অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

পটোল

পটোল

পটোল পশ্চিমবঙ্গে একটি জনপ্রিয় সবজি। এটি সারা বছরই কমবেশি পাওয়া যায়। পটোল উৎপাদনের জন্য পশ্চিমবঙ্গের সব জেলাই মোটামুটি উপযোগী। আয়-ব্যয়ের বিবেচনায় এটি অত্যন্ত লাভজনক একটি ফসল। হেক্টর প্রতি প্রায় এক-সোয়া লাখ টাকা লাভ হয়। পটোল সহজে হজমযোগ্য এবং হৃদরোগীদের জন্য উপকারী একটি সবজি। জাতভেদে পটোলের ফলন প্রতি হেক্টরে চার টন থেকে ১৫ টন পাওয়া যায়।

জাত

বিভিন্ন অঞ্চলে পটোলের বিভিন্ন জাত দেখা যায়। জাতের ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন প্রকার পটোল লক্ষ করা যায়। যেমনন্ধ লম্বা ও চিকন, খাটো ও মোটা, গাঢ় সবুজ থেকে হালকা সবুজ। ডোরা কাটা ও ডোরা কাটা বিহীন, পুরু ত্বক থেকে হালকা ত্বক। ফরিদপুর অঞ্চলে কানাই বাঁশি নামে একটি উন্নত জাতের পটোল পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট দু’টি পটোলের জাত উদ্ভাবন করেছে। বারি পটোল-১, বারি পটোল-২ যার ফল হেক্টর প্রতি ৩০-৩৮ টন।

বংশবিস্তার

এটি কাণ্ড এবং টিউবারের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। শাখা কলমের ক্ষেত্রে পরিপক্ব কাণ্ড ব্যবহার করা হয়। এদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কাণ্ড মরে গেলেও শিকড় জীবিত থাকে। ফলে এই শিকড় থেকেই আবার গাছ জন্মে। রোপণের আগে পটোলের শিকড় গজিয়ে নিলে বেশি ভালো হয়।

জলবায়ু ও মাটি

পটোলের জন্য উষ ও আর্দ্র জলবায়ু দরকার। এ জন্য খরিপ মৌসুমে পটোল ভালো হয়। উঁচু, মাঝারি উঁচু, বন্যা মুক্ত ও সুষ্ঠু জল নিষ্কাশনযুক্ত বেলে দো-আঁশ, দো-আঁশ মাটি পটোলের জন্য উত্তম। বেলে মাটিতেও পটোল জন্মে, তবে ফলন কম হয়।

রোপণ সময়

অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর অথবা ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পটোল রোপণের উপযুক্ত সময়। পটোল চাষের কথা চিন্তা করলে অক্টোবর মাসের আগেই জমি তৈরি করতে হবে। মাটিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা না থাকলে শাখা কলম শুকিয়ে মারা যায়। এ ক্ষেত্রে পলিব্যাগে শাখা কলম লাগানোর মাধ্যমে চারা গজিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এতে তীব্র শীত পড়ার আগেই গাছের অঙ্গজ বৃদ্ধি হয়। ফলে মোট জীবনকাল বেশি হলে আগাম ফলন পাওয়া যায় এবং যার বাজার মূল্য তুলনামূলক অনেক বেশি পাওয়া যায়। কারণ এগুলো ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে বাজারে চলে আসে। ডিসেম্বর মাসেও পটোল পাওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে বিশেষ প্রক্রিয়ায় পলিব্যাগে চারা তৈরি করে অবশ্যই আগস্ট মাসে তা জমিতে লাগাতে হবে। অন্য দিকে খরিপ মৌসুমের জন্য যেগুলো ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে লাগানো হয় সেটা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং জীবনকাল তুলনামূলক কম হয়। এদের ফলন তুলনামূলক বেশি হয়।

জমি তৈরি

পটোলের জন্য জমি গভীর করে চার থেকে পাঁচটি চাষ ও মই দেয়ার পর বেড তৈরি করে নিতে হয়। এতে জল নিষ্কাশনের জন্য সুবিধা হয়। দুই বেডের মাঝে ২০ সেন্টিমিটার গভীর এবং ৩০ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার প্রস্খের সেচ/নিষ্কাশন নালা রাখতে হবে। সাধারণ বেড চওড়ায় ২৬০ সেন্টিমিটার করা হয়। প্রতি বেডে ২০০ মিটার দূরে দুই সারিতে ৫০ সেন্টিমিটার পর পর ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার গভীরে শাখা কলম লাগাতে হবে।

সারের মাত্রা ও প্রয়োগ

হেক্টর প্রতি গোবর বা কম্পোস্ট ১০ হাজার কেজি, ইউরিয়া ৩০০ কেজি, টিএসপি ২০০ কেজি, এমওপি ১৫০ কেজি, জিপসাম ৬০ কেজি এবং জিঙ্ক সালফেট ৮ কেজি।

গোবর, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম ও জিঙ্ক সালফেট শতকরা ৫০ ভাগ জমি তৈরির সময় এবং বাকি ৫০ ভাগ মাদায় প্রয়োগ করা হয়। মাদায় সব সার দেয়া হয় না। কেননা, পটোলের মূল মাদার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে সব বেডে ছড়িয়ে পড়ে। ইউরিয়া সার চারা গজানোর ২০ দিন পর তিন কিস্তিতে সমানভাবে প্রয়োগ করা হয়। শেষের দিকে পটোলের ফলন ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে তখন ২০ থেকে ৩০ গ্রাম ইউরিয়া, ৩০ থেকে ৩৫ গ্রাম টিএসপি, ২০ থেকে ২৫ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করলে নতুন ফুল আসে এবং ফলন অনেক বৃদ্ধি পায়।

মাচা তৈরি

পটোল লতানো প্রকৃতির উদ্ভিদ, তাই এগুলো মাটির ওপর কিংবা খড় বিছিয়ে উৎপাদন করলে গায়ে সাদা সাদা ফ্যাকাসে বা হলুদ বর্ণের হয়ে পড়ে। এতে পটোলের বাজার মূল্য এবং রফতানিযোগ্যতা কমে যায়। মাচা সাধারণত দু ধরনের হয়- বাঁশের আনুভূমিক মাচান ও রশি দিয়ে তৈরি উলম্ব মাচা।

আগাছা দমন

পটোলের জমিতে আগাছা দেখামাত্রই দমন করতে হবে। আগাছা দমন না করলে ফলন অনেক কমে যায়।

অঙ্গ ছাঁটাই

পটোলগাছ মাচায় ওঠার আগ পর্যন্ত পার্শ্বশাখা ছাঁটাই করে দিতে হয়। না হলে মোট ফলন কম হয়।

পরাগায়ন

পটোলের জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পটোলের ফলন নির্ভর করে এর ওপর। পটোলের পুরুষ ও স্ত্রী গাছ ভিন্ন হয়। ১০ ভাগ পুরুষ গাছ জমিতে সুষম দূরত্বে থাকলে অধিক পরাগায়ন হয়। পরাগায়ন না হলে ফুল শুকিয়ে ঝরে যায়। পরাগায়নের সময়কাল ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা। কৃত্রিম পরাগায়ন করতে পারলে ফলন অনেক বেড়ে যায়। পুরুষ ফুল সংগ্রহ করে পুংরেণু স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে লাগিয়ে কৃত্রিম পরাগায়ন করা যায়। এছাড়া পুরুষ ফুলের পরাগরেণু জলতে মিশিয়ে ড্রপার দিয়ে একফোঁটা করে প্রতি স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে লাগিয়েও ভালো ফল পাওয়া যায়। পুরুষ ফুল স্ত্রী ফুলের ১৫ থেকে ২৯ দিন পর জন্মায়। তাই পুরুষ গাছ স্ত্রী গাছের ১৫ থেকে ২০ আগে লাগানো উচিত। এতে ফলন প্রভাবিত হয়।

অন্যান্য পরিচর্যা

অন্যান্য ফসলের মতো পটোলের আন্ত:পরিচর্যা জরুরি। গাছের গোড়ায় চার দিকে মাটি আলগা করে দিতে হবে। মাচাতে ঠিকভাবে লতা ওঠার ব্যবস্খা করতে হবে।

মুড়িফসল

পটোল একটি ব্যতিক্রমি ফসল যা মুড়ি ফসল হিসেবেও চাষ করা যায়। উঁচু জমিতে পটোলের মুড়ি ফসল করা হয়। এ ক্ষেত্রে অক্টোবর মাসে পটোলের জমির আগাছা ও শুষ্ক পুরনো লতা ছেটে দেয়া হয়। কোঁদাল দিয়ে জমি কুপিয়ে দিতে হয়। এতে গাছ নতুনভাবে উদ্দীপ্ত হয়। মুড়ি ফসলে মূল ফসলের অনুরূপ সার প্রয়োগ ও অন্যান্য পরিচর্যা করতে হয়। মুড়িফসলে মূল ফসলের চেয়ে বেশি ফলন হয়। তবে দুই বছরের বেশি একই জমিতে পটোল চাষ না করাই উত্তম। এতে পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ বাড়ে।

পটোলের পোকামাকড়

পটোলের গাছ ও ফল বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয়। ফলের মাছি পোকা, কাটলে পোকা, উঁই পোকা, মিলিবাগ, সাদা মাছি ও লাল মাকড় অন্যতম।

ফলের মাছি পোকা

ফলের মাছি পোকা কচি ফলের ভেতর ছিদ্র করে ও ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে ক্রীড়া বের হয়। এরা ফলের নরম অংশ খেয়ে পূর্ণ বয়স্ক পোকা বের হয়ে আসে।

প্রতিকার

ক্ষেত পরিষ্কার রাখা। পোকা দমনে ফাঁদের ব্যবহারও ব্যাপক জনপ্রিয়। বিষটোপ আরেকটি জরুরি দমন উপাদান। এ ছাড়া সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ ব্যবহার করে পোকামাকড় দমন করা সম্ভব। আক্রমণ মারাত্মক হলে ডিপটেক্স ৮০ এমপি প্রতি লিটার জলতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন পরপর তিন থেকে চারবার স্প্রে করেও ভালো ফল পাওয়া যায়।

কাটলে পোকা

কাটলে পোকা পূর্ণাঙ্গ ও ক্রীড়া অবস্খায় গাছের ক্ষতি করে থাকে। এ পোকা পাতার সবুজ অংশ খেয়ে জালের মতো ঝাঝড়া করে ফেলে। পাতা শুকিয়ে গাছ পাতা শূন্য হয়ে পড়ে।

প্রতিকার

পটোল ক্ষেত পরিষ্কারসহ আক্রান্ত পাতা দেখা মাত্র ধ্বংস করতে হবে। ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম নিমবীজের মিহিগুঁড়া এক লিটার জলতে ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা জলতে ভিজিয়ে রেখে জল ছেঁকে নিয়ে ওই জল আক্রান্ত পাতাসহ সব গাছে স্প্রে করতে হবে। ডাইক্লোরভস ১০০ ইসি এর ১ থেকে ২ মিলি বা কারবারিল ৮৫ ডব্লিউপি ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলতে বা ফেনিট্রিথিয়ন ৫০ ইসি ২ মিলি প্রতি লিটার জলতে মিশিয়ে স্প্রে করে গাছের পাতা ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে।

লাল মাকড়

লাল মাকড় আকারে অত্যন্ত ছোট হয়। এরা পাতার নিচের দিকে অবস্খান করে। এদের আক্রমণে পাতা শক্ত চামড়ার মতো হয়ে কুঁকড়ে যায়। ব্যাপক আক্রমণের ফলে সম্পূর্ণ পাতা হলুদ ও বাদামি রঙ ধারণ করে এবং ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়।

প্রতিকার

পটোল ক্ষেত পরিষ্কার রাখা। এক কেজি আধা ভাঙা নিমবীজ ১০ লিটার জলতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে ওই জল পাতার নিচের দিকে স্প্রে করা। আক্রমণের হার বেশি হলে ওমাইট বা টলস্টার (প্রতি লিটার জলতে ২ মিলি মিশিয়ে) ১০ থেকে ১৫ দিন পরপর স্প্রে করা।

রোগ ও প্রতিকার

শিকড়ের গিট রোগ

পটোলের শিকড়ে গিট রোগ মারাত্মক সমস্যা। কৃমির আক্রমণে এ রোগ হয়। এর আক্রমণে আক্রান্ত গাছে ছোট-বড় অনেক গিঁটের সৃষ্টি হয়। ফলে এদের মূল নষ্ট হয়ে খাবার নিতে পারে না। গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। গাছ খাটো হয়ে পড়ে। ফলন মারাত্মক কমে যায়।

প্রতিকার

পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করা। সরিষা, মরিচ, গম, ভুট্টা ইত্যাদি দ্বারা ফসল চক্র করা। ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে পতিত রাখা। পটোল রোপণের ২০ থেকে ২৫ দিন আগে হেক্টর প্রতি মুরগির বিষ্ঠা ৩ থেকে ৫ টন বা সরিষার খৈল ৪০০ থেকে ৫০০ কেজি মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দেয়। ফুরাডান ৫ জি বা মিরাল ৩ জি, কুরাটার ৫ জি ৩০ থেকে ৪০ কেজি/হেক্টরও লতা লাগানোর সময় এবং পরবর্তী ৪ মাস পর পুনরায় প্রয়োগ করা হয়।

পাউডারি মিলডিউ

পাউডারি মিলডিউ ছত্রাক দ্বারা সংগঠিত হয়। আক্রমণ প্রথমে বয়স্ক পাতায় দেখা যায়। পাতার ওপরের দিকে ও কাণ্ডে পাউডারের মতো ছত্রাকের জীবাণুর প্রলেপ পড়ে। এতে ক্রমান্বয়ে কচি পাতা আক্রান্ত হয়। আক্রমণের প্রথম স্তরে দাগগুলো সাদা ধীরে ধীরে হলুদ হয়ে সম্পূর্ণ পাতা শুকিয়ে যায়।

প্রতিকার

আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়ে ফেলা। পরিমিত সার, সেচ প্রয়োগ। থিওভিট (০.২%) বা টিল্ট (০.১%) রোগ দেখা মাত্র ১৫ দিন অন্তর অন্তর স্প্রে করতে হবে।

কাণ্ডের রস ঝরা

এর ফলে শীতের সময় পটোল গাছের কাণ্ড ফেটে যায় এবং এক ধরনের আঁঠালো পদার্থ নি:সৃত হয়। এটা পরবর্তীকালে বাতাসের সংস্পর্শে এসে শক্ত হয়ে কাণ্ডের সাথে লেগে যায়।

প্রতিকার

রিডোমিল গোল্ড ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলতে মিশিয়ে আক্রমণের সময় এবং ১০ থেকে ১৫ দিন পরপর তিনবার স্প্রে করা। বর্দোমিক্সার ব্যবহার করা।

তথ্য সংকলন: বিকাশপিডিয়া টিম

সর্বশেষ সংশোধন করা : 3/13/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate