অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

স্কুলের বয়সে শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও তার রক্ষণাবেক্ষণ

স্কুলের বয়সে শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও তার রক্ষণাবেক্ষণ

যে কোনও বয়সের ব্যক্তিকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সহায়তার ক্ষেত্রে এক জন সুস্থ মানুষের দু’টি লক্ষ্য থাকে, আয়ু বৃদ্ধি এবং জীবনধারার মানোন্নয়ন। এই লক্ষ্য পূরণে যে ব্যবস্থাগুলো সাহায্য করে তা উদ্ভূত হয় দু’টি ধারণা থেকে – স্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণ। এক জন অসুস্থ ব্যক্তির কী পরিচর্যা হবে, সে সম্পর্কে ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান পেশার অনেক ছাত্র পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা জানতে পারেন এক জন ‘সুস্থ’ মানুষেরও যত্নের প্রয়োজন হয়। ‘সুস্থ’ ব্যক্তিটিকে শিখতে হবে সঠিক খাদ্যাভাস কী, কী ভাবে মানসিক চাপ কমানো যায় এবং কী কী প্রতিষেধক নিতে হয়। তাঁরা জানতে চাইতে পারেন, কী করে ঠিকঠাক ব্যায়াম করতে হয় বা তাঁর সন্তানদের জন্য কী ভাবে সুরক্ষিত পরিবেশ সুনিশ্চিত করা যায়।। স্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণের মূল উপাদান হল এই যত্ন ও শিক্ষার দৃষ্টান্ত।

স্বাস্থ্য পরিচর্যা ব্যবস্থাপনা এমন একটি সার্বিক পেশা যা ব্যক্তিবিশেষের জীবনের সমস্ত দিক পরীক্ষা করে ও তা নিয়ে কাজ করে এবং এর পাশাপাশি গোষ্ঠী এবং পরিবারকেও যথাযথ গুরুত্ব দেয়। তাই স্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত কার্যক্রমের ব্যবস্থা করার সময় এ দিকেও দৃষ্টি দেওয়া দরকার। কার্যত পরিবারগুলির সঙ্গে মেলামেশা এই কার্যক্রমের অংশ হওয়া উচিত। শিশুর স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর স্বাস্থ্য পরিচর্যায় যে যে বিষয় প্রভাব ফেলে সেগুলি ভালো করে বোঝা দরকার, যাতে স্বাস্থ্য পরিচর্যার সামগ্রিক কাঠামোর সঙ্গে স্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণকে একীভূত করে দেওয়া যায়। কিছু শিশুর বিশেষ ধরনের স্বাস্থ্য পরিচর্যার প্রয়োজন হয় এবং এই ব্যাপারটিও স্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থায় অঙ্গীভূত করতে হয়।

সাধারণ ধারণা

স্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি বোঝার আগে স্বাস্থ্যের সংজ্ঞা বোঝা দরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী শুধু রোগ এবং জরাকে দূরে রাখা মানেই স্বাস্থ্য নয়। সম্পূর্ণরূপে শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক ভালো থাকাকে স্বাস্থ্যের সংজ্ঞা হিসেবে ধরা হয় (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ১৯৯৬)। স্বাস্থ্যকে দেখা হয়, গতিশীল, পরিবর্তনশীল এবং দৃশ্যমান বিষয় হিসেবে; স্বাস্থ্য হল প্রকৃত ও ভবিষ্যসম্ভাব্য অবস্থার বাস্তবায়ন (পেনডার, মারডাফ ও পারসন্স, ২০০৬)। সমাজ উন্নয়নের জন্য এই মৌলিক মানবাধিকার প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য উন্নয়ন বলতে সেই সমস্ত কার্যক্রমকে বোঝায় যা মানুষকে আরও ভালো রাখে এবং তার সুস্থতা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটায় (পেনডার, মারডাফ ও পারসন্স, ২০০৬)। এই সব কার্যক্রম প্রতিটি ব্যক্তির ইতিবাচক স্বাস্থ্য সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করে, এমনকী যাঁরা দীর্ঘস্থায়ী অসুখে ভুগছেন বা রোগ কঠিন পর্যায়ে রয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রেও। উদাহরণের মধ্যে রয়েছে, নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে তথ্য এবং সম্পদ সরবরাহ:

  • বিকাশের প্রতিটি ধাপে পুষ্টি বৃদ্ধির জন্য
  • শিশুর প্রতি দিনের কাজকর্মে শরীরচর্চাকে রাখার জন্য
  • পর্যাপ্ত আবাসনের ব্যবস্থা করার জন্য
  • মুখের স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য
  • ব্যক্তিত্বের ইতিবাচক বিকাশ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য

