অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

শিশুর এ্যাজমা

এ্যাজমা একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ। এ রোগে শ্বাসনালীতে বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার ফলে শ্বাসনালী সরু হয়ে যায়। ফুসফুসে স্বাভাবিক বায়ু চলাচলে বাঁধার সৃষ্টি হয়। তখন শিশুকে জোর করে শ্বাস নিতে ও ছাড়তে হয়। সে শ্বাসকষ্ট অনুভব করে।

উপসর্গ

প্রায়শই বুকের ভেতর বাঁশির মতো শো শো শব্দ হওয়া, মাঝে মাঝে শ্বাসকষ্ট হওয়া, প্রায়শই কাশি হওয়া (প্রধানত রাতে) এবং বুকের ভেতর দম আটকানোর অনুভূতি।

কিছু বিশেষ অবস্থায় এ উপসর্গগুলো প্রকাশ পায় বা বৃদ্ধি পায়। যেমন- ধুলাবালি, ধোঁয়া, বিশেষ খাদ্য, পোষা প্রাণীর সংস্পর্শ, কিছু ওষুধ যেমন এ্যাসপিরিন, ব্যায়াম-খেলাধুলা ইত্যাদি। এ্যাজমা আক্রান্ত শিশুর যে কোনো ধরনের এ্যালার্জি, যেমন- কিছু দিন পর পর নাক দিয়ে অনবরত সর্দি পড়া (এ্যালার্জিক রাইনাইটিস) বা এ্যাকজিমার মতো চর্ম রোগ থাকতে পারে। এছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশুর বাবা-মা বা পরিবারের অন্য সদস্যেরও এ্যাজমা বা এ সব রোগ থাকে।

রোগ নির্ণয়

এ রোগটি মূলত শিশুর উপসর্গ, শারীরিক পরীক্ষা ও পারিবারিক রোগের ইতিহাস বিশ্লেষণ করে নির্ণয় করা হয়। বড়দের মতো এ্যাজমা নির্ণয়ের সকল ল্যাবরেটরি পরীক্ষা শিশুদের ক্ষেত্রে করা যায় না।

শারীরিক পরীক্ষা : শিশুর শারীরিক পরীক্ষায় বুকে শ্বাসকষ্টের লক্ষণ দেখা যায়। এছাড়া দীর্ঘ দিন শ্বাসকষ্টে ভোগার কারণে বুকের আকার বিকৃত হয়ে যেতে পারে। এই শিশুর চামড়ায় এ্যালার্জি বা নাকে পানি থাকা খুব স্বাভাবিক।

ল্যাবরেটরি পরীক্ষা : রক্তের সি বি সি পরীক্ষায় এবং শিশুর কফ পরীক্ষায় eosinophil count বেশি থাকতে পারে। বুকের এক্সরে hypertranslucent থাকে। Spirometry এ্যাজমা নিরূপণের জন্য একটি বিশেষ পদ্ধতি যার মাধ্যমে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা সঠিকভাবে পরিমাপ করা হয়। এটি ৫-৬ বছরের বেশি বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। এসব ছাড়াও Bronkodilator (যেমন-সালবিউটামল) ব্যবহার পরবর্তী রোগীর কষ্টের উপশম পর্যবেক্ষণ করেও এই রোগ নির্ণয় করা যায়।

এ্যাজমার প্রকারভেদ

উপসর্গ কত ঘন ঘন হচ্ছে ও শিশুর ফুসফুসের কর্মক্ষমতা কেমন– এ দুটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে এ্যাজমা রোগীকে দুটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা : (১) Intermittent (২) Persistent এ্যাজমা। এর বাইরেও কোন কোন শিশু কেবলমাত্র বিশেষ কিছু পরিস্থিতিতেই এ্যাজমায় আক্রান্ত হয়ে থাকে, যেমন- ব্যায়াম করলে বা এ্যাসপিরিন ওষুধ খেলে। এদেরকে বিশেষ ধরণের (Special variant ) এ্যাজমা বলা হয়।

সকল শ্রেণীভুক্ত এ্যাজমা রোগীর উপসর্গ হঠাৎ করে স্বল্প, মাঝারি বা তীব্রমাত্রায় বেড়ে যেতে পারে। তীব্রমাত্রায় আক্রান্ত শিশু শ্বাসকষ্টের কারণে প্রায় অচেতন হয়ে যায়। এ সময় শিশুর শরীর নীলাভ হয়ে যেতে পারে। শিশুটি কিছু খেতে পারে না বা কথাও বলতে পারে না এবং তার বুকের শ’ শ’ আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়। মাঝারি মাত্রায় আক্রান্ত শিশু অস্থির থাকে, খেতে ও কথা বলতে তার কষ্ট হয় এবং শ্বাস ছাড়ার সময় শ’ শ’ শব্দ হয়। স্বল্প মাত্রায় আক্রান্ত শিশুর শ্বাসকষ্ট থাকলেও খেতে ও কথা বলতে কোনো অসুবিধা হয় না।

চিকিৎসা

স্বল্পমেয়াদী : যে কোনো শ্রেণীভুক্ত এ্যাজমা রোগীর হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া শ্বাসকষ্টের দ্রুত উপশমই স্বল্পমেয়াদী চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য।

স্বল্পমাত্রায় আক্রান্ত শিশুকে সালবিউটামল ইনহেলার (স্পেসারসহ) অথবা মুখে খাওয়ানোর সালবিউটামল সিরাপ দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে।

মাঝারি মাত্রায় আক্রান্ত : শিশুকে কয়েকবার সালবিউটামল ইনহেলার প্রয়োগ করে অথবা নেবুলাইজার মেসিনে সালবিউটামল ও নরমাল স্যালাইন দিয়ে নেবুলাইজ করে চিকিৎসা করতে হবে। এই শিশুকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে এবং মুখে প্রেডনিসোলন ওষুধ খাওয়ানোর প্রয়োজন হতে পারে।

