প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণা অনুযায়ী, খ্রিস্টপূর্ব ১৭০০ অব্দ থেকে ধান চাষ বঙ্গ জীবনের অঙ্গ। বঙ্গ জীবনে এই শস্যের এমনই গুরুত্ব যে ধানের ফলন কম হওয়ায় ১৯৪২-৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ গিয়েছিল। এই অঞ্চলে ধান একটি স্বাভাবিক শস্য, দক্ষিণে সমুদ্রতীর থেকে উত্তরে ৬০০০ ফুট উচ্চতা অবধি গোটা রাজ্যেই ধান উৎপন্ন হয়। দিনে ৮ ইঞ্চি করে কাণ্ডের বৃদ্ধি হওয়ায় উপকূল ও নদী তীরবর্তী বেশ কিছু জায়গায় ৬-৮ ফুট জলের মধ্যেও এই শস্য উৎপন্ন হয়।
অন্য দিকে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে তীব্র জলাভাবের মধ্যেও শুকনো মাটিতে এই ফসল উৎপন্ন হয়। সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ধান বৈচিত্র্যের এক সমৃদ্ধ ক্ষেত্র। বিনা চেষ্টায় এত রকম ধান এখানে উৎপন্ন হয়, যে বিজ্ঞানীরা এগুলির নাম দিয়েছেন, ওরিজা স্যাটিভা ভার, বেঙ্গালেনসিস। চুঁচুড়ার ধান গবেষণা কেন্দ্রের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী অবিভক্ত বাংলায় প্রায় ৫০০০ রকমের ধান উৎপন্ন হত, যার বেশ কিছু সম্পর্কে বিখ্যাত গবেষক ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টার ১৮৬৪ সালে তার ‘এ স্ট্যাটিস্টিক্যাল হ্যান্ডবুক অফ বেঙ্গল’ বইতে লিখে গেছেন। এই সমৃদ্ধিতে ক্ষয় আসতে শুরু করে ১৯৭৫ সাল থেকে । এ সময় থেকেই মাঝারি উচ্চতার অধিক ফলনশীল ধান, ঐতিহ্যশালী ধানের বৈচিত্র্যকে সরিয়ে জায়গা করে নিতে শুরু করে।
আধুনিক প্রজাতির ধানের আগ্রাসনে এখনও সব রকমের পুরনো ধানকে উচ্ছেদ করা যায়নি। এখনও ৪৭২ রকমের পুরনো আমলের ধান পাওয়া যায়, বর্ষার সময়ে মোট ধান উৎপাদনের এলাকার ১৫ শতাংশ অঞ্চলে এই সব ধান উৎপন্ন হয়। আজকের দিনেও এই সব ঐতিহ্যশালী ধানের বেশ কয়েকটির যথেষ্ট বাণিজ্যিক সম্ভাবনা আছে।
ধান বাঙালির জীবনে জীবন ও সমৃদ্ধির প্রতীক। ধানকে কেন্দ্র করে বাঙালি জীবনে বহু উৎসব ও পরম্পরা তৈরি হয়েছে। বিখ্যাত নবান্ন ও পৌষ সংক্রান্তি ইত্যাদি উৎসবগুলি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে ফসল তোলার প্রথম দিনের সঙ্গে যুক্ত। এ সময় চাল দিয়ে বিশেষ পদ তৈরি করে ঈশ্বরের উদ্দেশে নিবেদন বাঙালির ঐতিহ্য। নবজাতককে তরল থেকে স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাসে নিয়ে আসার সময় তাকে সেদ্ধ ভাত খাইয়ে অন্নপ্রাশন-এর আয়োজন একেবারেই বাঙালি সংস্কৃতি। ধান এবং দূর্বা ঘাস দিয়ে বাবা-মা আশীর্বাদ করার পরেই যে কোনও বিবাহ অনুষ্ঠান শুরু হয়। মৃত্যুর পরেও শ্মশান অবধি খই ছড়াতে ছড়াতে যাওয়া হয়। বাংলা সাহিত্যেও ধান ও ধানক্ষেতের সৌন্দর্য্য নিয়ে বহু ছড়া, কবিতা, গান লেখা হয়েছে। এ ভাবেই ধান বাঙালি জীবনের সঙ্গে প্রকৃতি ও অতিপ্রাকৃতিক শক্তির সম্পর্ক, মেলবন্ধনের প্রকাশ হয়ে বিরাজমান।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে রফতানি করা হয়, এমন কয়েকটি সুগন্ধী চাল
পশ্চিমবঙ্গথেকে রফতানি করা হয়, এমন কয়েকটি গন্ধহীন সরু চাল
সঙ্কলকঃ Dr. Subhendu Deb Chatterjee
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/29/2020
এটি একবীজপত্রী তৃণ জাতীয় উদ্ভিদ। মূলত গ্রীষ্মপ্রধা...