এ যুগে কৃষি কাজেও রয়েছে প্রতিযোগিতা। আজ কৃষকরা একই জমিতে একই সঙ্গে দু-তিনটি ফসল চাষ করে। ব্যাপক সাফল্য পাচ্ছেন। আলু ক্ষেতে মিষ্টি কুমড়া চাষ সে প্রচেষ্টারই দৃষ্টান্ত। নীচে আলুর সঙ্গে মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি আলোচনা করা হলো-
আলু চাষাবাদের জন্য উঁচু জমি উত্তম। কারণ এ ধরনের জমিতে জল থাকে না। বেলে-দোআঁশ বা দোআঁশ মাটিতে আলুর ফলন ভালো হয়। মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য একই ধরণের জমি ও মাটি প্রয়োজন।
আলুর ফলন ভালো পেতে হলে ডিসেম্বর জমি ভালো করে জমি চাষ-মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হয়। প্রয়োজনীয় মাত্রার সার দিয়ে আলুবীজ বপন করতে হবে। এবার গাছের উচ্চতা ৬ সেমি হলেই নিড়ানি দিয়ে কান্দি দিতে হবে।
আলুর বপনকাজ শেষ করার ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করতে হবে। সেচ দেওয়ার জন্য আলুর দুই কান্দির মাঝে সামান্য উঁচু করে মাদা তৈরি করে নিতে হবে। দুই কান্দির মাঝে ৪ থেকে ৫ হাত দূরে মিষ্টি কুমড়ার মাদা তৈরি করে নিতে হবে। মাদা কান্দির চেয়েও সামান্য উঁচু হবে। প্রতিটি মাদায় ৪ থেকে ৬টি বীজ পুঁতে বপন করতে হবে। এভাবে প্রতি শতাংশ জমিতে ১৭ থেকে ২০টি মাদা তৈরি করতে হবে।
আলু ফের্রুয়ারি মাসে উঠানো যাবে। এ সময় বেড়ে ওঠা মিষ্টি কুমড়ার গাছ বেশি লম্বা হয়। তখন মিষ্টি কুমড়ার গাছগুলো পেঁচিয়ে গোল করে রেখে দিতে হবে। দু-একদিনে জমি থেকে আলু ওঠানোর কাজ শেষ হলে মিষ্টি কুমড়ার গাছগুলো পেঁচানো অবস্থা থেকে এদিক ওদিক ছড়িয়ে দিতে হবে। এতে গাছ চারপাশে সমানভাবে বাড়তে থাকবে। মিষ্টি কুমড়া গাছ ছড়িযে দেওয়ার সময় যাতে গাছগুলো ছিড়ে না যায় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
ক্ষেত থেকে আলু ওঠালে এমনিতেই মাটি মোটামুটি সমান হয়ে যায়। তবুও কোথাও উঁচু-নিচু তা হাত দিয়ে কিংবা কোদাল দিয়ে সমান করে দিতে হবে, যাতে সমান করে দেওয়া মাটিতে মিষ্টি কুমড়ার গাছ সহজেই বাড়তে পারে। আলু ওঠানোর পর জমির মাটির রস শুকিয় যায়। তখন রসের অভাব পূরণে সেচ দিতে হবে।
জমিতে সেচ দেওয়ার পর গাছের গোড়ায় প্রতিটি মাদার জন্য ১০০ গ্রাম টিএসপি, ৫০ গ্রাম ইউরিয়া গোলাকার নালা করে দিতে হবে। গাছে সার যেন না লাগে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এরপরও গাছের বৃদ্ধি কম হলে দুই থেকে তিন সপ্তাহ পরপর এক থেকে দুবার একই পরিমাণ ইউরিয়া সার গাছের চারপাশে নালা করে দিতে হবে।
গাছ বড় হলে গাছে ফুল আসতে থাকে। ফুল আসার সময় কোনো ধরণের কীটনাশক প্রয়োগ করা যাবে না। কারণ এ সময় বিভিন্ন ধরণের কীটপতঙ্গ ফুলে ফুলে উড়ে বেড়ায় এবং পরাগায়ন ঘটায়। যেসব মিষ্টি কুমড়া ক্ষেতে কীটপতঙ্গের সংখ্যা বেশি থাকে সেসব ক্ষেতে কুমড়ার সংখ্যাও বাড়ে। জানা থাকলে পুরুষ ফুলগুলোর পরাগরেণু ন্ত্রী ফুলের গর্ভদগেু মাখিয়ে দিতে হবে। তবে বেমি ঠান্ডা বা শীত পড়লে এসবের প্রয়োজন পড়ে না। পুরুষ ফুলের মধ্য থেকে একটি শীষ বের হয়, যার দেহে অসংখ্য হলুদ রঙের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানা থাকে। আর ন্ত্রী ফুলের মধ্য থেকে বের হওয়া দগুটির মাথা চার ভাগে বিভক্ত থাকে। এ দুটি লক্ষন দেখে পুরুষ ও ন্ত্রী ফুল চেনা যায়।
মিষ্টি কুমড়া একটু বড় হতে থাকলে কুমড়ার নিচে খড়, আলুর শুকিয়ে যাওয়া গাছ ও কাপড় দিয়ে বেঁধে দিলে কুমড়া মাটিতে থাকলেও পচবে না। এ সময় কুমড়ার মাছি পোকা হতে পারে। মাছি পোকা হলে ১০ বর্গমিটার দূরে দূরে বিষটোপ রাখা যেতে পারে। এভাবে আলু ক্ষেতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করলে প্রতি বিঘায় ৮০০ থেকে ৯০০টি মিষ্টি কুমড়া পাওয়া যাবে।
সুত্র: বিকাশপিডিয়া টীম, পশ্চিমবঙ্গ
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/14/2020