অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

ভারতের অপ্রথাগত ক্ষেত্র

ভারতের অপ্রথাগত ক্ষেত্র

সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই

এর জন্য কোনও তত্ত্বকথার প্রয়োজন নেই। চর্মচক্ষেই সব চাক্ষুস করা যাচ্ছে। গ্রামগুলি আর সেই গ্রাম থাকছে না, শহরগুলি হয়ে উঠছে বিপণন কেন্দ্র। ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা সাঙ্গ করে কিছু দিন চাকরি-বাকরির বৃথা চেষ্টা করার পর রাস্তার ধারে একটা করে গুমটি খুলে বসে পড়েছে। কেউ চিরাচরিত পান বিড়ি গুটখার দোকান, কেউ বা মোবাইল রিচার্জের আধুনিক গুমটি। স্বনিযুক্ত, স্বশাসিত। অর্থনীতির সংজ্ঞা অনুযায়ী এরা প্রথাবিরুদ্ধ বা অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মী। এরা শ্রমিক না মালিক তা নিয়ে বিতর্ক আছে। অতএব কর্মী বলাই ভাল।

এই সব কর্মীর সংখ্যা এ দেশে অগণিত। সেই সংখ্যাটা ক্রমশ বাড়ছে। জাতীয় নমুনা সমীক্ষা দফতরের (ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভে অফিস) বিভিন্ন রিপোর্টেও সে কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ভারতে অপ্রথাগত ক্ষেত্রের কোনও সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। জাতীয় নমুনা সমীক্ষা দফতর বা ডাইরেক্টরেট জেনারেল অফ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং এর মতো সংস্থায় যারা কর্ম সংস্থান সংক্রান্ত তথ্য ও পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে, প্রত্যেকেই নিজেদের প্রয়োজনমাফিক একটি সংস্থা তৈরি করে তথ্য সংগ্রহ করে (নায়ক, ২০০৯)। অথচ ১৯৯৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অফ লেবার অর্গানাইজেশন-এর পঞ্চদশ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন (আইএলও), অপ্রথাগত ক্ষেত্রের পরিসংখ্যান সংগ্রহের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা অনুসরণের কথা বলেছিল।

রাষ্ট্রসংঘের পরিসংখ্যান কমিশন (ইউনাইটেড নেশনস স্ট্যাটিসটিক্যাল কমিশন) এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ (ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল) এই সংজ্ঞাকে অনুমোদন দেয় এবং ১৯৯৩ সালে রাষ্ট্রসংঘ বিভিন্ন দেশের জাতীয় আয় পরিমাপের জন্য যে সিস্টেম অফ ন্যাশনাল অ্যাকাউন্ট-এর সুপারিশ করে তার অন্তর্ভুক্ত করে।

সংজ্ঞা নির্ধারণে টাস্ক ফোর্স

কিন্তু এর পরেও ভারতে অপ্রথাগত ক্ষেত্রের কোনও সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা গড়ে না ওঠায় ‘ন্যাশনাল কমিশন ফর এন্টারপ্রাইজেস ইন দ্য আন অর্গানাইজড সেক্টর’ একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করে। এই টাস্ক ফোর্স অপ্রথাগত ক্ষেত্রের আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা অনুযায়ীই ভারতের অপ্রথাগত ক্ষেত্রটি চিহ্নিত করার চেষ্টা করে।

কয়েকটি বৈশিষ্ট্য

আন্তর্জাতিক সংজ্ঞায় অপ্রথাগত ক্ষেত্রের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছিল। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল এই ক্ষেত্রে নিযুক্তির সংখ্যাটি খুব কম হবে, এরা কোনও আইন দ্বারা বিধিবদ্ধ হবে না, এরা খুব নিয়মমাফিক হিসেবপত্র রক্ষা করবে না ইত্যাদি। এগুলির কথা মাথায় রেখে অপ্রথাগত ক্ষেত্রের যে সংজ্ঞাটির উল্লেখ করা হয় সেই সংজ্ঞা অনুযায়ী —ব্যক্তি বা পারিবারিক মালিকানা ভিত্তিক, অবিধিবদ্ধ সেই সমস্ত সংস্থাকেই অপ্রথাগত ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করা হবে যাদের কর্মী সংখ্যা দশের কম। এই মালিকানা একক বা অংশীদারযুক্ত হতে পারে এবং এই সব সংস্থা উত্পাদন ও বাণিজ্য, উভয় প্রকার কাজেই লিপ্ত থাকতে পারে। বিধিবদ্ধ না হওয়ায় এরা প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ বা সংগঠিত বাজারে ব্যবসা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়, এমনকী দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কোনও প্রশিক্ষণ কর্মশালাতে যোগদানের সুযোগও এরা পায় না।

সংজ্ঞা ব্যবহারে অসুবিধা

তবে ভারতে এই সংজ্ঞা ব্যবহারের একটি অসুবিধাও আছে। এই সংজ্ঞা কৃষি ও অ-কৃষি উভয় ক্ষেত্রের জন্যই প্রযোজ্য হবার কথা। কিন্তু ভারতের কৃষি ক্ষেত্রে ‘সংস্থার’ ধারণাটিই নেই। ফলে কৃষি ক্ষেত্রে যে বিপুল সংখ্যক অপ্রথাগত কর্মী কাজ করে তাদের তা হলে অপ্রথাগত ক্ষেত্রের আওতা থেকে বাদ দিতে হয়।

এই অসুবিধা এড়ানোর জন্য কৃষি ক্ষেত্রের প্রতিটি খামারকেই তা তার জোতের আয়তন যা-ই হোক না কোন, অপ্রথাগত ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে বাগিচা শস্যের (যেমন চা, কফি) খামারগুলিকে বাদ রাখার কথা বলা হয়েছে। কারণ এই ধরনের খামারগুলি যেমন আকারে বড় তেমনি এগুলি আইন (প্ল্যানটেশন লেবার অ্যাক্ট, ১৯৫১ ) দ্বারা বিধিবদ্ধও বটে।

অপ্রথাগত শ্রম

ক্রমাগত বৃদ্ধিই ইঙ্গিত দিচ্ছে কোন পথে বর্তমানে কর্মহীনতার সমস্যাটির সমাধান অপ্রথাগত ক্ষেত্রের ধারণাটির সঙ্গে অপ্রথাগত শ্রমের ধারণাটির প্রভেদ আছে। প্রথাগত শ্রম বলতে বোঝানো হয় সেই সমস্ত শ্রমিককে যারা শ্রমের আইনগত অধিকার ভোগ করে এবং নানা বিধ সামাজিক সুরক্ষা ভোগ করে কিন্তু এই বৃত্তের বাইরে যারা আছে তারা তা হলে নিশ্চয়ই অপ্রথাগত শ্রমের উদাহরণ। যেমন যারা লোকের বাড়িতে ভৃত্যের কাজ করে বা বাগানের মালির কাজ করে তারা সব রকম সুরক্ষা বৃত্তের বাইরে। এরা আবার কৃষি বা অ-কৃষি কোনও ক্ষেত্রেই কোনও রকম সংস্থার সঙ্গে যুক্ত নয়।

এই রকম উদাহরণ আরও আছে। এই কারণেই অপ্রথাগত ক্ষেত্রের সংজ্ঞার পাশাপাইশ ‘ন্যাশনাল কমিশন ফর এন্টারপ্রাইজেস ইন দ্য আনঅর্গানাইজড সেক্টর’ অপ্রথাগত শ্রমের ধারণাটির পৃথক সংজ্ঞা তৈরি করেছেন। এই সংজ্ঞানুযায়ী যারা গৃহস্থ ক্ষেত্রে কাজ করে তারা, অপ্রথাগত ক্ষেত্রের প্রথাগত কর্মী ব্যতীত অন্যান্য কর্মী এবং প্রথাগত ক্ষেত্রে কাজ করেও যারা শ্রমের আইনগত অধিকার ও সামাজিক সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত তারা, অপ্রথাগত শ্রমিক।

অর্থাৎ অপ্রথাগত শ্রমের অস্তিত্ব যেমন অপ্রথাগত ক্ষেত্র ছাড়া প্রথাগত ক্ষেত্রের মধ্যেও পাওয়া যাবে, তেমনই প্রথাগত ক্ষেত্রের মধ্যেও আছে অপ্রথাগত শ্রম। বস্তুত ভারতীয় অর্থনীতিতে প্রথাগত ক্ষেত্রের মধ্যে অপ্রথাগত শ্রমের পরিমাণের হচ্ছে।

প্রথাগত ক্ষেত্রে অপ্রথাগত শ্রমিক

ভারতের শ্রমবাহিনীর মোট যে আয়তন এমনিতেই তার অধিকাংশ বলতে গেলে প্রায় সবটাই অপ্রথাগত শ্রম। জাতীয় নমুনা সমীক্ষা দফতরের ৬১তম সমীক্ষার তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে ২০০৪–২০০৫ সালে মোট শ্রমিকের সংখ্যা ৪৫.৭৫ কোটি, যার মধ্যে অপ্রথাগত ক্ষেত্রে শ্রমিকের সংখ্যা ৩৯.৫০ কোটি। এর পরেও প্রথাগত ক্ষেত্রটিতে কিন্তু অপ্রথাগত শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে।

ক্যাজুয়াল লেবার, কন্ট্রাকচ্যুয়াল লেবার ইত্যাদি বিশেষণে বিভূষিত হয়ে অপ্রথাগত শ্রমিকের দল ভিড় বাড়াচ্ছে প্রথাগত ক্ষেত্রটিতে। ২০০৪-২০০৫ সালের একই সমীক্ষার তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে অপ্রথাগত ক্ষেত্রে শ্রমিকের সংখ্যা ৩৯.৫ কোটি হলেও অর্থনীতিতে মোট অপ্রথাগত শ্রমিকের সংখ্যা ৪২.২৬ কোটি। অর্থাৎ মোট শ্রমবাহিনীর সাপেক্ষে অপ্রথাগত ক্ষেত্রে শ্রমিকের সংখ্যা ৮৬ শতাংশের মতো হলেও অপ্রথাগত শ্রমিকের সংখ্যা ৯২ শতাংশের মতো, যার অর্থ আবার বাড়তি এই ৬ শতাংশের মতো শ্রমিক এসেছে প্রথাগত ক্ষেত্র থেকে। এরাই সেই তথাকথিত ক্যাজুয়াল বা কন্ট্রাকচ্যুয়াল লেবারের দল।

কারা অপ্রথাগত শ্রমিক

ভারত সরকারের শ্রমমন্ত্রক চার ভাবে অপ্রথাগত শ্রমিকের হিসেব করার কথা বলেছেন। প্রথমত জীবিকার দিক থেকে দেখতে গেলে এরা হল : ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি, ভূমিহীন, কৃষি শ্রমিক, ভাগচাষি, জেলে, বিড়ি শ্রমিক, হাঁস মুরগি চাষ করে যারা, মুচি, তাঁতি, মিস্ত্রি, ইটভাটা, পাথর খাদান, কাঠ চেরাই কল তেলকল প্রভৃতিতে কাজ করে এমন শ্রমিক ইত্যাদি। দ্বিতীয়ত, কাজের প্রকৃইতর দিক থেকে দেখেত গেলে এরা হল : কৃষি শ্রমিক, বাঁধা মজুর, পরিযায়ী শ্রমিক, বিভিন্ন ধরনের চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক ও সাময়িক কর্মী প্রভৃতি। তৃতীয়ত, বিশেষ ভাবে দুর্দশাগ্রস্ত শ্রেণির মধ্যে যারা পড়ে, যেমন মুটে, ধাঙড়, গোরু বা ঘোড়ার গাড়ির চালক, যারা হোটেল বা বারে মদ পরিবেশন করে, যারা গাড়িতে মাল ওঠানো নামানোর কাজ করে ইত্যাদি। চতুর্থত, পরিষেবা প্রদানের প্রকৃতির দিক থেকে দেখতে গেলে এরা হল : গৃহভৃত্য, নাপিত, আনাজ বিক্রেতা, খবরের কাগজ বিক্রেতা, ধাইয়ের কাজ করে যারা প্রভৃতি।

সারণি-১

প্রথাগত ও অপ্রথাগত কর্মীর শ্রেণি বিন্যাস

ক্ষেত্র

লিঙ্গ

অপ্রথাগত কর্মী

প্রথাগত কর্মী

মোট

১৯৯৯-০০

২০০০৪-০৫

১৯৯৯-০০

২০০৪-০৫

১৯৯৯-০০

২০০৪-০৫

 

পুরুষ

১৮৬.১৭

২০৯.০১

১০.৫৭

১০.০৩

১৯৬.৭৪

২১৯.০৪

নারী

১০১.৭১

১২১.৬০

.৩১

.৪৩

১০৪.০২

১২৪.০৩

মোট

২৮৭.৮৭

৩৩০.৬২

১২.৮৮

১২.৪৫

৩০০.৭৫

৩৪৩.০৭

 

পুরুষ

৫৮.৩৩

৭১.৬০

১৮.৭২

১৮.৮০

৭৭.০৫

৯০.৪০

নারী

১৫.৫৩

২০.৪০

.৪৩

.৬০

১৮.৯৬

২৪.০০

মোট

৭৩.৮৭

৯১.৯৯

২২.১৪

২২.৪০

৯৬.০১

১১৪.৪০

 

পুরুষ

২৪৪.৫০

২৮০.৬১

২৯.২৮

২৮.৮৩

২৭৩.৭৮

৩০৯.৪৪

নারী

১১৭.২৪

১৪২.০০

.৭৪

.০৩

১২২.৯৮

১৪৮.০৩

 

মোট

৩৬১.৭৪

৪২২.৬১

৩৫.০২

৩৪.৮৫

৩৯৬.৭৬

৪৫৭.৪৬

উত্স : জাতীয় নমুনা সমীক্ষা দফতরের ৫৫তম (১৯৯৯- ০০ ) ও ৬১ তম (২০০৪ – ২০০৫) সমীক্ষা

শ্রমের সাময়িকীকরণ

কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এই যে ঘটনা ঘটছে, যাকে সাময়িকীকরণ (ক্যাজুয়ালাইজেশন) বলা হচ্ছে, স্পষ্টতই সেটি শ্রমের জোগান বাড়ার ফলশ্রুতি। শ্রমের জোগান বাড়ছে তার প্রথম কারণ তো অবশ্যই জনসংখ্যা বৃদ্ধি। জনসংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ ভারতের জনভিত্তিটি স্বাভাবিক ভাবেই বড়। ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যত কমই হোক না কেন প্রতি বছর জনসংখ্যার মোট পরিমাণটি অনেকটাই বাড়ে। ফলে স্বাভাবিক কারণেই বাড়ছে শ্রমবাহিনীর আয়তনও।

মহিলা কর্মী বাড়ছে

এ ছাড়া শ্রমবাহিনীর আয়তন বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ শ্রমবাহিনীতে মহিলা কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি। আগে মেয়েরা এ দেশে কাজের জগতে তেমন আসত না, এখন যতটা আসছে। জাতীয় নমুনা সমীক্ষার একটি হিসেব বলছে ২০০০ সালের পর থেকে কেবল মহিলা কর্মীর সংখ্যাই বেড়েছে ২.৫৯ কোটি।

বার্ধক্যে পৌঁছনো

প্রসঙ্গ ক্রমে, তৃতীয় আরেকটি কারণের উল্লেখ করা যেতে পারে। ভারত বর্তমানে বার্ধক্যের সমস্যায় ভুগছে, ইংরেজিতে যাকে বলে ‘এজিং’। সব দেশকেই কোনও না কোনও সময় এই সমস্যায় পড়তে হয়। সেই সময় জনসংখ্যার একটা বড় অংশ বার্ধক্যে পৌঁছে যায়। মোট জনসংখ্যায় কর্মক্ষম মানুষের অনুপাত কমে যায়। এই মুহূর্তে এমন ঘটনায় ভারতের সুবিধাই হবার কথা ছিল, কেন না এর ফলে কর্মপ্রার্থীর সংখ্যা কমে। কিন্তু সুবিধার পরিবর্তে এই ঘটনা শ্রমের সাময়িকীকরণের প্রবণতা আরও বাড়িয়ে তুলছে। একটি হিসাব বলছে সাম্প্রতিককালে প্রতি দিন ১৩,০০০ ভারতীয় ষাটে পৌঁছেছে। এদের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ তাদের বার্ধক্যের জন্য সঞ্চয় রাখে (জ্যাকব ২০১১ )। ফলে বাকিরা বাধ্য হয়ে সাময়িক কাজের জগতে ঢুকছে।

বাজার অর্থনীতির প্রভাব

অর্থনৈতিকবিদদের একটা বড় অংশের মতে শ্রমের সাময়িকীকরণের মাধ্যমে অপ্রথাগত শ্রমের পরিমাণ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ বাজার অর্থনীতির প্রবর্তন ও প্রসার। এ দেশে বাজার অর্থনীতি প্রবর্তনের পর এক দিকে যেমন শ্রমের সচলতা বেড়েছে অন্য দিকে তেমনি বিদেশি বিনয়োগের পরিমাণ বেড়েছে এবং সেই সূত্রে ভারতের মাটিতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলির অনুপ্রবেশ বেড়েছে। এই সব বিদেশি কোম্পানি একটিই জিনিস বোঝে, মুনাফা। ফলে তারা চায় সস্তার শ্রম, এমন শ্রম যার সামাজিক সুরক্ষা বা ভবিষ্যতের দায়, কোনওটিই তাদের নিতে হবে না। ফলে সাময়িক শ্রম, চুক্তিবদ্ধ শ্রমের পরিমাণ বাড়ছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলিকে এই ব্যাপারে আরও সুবিধা করে দিচ্ছে অধিকতর সংখ্যায় মহিলা শ্রমিকের কাজের জগতে প্রবেশ। আমাদের দেশের সামাজিক কাঠামোর কারণে মহিলাদের স্বাভাবিক পছন্দটা থাকে সাময়িক কাজের দিকে, কারণ তাতে বাইরের কাজ আর ঘরের কাজ দু’টোই এক সঙ্গে সামলানো যায়। ফলে স্বাভাবিক কারণেই প্রথাগত ক্ষেত্রেও অপ্রথাগত শ্রমের পরিমাণ বাড়ছে।

শ্রমিক সংগঠনগুলির দুর্বলতা

বাজার অর্থনীতির প্রসার ঘটলে সে তো সস্তার শ্রমের খোঁজ করবেই। তা একে আটকে রাখার দায়িত্ব শ্রমিক সংগঠনগুলির। কিন্তু শ্রমিক সংগঠনগুলিও আস্তে আস্তে তার ধার ও ভার হারিয়ে ফেলছে। এর একটা বড় কারণ দুর্নীতি, শ্রমিক নেতারা মালিক পক্ষের কাছে নিজেদের বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে দর কষাকষির বৈঠকে তাদের গলার জোর হারিয়ে যাচ্ছে।

নেতাদের এই অবস্থা দেখে সাধারণ কর্মীরা সংগঠন ব্যাপারটার উপরই আস্থা হারিয়ে ফেলছে। ফলে কার্যত কোনও প্রতিরোধের সম্মুখীন না হয়ে মালিকপক্ষের তরফে অবাধে চলছে সাময়িক নিয়োগ, চুক্তি নিয়োগ। আর কোনও সংস্থায় স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা যত কমছে তত কমছে শ্রমিক সংগঠনগুলির লড়াইয়ের সামর্থ্য। অর্থাৎ পুরো ব্যাপারটা চক্রাকারে আবর্তিত হচ্ছে।

সামাজিক বিশৃঙ্খলার পথে

ভয় হয় ঠিক এই জায়গাটিতেই। ভয় হয় কাজের এই সাময়িকীকরণ কি আমাদের এক নতুন সামাজিক বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিচ্ছে? সাময়িকীকরণের এই ঘটনা বেশি ঘটছে নগর অর্থনীতিতে। শিল্প ও পরিষেবার জগতে। অপ্রথাগত শ্রমের উপস্থিতি সব চেয়ে বেশি কৃষি ক্ষেত্রটিতে। কিন্তু কৃষি ক্ষেত্রে সাময়িকীকরণের প্রবণতাটি তূলনামূলক ভাবে কম। নগর অর্থনীতিতে এমনিতেই আয় বৈষম্যের মাত্রাটি বেশি। ফলে এক ধরনের সামাজিক অস্থিরতা সেখানে কাজ করেই। সাময়িকীকরণ এই বৈষম্যের আরেকটি নতুন মাত্রা যোগ করছে। যোগ্যতা, দক্ষতা, এক হওয়া সত্ত্বেও একদল শ্রমিক প্রথাগত কাজের বৃত্তে থাকার জন্য এ সব সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে অন্যরা তা পাচ্ছেন না স্রেফ অপ্রথাগত ক্ষেত্রের সদস্য হবার জন্য। বলা বাহুল্য এই যে ক্ষোভের সঞ্চয় হচ্ছে তা এক দিন বিশৃঙ্খলার জন্ম দেবে।

তথ্য সূত্র :

  • ১) জ্যাকব, টমি (২০০১); দি আনঅর্গানাইজড সেক্টর ইন ইন্ডিয়া www.india.org
  • ২) নায়ক, অজয়া কুমার (২০০৯); ইনফর্মাল সেক্টর অ্যান্ড ইনফর্মাল ওয়ার্কার ইন ইন্ডিয়া; www.iariw.org

সূত্র : যোজনা, অক্টোবর, ২০১৪।

সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/16/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate