গুটি তৈরির সময় পরিবেশের তাপমাত্রা ২৩০ – ২৪০ সেলসিয়াস ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৬০% - ৭০% হওয়া বাঞ্ছনীয়। তবে ঘরের তাপমাত্রা ২৬০ সেলসিয়াসের বেশি হওয়া কোনও মতেই উচিত নয়। গুটি তৈরির পূর্ব মুহূর্তে পলু তার শেষ মূত্র ত্যাগ করে। ফলে ঘরের আপেক্ষিক আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়, সে জন্য চন্দ্রকীগুলিকে পলুঘরের বারান্দায় বা বাইরে খোলা পরিবেশে রাখা হয়। তা ছাড়া এই মূত্র যাতে অন্য গুটির গায়ে না লাগে তার জন্য চন্দ্রকীগুলিকে সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে রাখা হয়।
বহুচক্রী (নিস্তারী) পলুগুলি গুটি তৈরি করতে ২ – ৩ দিন সময় নেয়। আর দ্বিচক্রী জাতের ক্ষেত্রে সময় লাগে ৩ – ৪ দিন।
পাকা পলু চন্দ্রকীতে ছাড়ার পঞ্চম দিনে বহুচক্রী জাতের গুটি সংগ্রহ করা হয়। আর সপ্তম বা অষ্টম দিনে দ্বিচক্রী জাতের গুটি চন্দ্রকী থেকে সংগ্রহ করা হয়। গুটি সংগ্রহের ব্যাপারে অযথা দেরি করা ঠিক নয়। কারণ নানা ধরনের কীট শত্রু গুটির ক্ষতি করতে পারে।
যে কোনও জাতের গুটির মধ্যে নানা রকম ত্রুটিপূর্ণ গুটি থাকে। উক্ত ত্রুটিপূর্ণ গুটি বাদ না দিলে উন্নত মানের রেশম সুতো পাওয়া সম্ভব নয়। তাই সংগৃহীত গুটি থেকে পাতলা আবরণযুক্ত প্রস্রাবযুক্ত গুটি, গলিত গুটি, কাটা গুটি ও দ্বিগুণ গুটিগুলি বেছে বাদ দিতে হবে।
গুটির মান নির্ধারণের জন্য নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি দেখা দরকার :
সংগৃহীত গুটি থেকে পাতলা আবরণযুক্ত গুটি, প্রস্রাবযুক্ত গুটি, গলিত গুটি, কাটা গুটি ও দ্বিগুণ গুটিগুলি বাদ দিয়েও গুটি পরীক্ষার বিভিন্ন নিরিখে উতরে যাওয়া গুটিকে শুকোতে দেওয়া হয়। বিভিন্ন পদ্ধতিতে গুটি শুকোনো যেতে পারে। এদের মধ্যে জনপ্রিয় পদ্ধতি হল সূর্যালোকের সাহায্যে গুটি শুকোনো, গরম জলীয় বাষ্পের সাহায্যে গুটি ভাপানো ও গরম হাওয়ার সাহায্যে গুটি শুকোনো। তবে গরম হাওয়ার সাহায্যে গুটি শুকোনো সব চেয়ে ভালো। সূর্যালোকে শুকোনোর পদ্ধতিটি যদিও সস্তা ও সহজ তবুও আধুনিক কাটাই প্রযুক্তিতে এটি উপযুক্ত নয়। উপায়ান্তর না থাকলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
৩/৪ মাসের বেশি হলে এই ব্যবস্থা গুলির পুনরাবৃত্তি করতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গে সাধারণত কাট খাই ও মোষ রিলং পদ্ধতিতে গুটি কাটাই করা হয়। উন্নত মানের সুতোর জন্য কেন্দ্রীয় রেশম পর্ষদ উন্নত মানের চরকা, কটেজ বেসিন ও মাল্টিএন্ড রিলিং মেশিন উদ্ভাবন করেছে।
এই মেশিনের সুবিধাগুলি হল :
উন্নত মানের ভরনা সুতো এই চরকায় প্রস্তুত করা সম্ভব।
এই মেশিনের বৈশিষ্ট্য হল :
এই মেশিনের বৈশিষ্ট্যগুলি হল —
সাধারণ কাট খাই ও উন্নত মানের চরকার থেকে ভালো সুতো এই মেশিনে উত্পাদন করা সম্ভব।
কটেজ মেশিনকে আরও উন্নততর করে এই মেশিন তৈরি করা হয়েছে।
এই মেশিনের অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্যগুলি হল —
সাধারণত মাল্টিএন্ড রিলিং মেশিনে প্রস্তুত সুতোর মান কটেজ মেশিনের থেকে ভালো হয়।
রেশম সুতোর গুণগত মান অনেকাংশে কাটাইয়ে ব্যবহৃত জলের গুণগত মানের উপর নির্ভরশীল। জল অধিক অম্লযুক্ত বা ক্ষারযুক্ত হলে বা অস্বচ্ছ হলে বা কাঠিন্যের তারতম্য হলে বা ভারী ধাতব পদার্থ মাত্রাতিরিক্ত থাকলে রেশম সুতোর মান ভালো হয় না। নীচে বিশদ আলোচনা করা হল :
জলের গুণমান যাচাইয়ের জন্য যে জল কাটাইয়ে ব্যবহৃত হবে তার নমুনা জল পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করিয়ে নিলে ফল ভালো পাওয়া যাবে। তা ছাড়া রেশম কাটাই-এর জলের গুণমানকে উপযুক্ত রাখতে হলে জলের কাঠিন্য অনুযায়ী ‘অকসিপন ডবলু এস’ রাসায়নিকটি নির্দিষ্ট পরিমাণে জলে নির্দিষ্ট মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে। ‘অকসিপন ডবলু এস’ রাসায়নিকটি প্রতি লিটারে ০.০৩৭ গ্রাম মেশালে জলের কাঠিন্য ১ পি পি এম কমে যায়। এ ভাবে জলের কাঠিন্য অনুযায়ী জলে কত পরিমাণ রাসায়নিক মেশাতে হবে, তা সহজেই নির্ণয় করা যাবে; যদি প্রাথমিক ভাবে জলের কাঠিন্য কত ছিল তা পরীক্ষাগারে থেকে জানা যায়।
রেশম সুতোর গুণগত মানের উপরই রেশম বস্ত্রের গুণগত মান একান্ত ভাবে নির্ভর করে। সুতোর শক্তি, তার দৈর্ঘ্য, তার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ফিরানের গুণমান ইত্যাদি বিভিন্ন মাপকাঠিতে সুতোর মান নির্ণয় করা হয়। এই মাপকাঠিগুলি নিন্ম রূপ :
রেশম চাষের মূল উদ্দেশ্য হল উন্নত মানের রেশম বস্ত্রের উপযোগী উন্নত মানের রেশম সুতোর উত্পাদন। এটি তখনই সম্ভব, যখন উন্নত মানের গুটি সঠিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কাটাই করে সুতোর উত্পাদন করা যায়। অতএব রেশমগুটিকেই রেশম শিল্পের কাঁচা মাল হিসেবে ধরা যায়। তাই উন্নত মানের গুটি তৈরির দিকে সবার নজর দেওয়া উচিত। এবং উপরিউক্ত মাপকাঠির ভিত্তিতে বিচার বিবেচনা করে উন্নত মানের সুতো বাছাই ও তা ব্যবহার করে উন্নত মানের রেশম বস্ত্র তৈরিতে সহযোগিতা করা উচিত। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য বর্তমানে কেন্দ্রীয় রেশম পর্ষদ ও রাজ্য রেশম শিল্প অধিকারের প্রচেষ্টায় উন্নত মানের গুটি উত্পাদন বৃদ্ধির নিরলস প্রয়াস চলছে। যে গুটি থেকে উন্নত মানের রেশম সুতো তথা উন্নত মানের রেশম বস্ত্রের উত্পাদন সম্ভব হচ্ছে। এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে যত্নবান হতে আহ্বান জানানো হচ্ছে।
তথ্যসূত্র : রেশম শিল্প অধিকার, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/18/2020