তীব্রমাত্রায় আক্রান্ত : শিশুকে জরুরিভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। তাকে অক্সিজেন দিতে হবে, নেবুলাইজ করতে হবে এবং steroid ইনজেকশন দিতে হবে। এছাড়া অন্যান্য ওষুধেরও প্রয়োজন হতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা : এ্যাজমা আক্রান্ত শিশুকে ৪ ভাগে বিন্যস্ত করে নির্দিষ্ট নিয়মে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে সালবিউটামল ইনহেলার ছাড়াও মনটিলুকাস্ট, ইপ্রাট্রপিয়াম ব্রমাইড, নিডক্রোমিল, স্টেরয়েড এবং সালমেটেরল ইনহেলার ব্যবহার করা হয়।

বিশেষ ধরনের এ্যাজমার চিকিৎসা

ব্যায়ামজনিত এ্যাজমা : যে বিশেষ ব্যায়াম বা খেলার ফলে এ্যাজমার উপসর্গ দেখা দেয় তা পরিবর্তন অথবা পরিহার করতে হবে। ব্যায়াম বা খেলার শুরুতে মুখে সালবিউটামল খেতে হবে অথবা সালবিউটামল বা সালমেটেরল ইনহেলার ব্যবহার করতে হবে।

বিশেষ ঋতুতে এ্যাজমা : শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষাতে শিশুরা এ্যাজমায় আক্রান্ত হলে উক্ত বিশেষ ঋতুতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শিশুকে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা প্রদান করতে হবে।

ওষুধজনিত এ্যাজমা : উপসর্গ সৃষ্টিকারী ওষুধ যেমন এ্যাসপিরিন, বিটা ব্লকার ইত্যাদি পরিহার করতে হবে এবং এসবের কারণে এ্যাজমার প্রকোপ বৃদ্ধি পেলে অধিকমাত্রায় সালবিউটামল ইনহেলার গ্রহণ করতে হবে।

কাশি জাতীয় এ্যাজমা : প্রধানত রাতে অতিরিক্ত কাশি হওয়াই এ ধরনের এ্যাজমার বৈশিষ্ট্য। এক্ষেত্রে থিওফাইলিন, নিডক্রোমিল, সালমেটেরল ইনহেলার বা মুখে প্রেডনিসোলন দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে।

রোগের উন্নতি : নিয়মিত দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা গ্রহণ করলে শিশু উপসর্গ মুক্ত থাকে এবং বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের অনেকেরই আর কোনো কষ্ট থাকে না। তবে এ্যাজমার তীব্রতা বেশি হলে বড় হওয়ার পরেও শিশুর এই রোগ ভাল হয় না।

স্বাস্থ্যবিধি ও রোগ প্রতিরোধ

১। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।

২। শ্বাসকষ্ট উপশমকারী ওষুধ যেমন সালবিউটামল ইনহেলার সব সময় হাতের নাগালে রাখতে হবে, এমনকি স্কুল, খেলার মাঠ বা বাইরে বেড়াতে গেলেও।

৩। তীব্র মাত্রার এ্যাজমায় আক্রান্ত হলে শিশুকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে এবং হাসপাতালে নেয়ার পথেও তাকে সালবিউটামল ইনহেলার বা নেবুলাইজারের মাধ্যমে ওষুধ প্রদান করতে হবে।

ঘন ঘন এ্যাজমার উপসর্গ হতে মুক্ত থাকতে হলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে-

১. বাড়িতে কার্পেট, পোষা প্রাণী, লোমযুক্ত খেলনা পরিহার করতে হবে।
২. বাড়ির পরিবেশ খোলামেলা ও আলো-বাতাস যুক্ত হতে হবে।
৩. শিশুকে সিগারেটের ধোঁয়া, গাড়ির ধোঁয়া বা কাঠ পোড়া ধোঁয়া থেকে দূরে রাখতে হবে।
৪. যদি কোনো খাবারে শিশুর এ্যাজমার উপসর্গ হয় তাহলে তাকে উক্ত খাবার দেয়া যাবে না।
৫. বিটা ব্লকার বা এ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ এ্যাজমা আক্রান্ত শিশুকে দেয়া যাবে না।

যে সব পরিস্থিতিতে এ্যাজমার উপসর্গ বাড়ে বা উপসর্গ দেখা যায়

১। সর্দি জ্বর ২। ধোঁয়া, বিশেষত কাঠের চুলা, সিগারেট ও গাড়ির কালো ধোঁয়া ৩। ধুলাবালি ৪। কার্পেটের ময়লা, মাইট নামক খুদ্রাকায় কীট ও কার্পেটের আঁশ ৫। পোষা প্রাণীর সংস্পর্শ যেমন- কুকুর, বিড়াল, খরগোশ ইত্যাদি ৬। আবদ্ধ ও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ ৭। দ্রুত পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রার পরিবর্তন (যেমন- ২৪ ঘণ্টার ভিতর ৩ ডিগ্রির বেশি পরিবর্তন, হঠাৎ করে এয়ারকন্ডিশন রুম থেকে বাইরে এলে বা বাইরে থেকে এয়ারকন্ডিশন রুমের ভেতরে গেলে) ৮। খেলাধুলা, মানসিক উত্তেজনা, বিশেষ কিছু ওষুধ (যেমন- এ্যাসপিরিন জাতীয় বেদনা নাশক, বিটা ব্লকার জাতীয় ওষুধ), সিনথেটিক পোশাক ইত্যাদি ৯। বিশেষ বিশেষ ঋতু।

সূত্র: বিকাশপিডিয়া টীম

সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate