অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

বিষয় যখন চাষ

মাটি ও আবহাওয়া

বেলে-দোঁয়াশ এবং দোঁয়াশ মাটি ভুট্টা চাষের বিশেষ উপযোগী হলেও লাল ও কাঁকুড়ে মাটি অঞ্চলের বাইদ জমিতে এমনকী এঁটেল মাটি অঞ্চলেও এই ফসলের সন্তোষজনক ফলন পাওয়া যায়। তবে মাটির পিএইচ যদি ৬.৫ থেকে ৮.০ এর মধ্যে হয় ও মাটির গভীরতা থাকে তা হলে সেই মাটিতে সর্বোত্তম ফলন পাওয়া যায়। ভুট্টা বৃষ্টিনির্ভর অঞ্চলের জন্য একটি নিশ্চিত ফসল। তবে ফসলের বাড়বৃদ্ধির সংকটময় দশায় মাটিতে রসের টান পড়লে ফলনের জন্য সেচ কার্যকর। তা বলে ভুট্টা মাটিতে দাঁড়ানো জল একেবারেই সহ্য করতে পারে না। তাই বর্ষাকালে ভুট্টা চাষের জন্য উঁচু জমি নির্বাচন করাই শ্রেয়।

ভুট্টা উষ্ণ ও আর্দ্র অঞ্চলের ফসল। বীজের অঙ্কুরোদগম ও চারার বৃদ্ধি ৩২ – ৩৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ভালো হয়। আবার নিষেকের সময় পরাগধানী থেকে পরাগরেণুর যথাযথ নিষ্ক্রমণের জন্য দিনের তাপমাত্রা ৩০০ সেন্টিগ্রেড থেকে ১০০ সেন্টিগ্রেডের মধ্যে থাকা দরকার। দিনের তাপমাত্রা এই পরিসীমার নীচে অথবা ওপরে চলে গেলে পরাগধানী থেকে পরাগরেণুর নিষ্ক্রমণ কমে যায়। আবার তাপমাত্রা ৩৭০ সেন্টিগ্রেডের ওপরে চলে গেলে পরাগরেণু নষ্ট হয়ে যায়। ফলে নিষেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলন কমে যায়।

মূলত ইতর পরাগেই ভুট্টার ফসলে দানা ধরে। তাই ভুট্টায় ফুল ধরে থাকার সময়ে বৃষ্টিপাত পরাগমিলন ও সুষ্ঠ নিষেকের পরিপন্থী। তাই ফুল ফোটার সময় আবহাওয়ার তাপমাত্রা উল্লিখিত পরিসীমার ভিতরে ও নিয়ন্ত্রিত বৃষ্টিপাত থাকা দরকার। ভুট্টা উষ্ণ অঞ্চলের ফসল বলেই ঠান্ডা আবহাওয়ায় ভুট্টার বাড়বৃদ্ধির বিভিন্ন দশা দীর্ঘায়িত হয়। প্রাক-খরিফ বা খরিফ মরশুমে বীজ অঙ্কুরিত হয়ে গাছ বের হওয়ার পর গাছের ঝুড়ির গঠন সরু হতে যেখানে ২১ – ২৮ দিন সময় লাগে সেখানে রবিখন্দে ৪০ – ৪৫ দিন লাগে। গাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ ঝুরি বেরোতে খরিফ ও প্রাক-খরিফে লাগে ৫০ – ৫৬ দিন, রবিতে লাগে ৭২ – ৭৯ দিন।

বোনার সময়

ভুট্টা আলোক সংবেদনশীল নয় বলে খরিফ, প্রাক-খরিফ ও রবি, তিন মরশুমেই চাষ করা চলে। পশ্চিমবঙ্গে এই তিন মরশুমেই ভুট্টার চাষ হয়। এই তিনটে মরশুমের মধ্যে খরিফ মরশুমেই ভুট্টা চাষের এলাকা বেশি। প্রাক-খরিফ মরশুমেও ভুট্টার এলাকা উল্লেখযোগ্য। রবি মরশুমে খুব কম এলাকাতেই এ রাজ্যে ভুট্টার চাষ হয়। তবে তিনটে মরশুমের মধ্যে রবিতেই ভুট্টার সব চেয়ে বেশি ফলন পাওয়া যায়। রবি মরশুমে জলের জোগান অনিশ্চিত হলে বোরো ধান অপেক্ষা ভুট্টার চাষ লাভজনক। খরিফ ফসল বোনার উপযুক্ত সময় আষাঢ় – শ্রাবণ (১৫ জুন – ১৫ আগস্ট)। রবি মরশুমে প্রধান ফসল হিসাবে চাষের জন্য কার্তিক মাসের শেষ পক্ষ (নভেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত )। এই সময় ভুট্টার সাথে সাথী ফসল হিসাবে মানানসই রবি ফসলের চাষ করলে কার্তিক মাসের প্রথম পক্ষই (নভেম্বর মাসের প্রথম পক্ষ) ভুট্টা বোনার আদর্শ সময়। প্রাক-খরিফ খন্দের ভুট্টা ফাল্গুনের প্রথম পক্ষের (ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ পক্ষ ) মধ্যে বোনা দরকার। তবে কৃষি-জলবায়ু অঞ্চলের প্রকৃতি বুঝে বোনার সময় এমন ভাবে আগু-পিছু করতে হবে যাতে করে ফুল ফোটার সময় বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়ার তাপমাত্রা পরাগমিলন ও নিষেকের অন্তরায় হয়ে না দাঁড়ায়।

বীজ বোনা

বর্ষাকালে ভুট্টা চাষের জন্য উঁচু জমি নির্বাচন করা দরকার। রবি ও প্রাক-খরিফ খন্দে উঁচু জমি পরিহার করাই শ্রেয়। বীজ বোনার জন্য চাষের জমি বার বার চাষ দিয়ে মাটি ঝুর ঝুরে করে ফেলতে হবে। অবশ্য জিরো টিলেজ যন্ত্রের সাহায্যে আ-চষা জমিতেও সার সহযোগে বীজ সারিতে সরাসরি বোনা চলে। খরিফ মরশুমে ভুট্টার জমিতে বৃষ্টির জল দাঁড়ানোর কোনও রকম সম্ভাবনা থাকলে জমি চাষের পর মাঠে সারি করে উঁচু বেড তৈরি করে বীজ বোনাই শ্রেয়। কেননা ভুট্টা মাঠে দাঁড়ানো জল সহ্য করতে পারে না। বর্তমানে ভুট্টা চাষের বেড তৈরি করার জন্য বাজারে ট্রাক্টরে টানা ‘বেড শেপার’ যন্ত্র বেরিয়েছে। এই বেড শেপার দিয়ে দক্ষিণ দিক থেকে পুব–পশ্চিমে টানা উঁচু বেড তৈরি করে বীজ বুনলে বীজের অঙ্কুরোদগম ভালো হয়। খরিফ মরশুমে ভুট্টার গোড়ায় বৃষ্টির জল দাঁড়াতে পারে না। দু’টি বেডের মাঝখানের নালি দিয়ে জল বেরিয়ে যায়। আবার রবি বা প্রাক-খরিফ মরশুমে সেচের সুযোগ থাকলে নিয়ন্ত্রিত সেচ দেওয়ার সুবিধা হয়।

মাটির ৩ – ৫ সেমি গভীরতায় বীজ বোনা বাঞ্ছনীয়। সারিতে বীজ বুনলে সারি থেকে সারির দূরত্ব থাকবে ৬০ সেমি এবং প্রতি সারিতে গাছের মধ্যে দূরত্ব হবে ২০ সেমি। ছিটিয়ে বুনলে প্রতি একরে ৮ – ১০ কেজি বীজ এমন ভাবে ছিটোতে হবে যাতে মাঠের সর্বত্র সমান ভাবে বীজ পড়ে। বীজ ছিটিয়ে মই টেনে বীজ ঢেকে দিতে হবে। চারা বেরোনোর পর লক্ষ রাখতে হবে যেন বর্গমিটারে ৬– ৮টি চারা থাকে।

জাত

  • বহুল ব্যবহৃত জাতের ধরণ
  • বিভিন্ন ধরনের জাতের সুবিধা – অসুবিধা
  • বিবিধ ব্যবহারের উপযোগী বিবিধ জাত

উন্নত জাত উচ্চ ফলনের বুনিয়াদ তৈরি করে। তাই চাষে ভালো ফলন পেতে হলে জাত বাছাই-এর ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। প্রজনন পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে ভুট্টার (প্রচলিত ও কৃষকপ্রিয় ) জাতকে দু’ ভাগে ভাগ করা হয়। কম্পোজিট ও হাইব্রিড।

এই দু’ ধরনের জাতের মধ্যে হাইব্রিড জাতের ফলনক্ষমতা অপেক্ষাকৃত বেশি। তবে হাইব্রিড জাতের বীজ দু’টি ভিন্ন জাতের সংকরায়নে উদ্ভূত প্রথম অপত্য বংশ বলে এক বার চাষের পর উৎপাদিত দানা পরের বার চাষের জন্য সংরক্ষণ করা যায় না। প্রতি বার চাষের জন্য নতুন করে বীজ সংগ্রহ করতে হয়।

অন্য দিকে কম্পোজিট জাত উদ্ভাবিত হয় গুটিকয়েক পছন্দসই জাতের বীজ পাশাপাশি বুনে প্রকৃতির কোলে তাদের মধ্যে স্বত:স্ফূর্ত ইতর পরাগমিলনের সুযোগ তৈরি করে। ভুট্টা ইতর-পরাগি শস্য। বাতাসে পুরুষ ফুল থেকে পরাগ বয়ে এনে স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে নিক্ষেপ করে। ফলে নিষেক সম্পন্ন হয়। তৈরি হয় বীজ। এই বীজগুলো আসলে সংকর বীজ। এই ভাবে পাশাপাশি বোনা সবক’টি গাছের সংকর বীজ একসাথে মিশিয়ে তৈরি হয় একটি কম্পোজিট জাত। এই কম্পোজিট জাত চাষের সময় কৃষকের মাঠেও অনুরূপ ভাবে বাতাসবাহিত পরাগ পাশাপাশি বেড়ে ওঠা নিকটবর্তী গাছের গর্ভমুণ্ডে পড়ে দানা উৎপাদিত হবে। ফসল কাটার পর দানাই হবে ওই কম্পোজিট জাতের বীজ। এই ভাবেই বীজ কোম্পানি কম্পোজিট জাতের বীজ তৈরি করে। সুতরাং কৃষকের মাঠের কাটা ভুট্টার মোচা (কব) মাড়াই করে যে দানা পাওয়া যায় তা স্বচ্ছন্দে পরের চাষে ব্যবহার করার জন্য সংরক্ষিত করা যাবে। প্রতি বার চাষের জন্য নতুন বীজ কেনার দরকার হয় না।

প্রজনন পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে বিভাজিত এই দু’ ধরনের জাত ছাড়াও ভুট্টার নানা ধরনের জাত আছে যেমন — ও পি জাত, সিনথেটিক জাত ইত্যাদি। এই ধরনের জাতের মধ্যে ও পি জাতের চল সীমিত হলেও সিনথেটিক জাতের বীজের এখন আর চল নেই।

ও পি জাতের বীজ কম্পোজিট জাতের মতোই প্রতি বার কিনে চাষ করতে হয় না। ফসল কাটার পর যে দানা পাওয়া যায় তার কিয়দংশ বাঁচিয়ে পরের বার চাষের জন্য ব্যবহার করা যায়।

হাইব্রিড জাতের মধ্যেও আবার ভাগ আছে। দু’টি জাতের মধ্যে সংকরায়নে উদ্ভাবিত জাতের নাম সিঙ্গল ক্রস হাইব্রিড, তিনটি জাতের মধ্যে সংকরায়ণে উদ্ভাবিত জাতের নাম থ্রিওয়ে ক্রস এবং চারটি জাতের সংকরায়নে উদ্ভাবিত হাইব্রডের নাম ডবল ক্রস। বর্তমানে ডবল ক্রস কিংবা থ্রিওয়ে ক্রসের মাধ্যমে উদ্ভাবিত জাতের চল নেই। বাণিজ্যিক ভাবে প্রচলিত সব হাইব্রিড জাতই ডবল ক্রস।

সূত্র

  1. টি এম ও পি এবং এম, ভারত সরকার
  2. কৃষি দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
  3. সার সমাচার, অক্টোবর – ডিসেম্বর, ২০১২
  4. ইনস্টিটিউট অব এগ্রিকালচারাল সায়েন্স, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
  5. শুভেন্দুদেব চ্যাটার্জি

সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/18/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate