অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

চা চাষ

চা (ইংরেজি: Tea) বলতে সচরাচর সুগন্ধযুক্ত ও স্বাদবিশিষ্ট এক ধরণের ঊষ্ণ পানীয়কে বোঝায় যা চা পাতা জল ফুটিয়ে বা গরম জল ভিজিয়ে তৈরী করা হয়। চা গাছ থেকে চা পাতা পাওয়া যায়। চা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া সিনেনসিস। 'চা পাতা' কার্যত চা গাছের পাতা, পর্ব ও মুকুলের একটি কৃষিজাত পণ্য যা বিভিন্ন উপায়ে প্রস্তুত করা হয়।

ইংরজিতে চা-এর প্রতিশব্দ হলো টি। গ্রীকদেবী থিয়ার নামানুসারে এর নাম হয় টি। চীনে ‘টি’-এর উচ্চারণ ছিল ‘চি’। পরে হয়ে যায় ‘চা’।

জলর পরেই চা বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত পানীয়। এর একধরণের স্নিগ্ধ, প্রশান্তিদায়ক স্বাদ রয়েছে এবং অনেকেই এটি উপভোগ করে। প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া অনুসারে চা-কে পাঁচটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যেমন - কালো চা, সবুজ চা, ইষ্টক চা, উলং বা ওলোং চা এবং প্যারাগুয়ে চা। এছাড়াও, সাদা চা, হলুদ চা, পুয়ের চা-সহ আরো বিভিন্ন ধরণের চা রয়েছে। তবে সর্বাধিক পরিচিত ও ব্যবহৃত চা হল সাদা, সবুজ, উলং এবং কাল চা। প্রায় সবরকম চা-ই ক্যামেলিয়া সিনেনসিস থেকে তৈরি হলেও বিভিন্ন উপায়ে প্রস্তুতের কারণে এক এক ধরণের চা এক এক রকম স্বাদযুক্ত। পুয়ের চা একধরণের গাঁজনোত্তর চা যা অনেক ক্ষেত্রে ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

কিছু কিছু চায়ে ক্যামেলিয়া সিনেনসিস থাকে না। ভেষজ চা হল একধরণের নিষিক্ত পাতা, ফুল, লতা ও উদ্ভিদের অন্যান্য অংশ যাতে কোন ক্যামেলিয়া সিনেনসিস নেই। লাল চা সাধারণত কাল চা (কোরিয়া, চীন ও জাপানে ব্যবহৃত হয়) অথবা দক্ষিণ আফ্রিকার রুইবস গাছ থেকে তৈরি হয় এবং এতেও কোন ক্যামেলিয়া সিনেনসিস নেই।

ইতিহাস

চা মৌসুমী অঞ্চলের পার্বত্য ও উচ্চভূমির ফসল। একপ্রকার চিরহরিৎ বৃক্ষের পাতা শুকিয়ে চা প্রস্তুত করা হয়। চীন দেশই চায়ের আদি জন্মভূমি। বর্তমানে এটি বিশ্বের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য পানীয়রূপে গণ্য করা হয়।

১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে চীনে বাণিজ্যিকভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু হয়। আর ভারতবর্ষে এর চাষ শুরু হয় ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে। ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশরা সিলেটে সর্বপ্রথম চায়ের গাছ খুঁজে পায়। এরপর ১৮৫৭ সালে সিলেটের মালনীছড়ায় শুরু হয় বাণিজ্যিক চা-চাষ। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে সমগ্র বিশ্বে ৩৮,০০,০০০ টন চা পাতা উৎপাদিত হয়েছে।

চাষ পদ্ধতি

চা প্রধান কান্তীয় মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলের ফসল হলেও উপ-ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলেও এটি কিছু কিছু চাষ করা যায়। প্রথম অবস্থায় পাহাড়ের ঢালু জমি পরিষ্কার করা হয়। এর চারা আলাদা বীজতলায় তৈরী করা হয়।

চারাগুলো যখন ২০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ হয়, তখন সেগুলোকে চা-বাগানে সারিবদ্ধভাবে রোপণ করা হয়। সাধারণতঃ দেড় মিটার পরপর চারাগুলোকে রোপণ করা হয়ে থাকে। এরপর গাছগুলোকে বৃদ্ধির জন্য যথামাত্রায় সার প্রয়োগ ও জল সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। এভাবে দুই থেকে তিন বছর পরিচর্যার পর পাতা সংগ্রহের উপযোগী করে তোলা হয়। কিন্তু গাছগুলো পাঁচ বছর না হওয়া পর্যন্ত যথাযথভাবে পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে না। একটি চা গাছ গড়পড়তা ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত উৎপাদনের উপযোগী থাকে। তারপর পুণরায় নতুন গাছ রোপণ করতে হয়।

প্রাকৃতিক উপাদান

প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এমন পাহাড়িয়া বা উচ্চ ঢালু জমি চা চাষের জন্য সবিশেষ উপযোগী। জল নিষ্কাশনের বন্দোবস্ত থাকলে উচ্চ সমতল ভূমিতেও চা চাষ করা সম্ভবপর। হিউমাস সারযুক্ত এবং লৌহমিশ্রিত দো-আঁশ মাটি চা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু চা উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন। চা চাষের জন্য ১৭৫ - ২৫০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত আবশ্যক। এজন্য মৌসুমী ও নিরক্ষীয় অঞ্চলের দেশগুলোয় চা চাষের উৎপাদন বেশী হয়ে থাকে।

প্রকারভেদ

পৃথিবীতে আসাম এবং চীনজাতীয় - এ দুই প্রকারের চা গাছ দেখতে পাওয়া যায়। তন্মধ্যে -

আসামজাতীয় চা গাছ ভারত ও শ্রীলঙ্কায় অধিক চাষ করা হয়। এ ধরণের গাছ বেশ বড় এবং বহু পাতাযুক্ত হয়। বিধায়, এটি বাণিজ্যিকভিত্তিতে চাষ করার জন্যে বিশেষ উপযোগী। এ গাছ প্রায় ৬ মিটার বা ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। পাতার নাগাল পাওয়া এবং পাতা সংগ্রহের জন্য গাছগুলোকে ১.২ মিটার বা ৪ ফুটের অধিক বড় হতে দেয়া হয় না। ছেঁটে দেয়ার ফলে চা গাছগুলো ঘণঝোঁপে পরিণত হয়।

অন্যদিকে চীনজাতীয় গাছ আকারে বেশ ছোট হয়। এতে পাতার সংখ্যাও অনেক কম থাকে। এ গাছ না ছাঁটলেও পাতা তোলার মতো উচ্চতাসম্পন্ন হয়ে থাকে।

ব্যবস্থাপনা

চা গাছ রোপণ, আগাছা পরিস্কারকরণ, সার প্রয়োগ করা, গাছ ছাঁটা, কচি পাতা চয়ন করা, চা-পাতা শুকানো, সেঁকা, চা-প্যাকিং ইত্যাদি বহুবিধ ধরণের কর্মকাণ্ডে দক্ষ-অদক্ষ প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ে। পাতা চয়নের কাজে দক্ষ মহিলা শ্রমিক নিয়োজিত থাকে। বিষয়টি বেশ ধৈর্য্যের বিধায়, বাগান কর্তৃপক্ষ মহিলা শ্রমিকদেরকেই পাতা চয়নের জন্য নিয়োগ দিয়ে থাকে। এছাড়াও, চা চাষাবাদের জন্য প্রচুর জৈব ও রাসায়নিক সারসহ প্রয়োজনীয় কীটনাশক সরবরাহ করা হয়।

গুণাগুন

চীনজাতীয় গাছের পাতা স্বাদ ও গন্ধের জন্য সুখ্যাত। কিন্তু আসামজাতীয় গাছের পাতা রঙের জন্য বিখ্যাত। এই দুই ধরণের চা-পাতার উন্নত সংমিশ্রণের উপরই এর গুণাগুন নির্ভর করে। স্বভাবতঃই চা মিশ্রণ একটি নিপুণতা ও অত্যন্ত কঠিন কাজ। তাই এটি অভিজ্ঞ ব্যক্তির দ্বারা সম্পাদনা করতে হয়। এরূপভাবে চা মিশ্রণে নৈপুণ্যতা লাভের প্রেক্ষাপটে লিপটন, ব্রুকবণ্ড প্রভৃতি চা প্রস্তুতকারক কোম্পানীগুলো বিশ্ববাজার দখল ও খ্যাতি লাভ করেছে।

চা গাছ হতে পাতা সংগ্রহ করতে ব্যক্তিকে যথেষ্ট নৈপুণ্যতা ও দক্ষতা অর্জন করতে হয়। কারণ দু'টি পাতা ও একটি কুঁড়ি একসঙ্গে তুলতে না পারলে চায়ের উৎকর্ষতা ও আমেজ অনেকাংশেই নষ্ট হয়ে যায়। চীন ও জাপানে বছরে গড়পড়তা তিনবার চা-পাতা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় খুব ঘন ঘন পাতা সংগ্রহ করা যায়। এদেশগুলোতে বছরে গড়ে ষোল থেকে বিশ বার পর্যন্ত চা পাতা সংগ্রহ করতে দেখা যায়।

উৎপাদন বন্টন ব্যবস্থা

দার্জিলিং-এর চা-বাগানে কর্মরত চা-শ্রমিক।

২০০৩ সালে বিশ্বে চা উৎপাদিত হয়েছিল ৩.২১ মিলিয়ন টন। ২০০৮ সালে বিশ্বের চা উৎপাদন ৪.৭৩ মিলিয়ন টনেরও বেশী হয়েছিল। সর্ববৃহৎ চা উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে - গণপ্রজাতন্ত্রী চীন, ভারত, কেনিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং তুরস্ক অন্যতম।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক চা উৎপাদন (টন হিসেবে) নিম্নের ছকে দেখানো হলো। জানুয়ারি, ২০১১ সালে উপাত্তগুলো জাতিসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থার কাছ থেকে নেয়া হয়েছে -

নং

দেশ

২০০৮

২০০৯

২০১০

২০১১

চীন

১২,৭৪,৯৮৪

১৩,৭৫,৭৮০

১৪,৬৭,৪৬৭

১৬,৪০,৩১০

ভারত

৯,৮৭,০০০

৯,৭২,৭০০

৯,৯১,১৮০

১০,৬৩,৫০০

কেনিয়া

৩,৪৫,৮০০

৩,১৪,১০০

৩,৯৯,০০০

৩,৭৭,৯১২

শ্রীলঙ্কা

৩,১৮,৭০০

২,৯০,০০০

২,৮২,৩০০

৩,২৭,৫০০

তুরস্ক

১,৯৮,০৪৬

১,৯৮,৬০১

২,৩৫,০০০

২,২১,৬০০

ভিয়েতনাম

১,৭৩,৫০০

১,৮৫,৭০০

১,৯৮,৪৬৬

২,০৬,৬০০

ইরান

১,৬৫,৭১৭

১,৬৫,৭১৭

১,৬৫,৭১৭

১,৬২,৫১৭

ইন্দোনেশিয়া

১,৫০,৮৫১

১,৪৬,৪৪০

১,৫০,০০০

১,৪২,৪০০

আর্জেন্টিনা

৮০,১৪২

৭১,৭১৫

৮৮,৫৭৪

৯৬,৫৭২

১০

জাপান

৯৬,৫০০

৮৬,০০০

৮৫,০০০

৮২,১০০

সর্বমোট

বিশ্বে

৪২,১১,৩৯৭

৪২,৪২,২৮০

৪৫,১৮,০৬০

৪৩,২১,০১১

জৈব জ্বালানি

২০১০ সালে পাকিস্তানের কায়দে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যানোবিজ্ঞানীরা ব্যবহৃত চায়ের পাতা থেকে জৈব জ্বালানি তৈরির একটি উপায় বের করেছেন। তাঁরা এ থেকে বিকল্প পদ্ধতিতে ব্যবহৃত ফেলে দেয়া চা পাতা থেকে গ্যাসিফিকেশন পদ্ধতিতে ২৮% হাইড্রোকার্বন গ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব। এই গ্যাস কয়লার মতোই সরাসরি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। তবে অন্যান্য গবেষকদের মতে এ উপায়ে জৈব জ্বালানি তৈরির খরচ অনেক বেশি।

সুত্র: বিকাশপিডিয়া টিম, পশ্চিমবঙ্গ

সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/21/2019



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate