ড্রাম সিডার কাদানোজাত ধান বোনার এক সহজ সরল যন্ত্র। ভিয়েতনামে তৈরি এই যন্ত্রে প্লাস্টিকের ছয়টি ড্রাম (১৬ সেমি ব্যাস) একটি লোহার দণ্ডে পরপর সাজানো থাকে। লোহার দণ্ডের দুই প্রান্ত প্লাস্টিকের তৈরি ২টি চাকা এবং যন্ত্রটি টানার জন্য একটি হাতল যুক্ত থাকে। প্রত্যেকটি ড্রামের দুই ধারে দুই সারি করে ছিদ্র থাকে। অঙ্কুরিত বা কলানো ধানবীজ কাদানো মূল জমিতে সরাসরি বোনার জন্য এই যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়। খালি অবস্থায় এই যন্ত্রটির ওজন মাত্র ৬ কেজি। তাই একে সহজেই এক জমি থেকে অন্য জমিতে স্থানান্তরিত করা যায়।
ধানের বীজ এক দিন জলে ভিজিয়ে রেখে এবং তার পর ২ – ৩ দিন জাঁক দিয়ে অঙ্কুরিত করতে হবে। ভেজানোর আগে বীজকে রোদ খাইয়ে নেওয়া ভালো। তবে অঙ্কুরিত বীজের শিকড় যেন এতটা লম্বা না হয় যাতে একটির সঙ্গে আরেকটি পেঁচিয়ে যায়। ড্রামে বীজ ভরার আগে অঙ্কুরিত বীজ ১ – ২ ঘণ্টা ছায়ায় ছড়িয়ে দিয়ে বাতাসে শুকিয়ে ঝরঝরে করে নেওয়া ভালো। অঙ্কুরিত বীজ ড্রামে ভরার সময় লক্ষ রাখতে হবে যেন ড্রামের এক তৃতীয়াংশ অবশ্যই খালি থাকে এবং ড্রামের গায়ে আঁকা ত্রিভুজাকৃতি চিহ্ন যেন সব সময় সামনের দিকে নির্দেশ করে। ড্রামের পাতলা ছিদ্র খোলা রাখলে বিঘা (৩৩ শতক) প্রতি ৩ কেজি এবং ঘন ছিদ্র খোলা রাখলে বিঘা প্রতি ৫ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়। প্রতিটি ড্রামের ক্ষমতা প্রায় ২ কেজি বীজ। এক বার বীজ ভর্তি করলে প্রায় ১ একর জমি বোনা যাবে। এক জন এক ঘণ্টায় অন্তত এক বিঘা জমি বুনতে পারবে। স্বাভাবিক ভাবে তৈরি করা কাদানো জমি যন্ত্র সহকারে মই দিয়ে সমান করতে হবে। বীজ বোনার এক দিন আগে জমি থেকে জমা জল বের করে দিতে হবে। বোনার পর ৩ – ৫ দিন সেচ দেওয়া যাবে না। পরের ১০ – ১২ দিন সেচ দিয়ে শুধু জমি ভিজিয়ে রাখতে হবে। চারার বৃদ্ধি অনুসারে ধীরে ধীরে জমিতে সেচের গভীরতা বাড়াতে হবে। তবে প্রতি সেচে ৫ সেমির বেশি জল দরকার নেই। প্রয়োজন অনুসারে আগাছা দমন করতে হবে।
ক্রমাগত ধান উত্পাদনের খরচ বাড়তে থাকায় চাষিদের কাছে ধান চাষ যখন অলাভজনক হয়ে উঠেছে, তখন চাষের খরচ কমানোর অর্থাৎ বেশি মুনাফার এই প্রযুক্তিটিকে চাষিরা সানন্দে গ্রহণ করেছেন। রোয়ার সময় কৃষি শ্রমিকের অভাবজনিত সমস্যায় চাষিদের বিব্রত হওয়ার হাত থেকে নিষ্কৃতি দিচ্ছে এই যন্ত্রটি। ধানের মেয়াদকাল কমে যাওয়ার সুবিধাটিও চাষিদের কাছে একটা বড় পাওনা। সবার উপরে রইল ফল বৃদ্ধি। এই যন্ত্রটি ব্যবহার করে কাদানো জমিতে বীজ বোনার প্রযুক্তি পশ্চিমবঙ্গে কেবল মাত্র বোরো চাষেই সাফল্য পাচ্ছে।
ড্রাম সিডার যন্ত্র ব্যবহারের যেমন সুফল আছে সেই রকম কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। প্রথমে সুফলগুলি তুলে ধরা হল —
চাষের খরচ কমানো যায় এবং নিট লাভ বেশি হয় কারণ
এই প্রযুক্তির অসুবিধার প্রধান দিকগুলি হল --
সর্বশেষ সংশোধন করা : 10/11/2023