প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পোকা ও রোগের আক্রমণে বিজ্ঞাপিত ফসলে কোনও একটি চাষ না করা গেলে বা ফসল নষ্ট হলে কৃষকদের বিমার সুবিধা ও আর্থিক সহায়তার সংস্থান রয়েছে রাষ্ট্রীয় ফসল বিমা কার্যক্রম বা ন্যাশনাল ক্রপ ইনসিওরেন্স প্রোগ্রামে। এই কার্যক্রমের উদ্দেশ্যই হল কৃষকদের প্রগতিশীল কৃষি পদ্ধতি, উচ্চমানের বীজ ও সারের ব্যবহার, উন্নত কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে সড়গড় হওয়ার জন্য উৎসাহিত করা এবং কৃষিজ আয় স্থিতিশীল করতে বিশেষ করে বিপর্যয়ের বছরগুলিতে সাহায্য করা। এগ্রিকালচার ইনসিওরেন্স কোম্পানি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড ছাড়াও কৃষি ও সমবায় দফতরের নির্ধারিত তালিকা থেকে রূপায়ণকারী রাজ্যগুলি এই কার্যক্রম রূপায়ণ করতে পছন্দমাফিক উপযুক্ত পরিকাঠামো ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বেসরকারি বিমা সংস্থাকে অনুমতি দিতে পারে।
খাদ্যশস্য, তৈলবীজ এবং বার্ষিক বাণিজ্যিক বা উদ্যান সংক্রান্ত শস্য রাষ্ট্রীয় বিমা কার্যক্রমের অধীনে আছে। যে কৃষকেরা ঋণ নিয়েছেন তাদেরকে বাধ্যতামূলক অংশের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং যে কৃষকেরা ঋণ নেননি তাঁদের স্বেচ্ছামূলক অংশের আওতায় রাখা হয়েছে। ন্যাশনাল ক্রপ ইনসিওরেন্স প্রোগ্রামের সর্বাঙ্গীন অংশ হিসেবে সারা দেশে সংশোধিত রাষ্ট্রীয় কৃষি বিমা স্কিম বা মডিফায়েড ন্যাশনাল এগ্রিকালচার ইনসিওরেন্স স্কিম রূপায়িত করার কথা বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিজ্ঞাপিত ফসল উৎপাদনকারী ভাগচাষি সহ সব ধরনের কৃষকরা এই বিমার আওতায় আসবে।
চাষের ক্ষেত্রে বীজ বপন থেকে ফসল তোলা পর্যন্ত কৃষকদের স্বাভাবিক ঝুঁকি বিমা প্রদান করা হয়। দাবানল, বজ্রপাত, ঝড়, শিলাবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, প্লাবন, খরা, শুষ্ক মরশুম, রোগ পোকার ক্ষতি প্রভৃতি নানারকম ঝুঁকির জন্য ফসলের ক্ষতি হলে কৃষকরা এই বিমার আওতায় আসবেন। অনেক সময় দেখা যায় কোনও একটি অঞ্চলে বৃষ্টির অভাবে অথবা মরশুমি আবহাওয়ার বিরূপতার কারণে কৃষক চাষ করতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে বিমাকৃত কৃষক, যাঁর পুরোদমে চাষের ইচ্ছা রয়েছে এবং তার জন্য কিছু খরচও করেছেন অথচ রোপণ বপনে ব্যর্থ হয়েছেন, তিনি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। এ ক্ষেত্রে বিমাকৃত রাশির সর্বাধিক ২৫ শতাংশ ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া হয়। বিভিন্ন ধরনের শস্যের ক্ষেত্রে কী ধরনের অর্থ দেওয়া হবে তা রূপায়ণকারী সংস্থাকে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে স্থির করতে হয়। ফসল কাটার পরও কিছু ক্ষেত্রে বিমার সুযোগ থাকে। যুদ্ধ বা পরমাণু ঝুঁকির মতো ক্ষেত্রে কৃষক বিমার আওতায় আসবেন।
বাধ্যতামূলক অংশে ঋণগ্রহীতা কৃষকদের ক্ষেত্রে বিমারাশি হতে হবে অন্তত শস্য ঋণ বরাদ্দ/প্রাপ্ত অগ্রিম মূল্যের সমপরিমাণ, যা বিমাকৃত কৃষক ইচ্ছা করলে বিমাকৃত শস্যের ন্যূনতম ফসলের মূল্য পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। যেখানে ন্যূনতম ফসলের মূল্য প্রতি ইউনিট ঋণের থেকে কম, সেখানে দু’টির মধ্যে যেটি বেশি, সেটি বিমা মূল্য হিসেবে বিবেচিত হবে। ন্যাশনাল থ্রেশহোল্ড ইল্ডের সঙ্গে চলতি বছরের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য গুণ করলে ন্যূনতম ফসলের মূল্য পাওয়া যায়। যেখানে চলতি বছরের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য পাওয়া যাবে না সে ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী বছরের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিতে হবে। যে শস্যের জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ঘোষণা করা হয়নি সেখানে বিপণন পর্ষদের ক্রয়মূল্য গ্রহণ করতে হবে।
এ ছাড়া ঋণগ্রহীতা কৃষকদের ক্ষেত্রে কৃষকদের দেয় মাশুল দেবে ব্যাঙ্ক। এই মাশুল পরিগণিত হবে ঋণ পাওয়ার জন্য অর্থের মাপকাঠির অতিরিক্ত অংশ হিসেবে। যে সমস্ত কৃষক স্বেচ্ছায় বিমার আওতায় আসবেন সে ক্ষেত্রে বিমাকৃত শস্যের ন্যূনতম ফসলের মূল্য পর্যন্ত বিমা রাশি হবে। যদি কৃষক চান তা হলে তা আরও অধিক পরিমাণে ঝুঁকির আওতায় আনা যাবে। প্রতিটি শস্য মরশুমের আগে ভারত সরকার অনুমোদিত পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিটি বিজ্ঞাপিত শস্যের জন্য বিমা সংস্থাগুলি প্রিমিয়ামের পাশাপাশি নেট প্রিমিয়াম রেট (প্রিমিয়াম ভর্তুকির পর যে প্রিমিয়াম কৃষকদের দেয় হয়) নির্ধারণ করবে।
প্রিমিয়ামের হার ১১ শতাংশ ও ৯ শতাংশে সীমিত থাকবে যথাক্রমে খরিফ ও রবি মরশুমে খাদ্য ও তৈলবীজের জন্য। বার্ষিক বাণিজ্যিক বা উদ্যান সংক্রান্ত শস্যের জন্য এই হার ১৩ শতাংশ করার কথা চলছে।
সর্বাত্মক বিপর্যয়ের জন্য বিজ্ঞাপিত শস্যের জন্য নির্দিষ্ট এলাকার ভিত্তিতে কার্যক্রম রূপায়ণ করার কথা। প্রধান শস্যের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এলাকা (বিমার ইউনিট এলাকা) গ্রাম বা গ্রাম পঞ্চায়েত স্তর যে নামেই ডাকা হোক না কেন, অন্য শস্যের ক্ষেত্রে রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সিদ্ধান্ত মতো গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে তালুকের পরিমাণগত ইউনিটকেই বোঝাবে। আবার স্থানীয় ঝুঁকির ক্ষেত্রে, অর্থাৎ শিলাবৃষ্টি, ধস প্রভৃতি ক্ষেত্রে দাবি সব সময়ই হবে বিষয়ভিত্তিক।
খরিফ শস্যের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত দিন এমন ভাবে স্থির করা হয়, যাতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আসার দিনগুলির সঙ্গে খাপ খায়। এ ছাড়া, তিন ফসলি মরশুমের ক্ষেত্রে পূর্বোক্ত সার্বিক মৌসুমি নিয়মকে মাথায় রেখে একটি পরিবর্তিত নিয়ম গ্রহণ করবে শস্য বিমা সংক্রান্ত রাজ্যস্তরীয় সমন্বয় কমিটি বা স্টেট লেভেল কোঅর্ডিনেশন কমিটি অন ক্রপ ইনসিওরেন্স (এসএলসিসিসিআই)।
স্বেচ্ছায় বিমার আওতায় আসা কৃষকরা মরশুমের জন্য অগ্রিম শস্য পরিকল্পনার ভিত্তিতে রোপণ/বপনের আগে বিমা করতে পারেন। কোনও কারণে বিমা করার সময়ের পরিকল্পনা থেকে সরে এসে কৃষক যদি অন্য চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন, তা হলে বিমা প্রস্তাব যে আর্থিক সংস্থাকে জমা দেওয়া আছে, তাকে চূড়ান্ত তারিখের ৩০ দিনের মধ্যে পরিবর্তনের কথা জানাতে হবে। সঙ্গে দিতে হবে গ্রাম স্তরে রাজ্যের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের রোপণ সংক্রান্ত শংসাপত্র। প্রয়োজনে প্রিমিয়াম পাঠানো অনুযায়ী কৃষক প্রিমিয়ামে অতিরিক্ত দেয়টি মিটিয়ে দেবেন অথবা রূপায়ণকারী সংস্থা অতিরিক্ত অর্থ তাকে ফিরিয়ে দেবে।
এই কার্যক্রম জেলা, রাজ্য ও দেশীয় স্তরে নিবিড়ভাবে তদারকি করবে রাজ্য সরকার, রূপায়ণকারী সংস্থা এবং ভারত সরকার। তদারকির জন্য রূপায়ণকারী সংস্থার পাশাপাশি শস্য বিমা সংক্রান্ত রাজ্য স্তরের রাজ্যস্তরীয় সমন্বয় কমিটি দায়িত্বে থাকবে। জাতীয় স্তরে তদারকির জন্য যুগ্ম সচিব(ঋণ)-এর নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়া যেতে পারে। মূল্যায়নকে মনে করা হয় কার্যক্রম তৈরি ও রূপায়ণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা কর্মসূচির অগ্রগতি ও প্রভাব নির্ধারণের জন্য এবং সাফল্য ও ব্যর্থতার কারণের বিশ্লেষণের জন্য জরুরি। এটা মাথায় রেখে প্রতি মেয়াদি পরিকল্পনার শেষে সংশোধিত রাষ্ট্রীয় এগ্রিকালচার ইনসিওরেন্স স্কিম-এর একটি নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করা যেতে পারে।
সূত্র: যোজনা, ফেব্রুয়ারি, ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/20/2020