সরিষা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান তৈল বীজ ফসল। এর ইংরেজি নাম Mustard ও বৈজ্ঞানিক নাম Brassica spp. সরিষার তেল শহর গ্রাম সবখানে খুবই জনপ্রিয়। আমাদের দেশের অনেক জমিতে সরিষার চাষ হয়ে থাকে। এই চাষ করা সরিষা থেকে প্রতিবছর প্রায় আড়াই লাখ টন তেল পাওয়া যায়। আমাদের দেশের গ্রামের অধিকাংশ মানুষ ভোজ্য তেলের জন্য সরিষার উপর নির্ভর করে। আমাদের দেশে অনেক জায়গায় এখন ব্যবসায়িক ভিত্তিতে সরিষার চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে।
সরিষার বীজে গড়ে প্রায় ৪০-৪৪ ভাগ তেল থাকে।
আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান তেল হলো সরিষার তেল। সরিষার তেল শহর ও গ্রামে খুবই জনপ্রিয়। সরিষার খৈল গরু ও মহিষের জন্য খুব পুষ্টিকর খাদ্য। এছাড়া মাটির জন্য খৈল খুব উন্নতমানের জৈব সার। তাই সরিষা উৎপাদন করে পারিবারিক ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এর খৈল দিয়ে গবাদি পশুর খাদ্য, মাছের খাদ্য ও জমির জন্য জৈব সার তৈরি করা সম্ভব। এসব থেকে বাড়তি আয় করাও সম্ভব। সরিষার তেল বিভিন্ন খাবার রান্না ও স্বাদ বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়। দেশের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত উৎপাদন বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে থাকে। সরিষা বিদেশে রপ্তানি করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
আমাদের দেশে ৩ প্রকার সরিষার চাষ হয়। যথা: টরি, শ্বেত ও রাই। এছাড়া বর্তমানে নেপাস সরিষার চাষ উদ্ভাবন করা হয়েছে এবং এর আবাদও হচ্ছে। সরিষার অন্যান্য জাত ও চাষ সময়সমূহ হচ্ছে :
নাম |
হাজার বীজের ওজন (গ্রাম) |
বীজে তেলের পরিমাণ (%) |
বোনা হতে পাকা পর্যন্ত সময় (দিন) |
---|---|---|---|
টরি |
২.৬-২.৭ |
৩৮-৪১ |
৭০-৮০ |
সোনালি সরিষা (এস এস-৭৫) |
৩.৫-৪.৫ |
৪৪-৪৫ |
৯০-১০০ |
কল্যাণীয়া (টি এস-৭২) |
২.৫-৩.০ |
৪০-৪২ |
৭৫-৮০ |
দৌলত (আর এস-৮১) |
২.০-২.৫ |
৩৯-৪০ |
৯০-১০৫ |
বারি সরিষা-৬ (ধানি) |
৩-৪ |
৪৪-৪৫ |
৯০-১০০ |
বারি সরিষা-৮ (ন্যাপাস-০৯) |
৩.৪-৩.৬ |
৪৩-৪৫ |
৯০-৯৫ |
রাই-৫ |
১.৭-১.৯ |
৩৯-৪০ |
৯০-১০০ |
জলবায়ু |
মাটির প্রকৃতি |
---|---|
বিভিন্ন অঞ্চলের তারতম্য এবং জমির জো অবস্থা অনুসারে টরি-৭, কল্যাণীয়া, সোনালি সরিষা, বারি সরিষা-৬, রাই-৫ এবং দৌলত কার্তিক থেকে অগ্রহায়ণ (মধ্য-অক্টোবর থেকে মধ্য-নভেম্বর) মাস পর্যন্ত বপন করা যেতে পারে। |
সরিষা চাষের জন্য দো-আঁশ, বেলে দো-আঁশ ও পলি মাটি উপযুক্ত। সহজে জল নিষ্কাশন করা যায় এরকম মাটির জমি নির্বাচন করতে হবে। |
কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে সরিষা চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে পাড়া-প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশে-পাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদি স্তুপ করে রেখে আবর্জনা পচা সার তৈরি করা সম্ভব।
সুত্র: বিকাশপিডিয়া টীম, পশ্চিমবঙ্গ
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019