খেসারীতে প্রচুর পরিমানে খাদ্য শক্তি ও প্রোটিন আছে।
ডাল হিসেবে প্রধানত খাওয়া হয়। এ ছাড়াও পিয়াজু বা বিভিন্ন মুখরোচক খাবারে ব্যবহৃত হয়।
দো-আঁশ এবং এটেল দো-আঁশ মাটিতে খেসারী ভালো জন্মে। খেসারী প্রধানত বোনা আমন ধান কাটার আগে রিলে ফসল হিসেবে আবাদ করা হয়। সেজন্য জমি চাষের প্রয়োজন হয় না। একক ফসল হিসেবে আবাদের ক্ষেত্রে ৩-৪ টি চাষ ও মই দিতে হবে।
বারি খেসারী-১ জাত স্থানীয় জাতের তুলনায় ৪০% পর্যন্ত বেশি ফলন দেয়। এ জাতের গাছ গাঢ় সবুজ এবং প্রচুর শাখা-প্রশাখা হয়ে থাকে। বারি খেসারী-১ জাতের হাজার বীজের ওজন ৪৮-৫২ গ্রাম। ফসল পাকতে ১২৫-১৩০ দিন সময় লাগে। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.৪-১.৬ টন। এ জাত পাউডারি ও ডাউনী মিলডিউ রোগ প্রতিরোধী।
গাছের উচ্চতা ৫৫-৬০ সেন্টিমিটার। পাতা স্থানীয় জাতের তুলনায় বেশি চওড়া। ফুলের রং নীল। বীজ একটু বড়, হাজার বীজের ওজন ৫০-৫৫ গ্রাম। বীজের রং হালকা ধূসর। আমিষের পরিমাণ ২৪-২৬%। বীজ বপন থেকে ফসল পাকা পর্যন্ত ১২৫-১৩০ দিন সময় লাগে। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.৫-২ টন।
গাছের উচ্চতা ৬২-৬৫ সেন্টিমিটার। প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৩৫-৩৮টি। বীজ বপন থেকে ফসল পাকা পর্যন্ত ১২০-১২৫ দিন সময় লাগে। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.৮-২.০ টন।
রিলে ফসলের ক্ষেত্রে আমন ধানের পরিপক্কতাকাল এবং জমির রসের পরিমাণের উপর খেসারীর বীজ বপনের সময় নির্ভর করে। এক্ষেত্রে কার্তিক মাস থেকে মধ্য-অগ্রহায়ণ (মধ্য-অক্টোবর থেকে নভেম্বর) পর্যন্ত বীজ বপন করতে হবে। একক ফসলের জন্য মধ্য-কার্তিক থেকে মধ্য-অগ্রহায়ণ (নভেম্বর) মাসে বীজ বপন করতে হবে।
রিলে ফসল হিসেবে চাষ করলে আমন ধান কাটার প্রায় এক মাস আগে জমিতে পর্যাপ্ত রস থাকা অবস্থায় বীজ ছিটিয়ে বপন করতে হবে। একক ফসল হিসেবেও বীজ ছিটিয়ে বপন করা যায়। তবে সারিতে বপনের ক্ষেত্রে সারির দূরত্ব ৫০ সেমি রাখতে হবে।
প্রতি একরে ১৬-১৮ কেজি বীজ লাগে, তবে রিলে ফসলের ক্ষেত্রে বীজের পরিমাণ কিছু বেশি দিতে হয়।
খেসারীর রিলে ফসলের ক্ষেত্রে সারের প্রয়োজন হয় না। একক ফসলের জন্য অনুর্বর জমিতে হেক্টরপ্রতি নিম্নরূপ হারে সার ব্যবহার করতে হবে।
সারের নাম | সারের পরিমাণ/হেক্টর |
---|---|
ইউরিয়া | ৪০-৪৫ কেজি |
টিএসপি | ৮০-৮৫ কেজি |
এমওপি | ৩০-৪০ কেজি |
অণুজীব সার | সুপারিশ মত |
সমুদয় সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। আগে খেসারীর চাষ না করা জমিতে আবাদের জন্য প্রতি কেজি বীজের সাথে ১০০ গ্রাম হারে অনুমোদিত অণুজীব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
রোগাক্রান্ত খেসারী গাছের পাতা কিছুটা হলদে হয়ে যায়। পাতার নীচে লক্ষ করলে ছত্রাকের অবস্থান খালি চোখেই দেখা যায়। রোগের মাত্রা বেশি হলে পাতা কুঁচকে ও ঝলসে যায়। এ ছত্রাকের জীবাণু মাটিতে ১-২ বৎসর বেঁচে থাকতে পারে।
রোগ প্রতিরোধী জাত যেমন বারি খেসারী-১ এবং বারি খেসারী-২ চাষ করতে হবে। রিডোমিল এম জেড (০.২%) ১২ দিন পরপর ৩ বার ¯েপ্র করে এ রোগ দমন করা যায়।
ভূমিকা: পূর্ণবয়স্ক পোকা ও কীড়া উভয়ই গুদামজাত ডালের ক্ষতি করে থাকে।
ক্ষতির নমুনা: এ পোকা ডালের খোসা ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে শাঁস খেতে থাকে। ফলে দানা হাল্কা হয়ে যায়। এর ফলে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় এবং খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।
ব্যবস্থাপনা: গুদামজাত করার আগে দানা ভালভাবে পরিষ্কার করতে হয়। ডালের দানা শুকিয়ে পানির পরিমান ১২% এর নিচে আনতে হবে। বীজের জন্য টন প্রতি ৩০০ গ্রাম ম্যালাথিয়ন বা সেভিন ১০% গুড়া মিশিয়ে পোকার আক্রমণ প্রতিরোদ করা যায়। ফসটক্সিন ট্যাবলেট ২টি বড়ি প্রতি ১০০ কেজি গুদামজাত ডালে ব্যবহার করতে হয়। এ বড়ি আবদ্ধ পরিবেশে ব্রবহার করতে হয়।
সূত্র: বিকাশপিডিয়া টীম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 10/11/2023