অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

বঙ্গজীবনের প্রাণভোমরা : ধান

অধিক ফলন ও পুষ্টি উপাদান

এই পশ্চিমবঙ্গতেই পাওয়া যায় অধিক ফলনশীল দেশি জাতের ধান, অধিক পুষ্টি উপাদানযুক্ত দেশি ধান, দীর্ঘ শীষযুক্ত জাত, উন্মুক্ত ধান, অধিক দানাযুক্ত শীর্ষসম্পন্ন জাত, সহজে দানা ঝরে পড়ে না এমন ধানের জাত, অধিক ওজনসম্পন্ন দানাযুক্ত জাত (নীচের তালিকা দেখুন)।

অধিক ফলন উপযোগী ও পুষ্টি উপাদানসম্পন্ন দেশি ধানের জাতসমূহ

  1. সহজে দানা ঝরে পড়ে না
  2. উপযোগী জাত : মারিচবুটি, চার্ণক, বোল্ডার, আজান, দুধেরসর, আশকাটা

  3. সহজে নুয়ে পড়ে না
  4. উপযোগী জাত : ভাসামানিক, লাটিশাল, গোড়া, কলমকাটি, তালমাড়ি, মাঝিঝুলুর

  5. অধিক দানাযুক্ত (>২০০) শিষসম্পন্ন
  6. উপযোগী জাত : গন্ধেশ্বরী, বাদশাভোগ, সীতাভোগ, গোবিন্দভোগ, রাঁধুনিপাগল

  7. লম্বা শিষসম্পন্ন ধান (দৈর্ঘ্য‌ >৩০ সেমি)
  8. উপযোগী জাত : মহিষলাদান, পাটনাই, সীতাশাল, নাইজারশাল, নোনারামশাল

  9. উন্মুক্ত শিষযুক্ত ধান
  10. উপযোগী জাত : সিঁদুরমুখী, ভূতমুড়ি, রাঁধুনিপাগল, কালিকলমা, বাদশাভোগ, রঘুশাল

  11. অধিক ওজনসম্পন্ন দানাযুক্ত
  12. উপযোগী জাত : চাপাখুশি, পাটনাই, কুমারগোড়, আঁশফল, ভীমশাল, গোড়া, বাকুই

  13. লম্বা খড়যুক্ত দেশি ধান
  14. উপযোগী জাত : মহিষলাদান, বাঁশকাটি, কলমা, কলমাকাটি, কবিরাজশাল, দুধের সর

  15. অধিক ফলনশীল দেশি ধান
  16. উপযোগী জাত : পাটনাই, তালমাড়ি, কবিরাজশাল, বহুরূপী, লবকুশ, জামাইনাড়ু

  17. উচ্চ লৌহযুক্ত ধান
  18. উপযোগী জাত : জয়াসিলেট, চাপাখুশি, সীতাভোগ, ভূতমুড়ি, কবিরাজশাল, কালোনুনিয়া

  19. উচ্চ দস্তাযুক্ত ধান
  20. উপযোগী জাত : কালোনুনিয়া, বাদশাভোগ, পাটনাই, রাঁধুনিপাগল, দুধের সর, গোলাপসরু

রসনার মজা ও নান্দনিক তৃপ্তি

ধানগাছ কৃষির আয়ত্তে আসার পরই সূচনা হয় ধানের বিভিন্ন জাতের সৃষ্টি। আদি কৃষককুল থেকে শুরু করে পরবর্তী কালের কৃষি বৈজ্ঞানিক ধানের যে বিভিন্ন জাত নির্বাচন করেছিলেন, সেটা কেবল প্রাকৃতিক বিভিন্নতার উপযোগী করে ফসল উৎপাদনের কারণে নয়, রসনার মজা ও নান্দনিক তৃপ্তির কারণেও বটে। সুন্দর সরু চালের জন্য‌ নির্বাচিত হল— সীতাশাল, রূপশাল, বাঁশকাটি ধান। সুস্বাদু অন্নের জন্য‌ কয়া, বকুলফুল, মধুমালতী, ঝিঙাশাল প্রভৃতি। অপরূপ খৈ-এর জন্য‌ কনকচূড়, বিন্নি, ভাসামানিক, লক্ষ্মীচূড়া ইত্য‌াদি। চমৎকার মুড়ির জন্য‌ - রঘুশাল, লাল-ঝুলুর, চন্দ্রকান্তা, মুর্গিবিলাস প্রভৃতি। পরমান্নের উপযোগী ছোটদানা চালের জন্য‌ শ্য‌ামা, তুলসীমুকুল, তুলসীমঞ্জরী, বৌ-পাগল। দেবভোগ্য‌ সুরভিত চালের জন্য‌ বাসমতি, গোবিন্দভোগ, বাদশাভোগ, তুলাইপাঞ্জি, কাটারিভোগ, রাঁধুনিপাগল প্রভৃতি। এই দৃষ্টান্তগুলি কেবল বাংলার ঝাঁপি থেকেই নেওয়া এবং তালিকাটি এখানেই সম্পূর্ণ নয় (নীচের তালিকা দেখুন)।