জনসাধারণকে সুস্থ রাখা এবং সুস্থ পছন্দ তৈরি করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে এমন একগুচ্ছ কৌশল উদ্ভাবন করা স্বাস্থ্য উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট (বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ২০০১)। স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণ (বা স্বাস্থ্য সুরক্ষা) বলতে সেই সব কর্মকাণ্ডকে বোঝায় যা কোনও ব্যক্তির বর্তমান স্বাস্থ্যাবস্থাকে রক্ষা করে এবং বিভিন্ন অসুখ বা আঘাতের ঘটনা প্রতিরোধ করে। এই কর্মকাণ্ডের উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে শরীরের বিকাশের স্ক্রীনিং বা তার উপর নজরদারি যাতে স্বাভাবিক বৃদ্ধির থেকে গোড়াতেই বিচ্যুতি হলে নজর পড়ে, রোগ প্রতিরোধে জন্য টিকাদান এবং শৈশবের সাধারণ কিছু বিপদ সম্পর্কে শিক্ষাদান।

স্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণের কাজকর্ম পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ট ভাবে জড়িত। এই দু’টি বিষয় কখনও কখনও মিলেও যায়। তা সত্ত্বেও এদের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণ স্বাস্থ্যের পরিচিত সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলোর দিকে নজর দেয় এবং তার প্রতিরোধ করে বা প্রথম অবস্থায় তাকে চিহ্ণিত করে যাতে প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ করা যায়। অন্য দিকে স্বাস্থ্য উন্নয়ন ব্যক্তি, পরিবার এবং জনসংখ্যার লক্ষ্য ও শক্তির দিকে নজর দেয় এবং সুস্থতার উচ্চতর মাত্রায় পৌঁছনোর জন্য সাহায্য করতে এদের কাজে লাগানোর চেষ্টা করে।

স্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত উপাদান

স্কুলগুলিতে শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশে নজরদারি

বৃদ্ধি এবং বিকাশে নজরদারি শিশুর অবস্থা এবং পরিবেশ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র সরবরাহ করে। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রতিটি পরিদর্শনে শিশুর বৃদ্ধি, উচ্চতা, ওজন এবং শরীরে ভর সূচক মাপা উচিত। মা-বাবাদের লিখিত ভাবে এই তথ্য দেওয়া উচিত এবং তাঁদের কাছে বিষয়টি ব্যাখ্যাও করা উচিত। এই ধরনের শারীরিক মূল্যায়ন করা হয় শিশু ঠিকঠাক বাড়ছে কিনা এবং অস্বাভাবিকতা বা অব্যাখ্যাত কোনও শারীরিক সমস্যা আছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে। বিকাশের উপর এই নজরদারি একটি নমনীয়, ধারাবাহিক প্রক্রিয়া এবং তা করা হয় দক্ষ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। এই প্রক্রিয়া শিশুর ক্ষমতা সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে এবং স্নায়ুতাত্ত্বিক সমস্যা থাকলে প্রথম অবস্থায় বুঝতে সাহায্য করে। বাড়ির পরিবেশ উদ্দীপক কিনা সেটাও বুঝতে সাহায্য করে এই প্রক্রিয়া। বিভিন্ন সূত্র থেকে এই তথ্য যোগাড় করা হয় ---মা-বাবাকে পূরণ করতে দেওয়া প্রশ্নাবলীর মাধ্যমে, সাক্ষাৎকারের সময় প্রশ্ন করে এবং পরিদর্শনের সময় শিশুটিকে পর্যবেক্ষণ করে। শিশু বা বয়ঃসন্ধিতে স্বাভাবিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা মা-বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তা জানা যেতে পারে। মা-বাবার সঙ্গে কথা বলার সময় শিশু, বালক-বালিকা, কিশোর-কিশোরীদের বেড়ে ওঠার বিভিন্ন পর্যায়ে তারা শারীরিক, সামাজিক এবং যোগাযোগগত (যেমন কথা বলা শেখা) ধাপগুলি সঠিক ভাবে অতিক্রম করেছে কিনা তা জানা প্রয়োজন।

বিকাশ একটি ভঙ্গুর প্রক্রিয়া, যা সহজাত অবস্থা এবং পরিবেশগত প্রভাব দ্বারা নির্ধারিত হয়। এই বিকাশ কতটা হচ্ছে তা জানার জন্য নিয়মিত এবং সংগঠিত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে শিশুদের উপর নজরদারি প্রয়োজন। দেখা গেছে, প্রায় ১৬ শতাংশ শিশুর বিকাশে কোনও একটা ধরনের বিলম্ব হয় বা অক্ষমতা থাকে (আরলস এবং হে, ২০০৬)।

