স্কিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করার সুযোগ এখানে নেই। শুধু অমূল প্রত্যক্ষ (hallucination) এবং ভ্রান্তির (delusion) শারীরবৃত্তিক বিকার (pathophysiology) সম্পর্কে দু-একটি কথা বলছি। চিকিত্সকরা শ্রুতিকেন্দ্রিক অমূল প্রত্যক্ষের (auditory hallucination) সঙ্গে বেশি পরিচিত। শুধু স্কিজোফ্রেনিয়া রোগ নয়, অন্যান্য মানিসক রোগেও অমূল প্রত্যক্ষণ ঘটতে পারে। রোগীর আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা এই অমূল প্রত্যক্ষকালীন কথাবার্তাকে অলৌকিক ঘটনা (ভর হওয়া, ভূতে পাওয়া) বলে মনে করেন এবং তার ফলে রোগী হয় নির্যাতিত অথবা দেবতাত্মা বলে সে পূজিত হতে পারে। যখন রোগী হঠাৎ ঘুম ভেঙে উঠে বলতে থাকে ‘তোমার সব কথা আমি মেনে চলব মা, আমাকে তোমার শক্তির এক কণা দিয়ে সাহায্য করো’ তখন তার অধ্যাপক পিতা ভক্তিভরে গদগদ হয়ে কন্যাকে প্রণাম করে বসেন। আবার কোনও স্কিজোফ্রেনিক রোগী যখন নিস্তব্ধ দুপুরে তার জানলা-দরজা বন্ধ করে ঘরের মধ্যে ভয়ার্ত স্বরে ক্রন্দন করতে থাকে এবং বলে ‘শুনছো, তোমরা শুনছো, ও আমার নামে কী সব বদনাম রটাচ্ছে। কাল যে কথাগুলো বর্ধমানের বাজারে বলেছিল, আজ বাস স্ট্যান্ডের ড্রাইভার, কন্ডাকটরদের শুনিয়ে শুনিয়ে সেই কথা বলছে। দরজায় ধাক্কা দিলে কী হবে, আমি কিছুতেই খুলবো না। আমার কথা তুমি বিশ্বাস করছো না? মনে করছো আমাকে ভূতে পেয়েছ বলে ওঝার হাতে তুলে দেবে?’ স্বামী তখন বাইরে থেকে দরজায় ধাক্কা দিচ্ছেন এবং দরজা খোলার জন্য বারবার অনুরোধ জানাচ্ছেন। তাঁর পিছনে দু’ জন গুনিন ও চার-পাঁচ জন প্রতিবেশী। স্ত্রীর ভর হওয়া কাটানোর জন্য তিনি ব্যবস্থা করছেন। মানসিক রোগ সম্পর্কে, বিশেষ করে হ্যালুসিনেশন, ডিলিউশান সম্পর্কে, বাস্তবজ্ঞানের অভাবে এদের রোগ আরও জটিল এবং দুরারোগ্য পর্যায়ে পৌঁছনোর সম্ভাবনা থাকে। ভ্রান্তি বা delusion সম্পর্কে সাধারণের বিশেষ জ্ঞান না থাকারই কথা।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/27/2020