রসনাতৃপ্তিকর ও নান্দনিক গুণসম্পন্ন দেশি জাতসমূহ

  1. সুন্দর সরু চাল
  2. উপযোগী জাত : সীতাশাল, রূপশাল, বাঁশকাটি, দুধের সর, চূর্ণকাটি, ঝিঙাশাল, ইন্দ্রশাল

  3. সুস্বাদু অন্ন
  4. উপযোগী জাত : কয়া, বকুলফুল, মধুমালতী, ঝিঙাশাল

  5. ৩। অপরূপ খৈ
  6. উপযোগী জাত : কনকচূড়, বিন্নি, ভাসামানিক, লক্ষ্মীচূড়া, বোল্ডার, কলমা, দুধের সর, সিঁদুরমুখী

  7. পরমান্নের জন্য‌ ছোট সরু চাল
  8. উপযোগী জাত : শ্য‌ামা, তুলসীমুকুল, তুলসীমঞ্জরী, বৌ-পাগলী, রাঁধুনীপাগল, তুলসীভোগ

  9. সরু সুগন্ধী চাল
  10. উপযোগী জাত : বাসমতী, গোবিন্দভোগ, বাদশাভোগ, তুলাইপাঞ্জি, কাটারিভোগ, রাঁধুনিপাগল, গোপালভোগ, গোলাপসরু

  11. চমৎকার মুড়ি
  12. উপযোগী জাত : রঘুশাল, লাল-ঝুলুর, চন্দ্রকান্তা, মৌল, ইন্দ্রশাল, জামাইনাড়ু, ভাসামানিক, বোল্ডার, মুর্গিবিলাস

  13. ভাল চিঁড়ে
  14. উপযোগী জাত: আড্ডে, আজান, মানিক-কলমা, বোল্ডার, ঝিঙাশাল, মরিচবুটি

রূপ রস গন্ধ বর্ণ আকার

বাংলার এই সব দেশি ধানের নামকরণের পিছনেও রয়েছে নানান বৈচিত্র্যময় ইতিহাস যা লিপিবদ্ধ নেই কোনও বৈজ্ঞানিক নথিতে। হয়তো নথিভুক্ত করে রাখার কথা কখনও মনেও হয়নি উদ্ভাবকের। আবিষ্কৃত বা নির্বাচিত কোনও নতুন জাতের ধানের নাম রাখা হয়েছে তার রূপ (হুগলির কেলে, মেদিনীপুরের বহুরূপী, পুরুলিয়ার সিঁদুরমুখী ইত্য‌াদি) রস (কোচবিহারের চিনিআতপ, বাঁকুড়ার লাবণ্য‌শাল, ২৪ পরগনার অলি ইত্য‌াদি), গন্ধ (মেদিনীপুরের কাঁঠালিচাঁপা ও পিপারবাস, বাঁকুড়ার রাঁধুনিপাগল ইত্য‌াদি), বর্ণ (বাঁকুড়ার দুধকলমা, ২৪ পরগণার দুধের সর – সেদ্ধ ভাতের রং ফোটানো দুধের সরের বর্ণের মতো) বা আকার–আকৃতি (কোচবিহারের বেগুনবিচি, বীরভূমের ক্ষীরাবিচি, মেদিনীপুরের ভীমশাল, বাঁকুড়ার বোল্ডার) অনুসারে, কখনও বা সমুদ্র-নদী (বীরভূমের সমুদ্রশাল, নদিয়ার জলকামিনী, ২৪ পরগনার লক্ষ্মীদিঘল ইত্য‌াদি), পশু-পাখি (কোচবিহারের শিয়ালভোমরা ও হরিণকাজল, পুরুলিয়ার ঘোড়াশাল এবং হাতিপাঞ্জর, মেদিনীপুরের মুরগিপালক ইত্য‌াদি), ফুলের (বাঁকুড়ার বকুলফুল, বীরভূমের বকুলশাল ইত্য‌াদি) নামানুসারে অথবা কোনও অঞ্চল (মেদিনীপুরের বৃন্দাবনভুটা, পুরুলিয়ার কাশীফুল, বীরভূমের দেরাদুনবাস ইত্য‌াদি), দেব-দেবী (পুরুলিয়ার অগ্নিশাল, হুগলির অন্নপূর্ণা, বর্ধমানের গোবিন্দভোগ, তরাই অঞ্চলের তুলসীভোগ ইত্য‌াদি), ব্য‌ক্তি (বাঁকুড়ার চৈতন্য‌, জলপাইগুড়ি মানিকশাল, ২৪ পরগনার মল্লিকা ও নিকুঞ্জ ইত্য‌াদি) বা ব্যক্তির পদবি (পুরুলিয়ার মাঝিঝুলুর ও মাঝিশাল ইত্যাদি) অনুসারে, আবার কখনও বা ধান পাকার সময় (বাঁকুড়ার আশ্বিনশাল, আশ্বিনঝরিয়া, মেদিনীপুরের কার্তিক, পাটনাই ইত্য‌াদি) অনুযায়ী অথবা ব্য‌ঞ্জনাধর্মী (মেদিনীপুরের ভেলকি, বীরভূমের ডুমুরফুল, ২৪ পরগনার জামাইনাড়ু – আগেকার দিনে এই ধানের খই থেকে জামাইদের জন্য‌ নাড়ু বানানো হত)।

শিষে ধানের গাঁথুনি অনুসারেও বেশ কিছু ধানের নামকরণ করা হয়েছে, যেমন — ২৪ পরগনার খেজুরছড়ি, মেদিনীপুরের খেজুরকাঁদি, পুরুলিয়ার হলুদগাঁটি, বীরভূমের ডুমুরকাঁদি ইত্য‌াদি। পরিবেশবান্ধব সুস্থায়ী এই সব দেশি ধানের চাষ এক দিকে যেমন মানুষের মুখে তুলে দিত নিত্য‌ দিনের অন্ন, মেটাত রসনার তৃপ্তি, অন্য‌ দিকে তেমনি জোগান দিত বাসস্থানের প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং গৃহপালিত পশুর খাদ্য‌োপাদান। গরিব প্রান্তবাসী গ্রাম্য‌ কৃষকের ঘর ছাইতে লাগে খড়। আধুনিক উচ্চ-ফলনশীল ধানের খড় খর্বাকৃতি ও দ্রুত পচনশীল। এ দিয়ে ঘর ছাওয়ার কাজ ভালো হয় না। টেকসই লম্বা খড় বা বিচালি দিয়ে ঘর ছাইতে খুব সুবিধা হয়। এই জন্য‌ কৃষকবন্ধুরা পছন্দ করেন দুধের সর, সীতাশাল, বাঁশকাটি, কলমকাটি, কলমা, নাগরা, কবিরাজশাল, মহিষলাদান ইত্য‌াদি দেশি ধানের লম্বা খড়। আজ এই সব দেশি ধানের অধিকাংশই অবলুপ্তপ্রায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য‌, গ্রামীণ গৃহস্থ মহিলাদের কথায় গরু খেতে খুব একটা পছন্দ করে না উচ্চফলনশীল ধানের খড় এবং দুধও নাকি হয় পাতলা। বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার বেশ কিছু কৃষক রমণী জানিয়েছেন, মানস সরোবর নামক উচ্চফলনশীল ধানের খড় খাওয়ানোর ফলে গরুর জিভ কেটে যাওয়ার কথা।

রোগ-পোকা প্রতিরোধী ধান

মানুষের সাংস্কৃতিক বিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনেক উদ্ভিদ প্রজাতিও বিবর্তিত হয়েছে — ধান, গম, ভূট্টা বা আলুর আদি প্রজাতি থেকে আধুনিক শস্যগুলি যার দৃষ্টান্ত। আবার এই শস্য‌ের জীবনকালের নানা পর্যায়ের উপর অনেক প্রাণীর সংখ্য‌ার হ্রাস-বৃদ্ধিও নির্ভর করে। ধান পাকার সময় এলেই সাদা ও সবুজ শ্য‌ামা পোকার সংখ্য‌ার যেন বিস্ফোরণ ঘটে। ধানের এই শত্রু পোকাগুলিকে দমন করতে চারিদিকে আগুন জ্বালানোর ঐতিহ্য‌টিই পরবর্তীকালে দেওয়ালি ও ছটপূজার আচার হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু শ্য‌ামা পোকা নয় ওদের আবির্ভাবের সঙ্গে আরও কিছু পতঙ্গ যারা শ্য‌ামা পোকার খাদক, তাদেরও সংখ্য‌ার বৃদ্ধি হয় দেওয়ালির আগে ও পরে। এই সব পোকার আবির্ভাব ও তিরোধান, ধান পাকার সময়ের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে সম্পর্কিত।

আজ আমরা ধানের যে চেহারা দেখছি সেটা মনুষ্য‌সৃষ্ট নির্বাচনশৈলীর সঙ্গে প্রাকৃতিক নির্বাচনের সংযুক্ত ফল। ধান গাছের বিভিন্ন রোগ-পোকা প্রতিরোধী বংশগত গুণগুলিকে চিহ্নিত করে, প্রতিরোধী গুণের বীজগুলিকে বাছাই করে এক একটি জাতের প্রতিরোধী ধান সৃষ্টি করেছেন উৎসাহী কৃষক ও কৃষি-বিজ্ঞানীগণ। এই ভাবে সৃষ্টি হয়েছে ঝলসা প্রতিরোধী টিটেপ, টাডুকোন, দুলার, কুমারাগোড় ইত্য‌াদি। টুংরো প্রতিরোধী লাটিশাল, কাটারিভোগ; খোলধসা প্রতিরোধী কাজললতা, নাজনী; মাজরা পোকা সহনশীল লাটিশাল, ক্ষীরসাগর; ভেঁপু পোকা প্রতিরোধী কাজলকলমা, লক্ষ্মীজটা ইত্য‌াদি (নীচের তালিকা দেখুন)।

রোগ-পোকা সহনশীল নির্বাচিত ও দেশি জাতসমূহ

  1. ঝলসা
  2. প্রতিরোধক্ষম জাত : টিটেপ, কুমারগোড়, তিলকাচারি, টাডুকোন, কটকতারা, রামতুলসী, দুলার, মুনাল, এনসি - ৪৯২

  3. ব্য‌াকটেরিয়াজনিত পাতা ধসা
  4. প্রতিরোধক্ষম জাত : টিটেপ, টিকেএম – ৬, বেনাপুলি

  5. খোলা পচা
  6. প্রতিরোধক্ষম জাত : এমআর – ১৫২৩, বেনাপুলি, এনসি - ৪৯২

  7. খোলা ধসা
  8. প্রতিরোধক্ষম জাত : কাজললতা, নাজনী, সিঁদুরমুখী, টিটেপ, এনসি – ৪৯৩ ও ৪৯২

  9. টুংরা (আরটিভি)
  10. প্রতিরোধক্ষম জাত : কাটারিভোগ, লাটিশাল, তিলকাচারি, টিকেএম – ৬, পাঙ্কাহরি - ২০৩

  11. ভেঁপু পোকা
  12. প্রতিরোধক্ষম জাত : কাজলকলমা, ধাঙ্গাহরি, লক্ষ্মীজটা, লক্ষ্মীবিলাস, পিটিবি – ৩২

  13. মাজরা পোকা
  14. প্রতিরোধক্ষম জাত : লালঝুলুর, ময়নাসর, ধাঙ্গাহরি, আসনালয়া, সিবি– ১, ও সিবি– ২

  15. চুঙ্গি পোকা
  16. প্রতিরোধক্ষম জাত : গৌর-নিতাই, পিটিবি- ১০

  17. বাদামি শোষক পোকা
  18. প্রতিরোধক্ষম জাত : মনোহরশালী, ডহরনাগরা, পিটিবি-৩৩

  19. শ্য‌ামা পোকা
  20. প্রতিরোধক্ষম জাত : পেটা, পাঙ্কাহরি – ২০৩, লাটিশাল, ক্ষীরসাগর, ভূতনোড়া, কাটারিভোগ

নিজস্ব চাষের জায়গায় সংরক্ষণ

ধানের মূল্য‌বান বীজগুলি ক্রমশ লুপ্ত হয়ে চলেছে, বহু সহস্র বীজধারা হারিয়ে গেছে চিরতরে। সবুজ বিপ্লব শুরুর আগে পর্যন্ত ভারতে চাষ হত বিয়াল্লিশ হাজারেও বেশি দেশি জাতের ধান। কিন্তু ১৯৬৫ সালের পর থেকেই বেশির ভাগ দেশি, পুরোনো জাতের ধান হারিয়ে গেছে, আজও হারিয়ে যাচ্ছে। তাইচুং নেটিভ- ১ এবং আইআর – ৮ ধানের ‘জাদুবীজ’ দিয়ে শুরু হওয়া ‘সবুজ বিপ্লব’-এর ঢেউ বিগত চার দশকেই মুছে দিয়েছে হাজার হাজার বছরের দেশি ধান, অযুত বছরের সমস্ত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও যা করতে পারেনি। সারা দেশের আশি শতাংশের বেশি ধান জমিতে বর্তমানে চাষ হচ্ছে কয়েকটি মাত্র উচ্চফলনশীল ধান। কুড়ি শতাংশেরও কম জমিতে চাষ হচ্ছে দেশি ধান। এই জমির বেশির ভাগই উঁচু জমি, নোনা জমি অথবা বন্য‌াপ্লাবিত জমি, যেখানে উচ্চফলনশীল ধান ভালো ভাবে ফলে না। এই ধরনের জমিতে যে সব দেশি ধানের চাষ হয়, তাদের মোট সংখ্য‌া সারা দেশে খুব বেশি হলে দু’হাজার, অর্থাৎ সনাতন দেশি ধানের পঁচানব্বই শতাঁশই গেছে হারিয়ে।

১৯৬৫ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার জাতের ধানের নাম পাওয়া যায়। বিভিন্ন জেলার একই ধানের ভিন্ন ভিন্ন নাম আছে বলে অনুমান করা যায়। সংখ্য‌াটি ৪৮০০-এর বেশি হবে না। ২০০৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ জৈব-বৈচিত্র্য‌ পর্ষদ কর্তৃক প্রকাশিত একটি পুস্তকে বলা হয়েছে যে, প্রায় ৪৭০টি জাতের দেশি ধান এখনও পশ্চিমবঙ্গে চাষ হয় অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গেও হারিয়ে যাওয়া সনাতন দেশি ধান প্রায় নব্বই শতাংশ। অবশ্য‌ এই সব হারিয়ে যাওয়া দেশি ধানের অধিকাংশেরই বংশাণু সংগৃহীত ও সংরক্ষিত আছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গবেষণাগারে। শুধু সংগ্রহ ও সংরক্ষণই নয়, এই সব বংশাণুর বৈশিষ্ট্য‌ান্বিতকরণ, মূল্য‌ায়ন এবং যথোপযুক্ত ব্য‌বহারের কাজও চলছে বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্রে। বিভিন্ন গুণসম্পন্ন দেশি জাত এবং জৈব ও অজৈব পীড়ন (স্ট্রেস) সহনশীল দেশি জাতগুলিকে ‘দাতা’ হিসাবে ব্য‌বহার করে উচ্চফলনশীল ধানের জাতের সাথে সংকরায়ন ঘটিয়ে সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে গুণসম্পন্ন ও প্রতিরোধক্ষমতা সম্পন্ন আরও উন্নত ধরনের ধানের জাত। জৈব প্রযুক্তিবিদ্য‌াকেও কাজে লাগানো হচ্ছে এই গবেষণার কাজে। সুতরাং দেশি ধানের বংশাণুর গুরুত্ব অপরিসীম। সারা দেশের বিভিন্ন গবেষণাগারে প্রায় ৭২ হাজার বংশাণু সংরক্ষিত আছে। পশ্চিমবঙ্গের ধান গবেষণাকেন্দ্র চুঁচুড়া, বাঁকুড়া, গোসাবা এবং হাতোয়ারায় (পুরুলিয়া) সংরক্ষিত আছে প্রায় দু’হাজারেরও অধিক বংশাণু।

বর্তমানে যে সব দেশি ধান চাষ করা হচ্ছে সেগুলিকে তার নিজস্ব চাষের জায়গায় সংরক্ষণ (ইন সিটু কনজারভেশন) করার বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা চলছে। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন অঞ্চলে লবণসহনশীল জাতগুলির চাষ, মেদিনীপুর (ময়না ও কাঁথি), হুগলি (আরামবাগ) ও হাওড়া (উলুবেড়িয়া)-য় নিচু ও গভীর জলাভূমির ধানগুলির চাষ, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে সুগন্ধী ধানের চাষ ইত্য‌াদি।

সূত্র : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংসদ ও দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার

সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/26/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate