অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

নারকেল

‘কল্পবৃক্ষ’

‘কল্পবৃক্ষ’ নামে এই গাছটি সমাদৃত। কারণ অবশ্যই শুধুমাত্র এর ফল নয়, এই গাছটির সমস্ত অংশই, তা পাতাই হোক বা ফলের খোল, ছিবড়েই হোক বা মূল গাছ – এই নারকেল বৃক্ষের প্রতিটি অংশই বিভিন্ন ভাবে আমরা ব্যবহার করি। এবং ভোজ্য তেল হিসাবেও আমাদের দেশের দক্ষিণের প্রদেশগুলিতে এর ব্যবহার ব্যাপক, বিশেষত সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে। মূলত এই ফলটির জীবিত কাল ৫০ – ৬০ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। সে কারণে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এর চাষ করার ক্ষেত্রে স্থায়ী বাগানের প্রয়োজন যা আমাদের দেশে মূলত কেরল, তামিলনাড়ু রাজ্যেই হয়ে থাকে। আর যে সব রাজ্যে কম-বেশি নারকেল চাষ হয়ে থাকে তার মধ্যে রয়েছে আন্দামান, লাক্ষা দ্বীপ, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ ইত্যাদি। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মধ্যে শ্রীলঙ্কা, ফিলিপিনস, ফিজি-সহ সমুদ্রতীরবর্তী সব দ্বীপ-দেশেই নারকেল চাষ করা হয়। মূলত সমুদ্রতীরবর্তী ট্রপিকাল ও হিউমিড অঞ্চলভুক্ত দেশগুলিতেই এই ফল চাষের ব্যাপক বিস্তৃতি। সারা পৃথিবীতে আনুমানিক ৮ লক্ষ একর এলাকায় নারকেল চাষ হয়। তার মধ্যে ভারতে এর এলাকা হল ১.৬ লক্ষ একর।

আমাদের দেশে এই ফলটির ব্যবহার বিভিন্ন ভাবে হয়। বিশেষত দক্ষিণ ভারতে ও উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যেমন — পূজাপার্বণ, গৃহের শুভ অনুষ্ঠানাদি সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে এই ফলটির ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে, যা খুব শুভ হিসাবে গণ্য করেন বা বিশ্বাস করেন ওই সমস্ত এলাকার অধিবাসীগণ। আমাদের রাজ্যে যদিও অপরিপক্ক নারিকেল অর্থাৎ ডাবের ব্যবহার সব থেকে বেশি। রোগীর পথ্য হিসাবে অন্যান্য পানীয়র পাশাপাশি ডাবের জল ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আমাদের দেশের যে ক’টি রাজ্যে এই ফলটির ব্যাপক চাষ হয় সেখানে ভোজ্য তৈল (৫০ – ৭০ শতাংশ তেল থাকে) নিষ্কাশন ছাড়াও এর খোলা ও ছোবড়াটিকে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা হয়। দড়ি, ম্যাট্রেস, বিভিন্ন হস্তশিল্প ও অন্যান্য শিল্পে ব্যবহৃত হয়। যে কারণে ওই সমস্ত রাজ্যে ‘ডাব’ হিসাবে ব্যবহার আইনত নিয়ন্ত্রিত। নারকেলের তেল মার্জারিন, ঘি, সাবান উত্পাদনে ব্যবহৃত হয়। নারকেলের শাঁস থেকে গুড়, চিনি, ভিনিগার ইত্যাদি উত্পাদিত হয়। এ ছাড়াও, নারিকেলের খইল গবাদি পশুর খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। নারকেল গাছের পাতা মাদুর, গৃহের আচ্ছাদন, ঝুড়ি, পর্দা ও ঝাঁটা তৈরিতে ব্যাপক ভাবে ব্যাবহার করা হয়। আর মূল গাছটি কাঠ ও জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার হয়। সুতরাং নারকেলের জনপ্রিয়তা শুধু খাদ্য হিসাবেই নয়, তন্তু এবং তৈলবীজ হিসাবেও।

আবহাওয়া জমি বীজতলা

আবহাওয়া

নারকেলের জন্য অনুকূল আবহাওয়া হল ট্রপিক্যাল (ক্রান্তীয়) এলাকাভুক্ত অঞ্চলে যে ধরনের আবহাওয়া থাকে যেমন উজ্জ্বল সূর্যালোক, উচ্চ আর্দ্রতা এবং পরিমিত বৃষ্টিপাত -- ৪০ ইঞ্চি বা তার বেশি। এই গাছটি সমুদ্রতল থেকে ২৫০০ – ৩০০০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত হতে পারে। ঠান্ডা ও কুয়াশাযুক্ত আবহাওয়া এই ফলটির ক্ষেত্রে প্রতিকুল। অন্য দিকে প্রচন্ড খরা আবহাওয়া বা দীর্ঘ সময় জমে থাকা জল এই গাছ সহ্য করতে পারে না।

মাটি

মূলত বেলে, দোয়াঁশ বা উপকূলবর্তী বেলে মাটি বা নদীর সন্নিহিত এলাকার মাটি এই ফসলের উপযোগী। এ ছাড়াও লাল দোঁয়াশ বা হাল্কা ব্ল্যাক কটন মাটিতেও হতে পারে এই ফল।

জাত

ইস্ট কোস্ট টল, হাজারী, কেরল বেঁটে, আন্দামান লম্বা ও দেশি লম্বা।

নাট নির্বাচন ও বীজতলা তৈরি

যে হেতু এটি দীর্ঘ বয়সের গাছ, সে কারণে ভালো নাট নির্বাচন জরুরি। বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানের উচ্চ উত্পাদনশীল মূল গাছের সঠিক বয়সের, সঠিক মাপের সঠিক সাইজের পরিপূর্ণ নাট নির্বাচন করতে হবে। বর্ষার পর পরই সারি থেকে সারি ১ ফুট দূরত্বে ও ১৫ ইঞ্চি দূরত্বে প্রতিটি নাট লাগাতে হবে। সাধারণত এক একটি বীজতলা লম্বায় ২৫ ফুট ও চওড়ায় ৫ ফুট। বর্ষার জল জমার সম্ভাবনা থাকলে বীজতলাগুলি ৬ – ১২ ইঞ্চি উঁচু করলে ভালো হয়। বীজতলায় ২ – ৩ দিন অন্তর হাল্কা সেচ দিতে হবে এবং আগাছামুক্ত রাখতে হবে। ৯ – ১২ মাসের মধ্য উপযুক্ত চারা তৈরি হয়ে যাবে।

মূল জমি

এক বত্সরের চারা-সহ নাটটি মূল জমিতে ১৮ ফুট x ১৮ ফুট দূরত্বে গর্ত করে লাগাতে হবে। প্রতিটি গর্তের মাপ হবে ৩ ফুট x ৩ ফুট x ৩ ফুট। প্রতিটি গর্তে, বর্ষার আগে ও পরে প্রতি বারে ১০ কেজি জৈব সার, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২০০ গ্রাম সি সুপার ফসফেট ও ২০০ গ্রাম মিউরেট অফ পটাশ দিতে হবে। এর পর বর্ষার পর পরই নাটগুলি গর্তে বসিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। প্রথম দু’ বছর সময়ে প্রয়োজনীয় সেচ দিতে হবে। অতিরিক্ত ফসল হিসাবে দু’টি সারির মধ্যে ডালশস্য, আদা, হলুদ, কলা, সবজি চাষ করা যেতে পারে অতিরিক্ত উপার্জনের জন্য।

সার প্রয়োগ

মোটামুটি ভাবে নাট লাগানোর ৬ – ৭ বছর সময়কালের মধ্যে ফলন হতে শুরু করবে। প্রতিটি ফলন্ত গাছের বর্ষার আগে ও পরে প্রতি বারে ৪০ কেজি জৈব সার, ৫০০- ৬০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৭০০ – ৮০০ গ্রাম সি সুপার ফসফেট ও ৮০০ – ৯০০ গ্রাম মিউরেট অফ পটাশ দিতে হবে। প্রতিটি ফলন্ত গাছে প্রথম বছরের দ্বিগুণ সার দ্বিতীয় বছরে ও তিন গুণ সার তৃতীয় বছরে দিতে হবে। এ ভাবে প্রথম ৫ বছরে সারের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫ বছর পর আর সারের পরিমাণ না বাড়িয়ে ওই মাত্রায় প্রতি বছর বর্ষার আগে ও পরে সার দিতে হবে। যে হেতু এক একটি গাছের জীবত্কাল ৫০ – ৬০ বছর পর্যন্ত এবং একর প্রতি প্রতি বছর ৩০০০০ – ৩৫০০০ নারকেল পাওয়া যায়, সে কারণে মাটিতে প্রয়োজনীয় খাদ্যগুণ অর্থাৎ না-ফ-প-এর অভাব যাতে না হয় সে জন্য রাসায়নিক সার প্রতি বছর প্রয়োগ করা অতি আবশ্যিক।

ফল কাটা ও উৎপাদন

নারকেল এমন একটি ফল যার ফলন শুরু হওয়ার পর থেকেই নিয়মিত ভাবে প্রতি পাতার মূল প্রান্ত থেকে নারকেলের মঞ্জুরি বের হয় এবং প্রতিটি মঞ্জুরিতে অসংখ্য ছোট ছোট নারকেল হতে শুরু করে। নারকেলের ফুল মঞ্জুরি আসার এক বছরের মধ্যে পূর্ণ বয়সের হয়ে যায় এবং ১২ বা তার বেশি ডাবের কাঁদি প্রতি গাছে উত্পাদিত হয়। এবং ৪৫ – ৬০ দিন অন্তর ওই কাঁদি কাটা যেতে পারে। ডাব হিসাবে ব্যবহারের ব্যাপক চলন রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্রে প্রভৃতি রাজ্যে। যদিও কেরল, তামিলনাড়ু ইত্যাদি রাজ্যে ডাব কাটার উপর কিছু নিষেধাজ্ঞা আছে বাণিজ্যিক কারণে। কারণ পূর্ণ বয়সের নারকেলের বাণিজ্যিক ব্যবহার বিভিন্ন ভাবে রয়েছে ওই সমস্ত রাজ্যে। সাধারণত গড়ে প্রতি একরে ৩০০০০ – ৩৫০০০ সংখ্যক নারকেল হয় প্রতি বছর এবং তা সর্বোচ্চ ৭০০০০ পর্যন্ত হতে পারে সুষ্ঠু পরিচর্যা ও বিজ্ঞান সম্মত ভাবে বাগান রক্ষণাবেক্ষণ করলে।

সূত্র

  1. পোর্টাল কনটেন্ট টিম

সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/15/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate