অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

পরিচিতি

পৃথিবীর মানচিত্রে ভুট্টা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তণ্ডুল জাতীয় ফসল। একমাত্র অ্যান্টার্টিকা ছাড়া পৃথিবীর সর্বত্রই ভুট্টার চাষের চল আছে। কেননা বিবিধ জলহাওয়া মানিয়ে নিয়ে যথার্থ ফলন দেওয়ার অনুপম ক্ষমতা আছে ফসলটির। নিরক্ষীয় নিচু জমি থেকে শুরু করে সমুদ্রতট থেকে ১২০০০ ফুট উঁচু জমিতেও ভুট্টার সফল চাষ সম্ভব। তণ্ডুল জাতীয় যতগুলো ফসল আছে ফলন ক্ষমতায় ভুট্টা সর্বোত্তম। হেক্টর পিছু ২৭ টন ফলনেরও রেকর্ড আছে আমেরিকায়। সারা পৃথিবীতে কম-বেশি ১১৬ লক্ষ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়। উৎপাদন হয় ৮০০০ লক্ষ টন। ভুট্টার চাষ সর্বাধিক আমেরিকায়। ভারতেও সবক’টি রাজ্যেই এই ফসলটির চাষ হয়। সর্বাপেক্ষা বেশি চাষ হয় উত্তরপ্রদেশে। পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে খরিফ, রবি ও প্রাক খরিফ মিলিয়ে প্রায় সোয়া লক্ষ হেক্টরে ভুট্টার চাষ হচ্ছে।

ভুট্টা একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর তণ্ডুল। অন্যান্য তণ্ডুল শস্য অপেক্ষা ভুট্টার দানায় প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকে (১১ – ১২%) এবং বর্তমানে লাইসিন যুক্ত হওয়ার কারণে গুণমানেও উৎকৃষ্ট। এ ছাড়া খনিজ পদার্থ ও আঁশের আধিক্যও ফসলটিকে ক্রমশ পৃথিবীর সব দেশের মানুষের ভোজ্য তণ্ডুল হিসাবে ব্যবহারে যোগ্য করে তুলেছে। আমাদের দেশেও বহু দিন ধরেই প্রান্তিক মানুষদের প্রিয় খাদ্য ভুট্টা। ক্রমশ পুষ্টিগুণের কল্যাণে বিত্তবানের হেঁসেলেও ঢুকছে। শহর ও শহরতলির মলে ‘মাল্টিগ্রেন আটার’ অন্যতম উপাদান ভুট্টা। এ ছাড়াও পপকর্ন, কর্নফ্লেক্স ও লেবু মাখিয়ে অপরিপক্ক ভুট্টা এখন সারা দেশে এমনকী পশ্চিমবঙ্গেও যথেষ্ট জনপ্রিয়। তবে এ কথা ঠিক সারা পৃথিবীতেই উৎপাদিত ভুট্টার সিংহ ভাগ ব্যবহৃত হয় পশুখাদ্য হিসাবে (৬১%)। কেবলমাত্র ১৭% ব্যবহৃত হয় মানুষের খাদ্য হিসাবে। বর্তমানে আমেরিকায় ভুট্টার দানা থেকে তৈরি হচ্ছে ‘বায়োফুয়েল’। বাকিটা শিল্প।

ভুট্টা একটি শিল্প-বান্ধব ফসল। ভুট্টার দানা ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে স্টার্চ, চিনি, সিরাপ, অ্যালকোহল, প্রোটিন ইত্যাদি। আমেরিকার বায়োফুয়েল উৎপাদনের একটা বড় উৎস ভুট্টার দানা। ভুট্টার বর্জ্য যেমন ভুট্টার গাছ ও দানার ডাঁটা (কব) থেকে কাগজ, কার্ড বোর্ড, প্লাস্টিক, অ্যাসিটিক অ্যাসিড, পাইপ ইত্যাদি বহুবিধ শিল্পজাত দ্রব্য প্রস্তুত হচ্ছে।

কৃষির পরিমণ্ডলে ফসলটির গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে। তার কারণ এই ফসল চাষে জলের চাহিদা কম এবং আবহাওয়ার উষ্ণায়নে ধান–গম অপেক্ষা অনেক বেশি সহনশীল।

জন্মকথা

উদ্ভিদ বিজ্ঞানের অভিধানে ভুট্টার দ্বিপদ নাম ‘জিয়া মেস’। জিয়া একটি গ্রিস দেশীয় শব্দ। অর্থ দানা। মেস শব্দটির উৎস ওয়েস্ট ইন্ডিয়া। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ায় ‘মেস’ বলতে কর্ণকে বোঝায়। প্রত্নতাত্তিকদের মতে ভুট্টার জন্ম মেক্সিকোতে। কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের পর তার হাত ধরেই ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে ভুট্টার চাষ। ঐতিহাসিকদের মতে সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে পর্তুগিজ ঔপনিবেশকগণ ভারতবর্ষে ভুট্টার চাষ প্রবর্তন করে।

পৃথিবী জুড়ে আজ যে ভুট্টার চাষ চলছে প্রকৃতিতে তার কোনও অস্তিত্ব ছিল না। ঠিক কী ভাবে প্রকৃতিতে ভুট্টার জন্ম হল তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ আছে। এক দল বিজ্ঞানীর অভিমত আজ থেকে ৭০০০ বছর আগে দানা উৎপাদনকারী বন্য ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ ‘টিওসিনাইট’ থেকেই ভুট্টার জন্ম। টিওসিইনাইট থেকে ভুট্টার এই বিবর্তনের কাণ্ডারী মানুষ। মানুষের প্রয়োজনে বন্য ঘাসকে পোষ মানিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য হিসাবে চাষ করতে করতেই প্রকৃতির কোলে টিওসিনাইট ধীরে ধীরে রূপান্তরিত হয় আজকের ফসল ভু্ট্টায়। বিজ্ঞানীদের অন্য গোষ্ঠীর মতে,টিওসিনাইট নয় বন্য ঘাস ট্রিপসিকাম ভুট্টার জনক। এই দু’ ধরনের ঘাস আজও পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়।

টিওসিনাইট অথবা ট্রিপিসকাম,যেই ভুট্টার জনক হোক না কোন,প্রকৃতিতে তৈরি হয়েছিল ভুট্টার প্রায় ১০০ ধরনের প্রজাতি। এর মধ্যে ভুট্টার মাত্র দু’ ধরনের কৃষকদের মন কাড়ে। একটির নাম ফ্লিন্ট। অন্যটির ডেন্ট। দানাশস্য হিসাবে ফ্লিন্টের চাষ হত উত্তর আমেরিকায়। ডেন্টের দক্ষিণ আমেরিকায়। এই দু’ ধরনের প্রজাতির বিপরীত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ

প্রজাতি/চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য

ফ্লিন্ট

ডেন্ট

) গাছের বৈশিষ্ট্য

) উচ্চতা

গাছ বেঁটে

গাছ লম্বা

) মেয়াদ

জলদি মেয়াদি

অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ মেয়াদি

) কাণ্ডের প্রকৃতি

কাণ্ড সরু

কাণ্ড মোটা

) দানার চরিত্র

) রঙ

সাধারণত হলুদ অথবা কমলা। অন্যান্য রঙও দেখা যায়।

হলুদ অথবা সাদা

) প্রকৃতি

পাথরের টুকরোর মতো শক্ত, পাকলেও সংকুচিত হয় না

দানা অপেক্ষাকৃত নরম। পাকলে দানার ওপর খাঁজ পড়ে

) দানা ধারণকারী ডাঁটার (কব) প্রকৃতি

ডাঁটায় সাধারণত ৮ সারি দানা

ডাঁটায় ১৬ – ৩০ সারি দানা

) ডাঁটার সংখ্যা

প্রতিটি কাণ্ডে একাধিক ডাঁটা বা কব হতে পারে

কাণ্ড প্রতি সাধারণত একটি ডাঁটা বা কব

 

প্রকৃতিতে উপরোক্ত দুই প্রজাতির স্বত:স্ফুর্ত সংকরায়নে উদ্ভূত হয় ভুট্টার নতুন প্রজাতি — ‘কর্ন বেল্ট ডেন্ট ’। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে যে সঙ্কর জাতের ভুট্টা চাষ হচ্ছে তা এই নতুন প্রজাতির বংশধর।

নানান নাম

মূলত দানার ব্যবহার ও বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে ভুট্টা নানান নামে পরিচিত। নামের সংখ্যা সাত। যথা —

  • পড কর্ন
  • পপ কর্ন
  • ডেনট কর্ন
  • ফ্লিন্ট কর্ন
  • ফ্লাওয়ার কর্ন
  • সুইট কর্ন
  • ওয়াক্সি কর্ন

পড কর্ন

এই ভুট্টার প্রতিটি দানা মোচার খোলের মতো পরিবর্তিত পাতা অর্থাৎ হাস্ক দ্বারা আবৃত থাকে এবং সম্পূর্ণ শিষটিও হাস্ক দ্বারা ঢাকা থাকে। অনেকটা বন্য জাতের মতো বলে এর বেশি গুরুত্ব নেই।

পপ কর্ন

এই ভুট্টার গাছে শিষ ও দানা বেশ ছোট। দানাগুলি খুব শক্ত। তাপ দিলে ফুটে উঠে এবং খৈ-এর মতো দেখায়। এর দানাগুলি সাদা, হলদে বা বেগুনি রঙের হতে পারে।

ডেন্ট কর্ন

এই জাতের ভুট্টা পুষ্ট হলে বা পাকলে দানার উপরে সম্মুখ ভাগে খাঁজ পড়ে। ভুট্টার দানার পাশে শক্ত স্টার্চ (শ্বেতসার) এবং মধ্য ভাগে নরম স্টার্চ থাকে। দানা পাকলে নরম স্টার্চ শুকিয়ে ও সংকুচিত হয়ে এই খাঁজ ঘটায়। এই জাতের ভুট্টা সর্বাধিক পরিমাণে চাষ হয়। দানার রঙ হলদে বা সাদা হতে পারে। গাছ বেশ লম্বা। পাশকাঠি বের হতে পারে এবং উৎপাদনও বেশি হয়। এই ভুট্টার শিষ ১৫ থেকে ৩৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয় । এর প্রতিটি শিষে ১৬ থেকে ৩০ সারি দানা থাকতে পারে।

লিন্ট কর্ন

এই জাতের ভুট্টার দানা পাথরের টুকরোর মতো শক্ত হয় বলে একে ‘ফ্লিন্ট কর্ন’ বলে। এই ভুট্টার দানার শাঁসের মধ্য ভাগের নরম স্টার্চ বহিঃত্বকের খুব শক্ত স্টার্চ দ্বারা সম্পূর্ণ রূপে আবৃত থাকে; ফলে পাকলেও দানা সংকুচিত হয় না। দানাগুলি সাধারণত গোল থাকে, কোনও কোনও সময় ছোট এবং চ্যাপটাও হয়। এই ভুট্টা খুব জলদি জাতের এবং এর দানা বিভিন্ন রঙের হতে পারে। ভারতে হলদে থেকে কমলা রঙের স্বল্পকাল স্থায়ী ফ্লিন্ট ভুট্টাই বেশি পরিমাণে চাষ হয়।

ফ্লাওয়ার কর্ন

এই ভুট্টার দানার সমস্ত স্টার্চই নরম। সুতরাং সহজেই পিষে ময়দা করা যায়। যদিও বিভিন্ন রঙের দানা দেখা যায়, তবে সাদা রঙ-ই সচরাচর দেখা যায়। দানা ফ্লিন্ট কর্ন-এর মতো গোল হয়। একে নরম কর্নও বলা হয়।

সুইট কর্ন

এই জাতের ভুট্টার দানা বেশ মিষ্টি বলে অপুষ্ট অবস্থায় খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। স্বাদে অন্যান্য ভুট্টার চেয়ে মিষ্টি এবং শাঁসে শ্বেতসার ও শর্করা থাকে। দানার রঙ সাদা বা হলদে হয়।

ওয়াক্সি কর্ন

এই জাতের দানার শাঁস কাটলে বা ভাঙলে দেখতে মোমের মতো বলেই ওয়াক্সি কর্ন নাম। দানার ওয়াক্সি স্টার্চের (শর্করা) সাথে আয়োডিন মিশলে দানার শাঁসের রঙ লাল হয়। কিন্তু অন্যান্য দানা আয়োডিনের সংস্পর্শে আসলে নীল রঙ ধারণ করে। এই ধরনের ভুট্টা প্রধানত আঠা জাতীয় দ্রব্য উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয়।

সূত্র

  1. সার সমাচার
  2. পূর্ব ভারতের ফসল
  3. ডি এম আর, নিউদিল্লি
  4. ইনস্টিটিউট অব এগ্রিকালচারাল সায়েন্স, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/13/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate