অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

রজনীগন্ধা

রজনীগন্ধা

পরিচিতি

রজনীগন্ধার সুবাস সব মানুষের মনে প্রশান্তি আনে। বিশেষ করে রাতের বেলা এর আবেদনময়ী ঘ্রান সকলকে পাগল করে তোলে। এ ফুল সচরাচর সাদা হওয়ায় বাগানের শোভা বাড়ানো ছাড়াও বিভিন্ন উৎসব, অনুষ্ঠান ও গৃহ সজ্জায় ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দিনদিন এই ফুলের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে আমাদের দেশে বানিজ্যিকভাবে এর যথেষ্ঠ চাষাবাদ হচ্ছে।

জাত

ফুলের পাঁপড়ির সারি অনুযায়ী রজনীগন্ধা দুই বা তিন ভাগে বিভক্ত, যেমন-সিঙ্গেল, সেমি-ডবল ও ডবল। যে সব জাতের ফুলের পাঁপড়ি একটি সারিতে থাকে সে সব জাতগুলি সিঙ্গেল শ্রেনীভুক্ত, যে সব জাতের ফুলের পাঁপড়ি দুই বা তিন সারিতে থাকে সে জাতগুলিকে সেমি-ডবল এবং তিন-এর অধিক পাঁপড়ির সারি থাকলে সে জাতগুলিকে ডবল শ্রেনীর অমর্ত্মভুক্ত করা যায়।

আবহাওয়া

উপযুক্ত বৃদ্ধির জন্য আর্দ্র আবহাওয়া এবং গড় তাপমাত্রা ২০থেকে ৩০সে. হওয়া দরকার। পর্যাপ্ত সূর্যোলোকসহ উপকূলীয় এলাকা ও বর্ষাকাল উৎপাদনের উপযুক্ত সময় । শীতকালে রজনীগন্ধা ফুলের উৎপাদন কমে যায়। তবে সেমি ডবল ও ডবল জাত শীতকালেও ফুল দিতে থাকে।

জমি নির্বাচন

জৈব সার সমৃদ্ধ দো-আঁশ মাটি। উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি, জল বের করে দেওয়ার সুব্যবস্থা যুক্ত মাটি। ছায়াহীন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল। জল সেচ ব্যবস্থা আছে এমন এবং জমির pH মান ৬.৫ থেকে ৭.৫ আছে এমন জমি।

কন্দ লাগানোর উপযুক্ত সময়

  • রবি মৌসুম: মধ্য আশ্বিন হতে কার্ত্তিকের শেষ (অক্টোবর হতে মধ্য নভেম্বর) পর্যন্ত।
  • খরিফ মৌসুম: ১লা চৈত্র থেকে বৈশাখের মাঝামাঝি (মধ্য মার্চ থেকে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত)।

কন্দের সংখ্যা

একর প্রতি ১২০০০ টি কন্দ লাগাতে হবে।

ভাল জাতের বৈশিষ্ট্য

  • দেশীয় মাটি ও আবহাওয়ায় চাষ উপযোগী ;
  • রোগ বালাই প্রতিরোধক্ষম ;
  • সহজেই গাছ হেলে পড়ে না ;
  • প্রতিকূল পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে ;
  • উন্নত মানের কন্দ ;

বংশ বিস্তার

সাধারণত: কন্দ দ্বারাই রজনীগন্ধার চাষ ও বংশ বিস্তার করা হয়। কন্দ থেকে উৎপন্ন গাছে মাতৃ গাছের সকল গুণাগুণ বজায় থাকে।

রোপণ পদ্ধতি

জমি চাষ শেষ হলে ৫ ফুট বেড তৈরি করতে হবে। বেড তৈরির ৭ থেকে ১০ দিন পর কন্দ রোপণ করা উচিত। ০.৬ থেকে ১.১৮ ইঞ্চি ব্যাসের কন্দ লাগাতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব ১২ ইঞ্চি এবং কন্দ হতে কন্দের দূরত্ব ৮ ইঞ্চি। কন্দকে ৬ ইঞ্চি গভীরে লাগাতে হবে। কন্দ রোপণের আগে কন্দের সুপ্তাবস্থা (যে সময়টুকুতে বীজ গজাবে না তাকেই সুপ্তাবস্থা বলে) কাটানোর জন্য কন্দ গুলোকে ৪ শতাংশ থায়ো ইউরিয়া জলীয় দ্রবনে প্রায় ৩০ মিনিট চুবিয়ে রাখতে হবে।

জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ

প্রথম চাষের সঙ্গে প্রতি বিঘা জমিতে ৩ টন জৈবসার বা খামারের সার মিশাতে হবে এবং ৪-৫ বার গভীরভাবে চাষ দিয়ে অগাছামুক্ত করতে হবে ও জমির মাটি ঝুরঝুরে ও সমান করতে হবে। শেষ চাষের আগে প্রতি বিঘাতে ১৪:২৮:২৮ ইউরিয়া, টিএসপি,এমপি সার মূল সার হিসাবে জমিতে মিশতে হবে । এঁটেল মাটিতে ১০% সার কম দিলেও চলে। ২ মাস পর হতে প্রতি ২ মাস পর পর ৭ কেজি ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরীর কাজ চারা লাগাবার অন্ততঃ ১৫ দিন আগে শেষ করতে হবে। টবে চাষের ক্ষেত্রে ২ ভাগ মাটি, ১ ভাগ পাতা পচা সার, ১ ভাগ পচা গোবর সার মিশিয়ে টব ভরে নিতে হবে। একটি টবে ২টি কন্দ লাগানো যায়।

চাষের সময়ে পরিচর্যা

(ক) সেচ ও জল নিষ্কাশনঃ রজনীগন্ধার জমির মাটিতে সবসময় রস থাকা উচিত। গ্রীষ্মকালে ৭ দিন পরপর এবং শীতকালে ১০ দিন পরপর সেচ দেওয়া উচিত।

(খ) আগাছা দমনঃ রজনীগন্ধার জমি সবসময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। আগাছা দমনের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কন্দের কোন ক্ষতি না হয়। আগাছা দমনে প্রয়োজনে অনুমোদিত আগাছানাশক ১.৮ কেজি/একর প্রতি স্প্রে করতে হবে।

(গ) নিড়ানীঃ রজনীগন্ধার জমিতে নিড়ানী দিতে হবে। নিড়ানী দেওয়ার ফলে গাছ আলো, বাতাস ও জল সহজেই পেতে পারে। নিড়ানীর ফলে জমির আর্দ্রতার ধারন ক্ষমতা বাড়ে এবং আগাছা মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

পোকা-মাকড়, রোগবালাই এবং দমন পদ্ধতি

ধ্বসা রোগ

এ রোগের ফলে গাছের শিঁকড়ে পচন ধরে। শেষে গাছের পাতা খসে যায় এবং ফুলের মঞ্জরীগুলো মাটিতে ঢলে পড়ে।

ব্যবস্থাপনা

আক্রান্ত গাছগুলো তুলে ধ্বংস করতে হবে। গাছের গোড়ার মাটি প্রতি লিটার জলতে ৪ গ্রাম কুপ্রাভিট/বেনডাজিম/ ব্যাভিস্টিন/ সেভিন মিশিয়ে সেই মিশ্রণ দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছে ১৫ দিন পরপর ২ থেকে ৩ বার প্রতি লিটার জলতে ৪ গ্রাম হারে কুপ্রাভিট/বেনডাজিম/ব্যাভিস্টিন/সেভিন মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।

শিকড়ে গিঁট রোগ

কৃমি গাছের শিকড়ে গুটি তৈরি করে। এ রোগে আক্রান্ত গাছের শিকড়ের মাঝে মাঝে ফুলের গিঁটের মত হয়ে যায়। ফলে গাছের মাটি থেকে খাদ্য ও জল নেয়া ব্যাহত হয়। গাছ সহজে বাড়ে না, ফুল আসেনা। দুর্বল হয়ে শেষে গাছ মরে যায়।

ব্যবস্থাপনা

একই জমিতে পরপর দু’তিন বছর এক নাগাড়ে রজনীগন্ধা ও বেগুন জাতীয় ফসর চাষ না করা ভাল। দু’সারি রজনীগন্ধা গাছের মধ্যে এক সারি গাঁদা গাছ লাগিয়ে গাঁদা-রজনীগন্ধার মিশ্র চাষ করলে শিকড়ে গিঁট কৃমির উপদ্রব কম হয়। জমিতে নিম খৈল ছিটানো যেতে পারে। কন্দ রোপণের সময় সারির মাটিতে নিম খৈল ও নিউফরান ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। তারপর সেখানে কন্দ রোপণ করলে এ রোগের আক্রমণ অনেক কম হয়। প্রাথমিকভাবে অল্প গাছ আক্রান্ত হলে সেসব গাছ তুলে জমি থেকে দূরে ফেলতে হবে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আক্রান্ত স্থানের মাটি কিছুটা গর্ত করে খড় জ্বালিয়ে মাটি পুড়াতে হবে।

পাতার দাগ রোগ

এ রোগের ফলে রজনীগন্ধার গাছের পাতার অগ্রভাগ থেকে প্রথমে দাগ পড়ে। পরে তা শুকিয়ে বাদামী হয়ে যায় ও ধীরে ধীরে নীচের দিকে পাতার কিনারা বরাবর ঢেউ খেলানো দাগের মত নামতে থাকে। গাছ দুর্বল হয়ে শেষে মরে যায়।

ব্যবস্থাপনা

একই জমিতে পরপর এক নাগাড়ে রজনীগন্ধা চাষ না করা ভাল। প্রাথমিকভাবে অল্প গাছ আক্রান্ত হলে সেসব গাছের আক্রান্ত অংশ কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। জমি তৈরির সময় একর প্রতি ৬ থেকে ৯ কেজি হারে রুটোন/এগ্রো-গ্রো (দানাদার) প্রয়োগ করলে শিকড়ের রোগ বালাই কম হয়।

ফুল কাটা

কন্দ লাগানোর ৭০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে গাছে স্টিক আসতে শুরু করে। স্টিক কাটার সময় ধারালো ছুরি ব্যবহার করতে হবে। রজনীগন্ধার স্টিকের প্রথম ফুল ফুটলেই ডাঁটিসহ ফুল কাটতে হবে। ভোরের ঠান্ডা আবহাওয়ায় অথবা পড়ন্ত বিকেলে ফুল কাটতে হবে। স্টিক কাটার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন এটি মাটি থেকে ১.৫ থেকে ২.৫ ইঞ্চি উপরে থাকে। কাটার সাথে সাথে স্টিক গুলির নীচের কাটা অংশ জলতে চুবিয়ে ছায়ায় রাখতে হবে , যেন ফুল ও স্টিকের সতেজভাব বজায় থাকে।

ফুল উৎপাদন

একর প্রতি রজনীগন্ধার স্টিক উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ১৫০০০০ থেকে ২০০০০০টি।

কন্দ উত্তোলন ও সংরক্ষণ

রজনীগন্ধার কন্দ সহজেই উত্তোলন  ও সংরক্ষণ করা যায়। ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাসে গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেলে কন্দ গুলি মাটি থেকে তুলে এনে পরিস্কার করে ছায়াযুক্ত শুকনো মেঝেতে ছড়িয়ে রাখতে হয়। পরিপক্ক কন্দগুলি পরবর্তীতে বীজ হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

প্রক্রিয়াজাতকরণ

রজনীগন্ধা ফুল ও পাতা থেকে জল বের হয়ে গিয়ে ফুল ও পাতা শুকিয়ে যেতে পারে। এজন্য অতিদ্রুত অপ্রয়োজনীয় পাতা কেটে ফেলতে হবে। এর পর বান্ডিল তৈরি  করে প্রথমে ভেজা নিউজপ্রিন্ট কাগজে স্টিক গুলো মুড়ে ও পরে কালো পলিথিনে জড়িয়ে ঠান্ডা পরিবেশে প্রায় ৪ ঘন্টা গোড়ার কাটা অংশ জলতে চুবিয়ে রাখতে হবে। এ প্রক্রিয়ায়  ফুলের  সতেজতা র্দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকে।

সূত্রঃ বিকাশপিডিয়া টীম

সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/5/2019



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate