সঠিক সময়ে ধান না কাটলে শিষের ধান মাঠে ঝরে পড়ে ফলনের ক্ষতি করতে পারে। বিশেষ করে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান হলে। শিষের শতকরা ৮০ ভাগ ধান হলুদ হয়ে পেকে গেলে সেটাই হল ধান কাটার সঠিক সময়। তবে মাঠের ৫০ শতাংশ গাছে ফুল আসার দিনটি মনে রাখলে ওই দিন থেকে ২৫–৩০ দিনের মাথায় জলদি ও মাঝারি জাতের ধান কাটার উপযুক্ত হবে। নাবি জাতের ধান ফুল আসার ৪০ দিনের মাথায় কাটার উপযুক্ত হবে ।
সেচসেবিত ধান হলে ধান কাটার ৭–১০ দিন আগে মাঠে সেচ দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে। ধান কাটার উত্কৃষ্ট সময় সকাল ১০টার মধ্যে। তবে বিকেলের দিকেও কাটা যেতে পারে। কিন্তু ভরদুপুরে ধান কাটলে ধান ঝরে পড়ে ফলনের ক্ষতি হবে। ধান কাটার সময় আবহাওয়া যদি খারাপ থাকে তবে ধান না কেটে আবহাওয়া পরিষ্কার হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা দরকার। তবে ধান কেটে অন্য ফসল বোনার তাড়া থাকলে ধান কেটে মাঠে না ফেলে রেখে কাটার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা খামারে তুলে ফেলতে হবে।
ধানের সঙ্গে পয়রা শস্য হিসাবে এই রাজ্যে ডাল অথবা সরষে চাষের চল আছে। সে ক্ষেত্রে ধান কেটে মাঠে ফেলে রাখা যাবে না। খামারে তুলে নিয়ে যেতে হবে। পয়রা শস্য বোনা ধান জমিতে ধান কাটার সময় লক্ষ রাখতে হবে যাতে পয়রা শস্য ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং ধান মাটি থেকে ৯ – ১০ ইঞ্চি ওপর থেকে কাটা হয়। ওই ধানের গোড়াগুলো পয়রা শস্যকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।
পাকা ধান অনেক সময় ঝড়বৃষ্টিতে পড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে বোরো মরশুমে ধান কাটার সময় ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রবল থাকে। ঝড়বৃষ্টির ফলে ধান মাটিতে শুয়ে পড়লে আকাশ পরিষ্কার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ধান কেটে খামারে তুলে ফেলতে হবে। নতুবা ভেজা মাটিতে পাকা ধান পড়ে থাকলে ধানের শিষেই কল গজিয়ে ধানের গুণমান নষ্ট হবে।
সাধারণত ধান কাটার পর ধান মাঠে ফেলে রোদ খাইয়ে শুকোনোটাই রীতি। ধান টানা রোদে কম করে ৪–৫ দিন ফেলে রেখে ঝাড়ার উপযুক্ত করে নিতে হবে। ধান ঝাড়াই করার মতো শুকিয়েছে কি না তা বিচার করার জন্য ধান দাঁতে কেটে দেখতে হবে ‘কট’ করে শব্দ করে ধান দু’ ভাগ হল কি না। হলে ধান মেশিনে অথবা গরু দিয়ে মাড়িয়ে করে ধান ঝাড়াই করতে হবে। তবে বর্তমানে রাজ্যে কোথাও কোথাও ধানকাটা মেশিনের সাহায্যে ধান কাটা হচ্ছে। ধানকাটা মেশিনে এক সঙ্গে ধান কাটা ও ঝাড়াই চলে। মেশিনের ভিতরে ধান ও খড় আলাদা হয়ে বেরিয়ে আসে।
ধানের বর্জ্য কী এবং তার অনেক ব্যাবহার । তাইতো তার ব্যাবহার ও প্রয়োজন। ধানের বর্জ্যকে দু’ ভাগে ভাগ করা যায়। একটি মাঠের বর্জ্য, অন্যটি চালকলের বর্জ্য। উভয় ধরনের বর্জ্যই বহুবিধ ব্যবহারযোগ্য বলে জনপ্রিয় ও অর্থকরী।
মাঠের বর্জ্য ধানের খড়। ধান কাটার পর ঝাড়াই মাড়াই করে চিটে সহ ধান ঘরে তোলার পর মাঠে পড়ে থাকা ধানগাছের সমগ্র অবশিষ্টই খড় হিসাবে চিহ্নিত। উচ্চ ফলনশীল ধানের ক্ষেত্রে প্রতি একক জমি থেকে সম পরিমানে ধান ও খড় পাওয়া যায়। দেশি ধানের ক্ষেত্রে খড়ের পরিমাণ বেশি - ৬০ – ৭০ শতাংশ। ধান ৩০ – ৪০ শতাংশ। সাধারণ ভাবে ধানের কাণ্ড ও পাতা মিলিয়েই খড়। দেশি ধানের খড় উচ্চ ফলনশীল ধানের খড় অপেক্ষা লম্বা হয়। তবে আজকাল নিচু এলাকায় ধান চাষের জন্য যে সমস্ত উন্নত জাতের ধান চাষ চালু হয়েছে সেই সমস্ত জাতের খড়ও লম্বা হয়।
চালকলের বর্জ্য দু’ ধরনের, খোসা ও ব্র্যান।
ধানের মধ্যে একটা শক্ত খোলার আবরণে ঢাকা থাকে চাল। এই শক্ত আবরণ বা খোসা (হাস্ক) দু’ ভাগে বিভক্ত। বাঁ দিকের ভাগটি বড়, নাম ‘লেম্মা’। লেম্মার মাথায় থাকে ধানের ‘শুঁড়’। ডান দিকের ভাগটি ছোট, নাম প্যালিয়া। এই দু’ ভাগ একত্রিত হয়ে আটকে থাকে ধানের গোড়ার দিকের ‘বোঁটাতে’ (গ্লুম)।
আধুনিক ধানকলে ধান ভাঙানোর সময় প্রথমেই এই খোসা দু’টি ছেঁটে ফেলা হয়। বেরিয়ে আসে ‘আঁকাড়া’ চাল। এই আঁকাড়া চালের রঙ জাত ভেদে বাদামি, কালো অথবা লাল হতে পারে। বাদামি হলে তার নাম হয় ব্রাউন রাইস, কালো হলে ব্ল্যাক রাইস। আর লাল হলে রেড রাইস। আঁকাড়া চাল আসলে চালের ভিন্ন ভিন্ন চারটি অংশের সমষ্টি। প্রথম তিনটি অংশ চতুর্থ অংশের ওপর জড়ানো ১০টি অংশুল চাদর। প্রথম অংশের নাম পেরিকার্প। ছয়টি স্তরে বিস্তৃত। এই পেরিকার্পই আঁকাড়া ধানের রঙের আধার। পেরিকার্পের নীচের দুই স্তরকে বলা হয় সীড-কোট। সীড কোটের নীচে ছয় স্তরবিশিষ্ট পুরু অংশের নাম অ্যালুইরোন। চালের এই অংশ ভিটামিন, প্রোটিন, খনিজ পদার্থ ইত্যাদি সমৃদ্ধ। ভালো হয় ধান ভাঙানোর সময় যদি শুধু সিড-কোট ও পেরিকার্প এই দুই অংশকে ছেঁটে ফেলা যায়। তা হলে গুণাগুণের বিচারে সেই চালই খাদ্য হিসাবে সর্বোত্কৃষ্ট।
প্রক্রিয়াগত অসুবিধার ফলে তা সম্ভব হয় না। ধান ভাঙার দ্বিতীয় পর্যায়ে চালের এই তিনটি অংশ ছেঁটে ফেললে বের হয়ে আসে শর্করাসমৃদ্ধ মূল অংশ। এই অংশকে বলা হয় এন্ডোস্পার্ম। চালের কোণের অংশ এমব্রায়ো বা জার্ম থেকে জন্ম নেয় ধানের চারা।
২ নং ছবিতে দেখানে হয়েছে আঁকড়া চালের বিভিন্ন অংশ আর বন্ধনীর মধ্যে দেওয়া হয়েছে চালের ওজন হিসাবে প্রত্যেক অংশের আনুপাতিক পরিমাণ। ধানকলে ধান ভাঙার দ্বিতীয় দফায় প্রথমে এই তিন প্রকার অংশুল চাদর একত্রিত হয়ে অ্যান্ডোস্পার্ম ছেড়ে উঠে আসে। পেরিকার্প, সিড-কোট ও অ্যালুইরোন একত্রিত হয়ে যে পদার্থ তৈরি করে তার নাম ব্র্যান বা তুষ। পড়ে থাকে সাদা রঙের ন্যাড়া এন্ডোস্পার্ম। এই অ্যান্ডোস্পার্ম ফুটিয়েই ভাত হয়।
ধানের খোসার তলায় চালের পিঠে জড়িয়ে থাকা একটা পাতলা আস্তরণ হল ব্র্যান। চালের পিঠে মোট ১০টি অংশুল চাদর থাকে। আধুনিক ধানকলে ধান ভাঙানোর সময় এই ১০টি অংশুল চাদর চালের পিঠ থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। একত্রীভূত এই ১০টি চাদরকে ব্র্যান বলা হয়। ব্র্যান অতি উত্কৃষ্ট ভোজ্যতেলে সমৃদ্ধ। জাতিভেদে ব্র্যানে তেলের ভাগ ২০ – ২৫ শতাংশ। সিদ্ধ চালে তেলের ভাগ আরও ৫ শতাংশ বেড়ে যায়। এ রাজ্যে সিদ্ধ চালের প্রচলনই বেশি। তাই পশ্চিমবঙ্গের ব্র্যানে তেলের ভাগ গিয়ে দাঁড়ায় ২৫ – ৩০ শতাংশ।
ব্র্যানের তেল অন্যান্য ভোজ্যতেল অপেক্ষা পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত। ব্র্যানের তেলের বৈশিষ্ট্য হল মুফার (মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড) আধিক্য (৪৭ শতাংশ)। শুধু তা-ই নয় এই তেলে আছে আরও ৩টি মূল্যবান যৌগ। এগুলি হল, অরাইজ্যানল, টোকোফেরল এবং স্কোমালিন। অরাইজ্যানল রক্তে উপকারী কোরেস্টেরল (এইচডিএল) বাড়ায় ও সেই সঙ্গে ক্ষতিকারক কোরেস্টেরল (এলডিএল) এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমায়। টোকোফেরলের মধ্যে থাকে ভিটামিন –ই (২ থেকে ৩ শতাংশ) যা মানুষের স্নায়ুতন্ত্র সবল করে ও কর্কট রোগ, হৃদরোগ প্রভৃতির ক্ষেত্রে প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। স্কোয়ালিন চামড়ার ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে। রান্নার তেল হিসাবে তুষ তেল আদর্শ। কেন না উচ্চ তাপমাত্রায় ফোটালেও অন্য মুফা সমৃদ্ধ তেলের মতো ব্র্যানের তেলে কোনো বিষাক্ত যৌগ তৈরি হয় না।
