অঞ্চল ভেদে রয়েছে মাটির গুণ। তবে দোঁআশ ও বেলে দোঁআশ মাটি পেঁপে চাষের জন্য উপযোগী।
দৈঘ্য ২২ মিটার, প্রস্থ ৪৫ সেন্টিমিটার হওয়া দরকার। উঁচু, চওড়া আইল পেঁপে চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
মাদা থেকে মাদার দূরত্ব ২ মিটার।
৩০×৩০×৩০ সেন্টিমিটার। উঁচু জায়গার আকার ৪৫×৪৫×৪৫।
প্রতি মাদায় ৩টি চারা ৩ কোণ আকারে রোপণ করতে হবে।
এপ্রিল মাস পেঁপের চারা রোপণে উপযুক্ত সময়। তবে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসেও পেঁপের চারা রোপণ করা যায়।
পেঁপে জমির আইলে আগাছা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করে দিতে হবে।
শীতকালে প্রতি ১০-১২ এবং গ্রীষ্মকালে ৬-৭ পর পর সেচ দেয়া দরকার।
চারা রোপণের ২ মাসের মধ্যে গাছে ফুল আসতে শুরু করে। গাছে ফুল আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রতি ১০-১৫টি স্ত্রী গাছের জন্য একটি মাত্র পুরুষ গাছ রেখে দিয়ে, বাকি পুরুষ গাছগুলো তুলে ফেলতে হবে। প্রতি মাদায় উঁচু জায়গায় একটি করে স্ত্রী পেঁপে গাছ রাখতে হবে।
বেশি ফল ধরলে বা ঝড়ের হাত থেকে গাছ রক্ষা করতে হলে শক্ত খুঁটি মাটিতে পুঁতে দিয়ে গাছের কান্ডের সঙ্গে বেঁধে দিতে হবে।
বীজে রোগ আক্রমণ করলে চারা গজানোর আগেই পচে যায়। চারা আক্রান্ত হলে গাছের গোড়ায় বাদামি বর্ণের পানি ভেজা দাগের সৃষ্টি হয়। তখন গাছ ঢলে পড়ে মরে যায় এবং সহজেই বাতাসে ভেঙে পড়ে।
এ রোগে গাছের পাতায় সবুজ ও হলুদ রঙের দাগ দেখা যায়। পাতা খর্বাকৃতির হয়। অনেক সময় পাতা সম্পূর্ণ কুঁকড়ে যায়।
এ রোগের আক্রমণে পাতা কুঁকড়ে যায়। পাতার শিরাগুলো অপেক্ষাকৃত মোটা হয়। গাছ আকারে ছোট এবং ফলন কম হয়। এ রোগের ভাইরাস সাদা মাছি দ্বারা গাছ থেকে গাছে ছড়ায়।
চারা রোপণের ৩ মাসের মধ্যেই ফুল আসে এবং ফল ধরার ২-৩ মাসের মধ্যেই সবজি হিসেবে পেঁপে সংগ্রহ করা যায়।
পেঁপে কাঁচা অবস্থায় সুস্বাদু না হলেও নিরামিষ হিসাবে কাঁচা পেঁপের ব্যবহার খুবই প্রচলিত। আর পেঁপের পুষ্টিগুণ বিবেচনায় এটি একটি মূল্যবান ফল। এর বৈজ্ঞানিক নাম ক্যারিকা পাপায়া। পেঁপের আরেক নাম পাওয়ার ফ্রুট। কারণ, এতে রয়েছে অনেক রোগের নিরাময় ক্ষমতা। এর পেপেইন নামের উপাদান আমিষকে হজম করে সহজেই এবং পরিপাক তন্ত্রকে পরিষ্কার করে। ওজন কমাতেও বেশ সহায়ক।
অন্য দিকে আপেলের চেয়ে পেঁপেতে তেরো গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ এবং দ্বিগুণ পরিমাণ বেশি পটাশিয়াম
বিদ্যমান। আপেল ও কমলার চেয়ে পেঁপেতে ভিটামিন ‘ই’-এর পরিমাণও চার গুণ বেশি। ১০০ গ্রাম পেঁপেতে ক্যালসিয়াম ১৭ মিগ্রা, ফসফরাস ১৩ মিগ্রা, আয়রন ০.৫ মিগ্রা,ভিটামিন সি ৫৭ মিগ্রা এবং সামান্য ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্সও রয়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এ সব উপাদান গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষকদের মতে, লাইকোপিন ক্যানসার প্রতিরোধী। পুষ্টি বিবেচনায় পেঁপে অনেক ফলের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। কমলার চেয়ে পেঁপেতে ৩৩ শতাংশ বেশি ভিটামিন সি এবং ৫০ শতাংশ বেশি পটাশিয়াম রয়েছে। ওজন কমাতে পেঁপে বেশ সহায়ক। অন্যান্য ফলের তুলনায় পেঁপেতে ক্যারোটিন অনেক বেশি থাকে। কিন্তু ক্যালোরির পরিমাণ অনেক কম থাকায় যাঁরা মেদ সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা অনায়াসে খেতে পারেন এ ফলটি। এ ছাড়াও এই ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও সি আছে যা শরীরের জন্য অনেক বেশি দরকারী। পেঁপেকে বলা হয় পুষ্টি উপাদানের ‘রাজভাণ্ডার’। হজমকারী হিসাবে পেঁপে খুবই জনপ্রিয়।
পাকা পেঁপে কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতে সাহায্য করে। প্রচুর আঁশ ও ক্যারোটিন থাকায় এটি অন্ত্রের ক্যানসারের ঝুঁকিও কমায়। পেঁপে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। প্রতি দিন দু’ কাপ পেঁপে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।
এটি ব্লাড প্রেসার ঠিক রাখার পাশাপাশি রক্তের প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকী শরীরের ভেতরের ক্ষতিকর সোডিয়ামের পরিমাণকেও কমিয়ে দেয়। ফলে হৃদরোগের সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়। এ কারণেই হৃদরোগীদের সব সময় পেঁপে খেতে বলা হয়।
জলবায়ু অনুসারে আমাদের গ্রীষ্মকালের ফসলগুলোর মধ্যে পেঁপে অন্যতম এবং চাষাবাদের জন্য এ সময়টাই হচ্ছে ভালো সময়। এ ছাড়া সারা বছরই পেঁপে চাষ করা যায়। জমিতে এবং বাড়ির সামান্য পরিসরে লাগাতে পারেন এ সবজি বা ফলটি। আমাদের দেশে অনেক জাত রয়েছে, তা থেকে বেছে নিতে পারেন আপনার প্রিয় জাতটি।
সুত্রঃ পোর্টাল কনটেন্ট টীম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/28/2020