গর্ভপাত হল গর্ভাবস্থার পূর্ণ সময়কালের আগেই জরায়ু থেকে ভ্রূণকে বের করে নষ্ট করে দেওয়া। স্বতঃস্ফূর্ত গর্ভপাত হল নিজে থেকে নষ্ট হয়ে ভ্রূণের মৃত্যু। সংঘটিত বা কৃত্রিম গর্ভপাতকে গর্ভাবস্থার সমাপ্তিও বলা হয় ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলা হয় মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগনেন্সি বা এমটিপি। কখনও কখনও গর্ভনিরোধক পদ্ধতি অবলম্বন করা সত্ত্বেও গর্ভাধান হতে পারে, অথবা ধর্ষণ বা অবৈধ সম্পর্কের ফলেও অবাঞ্ছিত গর্ভ আসা সম্ভব। এ সব ক্ষেত্রে ওই মহিলাকেই গর্ভপাতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যুগ যুগ ধরে গর্ভপাতকে জন্মনিয়ন্ত্রণের একটি পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। বাইরে থেকে মালিশ, প্রচন্ড শারীরিক পরিশ্রম, ধারালো জিনিস দিয়ে জরায়ু চাঁছা, গর্ভপাত করায় এমন শেকড়বাকড় বা তরল ওষুধের সাহায্যে অনেক সময় মহিলারা গর্ভপাত করানোর চেষ্টা করেন। গর্ভপাত মানে একটি জীবনকে নষ্ট করা, এই ধারণা থাকায় বহু সমাজে গর্ভপাত করানোর উপর নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু সারা পৃথিবীতে মহিলারা আইনি, সুরক্ষিত, ব্যয়সাধ্য ও সহজলভ্য গর্ভপাত করানোর অধিকারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। ১৯৭২-এর মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগনেন্সি আইন অনুযায়ী ভারতবর্ষে কৃত্রিম গর্ভপাতকে আইনসম্মত করা হয়েছে। গর্ভপাত করানোর সময় ভ্রূণ ও ফুলকে জরায়ু-গ্রীবার মধ্যে দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। গর্ভাবস্থার সময়সীমা অনুসারে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে।
গর্ভাধানের ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে এই পদ্ধতিটি কার্যকর হয়। এই পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট স্থানকে অসাড় করে জরায়ুর ভেতর দিয়ে একটি ক্যানুলা বা টিউব (যেটি একটি সাকশন পাম্পের সঙ্গে লাগানো থাকে) প্রবেশ করানো হয়। পাম্প করে কয়েক মিনিটের মধ্যে ভ্রূণটি বের করে আনা হয়। এই পদ্ধতিতে হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন পড়ে না।
গর্ভাধানের ৮ থেকে ১৬ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত করানোর জন্য এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয়। এতে একটি ডায়লিউটিং রড বা প্রসারণ রডের সাহায্যে জরায়ুটি প্রসারিত করা হয় এবং তার পর একটি কিউরেট দিয়ে চেঁছে পরিষ্কার করা হয়। এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করার প্রয়োজন হয়।
গর্ভাবস্থার দেরিতে, অর্থাৎ ১৬-২০ সপ্তাহের সময় গর্ভপাত করানোর ক্ষেত্রে স্যালাইন, ইউরিয়া বা প্রোস্টাগ্ল্যানডিন-এর মিশ্রণ ইনজেকশনের মাধ্যমে ভ্রূণের থলিতে প্রয়োগ করে সময়-পূর্ব প্রসব বেদনা সৃষ্টি করে ভ্রূণকে বের করে দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট জায়গাটা অসাড় করে এই কাজটি করা হয় এবং এক বা দু’দিন হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন হয়।
মাইফিপ্রিস্টন ও মিজোপ্রোস্টাল, এই দু’টি ওষুধের সমন্বিত প্রয়োগে গর্ভপাত করানো সম্ভব এবং ভারতবর্ষে এর ব্যবহার এখন আইনসিদ্ধ। মাইফিপ্রিস্টন (RU-486 নামেও পরিচিত) গর্ভপাতের বড়। কিন্তু এর কার্যকারিতা সম্পর্কে সন্দেহ থাকায় এটি প্রয়োগের ২ থেকে ৩ দিন পর প্রোস্টাগ্ল্যানডিন (মিজোপ্রোস্টাল) দেওয়া হয়। RU-486 কেবলমাত্র গর্ভাবস্থার প্রথম ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যেই কার্যকর হয়। এই পদ্ধতি একমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ মতো প্রয়োগ করা উচিত, কারণ এই ওষুধ থেকে অনিয়ন্ত্রিত রক্তপাত হতে পারে। এর যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি জানা যায়, সেগুলি হল অত্যাধিক বমি ও বমিভাব, রক্তক্ষরণ যা থেকে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে গর্ভপাত হতে প্রায় ১২ দিন লাগে এবং এই পুরো সময়টায় রক্তক্ষরণ হতে পারে। তা ছাড়া যে হেতু RU-486 গর্ভাবস্থার একদম প্রথম দিকে কার্যকর হয়, অতএব যদি কোনও কারণে এই ওষুধ দেওয়া সত্ত্বেও গর্ভপাত না হয়, তবে গর্ভস্থ ভ্রূণের উপর এর কী প্রভাব পড়ে, সে ব্যাপারে কোনও তথ্য পাওয়া যায় না।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/17/2020