারি।
শিক্ষিত সাধারণ যাঁরা বেশি পড়াশোনা করেন তাঁরা অবশ্যই ভূতপ্রেত বা মারণ উচাটনে বিশ্বাসী নন। তাঁদের মধ্যে কিছু আবার বড় দরের মনের রোগকেও ঠিক রোগ বলে মনে করেন না। এঁরা সংখ্যায় অল্প হলেও এঁদের প্রভাব তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। মার্কিউসপন্থী (মার্কিউস আমেরিকার এক জন রাজনৈতিক নেতা যিনি সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপ্লবে lumpen-proletariat-রা প্রধান ভূমিকা নেবে এই অভিমত প্রচার করেছেন) কিছু মনোরোগ চিকিৎসক দু’টি বা তিনটি আন্তর্জাতিক অতি বামপন্থীদের সমাবেশে এই বক্তব্য বেশ জোরের সঙ্গে পেশ করেছিলেন যে স্কিজোফ্রেনিকরা আসলে রোগগ্রস্ত নয়। তারা আমাদের সমাজের শোষণ ও বঞ্চনার বিরোধী হওয়ায় সমাজের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। তাই পিতামাতা ও সমাজরক্ষকরা এক দল চিকিৎসকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে এক জটিল ব্যাধির লেবেল এদের গায়ে এঁটে দিয়েছেন। তাদের উদ্দেশ্য সমাজবিরোধীদের অ্যাসাইলাম বা ওই রকম কোনও জায়গায় সরিয়ে রাখা এবং এই সমাজের স্থিতাবস্থা বজায় রাখা। এই সব মনোরোগী চিকিৎসক উন্নত দেশের বাসিন্দা, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশেও দু-একটি সংস্থা ঠিক এই ধরনের না হলেও প্রায় এই রকমের মতবাদে খানিকটা বিশ্বাসী। তাদের মতে স্কিজোফ্রেনিয়ার মতো গুরুতর ব্যাধিতেও চিকিৎসা বা ওষুধের কোনও ভূমিকা থাকা উচিত নয়। সুস্থ বলে পরিগণিত লোকদের সঙ্গে সন্ধ্যায় বা রাত্রে মেলামেশা করলেই তথাকথিত রোগগ্রস্তরা নিজেদের ঠিকমতো চালিয়ে নিতে পারে। এদের এই ধারণা আমরা চিকিৎসকরা মেনে নিতে পারি না।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/18/2020