একটি শিশুর মায়ের গর্ভে বেড়ে ওঠার সময় থেকেই তার শারীরিক এবং মানসিক বিকাশকে অপুষ্টি প্রভাবিত করে। মা যদি অপুষ্টিতে ভোগেন তবে শিশু জন্মের সময় শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়। গর্ভধারণ থেকে ২৪ মাস বয়স পর্যন্ত নবজাতকের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময় পুষ্টিকর খাদ্য না খাওয়ার ফলে মা ও শিশু উভয়েই অপুষ্টিতে ভোগে। পুষ্টির (আয়রন, ফলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি ১২) অভাবে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা অস্বাভাবিক ভাবে পড়ে যায় এবং অপুষ্টি জনিত রক্তাল্পতা দেখা দেয়। জন্মের সময় সদ্যোজাতের রক্তে আয়রনের মাত্রা নির্ভর করে সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় মায়ের শরীর সঞ্চিত আয়রনের পরিমাণের উপর। আয়রনের অভাব শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের ক্ষতি করে। কারণ আয়রণন শিশুর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। মস্তিষ্ক হল সদ্যোজাতের সব চেয়ে দ্রুত বিকাশশীল অঙ্গ। তাই এর ক্ষতি অপরিবর্তনীয়। তবে সময়মতো ব্যবস্থা নিলে আয়রনের অভাব প্রতিরোধ করা যায়।
রক্তাল্পতা, আয়রনের অভাব এবং আয়রনের অভাবজনিত রক্তাল্পতা --- শরীরের তিনটি পৃথক অবস্থা হলেও এদের মধ্যে পার্থক্য খুব কম। প্যাথোলজিক্যাল কারণে শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ অস্বাভাবিক ভাবে কমে গেলে তাকে রক্তাল্পতা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। আয়রনের অভাব রক্তাল্পতার একটি সাধারণ কারণ। খাদ্যে অপর্যাপ্ত আয়রন এই অভাব তৈরি করে। মেয়েদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রক্তপাতের কারণে রক্তাল্পতা হতে পারে। রক্তে আয়রনের গুরুতর অভাব তৈরি হলে আয়রনের অভাবজনিত রক্তাল্পতা দেখা দেয়। এ ছাড়া রক্তাল্পতার অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে ফলিক অ্যাসিডের অভাব (ফোলেট), দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ (বিশেষ করে ম্যালেরিয়া) এবং বংশগত হিমোগ্লোবিনোপাথিস।
লাল রক্ত কণিকা তৈরির জন্য আয়রনের প্রয়োজন। অপুষ্টিজনিত কারণে শিশুর শেখা এবং মনে রাখার ক্ষমতা কমে যায়। বাইরের ক্রিয়াকর্ম, বিশেষ করে খেলাধূলা করতে পারে না। এটি তার বুদ্ধিবৃত্তিগত ক্ষমতাকেও ভোঁতা করে দেয়। পুষ্টিগত দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ পাল্টে কিশোরীদের (যারা ভবিষ্যতের মা) মধ্যে এই অবস্থার পরিবর্তন করা যায়।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/4/2020