সাধারণ তেলের মিলে ব্র্যান থেকে তেল নিষ্কাশন করা যায় না। ব্র্যানকে জৈব দ্রাবকে বার বার ধুয়ে তেল বার করতে হয়। এই পদ্ধতির নাম সলভেন্ট এক্সট্রাকশন পদ্ধতি। এই রাজ্যেই ইতিমধ্যেই ৪০টি সলভেন্ট এক্সট্রাকশন প্ল্যান্ট গড়ে উঠেছে। এই প্ল্যান্ট থেকে যে তেল বেরোয় তা আসলে কাঁচা তেল। ভোজ্য নয়। এই কাঁচা তেলকে পরিশ্রুত করে ভোজ্য তেলে রূপান্তরিত করার জন্য রিফাইনারি প্ল্যান্টের প্রয়োজন হয়। বর্তমানে রাজ্যে রিফাইনারির সংখ্যা ১৫টি। এই প্ল্যান্টগুলিতে কাঁচা তেল পরিশ্রুত করলে ওই তেলের ৯২ শতাংশ ভোজ্য তেলে পরিণত হয়।
ব্র্যান পিষে তেল বার করে নেওয়ার পরে পড়ে থাকে খোল। এই ব্র্যান খোলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কেননা এই খোল পশুখাদ্য হিসাবে অত্যন্ত পুষ্টিকর। গৃহপালিত গরু বা শুয়োরের খাদ্য হিসাবে দেশ-বিদেশের বাজারে চাহিদা বাড়ছে। ইতিমধ্যেই রাজ্য থেকে ভিয়েতনামে এই খোল রফতানি শুরু হয়েছে। আরব দেশগুলিতেও এই খোলার যথেষ্ট চাহিদা আছে।
ধানের খড় বহু বিধ ব্যবহারের উপযোগী। গবাদি পশুর খাবার ও শয্যাপকরণ থেকে শুরু করে ঘর ছাউনি, জাজিম ইত্যাদি তৈরির অন্যতম প্রধান উপাদান। জৈবজ্বালানি হিসাবেও খড়ের ব্যবহার উল্লেখ যোগ্য।
গরু, ঘোড়ার প্রাত্যহিক খাদ্যতালিকায় খড় পাকস্থলী উদ্দীপক একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থল উপাদান। তৃণভোজী প্রাণীর পৌষ্টিকনালিতে উপস্থিত বীজাণুর বিক্রিয়ায় খড় হজম হওয়ার সময় যে তাপ সৃষ্টি হয় তা, বিশেষ করে শীতপ্রধান দেশে, এই সব প্রাণীর শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তবে খড় মূলত স্থূল খাদ্য, পুষ্টিগুণ খুবই কম। প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, কোবাল্ট, ম্যাঙ্গানিজ, গন্ধক এবং ফসফরাসের পরিমাণ নামমাত্র। ক্যালোরি মূল্য কম। সিলিকার পরিমাণ অবশ্য খুব বেশি। কিন্তু সিলিকার কোনও পুষ্টিগুণ নেই। সিলিকা বরঞ্চ হজমের ব্যাঘাত ঘটায়। খড় তাই নিত্য দিনের পশু খাদ্যতালিকার একটি অংশ মাত্র। তবে খড় সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড অথবা অ্যামোনিয়া দিয়ে শোধন করে পরিবেশন করলে পুষ্টিগুণ বহু গুণ বর্ধিত হয়।
কার্বন-নিরপেক্ষ শক্তির উত্স হিসাবে খড়ের ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। জ্বালানি হিসাবে কয়লার বিকল্প হয়ে উঠেছে খড়ের গুল। তাপে শুষ্ক খড়ের গুল কয়লা অথবা গ্যাসের বিকল্প হিসাবে পাওয়ার প্ল্যান্টের মূল জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যায়। কেননা কয়লা অপেক্ষা তাপে শুষ্ক খড়ের গুলের দাহ্যশক্তি বেশি। সুতরাং কয়লার পরিবর্তে কেবলমাত্র খড়ের গুলের ওপর নির্ভর করে পাওয়ার প্ল্যান্ট চালানো যেতে পারে।
নির্মাণ কাজের জমিতে প্রায়শই গাদ/পলি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য খড়ের গাঁইট ব্যবহৃত হয়। তবে খড়ের গাঁইটে জল আটকানো উপরন্তু রক্ষণাবেক্ষণ বেশ শ্রমসাধ্য হওয়ায় বিকল্প হিসাবে উদ্ভিদজাত আঁশের চাদরের ব্যবহার বাড়ছে।
ধানের খড় সহজে চাপে চূর্ণ হয় না। ফলে মোড়কশিল্পে খড়ের চাহিদা ও ব্যবহার ব্যাপক। বিশেষ করে ভঙ্গুর ধাতু যেমন কাচ , কড়ি, চিনামাটি দিয়ে তৈরি দ্রব্যাদি। এক সময়ে মদের বোতলের মোড়ক হিসাবে খড়ের ব্যবহার ছিল ব্যাপক। বর্তমানে তা কমে গেলেও নি:শেষ হয়ে যায়নি।
এ ছাড়াও দড়ি ও টুপি তৈরিতে, মাশরুম চাষে, পুকুরের জলে শ্যাওলা নিয়ন্ত্রণ করতে খড়ের ব্যবহার প্রচলিত। বহুকাল ধরে কৃষিকাজে, বিশেষ করে বৃষ্টিনির্ভর জমিতে, জমির আর্দ্রতা ধরে রেখে বীজের অঙ্কুরোদগম নিশ্চিত করার জন্য মালচ হিসাবে খড়ের ব্যবহার চলে আসছে। দীর্ঘকাল ধরে মিশর ও চিন দেশে কাগজ তৈরির কাজে খড়ের মণ্ড ব্যবহৃত হয়ে চলেছে। খড় সেলুনোস শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল হওয়ার উপযুক্ত।
ধানের খোসা বীজের ওপর শক্ত আবরণী। এই আবরণী দুধ সাদা সিলিকা ও লিগনিন জাতীয় শক্ত বস্তু দ্বারা তৈরি। মানুষের পেটে ধানের খোসা হজম হয় না। খোসার বৈশিষ্ট্যমূলক ধর্ম নিম্নরূপ :
ধর্ম / চরিত্র |
বিন্যাস |
বাল্ক ডেনসিটি (কেজি / কিউবিকমিটার) |
৯৬ – ১৬০ |
অনমনীয়তা (মোহর স্কেল) |
৫ – ৬ |
ছাই (%) |
২২- ২৯ |
কার্বন (%) |
৩৫ |
হাইড্রোজেন (%) |
৪ – ৫ |
অক্সিজেন (%) |
৩১- ৩৭ |
নাইট্রোজেন (%) |
০.২৩ – ০.৩২ |
গন্ধক (%) |
০.০৪ – ০:০৮ |
আর্দ্রতা |
৮ - ৯ |
নির্মাণ শিল্পের কাঁচামাল, সার, অপরিবাহী বস্তু, জ্বালানি ইত্যাদি। কেরলে শতাধিক বছর ধরে দাঁতের মাজন হিসাবে ধানের খোসার প্রচলন ছিল। ধানের খোসার কম্পোস্ট তৈরি করে ফসলের সার হিসাবে ব্যবহার করার চল এখনও প্রচলিত। তবে খোসায় লিগনিন বেশি থাকার জন্য খোসা পরে সার হতে বেশি সময় লাগে। তবে কেঁচো ব্যবহার করলে পচনক্রিয়া দ্রুত হয়। চার মাসের মধ্যেই খোসা পচে সার পরিণত হয়। সিদ্ধ ধানের খোসা মাটির পরিবর্ত হিসাবে ব্যবহার করে ফুলের বাগান তৈরি করা যেতে পারে। এ ছাড়াও ধানের খোসার ওপর বারুদের পাতলা আস্তরণ দিয়ে মনোরম আতসবাজি তৈরি করা চেল। যে আতসবাজির খোল আকাশে উঠে সশব্দে ফেটে আলো দেয়। পাওয়ার প্ল্যান্টের জ্বালানি হিসাবেই ধানের খোসার ব্যপক ব্যবহার আছে। ধানমিলের বয়লারে জ্বালানি হিসাবে খোসার ব্যবহার ব্যাপক। ব্যবহারের জন্য খোসাকে সরাসরি জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করলে প্রচুর ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। তাই বর্তমানে খোসা ভাপিয়ে গ্যাসে রূপান্তরিত করে সেই গরম গ্যাস বয়লারে ব্যবহার করার চেষ্টা চলছেও। ২ – ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বয়লার প্ল্যান্ট জ্বালানির জন্য স্বচ্ছন্দে ধানের খোসার ওপর পুরোপুরি নির্ভর করে চালানো যেতে পারে। দেখা গেছে প্রতি টন ধানের খোসা থেকে প্রতি ঘণ্টায় ১ মেগাওয়াট শক্তি পাওয়া যায়।
ধানের খোসার শতকরা ২০ ভাগই সিলিকা। তাই ধানের খোসা বিভিন্ন প্রকার সিলিকন যৌগ উত্পাদনের সম্ভাবনা পূর্ণ কাঁচামাল। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিলিকন যৌগ হল সিলিকন কার্বাইড, সিলিকন নাইট্রাইড, সিলিকন টেট্রাক্লোরাইড, জিওলাইট, সিলিকা ইত্যাদি। ধানের খোসা জাইলল, ফুরফুরাল, ইথানল, অ্যাসিটিক অ্যাসিড ইত্যাদি উপাদানের উত্কৃষ্ট কাঁচামাল। ধানের খোসায় প্রচুর পরিমাণে হাইড্রোকার্বন যেমন সেলুলোজ, লিগনিন থাকার জন্য সক্রিয় কার্বন উত্পাদনের উপযোগী কাঁচামাল এটি। উত্তম বিশোষক হিসাবে সক্রিয় কার্বনের বহুল ব্যবহার। ধানের খোসা ব্যবহার করে ইট তৈরি করলে সেই ইটের অপরিবাহী ক্ষমতা বহুগুণ বর্ধিত হয়। কেননা অধিক তাপমাত্রায় খোসা থেকে জৈব পদার্থ পুড়ে চলে গেলে অসংখ্য ছিদ্র তৈরি হয়। ওই ছিদ্রের মধ্যে বাতাস বাসা বাঁধে। আবদ্ধ বাতাসই খোসামিশ্রিত ইটের অপরিবাহী ক্ষমতা বাড়ায়। ধানের খোসার এই ছিদ্রাল চরিত্রকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করা যেতে পারে উচ্চগুণ মানের অপরিবাহী বোর্ড।
ধানের খোসা পুড়িয়ে যে ছাই পাওয়া যায় শিল্পপণ্য উত্পাদনে তার বহুবিধ ব্যবহার। স্টিল কারখানায় খোসার ছাই ব্যবহার করলে উত্পাদিত পণ্য দীর্ঘক্ষণ গরম থাকে। ফলে গলিত স্টিল সর্বত্র সমান ভাবে ঘনীভূত হয়। অপরিবাহী ক্ষমতার জন্য মৃন্ময় শিল্পে ও তাপক্ষয় রোধক পদার্থ উত্পাদন শিল্পে খোসার ছাই ব্যবহার লাভজনক হয়। বর্তমানে সিমেন্ট উত্পাদনের সময় বিক্রিয়াশীল খোসার ছাই মিশিয়ে উন্নততর সিমেন্ট তৈরি হচ্ছে, যা অনেক বেশি তাপ অপরিবাহী, দৃঢ় এবং পূর্ত কাজে সহজেই সুক্ষ্মত সুক্ষ ফাটল ভরাট করতে পারে।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/1/2020