পুষ্টি

এই ধরনের স্বাস্থ্য পরিদর্শন শিবিরে পুষ্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণ স্বাস্থ্যে এর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে এবং বৃদ্ধি ও বিকাশে মদত দেয়। প্র্তিটি পরিদর্শন শিবিরে তাই পুষ্টির পরিমাপ সংক্রান্ত প্রাসঙ্গিক পর্যবেক্ষণ এবং নজরদারি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বয়স ও কাজের অনুপাতে সঠিক খাদ্যগ্রহণ শিশুর যথাযথ বৃদ্ধি, শারীরিক কার্যকলাপ, বোধশক্তি এবং রোগ প্রতিরোধ সুনিশ্চিত করে। স্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে পুষ্টি গভীর ভাবে জড়িত।

শারীরিক কার্যকলাপ

শারীরিক কাযর্কলাপ শরীর এবং মনের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। যদিও অধিকাংশ শিশুর ক্ষেত্রে শারীরিক কার্যকলাপ সংক্রান্ত পরামর্শ এবং বাস্তবের বৈষম্য ক্রমশ বাড়ছে। ইউথ মিডিয়া ক্যাম্পেন লঙ্গিচুডিনাল সার্ভে (ওয়াইএমসিএলএস) অভিভাবক এবং শিশুদের মধ্যে একটি সমীক্ষা করে। সেই সমীক্ষার ভিত্তিতে সেন্টার ফর ডিসিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশেনর (সিডিসি) গবেষণা বলছে, নয় থেকে তেরো বছর বয়সি শিশুদের মধ্যে ৬৫.৫ শতাংশ স্কুলের সময়ের বাইরে কোনও সংগঠিত শারীরিক কাযর্কলাপে অংশ নেয় না। ব্যায়ামের মতো নিয়মিত কিছু শারীরিক কার্যকলাপের প্রয়োজন থাকলে বহু শিশুই সেই কাযর্কলাপে অংশ নেয় না বা নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে না। এই শিশুদের মধ্যে ২২.৬ শতাংশ জানিয়েছে, স্কুলের বাইরে তারা কোনও ধরনের শারীরিক কাযর্কলাপে যোগ দেয় না।

এর কারণ হিসেবে মা-বাবারা যুক্তি হিসেবে এলাকায় সুযোগসুবিধার অভাব, যাতায়াতের সমস্যা, খরচ, তাদের নিজেদের সময়ের অভাব এবং আশপাশের নিরাপত্তার অভাবের কথা বলেন (সিডিসি ২০০৩)। কিন্তু শিশু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন করুন, টিভি দেখা বা কমপিউটারে গেম খেলার জন্য সে কত ঘণ্টা ব্যয় করে। দেখুন, স্কুলে বা পাড়ায় সে খেলে কিনা। কতটা শারীরিক কাজকর্ম করে বোঝার জন্য জানুন, একটা নির্দিষ্ট দিনে সে কী কাজ করে।

মৌখিক স্বাস্থ্য

মৌখিক স্বাস্থ্য মানেই মনে হতে পারে বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের প্রয়োজন, কিন্তু এর অনেকগুলি দিক সাধারণ স্বাস্থ্য পরিচর্যার সঙ্গে জড়িত। মৌখিক স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কথা বলার ক্ষেত্রে দাঁত সহায়ক ভূমিকা নেয়। আঘাতপ্রাপ্ত বা অসুস্থ দাঁত থেকে নানা অসুখ হতে পারে। তা ছাড়া দাঁত ইতিবাচক ভাবমূর্তি গঠনের পক্ষেও সহায়ক। দাঁতের ক্ষয় বা ব্যথার জন্য শিশুর দৈনন্দিন কার্যক্রম যেমন, খাওয়াদাওয়া, ঘুম, কথা বলা, স্কুলের যাওয়া প্রভাবিত হতে পারে। মুখের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে শিক্ষা দিয়ে এবং দাঁত দেখানোর সুযোগ করে দিয়ে দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নয়ন করা উচিত। স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রমের মধ্যে পড়ে দাঁতের ক্ষয় রোধ এবং দাঁতের অসুস্থতা প্রতিরোধ করা।

চোখ এবং দৃষ্টিশক্তি

শিশুদের চক্ষু পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়নি এমন শিশুর ৫ থেকে ১০ শতাংশ এবং স্কুলপড়ুয়া শিশুর ২৫ শতাংশের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা রয়েছে। প্রথম অবস্থায় এই সমস্যাকে ধরা জরুরি কারণ কম বয়সে সমস্যা ধরা পড়লে চিকিৎসায় অনেক বেশি সাড়া মেলে। ৬ মাস বয়সে শিশুর প্রথম সামগ্রিক চক্ষু পরীক্ষা হওয়া উচিত। তার পর তিন বছর বয়সে এবং ৫ বা ৬ বছর বয়সে প্রথম শ্রেণিতে ঢোকার আগে চক্ষু পরীক্ষা করাতে হবে। যদি কোনও সমস্যা না থাকে তবে প্রতি দু’বছর অন্তর চক্ষু পরীক্ষা করানো দরকার। যে সব শিশু চশমা বা কন্টাক্ট লেন্সের প্রয়োজন রয়েছে তাদের প্রতি এক বছর অন্তর অথবা চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ মতো পরীক্ষা করাতে হবে।

মানসিক এবং আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণ শিবিরে মানসিক এবং আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিশুর মা-বাবাকে এই পরিদর্শন শিবিরে আনার জন্য একটি মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত রেকর্ড রাখার উৎসাহ দেওয়া যেতে পারে। এর ফলে তাঁরা বুঝতে পারবেন মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সাহায্য করতে পেশাদার চিকিৎসক তাঁদের শরিক হতে ইচ্ছুক। লক্ষ্য রাখার বিষয়গুলির মধ্যে থাকবে, মা-বাবা ও শিশুর মেজাজ, শিশুর মনোভাব, মানসিক চাপ ও কী ভাবে পরিবারের সদস্যরা এই চাপ নিয়ন্ত্রণ করেন এবং ঘুমের ধরন। বিষণ্ণতা, মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং শিশু নির্যাতন/অবহেলার সামান্যতম ইঙ্গিত দেখলেই সতর্ক থাকুন। শিশু ও তার পরিবারের মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্য নির্দিষ্ট হওয়া উচিত। পারিবারিক চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করার মতো যথেষ্ট সম্পদ, সমস্যার সঙ্গে লড়াই করতে পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং পাড়া-প্রতিবেশীকে জড়িয়ে নেওয়া ইত্যাদি স্বাস্থ্য উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত। মানসিক চাপ কমানোর বিভিন্ন কৌশল শেখানো, যেমন, ধ্যান, মনের ভাব আলগা করা (রিলাক্সসেশন), চিত্রকল্প ইত্যাদি এবং যোগ ও অন্যান্য পদ্ধতি শেখানোর জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ সরবরাহ গোটা বিষয়টায় সহায়ক হয়। স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্য হল, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার প্রতিরোধ।

আধ্যাত্মিকতা আত্মশক্তিকে অনুভব করতে সাহায্য করে এবং অনুপ্রেরণা, শ্রদ্ধা এবং জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের জন্য সংগ্রামরত মানুষকে পথ দেখায় (মারে, জেনটনার, পাঙ্গম্যান এবং পাঙ্গম্যান ২০০৫)। আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যকে বৃহৎ প্রক্ষাপটে দেখা হয়, যার সত্ত্বাগুলি জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলে।

রোগ প্রতিরোধের কৌশল

রোগ প্রতিরোধ কৌশলগুলি মূলত জোর দেয় স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণ বা রোগের প্রতিরোধে । কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা শুরুতেই ধরা যায় এবং চিকিৎসাও শুরু করা যায়। লক্ষণগুলি স্পষ্ট হওয়ার আগে নজরদারির মাধ্যমে অবস্থা বোঝা যায়। একটি নির্দিষ্ট সমস্যার ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়েছে এমন বড় জনগোষ্ঠীর উপর এই নজরদারি চালানো হয় এবং একে প্রতিরোধের অপ্রধান পর্যায় হিসাবে ধরা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শরীরের বিকাশ সংক্রান্ত নজরদারি, রক্তচাপ পরীক্ষা, চোখ এবং কানের পরীক্ষা। নজরদারির অধিকাংশ পরীক্ষাকে রোগনির্ণয় সংক্রান্ত পরীক্ষা বলা যায় না। কিন্তু নজরদারি পরীক্ষা যদি পজিটিভ হয় তবে রোগনির্ণয় সংক্রান্ত আরও পরীক্ষা করতে হয়। নজরদারি পরীক্ষা যদি স্বাস্থ্যের একটি নির্দিষ্ট সমস্যা চিহ্নিত করে, তবে সেই সমস্যার তীব্রতা এবং জটিলতা কমাতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করা যায়।

টিকাকরণ

সঠিক খাওয়াদাওয়া এবং ব্যায়ামের মতো টিকাকরণ সুস্থ স্বাস্থ্যের ভিত্তি। টিকা নেওয়া নিরাপদ এবং আপনি ও আপনার পরিবারের সুস্থ থাকার জন্য টিকা নেওয়া জরুরি। টিকাকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শুধু আপনাকে নয় আপনার আশেপাশের মানুষকেও রক্ষা করে। যখনই আপনি কোনও রোগ ঠেকাতে টিকা নিচ্ছেন, তখন আপনি আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতাকেই শক্তিশালী করছেন এবং নির্দিষ্ট রোগটির বিরুদ্ধে আরও প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন। আপনি যতই স্বাস্থ্যবান হোন না কেন, আপনি যদি টিকা না নেন, তবে নির্দিষ্ট রোগটির সঙ্গে লড়াই করার জন্য আপনার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে না। ফলে সহজেই আপনি রোগটিতে আক্রান্ত হবেন। টিকাকরণ জনস্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি বহু মানুষকে সংক্রামক রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। শুধু টিকা যারা নিচ্ছে তাদেরই নয়, অন্যদেরও। টিকাকরণ শিশুদেরও সাধারণ সংক্রামক রোগগুলির হাত থেকে রক্ষা করে। টিকা শুধু শিশুদের অসুস্থ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে না, যারা কম নিরাপদ অবস্থায় থাকে তাদেরও রক্ষা করে। এমন কী শিশু বা বড়রা যারা দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত, তাদেরও সুরক্ষা দেয়।

স্বাস্থ্য উন্নয়ন কার্যক্রমকে উৎসাহ

নিজের শিশুর মধ্যে সুস্থ স্বাস্থ্যবিধি তৈরি করতে পরিবারের স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরামর্শের প্রয়োজন হয়। মনোযোগ-নিবদ্ধ স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরামর্শের উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, পরিশ্রমবিহীন আচরণ সীমিত করতে পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত তথ্য, শাকসবজি ফল খাওয়া বাড়িয়ে খাদ্যাভাস পরিবর্তন, কম চর্বিযুক্ত দুধ জাতীয় খাদ্যগ্রহণ। রোগীর শিক্ষা ও কাউন্সেলিং তখনই কার্যকর হয়, যখন তার পরিবার আচরণগত পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যের উপর সেই পরিবর্তনের প্রভাব বুঝতে পারে। স্বাস্থ্যগত আচরণের পরিবর্তন থেকে একটি পরিবার উপকৃত হবে এটা যখন বোঝা যায়, তখন সেই স্বাস্থ্যগত পরিবর্তন নিয়ে পরিবারের সদস্যদের ধ্যানধারণা, সেই পরিবর্তনের প্রতি বাধা ও সেই পরিবর্তন থেকে উপকার বিবেচনায় আনতে হয় এবং সেই পরিবর্তনের সম্ভাব্যতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা নিতে হয়।

রোগীর কাউন্সেলিং এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত ধাপগুলি থাকবে ---

  • শিশু এবং পরিবারের শেখার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা
  • সীমিত কর্মসূচি ঠিক করা
  • পরিবারের চাহিদাগুলোর গুরুত্ব নির্ধারণ করা
  • শিক্ষাদানের কৌশল বাছাই (ব্যাখ্যা করা, দেখানো, সম্পদ সরবরাহ করা, প্রশ্ন করা, চর্চা করা এবং মতামত দেওয়া)
  • কার্যকারিতার মূল্যায়ন (গ্রিন এন্ড পলফ্রে, ২০০২)

পর্যায়ক্রমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা

পর্যায়ক্রমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং নজরদারি দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি। কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা শুরু হওয়ার আগেই তাকে প্রতিরোধ করতে এই পরীক্ষাগুলি জরুরি। এই পরীক্ষাগুলিতে কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ার ফলে সফল চিকিৎসা এবং সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা অনেক বেশি। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা সাধারণ এবং বিরল রোগের ঝুঁকিগুলোকে চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। তা সে গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী যাই হোক না কেন। প্রাথমিক অবস্থায় যে রোগগুলির কোনও লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায় না তাদেরও চিহ্নিত করতে সাহায্য করে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা।

সুত্রঃ

অধ্যাপক (ডাঃ) সুকুমার মুখার্জি

এমডি, এফআরসিপি (লন্ডন), এফআরসিপি (এডিনবরা)

এফআইসিপি, এফআইএএমএস, এফএসএমএফ

প্রাক্তন অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, মেডিক্যাল কলেজ কলকাতা

 

সহযোগী

পম্পিতা চক্রবর্তী

পিএইচডি রিসার্চ ফেলো

 

সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/23/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate