অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

অপ্রথাগত ক্ষেত্র ও দেশের অর্থনীতি

অপ্রথাগত ক্ষেত্র ও দেশের অর্থনীতি

অপ্রথাগত ক্ষেত্রের সংজ্ঞার সরলীকরণ

বড় রাস্তার পাশ দিয়ে সারসার দোকান আর এই সব দোকানে বিক্রি হয় রকমারি পণ্য‌। কেবল খুচরো বিক্রিই নয়, পরিষেবা এবং পণ্য‌ উৎপাদনের কাজও চলে রাস্তা পাশের এই সব দোকান এবং সংস্থাগুলিতে। যেমন সস্তার হোটেল, চুল কাটার সেলুন, কামারশালা, মোবাইল এবং ঘড়ি সারাইয়ের দোকান। ছাতা তৈরি, ঘুড়ি তৈরি এবং এ ধরনের অসংখ্য‌ কাজকারবার যা বোধ হয় গুনে শেষ করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ দেশের অর্থনীতিতে ট্রেডিং, ম্য‌ানুফ্য‌াকচারিং ও সার্ভিস, এই যে তিনটি ক্ষেত্রের কার্যকলাপ চলেছে এবং যার প্রভাবে দেশের অর্থনীতির গতি নিয়ন্ত্রিত হয় তারই সংক্ষিপ্তসার কোলাজ যেন রাস্তা-পারের এই সব সংস্থা। বেশির ভাগই গুমটি ঘর এবং ইটের গাঁথনির উপর অ্য‌াসবেসটস অথবা টালি বা টিনের ছাউনি। এই সব ব্য‌বস্থা বেশির ভাগই গড়ে উঠেছে দখল করা সরকারি জমির উপর এবং সরকার চাইলে তাঁদের হটিয়ে দিতেও পারে। কিন্তু জীবিকার তাগিদে ঝুঁকি নিয়েই এঁরা ব্য‌বসা চালিয়ে যান এবং অনেকেই তো চালিয়ে যান পুরুষানুক্রমে। তবে মাঝেমধ্য‌ে যে উচ্ছেদও হতে হয় না তা নয়। কেবল স্থায়ী ভাবে গড়ে ওঠা ব্য‌বসাকেন্দ্রই নয়, ব্য‌বসা চলেছে ভ্রাম্য‌মাণ যানে। ঠেলাগাড়ি বা ভ্য‌ানে পসরা সাজিয়ে হকাররা পণ্য‌ বিক্রি করছেন। তা ছাড়া ফুটপাথে খালি আকাশের নীচেও ব্য‌বসা চলছে রমরমিয়ে। পশ্চিমবঙ্গ এবং কমবেশি সারা দেশ জুড়েই চলছে এ ধরনের ব্য‌বসা। কলকাতা শহরের কয়েকটি এলাকায় তো ফুটপাথ ছাড়িয়ে ব্য‌বসা রাস্তায় নেমে এসেছে এবং রাস্তারও প্রায় এক তৃতীয়াংশ দখল হয়ে গিয়েছে। এই যে সব নিয়মকানুন বা আইনের তোয়াক্কা না করে অসংখ্য‌ ব্য‌বসাকেন্দ্র গড়ে উঠেছে এগুলিকে বলা হয় অপ্রথাগত বা বিধি বর্হিভূত ক্ষেত্র বা ইনফর্মাল সেক্টর। অর্থাৎ বলা যেতে পারে বেআইনি ভাবেই এই সব ইনফর্মাল ব্য‌বসাকেন্দ্রগুলি গড়ে উঠেছে। তবে সংজ্ঞার এই সরলীকরণ সব সময় প্রযোজ্য‌ও নয়। এ ব্য‌াপারে পরে আলোচনা করা হয়েছে।

সূত্র : যোজনা, অক্টোবর ২০১৪

সংজ্ঞা : অপ্রথাগত ক্ষেত্র

আইনি ভাবে ব্য‌বসা করতে গেলে তো অনেক কিছুরই প্রয়োজন। প্রথমেই যে জিনিসটার প্রয়োজন তা হল ট্রেড লাইসেন্স আর এই লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের অর্থাৎ পঞ্চায়েত বা পৌরসভা বা পুর নিগমের। কিন্তু ট্রেড লাইসেন্স পেতে হলে ব্য‌বসাকেন্দ্রটি নিজের নামে হওয়া বাঞ্ছনীয়, তা সে নামটি মালিকানা ভিত্তিতে বা ভাড়ার ভিত্তিতে বা লিজের ভিত্তিতে, যে ভাবেই হোক না কেন। কিন্তু দখল করা সরকারি জমির উপর গড়ে ওঠা ব্য‌বসাকেন্দ্রে আইনসঙ্গত ভাবে নিজের নাম ব্য‌বহারের সুযোগ না থাকায় ট্রেড লাইসেন্স পাওয়াও সম্ভব হয় না। তবে নিজের জমিতে বা নিজের বসতবাড়িতেই গড়ে তোলা ছোট ব্য‌বসার সংখ্য‌াও কম নয়। গরিব মানুষটি তাঁর নিজের বারান্দাটিতেই মুদিখানার দোকান বানিয়ে তোলেন অথবা কোনও নিম্নবিত্ত মহিলা নিজের বাড়িতেই গড়ে তোলেন তাঁর সেলাইয়ের ব্য‌বসা অথবা খাদ্য‌ প্রক্রিয়াকরণ শিল্প যেমন বড়ি, পাঁপড়, জ্য‌াম, জেলি এই সব। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিও আইনসঙ্গত ভাবে গড়ে ওঠা কোনও ছাদের নীচেই কাজকর্ম চালান। কিন্তু নিজস্ব আস্তানায় গড়ে ওঠা এই সব উদ্য‌োগও অপ্রথাগত ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত বলেই ধরা হয়।

এই অপ্রথাগত বা প্রথাবর্হিভূত ক্ষেত্রের উপস্থিতি কেবলমাত্র আমাদের দেশেই নয়, পৃথিবীর সমস্ত অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশেই রয়েছে। অথচ দেশের নীতি নির্ধারকদের কাছে দীর্ঘদিন যাবৎ এরা উপেক্ষিতই থেকে গিয়েছে। এবং ব্য‌বহারযোগ্য‌ সংজ্ঞার অভাবে দেশের জাতীয় আয়ের হিসাবনিকাশের সময় এরা অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় দেশের জাতীয় আয়ের সঠিক চিত্রটি ফুটে ওঠেনি। এ ব্য‌াপারে প্রথম এগিয়ে আসেন নৃতত্ত্ববিদ কিথ হার্ট। ১৯৭১ সালে ঘানায় একটি বক্তৃতার সময় তিনি বিষয়টির উল্লেখ করেন। অপ্রথাগত ক্ষেত্রের সংজ্ঞা হিসাবে তিনি স্বনিযুক্তি ছোট উদ্য‌োগের কথা বলেন। অন্য‌ দিকে প্রথাগত ক্ষেত্র বলতে তিনি সেই সব ক্ষেত্রের কথা কথা বলেন, যেখানে মজুরি দিয়ে কর্মচারী নিযুক্ত করা হয়। পরবর্তীকালে অবশ্য‌ এই সংজ্ঞার সীমাবদ্ধতা প্রতিপন্ন হয়েছে এবং নতুন নতুন সংজ্ঞার উদ্ভবও হয়েছে।

সূত্র : যোজনা, অক্টোবর ২০১৪

কিথ হার্টের সংজ্ঞা

এ বিষয় কোনও সন্দেহ নেই যে কিথ হার্টের সংজ্ঞা নির্ধারণের পরে বিষয়টি সম্পর্কে আলোচনা হয় এবং বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা এ ব্য‌াপারে ভাবনাচিন্তা শুরু করেন।

দেশের জাতীয় আয়ের হিসাব নিরূপণের লক্ষ্য‌ে ১৯৯৩ সালে আন্তজার্তিক স্তরে যে সংজ্ঞা দেওয়া হয় (সিস্টেম অফ ন্য‌াশনাল অ্য‌াকাউন্ট বা এসএনএ ১৯৯৩) সেখানে বলা হয়, নিজস্ব কর্মসংস্থান এবং আয়ের তাগিদে যে সমস্ত ছোট ছোট উদ্য‌োগপতি পণ্য‌ এবং পরিষেবা উৎপাদন করেন তাঁরাই অপ্রথাগত ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত। এই সব ক্ষেত্রে নিযুক্ত কর্মীর সংখ্য‌া থাকে খুবই কম, নিযুক্ত করা হয় অস্থায়ী হিসাবে এবং মালিকের চেনাজানা লোকজন বা আত্মীয়স্বজনের মধ্য‌ থেকেই এঁরা নিযুক্ত হন। নিযুক্তি এবং কাজের ব্য‌াপারে মালিক এবং কর্মীদের মধ্য‌ে কোনও চুক্তি সম্পাদিত হয় না, সামাজিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করেই এখানে মালিক এবং কর্মচারীর সম্পর্ক নির্ণীত হয়। আর ব্য‌ক্তিগত মালিকানাধীন সংস্থার একটি অংশই হল এই সব অপ্রথাগত সংস্থা।

ভারতে অপ্রথাগত সংস্থাগুলির উপর নিয়মিত সমীক্ষা চালায় ন্য‌াশনাল স্য‌াম্পেল সার্ভে অফিস (এনএনএসও) এবং এ ব্য‌াপারে অপ্রথাগত ক্ষেত্রগুলির যে সব বৈশিষ্ট্য‌ তারা নির্ধারণ করেছে সেগুলি হল ---

  • ক) উৎপাদনমুখী শিল্প সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে সেগুলিকেই ধরা হবে যেগুলি বাৎসরিক সমীক্ষার অন্তর্ভুক্ত নয়।
  • খ) পরিষেবা শিল্পের ক্ষেত্রে সেগুলিই বিবেচিত হবে যেগুলি সরকারের দ্বারা পরিচালিত নয় (সরকার বলতে এখানে কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য‌ সরকার এবং স্থানীয় সরকার—এই তিনটিকেই বোঝাচ্ছে) এবং কর্পোরেট ক্ষেত্রের মধ্য‌ে যেগুলি নিবন্ধিত নয়। অন্য‌ দিকে দেশের কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত বিভাগ সেই সমস্ত ক্ষেত্রগুলিকে সংগঠিত ক্ষেত্রের তালিকায় রেখেছে যেখানে নিযুক্ত কর্মচারীর সংখ্য‌া দশ জন বা তার বেশি। এ ব্য‌াপারে আন্তজার্তিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ব্য‌ক্তিগত উদ্য‌োগে বা পারিবারিক উদ্য‌োগে গঠিত যে সব সংস্থা মালিকদের থেকে অভিন্ন নয়, অর্থাৎ যে সব ক্ষেত্রে মালিক এবং সস্থা এক ও অভিন্ন সেগুলিই অপ্রথাগত ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত।

সূত্র : যোজনা, অক্টোবর ২০১৪

ভারতে ব্য‌বসায়ী সংস্থাগুলির গঠনতন্ত্র

ভারতে ব্য‌বসায়ী সংস্থাগুলির গঠনতন্ত্র হতে পারে

  • (ক)সত্ত্বাধিকারী
  • (খ) অংশীদারি
  • (গ) কোম্পানি আইনে নথিভুক্ত কোম্পানি
  • (ঘ) সমবায় আইনে নথিভুক্ত সমবায় সংস্থা
  • (ঙ) পুরোপুরি সরকারি বা সরকারি মালিকানাধীন সংস্থা (পাবলিক সেক্টর)।

সত্ত্বাধিকারী বা অংশীদারি সংস্থার ক্ষেত্রে সংস্থার দায় পুরোপুরি মালিকের উপরই বর্তায়। অন্য‌ান্য‌ গঠনতন্ত্রযুক্ত সংস্থার ক্ষেত্রে মালিক বা মালিকের দায় একটা নির্দিষ্ট সীমায় আবদ্ধ থাকে। আন্তজার্তিক সংজ্ঞায় আরও বলা হয়েছে,কর্মচারীর সংখ্য‌াও একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্য‌ে আবদ্ধ থাকতে হবে। ভারতের ক্ষেত্রে এই সংখ্য‌াটি ৯ বলে ধরা হয়েছে। আরও একটি উল্লেখযোগ্য‌ বিষয় হল মালিক এবং সংস্থা যেখানে অভিন্ন, সেখানে মালিক ও সংস্থার আয়ব্য‌য়ের হিসাব আলাদা ভাবে রাখার কোনও প্রয়োজন নেই। আমাদের দেশের আইনেও সত্ত্বাধিকারী এবং অংশীদারি সংস্থার ক্ষেত্রে যেখানে কর্মীর সংখ্য‌া দশের কম সেখানে ব্য‌বসার হিসাব আলাদা রাখারও বাধ্য‌বাধকতা নেই। বিষয়গুলি পর্যালোচনা করে অপ্রথাগত ক্ষেত্রের যে সংজ্ঞা সুপারিশ করা হয়েছে তা হল : ‘‘যে সব সংস্থার মালিকানা রয়েছে ব্য‌ক্তিগত এবং পারিবারিক স্তরে, যেগুলি নিবন্ধিত নয়, গড়ে উঠেছে স্বত্ত্বাধিকারী বা অংশীদারি হিসাবে এবং কর্মচারীর সংখ্য‌া যেখানে দশের কম এবং সংস্থাগুলির কাজ যেখানে জিনিসপত্র বিক্রি করা অথবা উৎপাদন করা অথবা পরিষেবা প্রদান করা সেই সব সংস্থাকেই অপ্রথাগত সংস্থা হিসাবে ধরা যেতে পারে।’’ অর্থাৎ আন্তজার্তিক বা দেশীয় স্তরে বিভিন্ন ধরনের সংজ্ঞা দেওয়া হলেও নির্যাসটা কিন্তু একই। আন্তজার্তিক শ্রমিক সংস্থা বা ইন্টারন্য‌াশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) অপ্রথাগত ক্ষেত্রের একটি সংজ্ঞা নির্ণয়ের জন্য‌ দীর্ঘদিন ধরে সচেষ্ট। এ ব্য‌াপারে দিল্লি গ্রুপ বলে একটি গোষ্ঠীও গঠন করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন দেশের অপ্রথাগত ক্ষেত্রের সংজ্ঞার তুলনামূলক বিচার করে কাকে এই ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত করা হবে সে ব্য‌াপারে একটি সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করে।

ব্য‌বসায়ী সংগঠনগুলির কিছু সামাজিক দায়িত্বও থেকে যায়। বিশেষ করে করপোরেট সোশাল রেসপনসিবিলিট বা সিএসআরের ব্য‌াপারে বিভিন্ন সংস্থাকে অনুপ্রাণিত করা তাদের কাজ।

সূত্র : যোজনা, অক্টোবর ২০১৪

সংজ্ঞা : অপ্রথাগত শ্রমিক

অপ্রথাগত সংস্থার মতো অপ্রথাগত বা ইনফর্মাল কর্মীরাও দেশের জাতীয় আয় নিরূপণের ক্ষেত্রে অর্থনীতিবিদদের হিসাবনিকেশের বাইরেই ছিল দীর্ঘদিন। এই সব মানুষ সমীক্ষকদের কাছে নিজের আয় এবং কাজের তথ্য‌ প্রকাশ করতে চান না অথবা এড়িয়ে চলেন। সমীক্ষকরাও অনেক সময় এঁদের কাজের বিষয়টি অনুধাবন করে উঠতে পারেন না যে এঁরা কারও অধীনে মজুরিভিত্তিক কাজ করছে নাকি স্বাধীন ভাবে (ফ্রি লান্স) কোনও কাজে নিযুক্ত রয়েছেন। স্বাধীন ভাবে কাজ বলতে এঁরা নিজেদের উদ্য‌োগে মাটি কাটা, বাগান পরিষ্কার করা, এ ধরনের কাজ যেমন করেন সে রকম কোনও দক্ষতা অর্জন করে (যেমন বিদ্য‌ুতের কাজ, প্লাম্বিংয়ের কাজ অথবা কৃষি মেশিন সারাইয়ের কাজ) সেই সব কাজের মাধ্য‌মে স্বনিযুক্ত থাকেন।

এই সব কর্মীর ক্ষেত্রে একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য‌ হল যে এঁরা সামাজিক সুরক্ষার অন্তর্ভুক্ত নন এবং এঁদের সঙ্গে মালিকপক্ষের সম্পর্ক কোনও প্রথাগত বা ফর্মাল নয়। এই সব কর্মী অনেক সময়েই সামাজিক সুরক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। আবার কিছু কিছু অপ্রথাগত ক্ষেত্রেও শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকদের আনুষ্ঠানিক বা ফর্মাল সম্পর্ক লক্ষ করা যায়।

অপ্রথাগত কর্মীদের নানা বৈশিষ্ট্যের কারণে সমীক্ষকরা বুঝে উঠতে পারছিলেন না কী ভাবে এঁদের জাতীয় আয়ের গণনার ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। তা ছাড়া এঁদের অন্তর্ভুক্ত না করার পিছনে এই সব কর্মীর কোনও গ্রহণযোগ্য‌ সংজ্ঞা না থাকাও অন্য‌তম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এ ব্য‌াপারে শ্রম সংক্রান্ত প্রথম জাতীয় কমিশন (১৯৬৬-৬৯) যে সংজ্ঞার উল্লেখ করেছে তা হল ‘‘যে সব শ্রমিক অশিক্ষা ও অজ্ঞতার কারণে অথবা যে সব সংস্থায় তাঁরা কাজ করেন সেগুলি ক্ষুদ্র আকারের হওয়ার কারণে নিজেদের সাধারণ স্বার্থরক্ষার তাগিদেও ঐক্যবদ্ধ হতে সক্ষম হন না, তাঁদের অসংগঠিত শ্রমিক শ্রেণি হিসাবে গণ্য‌ করা যেতে পারে।’’ তা ছাড়া ন্য‌াশনাল কমিশন ফর এন্টারপ্রাইসেজ ইন দি আনঅর্গানাইজড সেক্টর-এর তরফ থেকে ইনফর্মাল শ্রমিকদের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সেটিও প্রণিধানযোগ্য‌।

সূত্র : যোজনা, অক্টোবর ২০১৪

অর্থনীতিতে অপ্রথাগত ক্ষেত্রের প্রভাব

ন্য‌াশনাল কমিশন ফর এন্টারপ্রাইসেগ ইন দি আনঅর্গানাইজড সেক্টর-এর তরফে অপ্রথাগত ক্ষেত্রের যে সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে তা হল ‘‘পারিবারিক সংস্থায় কর্মরত যে সব শ্রমিক মালিকদের তরফে সামাজিক সুরক্ষা সম্পর্কিত কোনও রকম সুযোগ সুবিধা পায়নি এমনকী প্রথাগত ব্য‌বস্থার অন্তর্ভুক্তও যে সব শ্রমিক সামাজিক সুরক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন তাঁদেরই অপ্রথাভুক্ত শ্রমিক হিসাবে গণ্য‌ করা যেতে পারে।’’

সোজা কথায় এক দিকে সংগঠন করতে না পারা, অন্য‌ দিকে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকা—এই দু’টিই হল অপ্রথাগত শ্রমিকদের চিহ্নিত করার প্রধান হাতিয়ার। ২০১৩ সালের এক সমীক্ষা থেকে জানা যায়, ভারতবর্ষের ১৮৫০০০ কোটির অর্থনীতির প্রায় অর্ধেকই হল অপ্রথাগত বা ইনফর্মাল অর্থনীতি। এ ধরনের অর্থনীতি আমাদের দেশের চেয়ে বেশি রয়েছে কেবলমাত্র সাব সাহারান আফ্রিকার দেশগুলিতে। কিন্তু বেশির ভাগ উত্তরণশীল অর্থনীতির সংখ্য‌াটা কুড়ি শতাংশের কাছাকাছি। সেখানে আমাদের দেশের পরিমাণটা যে অনেকটাই বেশি তা সহজে বোঝা যায়। অকৃষি ক্ষেত্রে দেশের ৮৪ শতাংশ সংস্থাই হল অপ্রথাগত। সমীক্ষা অনুযায়ী দেশের মাত্র ১৩ শতাংশ শিল্প সংস্থা এবং ১২ শতাংশ ব্য‌বসায়িক সংস্থা নথিভুক্ত। ভারতীয় কোম্পানিগুলি অপ্রথাগত কর্মী নিয়োগের দিকেই বেশি করে ঝুঁকেছে। ১৯৮০ সালে দেশে এই সব সংস্থায় কর্মরতদের সংখ্য‌া ছিল সংস্থা পিছু গড়পড়তা তিন জন। ২০০৫ সালে এই সব সংস্থার সংখ্য‌া ৪ কোটি ছাড়িয়ে গেলেও সংস্থা পিছু গড়পড়তা কর্মী সংখ্য‌া কমে দাঁড়িয়েছে ২.৪ জন। দেশের আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রের উপর সেই ১৯৫০ সাল থেকে এনএসএসও-র তরফে সমীক্ষা চালানো হচ্ছে। দেশের অপ্রথাগত ক্ষেত্রগুলির উপর তারা সর্বশেষ সমীক্ষা চালায় ২০১০-১১ সালে এবং এই সমীক্ষা ৬৭তম সমীক্ষা হিসাবে পরিচিত। সমীক্ষার জন্য‌ কৃষি এবং নির্মাণ সংস্থা ব্য‌তিরেকে সমস্ত অনিবন্ধিত অপ্রথাগত সংস্থাগুলিকে বেছে নেওয়া হয়েছিল।

ভারতের মতো বহৎ উন্নয়নশীল দেশে অপ্রথাগত ক্ষেত্রের ভূমিকা অপরিসীম। একে মান্য‌তা না দিলে দেশের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত সমস্য‌ার মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।

সূত্র : যোজনা, অক্টোবর ২০১৪

এনএনএসও-র ৬৭তম রাউন্ড

এনএসএসও-র ৬৭তম সমীক্ষায় উৎপাদন,পরিষেবা এবং বাণিজ্য‌ এই তিনটি ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং সংস্থাগুলিকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা হয়। এক ভাগ হল একেবারে নিজস্ব সংস্থা বা ওন অ্য‌াকাউন্ট এন্টারপ্রাইজ। যে সব সংস্থায় মালিক নিজেই উদ্য‌োগটি চালান এবং কোনও মজুরিভিত্তিক বা বেতনভিত্তিক কর্মচারী নিয়োগ করেন না সেগুলিই এই ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত। আর যে সব উদ্য‌োগগুলিতে অন্তত এক জন কর্মীকেও সারা বছর ধরে নিযুক্ত রাখা হয়েছে তারা দ্বিতীয় ভাগের অন্তর্ভুক্ত।

সমীক্ষায় দেখা যায়, দেশে এই ধরনের সংস্থা রয়েছে ৫ কোটি ৭৭ লক্ষ এবং এদের মধ্য‌ে ৩০ শতাংশ উৎপাদনভিত্তিক, ৩৬ শতাংশ ট্রেডিং এবং বাকি ৩৪ শতাংশ পরিষেবামূলক। এই সব সংস্থার মধ্য‌ে ৫৪ শতাংশের অবস্থান গ্রামীণ এলাকায়। দেখা যায় উৎপাদন, বাণিজ্য‌ এবং পরিষেবা এই তিনটি ক্ষেত্রের উপস্থিতিতে গ্রামাঞ্চলে প্রায় সমসংখ্য‌ায় (৩৩ শতাংশ থেকে ৩৪ শতাংশের মধ্য‌ে) কিন্তু শহরাঞ্চলে ট্রেডিং বা বাণিজ্য‌ ক্ষেত্রটিরই রমরমা বেশি (৩৮ শতাংশ), দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পরিষেবা (৩৫.৫ শতাংশ) এবং তার নীচে রয়েছে উৎপাদনভিত্তিক সংস্থা (২৬.৫) শতাংশ। সমীক্ষায় আরও দেখা যায়, একক মালিকানাধীন সংস্থাগুলির উপস্থিতিই সিংহভাগ, ৪ কোটি ৯০ লক্ষ (৮৫ শতাংশ) এবং এদের মধ্য‌ে ৫৮ শতাংশের উপস্থিতি গ্রামীণ এলাকায় এবং ৪২ শতাংশ শহর এলাকায়। রাজ্য‌ভিত্তিক যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে সেখানে দেখা যায় অপ্রথাগত ক্ষেত্রে সব চেয়ে বেশি উদ্য‌োগ গঠিত হয়েছে উত্তরপ্রদেশে (১৪.৫ শতাংশ) এবং এর পর ক্রম অনুযায়ী রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ (১২.৬ শতাংশ), অন্ধ্রপ্রদেশ (৯.৭ শতাংশ), মহারাষ্ট্র (৮.৯), তামিলনাড়ু (৭.৮)। এই পাঁচটি রাজ্য‌েই এ ধরনের উদ্য‌োগের সংখ্য‌া দেশের মোট উদ্য‌োগের ৫৩.৬ শতাংশ। দেশের মোট ১০ কোটি ৮০ লক্ষ শ্রমিক এই সব সংস্থায় নিযুক্ত রয়েছেন। এর মধ্য‌ে ৫১ শতাংশ শ্রমিক রয়েছেন শহরাঞ্চলে এবং ৪৯ সতাংশ গ্রামাঞ্চলে। তা ছাড়া সংগঠনগুলির গঠনতন্ত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সত্ত্বাধিকারী সংস্থার সংখ্য‌াই সর্বাধিক (৯৬) শতাংশ। এবং এই সব সংস্থার ১৭ শতাংশের মালিক হলেন মহিলা বাকি পুরুষ।

সূত্র : যোজনা, অক্টোবর ২০১৪

এনএনএসও-র আরও তথ্য‌

এই যে এত সব অপ্রথাগত ক্ষেত্রের উদ্য‌োগ গড়ে উঠেছে তারা দেশের কী পরিমাণ সামগ্রী উৎপাদন করতে পারছে। সারা দেশের হিসাব অনুযায়ী উদ্য‌োগ প্রতি বাৎসরিক মোট মূল্য‌যুক্তর পরিমাণ (গ্রস ভ্য‌ালু অ্য‌াডেড) ১,০৮,৯৫১ কোটি টাকা। ট্রেডিং বা বাণিজ্য‌ভিত্তিক সংস্থাগুলির ক্ষেত্রেই পরিমাণটা সর্বাধিক, ১,১৭,৪৫৪ কোটা টাকা, দ্বিতীয় স্থানে পরিষেবা ক্ষেত্র, ১,১৬,৬৩৩ কোটি টাকা এবং একেবারে শেষে উৎপাদনভিত্তিক সংস্থা বা ম্য‌ানুফ্য‌াকচারিং ইউনিট পরিমাণ, ৮৯০০ কোটি টাকা। আর এই মূল্য‌যুক্তর পরিমাণ শ্রমিক পিছু হিসাব করলে দাঁড়ায় ৫৮,১৯৩ কোটি টাকা। এখানেও মূল্য‌যুক্তর পরিমাণ ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রেই সর্বাধিক ৭১,৪১২ কোটি টাকা, এর পরের অবস্থান পরিষেবার ক্ষেত্রে ৫৯,০১০ কোটি টাকা এবং সব শেষে উৎপাদনের ক্ষেত্রে ৪৪,৩৪৭ কোটি টাকা। আর শ্রমিক পিছু বাৎসরিক আয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাণিজ্য‌, পরিষেবা এবং উৎপাদন, এই তিনটি ক্ষেত্রে এই আয়ের পরিমাণ যথাক্রমে ৩৬,৩৬২ টাকা, ৫১,৬০৩ টাকা এবং ৪৭০২০ টাকা। দেখা যায় ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে অর্থনীতিতে মূল্য‌যুক্তর পরিমাণ সব চেয়ে বেশি হলেও আয়ের ক্ষেত্রে তাদের প্রাপ্তিই সব চেয়ে কম। কিন্তু তিনটি ক্ষেত্রেই পরিমাণটা যৎসামান্য‌।

সমীক্ষায় অপ্রথাগত কর্মীর যে সংখ্য‌া উঠে এসেছে আসল সংখ্য‌াটা যে এর চেয়ে অনেকটাই বেশি তা সহজেই বোঝা যায়। কারণ সমীক্ষায় নির্মাণশিল্পকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অথচ দেশে অপ্রথাগত ক্ষেত্রের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে এই সব নির্মাণসংস্থা। অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি কৃষিক্ষেত্রকেও, যদিও ভারত কৃষিপ্রধান দেশ এবং দেশের বেশির ভাগ মানুষের জীবিকা এখনও কৃষির উপর নির্ভরশীল। প্রত্য‌ক্ষ চাষবাসের সঙ্গে সম্পর্কিত কৃষকদের বাদ দিলেও কৃষি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে যাঁরা নিযুক্ত অর্থাৎ মাছ চাষ, দুগ্ধ উৎপাদন, হাঁস মুরগি পালন, শুকর এবং ছাগল পালন -- এ ধরনের অসংখ্য‌ কাজ অপ্রথাভুক্ত ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত এবং এই সব কাজে যাঁরা নিযুক্ত রয়েছেন তাঁরাও অপ্রথাগত শ্রমিক হিসাবে পরিগণিত। সুতরাং এই সব ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করলে দেশে অপ্রথাগত ক্ষেত্রের চেহারাটা আরও বড় আকার ধারণ করবে। তা ছাড়া এত দিন অশিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত এবং স্বল্প দক্ষতার মানুষজনই এই ক্ষেত্রটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

সূত্র : যোজনা, অক্টোবর ২০১৪

অপ্রথাগত ক্ষেত্রকে প্রথাগত করা কি আদৌ সম্ভব?

দেশের জনসংখ্য‌া বাড়ছে মানুষ শিক্ষিতও হচ্ছে,অথচ সরকারি চাকরি কমে যাওয়ার এবং বড় বড় আকারের কলকারখানা সে ভাবে তৈরি না হওয়ায় দেশে প্রথাগত ক্ষেত্রে চাকরির সংখ্য‌া কমছে। এমনকী রাজনীতিবিদরাও বেকারদের দোকান দেওয়ার বা ছোট উদ্য‌োগ গড়ে তুলে স্বনিযুক্ত হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। এর ফলে অপ্রথাগত কর্মীর সংখ্য‌া যে আরও বাড়তে থাকবে তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। বর্তমানে তো অনেক স্নাতক উত্তীর্ণ যুবক রঙের কাজ, রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ বা সুরক্ষাকর্মীর কাজ -- এ ধরনের বিভিন্ন কাজ করতে বাধ্য‌ হচ্ছেন। মেয়েরাও আয়ার কাজে অথবা দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসাবে নিযুক্ত হচ্ছেন। মজুরির পরিমাণ যা-ই হোক না কেন, কাজ পাওয়ার এবং বাঁচার তাগিদই বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে। অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ী বেকারত্বের একটি অন্য‌তম কারণ হল অশিক্ষা এবং দক্ষতার অভাব। অশিক্ষিত এবং অদক্ষ মানুষের মধ্য‌ে বেকারত্ব কম। কারণ বাঁচার জন্য‌ যে কোনও কাজ পেতেই এঁরা মরিয়া, অন্য‌থায় তাঁদের হয়তো অনাহারেই দিন কাটাতে হতে পারে, কাজের পছন্দ অপচ্ছন্দের ব্য‌াপারটি এখানে নেহাৎই গৌণ। অন্য‌ দিকে শিক্ষিত মানুষের মধ্য‌ে এই পছন্দ অপছন্দের ব্য‌াপারটি থাকায় তাঁদের মধ্য‌ে বেকারত্ব বেশি। তবে অর্থনীতির এই নিয়ম আমাদের দেশে বর্তমানে বোধহয় আর সে ভাবে খাটছে না। কারণ অপ্রথাগত ক্ষেত্রে এই ব্য‌াপারটিই নেই।

ইউরোপ আমেরিকার মতো অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত দেশগুলিতে অপ্রথাগত ক্ষেত্রের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। সমস্য‌াটি মূলত প্রকট গরিব ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে যেখানে কাজের সুযোগ যথেষ্ট সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। জনসংখ্য‌ার দ্রুত বৃদ্ধি আরও একটি কারণ। তা ছাড়া আমাদের দেশে ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতিও এই ক্ষেত্রগুলির গজিয়ে ওঠা একটি অন্য‌তম কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সরকারি জমিতে ব্য‌বসা বা দোকান করতে হলে সঠিক জায়গায় নজরানা দেওয়ার প্রথা রয়েছে। ফলে রাজনীতিবিদদের প্রচ্ছন্ন মদত এর পিছনে সক্রিয়।

সূত্র : যোজনা, অক্টোবর ২০১৪

সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/5/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate