অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

লাউ

লাউ

লাউয়ের ইংরেজী নাম gourd। শীতকালীন সবজিগুলোর মধ্যে লাউ অন্যতম। এর পাতা সরল ও একান্তর, বোঁটা লম্বা এবং ভেতরে ফাঁপা থাকে। আমাদের দেশে অনেক ধরনের লাউ চোখে পড়ে। ফলের আকার-আকৃতি ও বর্ণের কারণে বিভিন্ন জাত নির্ণয় করা যায়। বর্তমানে সারাবছরই এ সবজিটি পাওয়া যায়। এর ব্যবহার হয় অনেক ধরনের খাবারে। তাই আগাম ফসল পেতে হলে এখনই লাউ চাষ করা দরকার।

জলবায়ু

আমাদের দেশে শীতকালে এ সবজিটি ভালো হয়। পরিবেশের দিক থেকে এটিই হচ্ছে উপযুক্ত সময়। তবে একটি বিষয় লক্ষণীয়, আলো-বাতাস এবং তাপমাত্রা ভালো ফল উৎপাদনে ভূমিকা রাখে।

মাটি

সব ধরনের মাটিতেই লাউ হয়। দো-আঁশ মাটিতে ফলন সবচেয়ে ভালো হয়। বেলে মাটিতে লাউয়ের ফলন পেতে হলে প্রচুর পরিমাণ জৈবসার আর পানির প্রয়োজন হবে। বর্তমানে বেলে মাটিতে লাউয়ের ভালো ফলন হচ্ছে, তা চরাঞ্চলের দিকে খেয়াল করলে বোঝা যায়।

মাদা তৈরি-বীজ বপন

ভালো মাদা তৈরি করতে দরকার হয় উঁচু জমি। মাদায় প্রয়োজনীয় সার দেয়ার ৭ থেকে ১০ দিন পর প্রতি মাদায় ৩-৪টি করে বীজ বপন করতে হয়। জমিতে আইল তৈরি করে লাউয়ের চারা রোপণ করা যায়। এক্ষেত্রে আইলের প্রতি মাদায় একটি করে চারা রোপণ করতে হবে।

বীজ বপন ও চারা উৎপাদন

লাউ চাষের জন্য দুইভাবে বীজ বপন করা যায়। সরাসরি ক্ষেতে তৈরী মাদায় বীজ বপন করে অথবা পলিথিনের ব্যাগে চারা তৈরি করে। ৫০ ভাগ পচা গোবর অথবা জৈবসার সমপরিমাণ বেলে মাটির সাথে ভালো করে মিশিয়ে পলিথিন ব্যাগের জন্য মাটি তৈরি করে নিতে হবে। পলিথিন ব্যাগের ব্যাস ৭.৫ সেন্টিমিটার ও উচ্চতা ১২-১৫ সেন্টিমিটার হবে। পানি বের হওয়ার জন্য ব্যাগের তলায় দুই-তিনটি ছিদ্র করে দিতে হবে। অপর দিকে সরাসরি মাদায় বীজ বপন করতে হলে প্রথমে ৩০×৩০×৩০ সেন্টিমিটার পরিমাপের মাদা তৈরি করে সার প্রয়োগ করার পর প্রতি মাদায় চার-পাঁচটি বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের ১০-১৫ দিন পর প্রতি মাদায় দু’টি করে সুস্থ ও সবল চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে।

বীজ বপনের গভীরতা

২.০-২.৫ সেন্টিমিটার। ৪-৫ দিনের মধ্যেই চারার অঙ্কুরোদ্গমন হবে।

বীজ বপনের সময়

শীতকালীন লাউ চাষের জন্য সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসে বীজ বপন করতে হয়। তবে আগাম শীতকালীন ফসলের জন্য আগস্টের মাঝামাঝি সময়েও বীজ বপন করা যায়।

চারা রোপণ

লাউ চাষের জন্য ২ী২ মিটার দূরত্বে প্রতি মাদায় দু’টি সুস্থ ও সবল চারা রোপণ করতে হয়। মাদার ওপরে মাচা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। রবি মওসুমে লাউ মাচাবিহীন অবস্থায়ও চাষ করা যায়।

মাচা

বীজ বপনের পর মাচা তৈরি করা হলে সহজে বীজের অঙ্কুরোদ্গমন হবে।

স্থান পূরণ

কোনো স্থানে চারা না গজালে বা চারা মরে গেলে সে স্থান পূরণ করতে নতুন করে বীজ বা চারা রোপণ করতে হয়।

গাছ পাতলাকরণ

চারা গজানোর পর প্রতি মাদায় একটি করে সুস্থ-সবল চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে।

সারের উপরি প্রয়োগ

সময়মতো সারের উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

মাটি আলগাকরণ

জমির আগাছা পরিষ্কার করার সময় নিড়ানি দিয়ে মাটি আলগা করে দিতে হয়। তার ফলে গাছের গোড়ার মাটি নরম এবং ঝুরঝুরে থাকে। এতে গাছের গোড়ায় আলো-বাতাস সহজে প্রবেশ করে।

বাউনি বা মাচা দেয়া

গাছ যখন ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার বড় হবে তখন গাছের গাড়ার পাশে মাচা বা বাউনি হিসেবে বাঁশের ডগা কুঞ্চি পুঁতে দিতে হবে।

পরাগায়ন

সকাল বা বিকালে স্ত্রী ফুলের গর্ভকেশরের মাথায় পুরুষ ফুলের পরাগরেণু খুব আস্তে আস্তে ২-৩ বার ছুঁয়ে দিলে সহজে পরাগায়ন হয়। একটি পুরুষ ফুল দিয়ে ৫-৬টি স্ত্রী ফুলের পরাগায়ন করা সম্ভব।

পরিচর্যা

পানি সেচ আর বাউনি দেয়া লাউয়ের প্রধান পরিচর্যা। লাউ ফসলে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। আগাম ফসলের জন্য শুষ্ক মৌসুমে জমি অনুযায়ী সেচ দিতে হবে। এর জন্য প্লাবন সেচ প্রয়োজন হয় বেশি। বাউনি বা মাচায় লাউ গাছ বাধাহীনভাবে যাতে বাইতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা

লাউগাছ প্রচুর পরিমাণে পানি শোষণ করে। তাই নিয়মিত গাছের গোড়ায় সেচ দেয়া, মাটির চটা ভেঙে দেয়া, বাউনি দেয়া ও গাছের গোড়ার শাখাগুলোও ভেঙে দেয়া বাঞ্ছনীয়। বারি লাউ-১-এর জন্য মাচা দেয়া ভালো।

লাউয়ের ফলন বৃদ্ধির উপায়

আমাদের সবজির মধ্যে লাউ অন্যতম। বর্তমানে বাজারে লাউয়ের দাম বেশ একটু চড়া। লাউয়ের উৎপাদন বাড়াতে পারলে কৃষক লাভবান হবে পাশাপাশি ক্রেতারাও কম দাম লাউ কিনতে পারবে। লাউ গাছে প্রচুর ফুল ধরে, কিন্তু লাউ ধরে খুব কম। কৌশল জানা থাকলে অধিকাংশ ফুল থেকেই লাউ ধরানো সম্ভব।

লাউ, মিষ্টি কুমড়া, করলা, কাঁকরোল, পেঁপে ইত্যাদি সবজি গাছ একলিঙ্গ এবং ভিন্নবাসী উদ্ভিদ হওয়ায় প্রাকৃতিক পরাগায়ন কম হয়। অর্থাৎ এসব গাছে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল পৃথক পৃথক হয়। পুরুষ ও স্ত্রী গাছও পৃথক হয়। ফলে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল যদি দূরে থাকে তবে কীট-পতঙ্গ, পোকা-মাকড় অথবা অন্য যে কোনো পরাগায়নের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরাগায়ন সম্ভব হয় না। এ জন্য লাউ ধরে না। পুরুষ গাছ বা পুরুষ ফুল থেকে ফল হয় না। লাউয়ের পুরুষ গাছ ও স্ত্রী গাছ পৃথক হওয়ায় কৃত্রিমভাবে পুরুষ ফুল এনে স্ত্রী ফুলের সঙ্গে মিলন ঘটাতে হয়।

কৌশল

প্রতিদিন ভোর বেলায় সদ্যফোটা পুরুষ ফুল ছিঁড়ে পুংরেণু সমৃদ্ধ পুংকেশর রেখে পাপড়িগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হয়। এরপর পুংরেণু স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে হালকাভাবে সামান্য একটু ঘষে দিতে হয়। এতে স্ত্রী ফুল নিষিক্ত হয়ে ফল ধরে। একটি পুরুষ ফুলের পুংকেশর দিয়ে ৬ থেকে ৭টি স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে পরাগায়ন করা যায়। এ জন্য একটা লাউয়ের মাচায় শতকরা ১০টা পুরুষ ফুল রাখতে হয়। এতে শতকরা ৯৫টি স্ত্রী ফুলে ফল ধরবে। এ জন্য পুরুষ ও স্ত্রী ফুল চেনা প্রয়োজন।

ফুল চেনার উপায়

পুরুষ ফুল : ফুলের বোঁটার অগ্রভাগে ফুটে। পাপড়ির গোড়ায় গর্ভাশয় থাকে না। পাপড়ির মাঝখান দিয়ে বেড়ে যাওয়া পুংদণ্ডে পাউডারের গুঁড়ার মত পুংরেণু থাকবে। পুংদণ্ডের শীর্ষভাগে গর্ভমুণ্ড থাকবে না। শুধু বোঁটার অগ্রভাগে ফুটে থাকা ফুলগুলো পুরুষ ফুল।

স্ত্রী ফুল : ক্ষুদ্রাকৃতি লাউয়ের মত গর্ভাশয়ধারী ফুলগুলো স্ত্রী ফুল। গর্ভাশয়ের ওপর থেকে পাপড়ি থাকবে। পুংদণ্ড থাকবে না। গর্ভদণ্ড ছোট ও মোটা। গর্ভদণ্ডে আঠালো পদার্থ থাকবে। পুংরেণু এখানে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আঠায় আটকে যায়। অনেকেরই ধারণা, শুধু স্ত্রী ফুলের এই গর্ভাশয় থাকলেই লাউ ধরবে। গর্ভমুণ্ডে পুরুষ ফুলের পুংরেণু না লাগা পর্যন্ত লাউ ধরবে না।

অন্যান্য কৌশল

  • ১. গর্ভাশয় ঝরে পড়াকে অনেকেই মনে করে কচি লাউ ঝরে পড়ে। সত্যিকারে তা নয়। যেসব স্ত্রী ফুল পুংরেণু দ্বারা নিষিক্ত হয় না অর্থাৎ পরাগায়ন হয় না সেগুলো ঝরে পড়ে। এ জন্য উপরোক্ত নিয়মে কৃত্রিম পরাগায়ন করতে হবে। এর পরেও ঝরে পড়লে গাছের গোড়ায় নিয়মিত জল দিতে হবে। গাছপ্রতি ৫০ গ্রাম করে টিএসপি ও এমপি সার গাছের গোড়া থেকে ৬ ইঞ্চি দূর দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে।
  • ২. কচি লাউ পচে যাওয়ার কারণ হচ্ছে ফ্রুট ফ্লাই পোকা কচি লাউয়ে ক্ষত সৃষ্টি করে। এ ক্ষতে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে লাউ পচিয়ে ফেলে। এ পোকা হাত দ্বারা মারা যায়। ছাই দেয়া যেতে পারে। অথবা ডায়াজিনন/ ডাইমেক্রন/ নগস ছিটাতে পারেন।
  • ৩. লাউ গাছ খুব বড় হয় কিন্তু ফুল কম ধরে। এ জন্য জৈব সার কম দিতে হবে। টিএসপি ও এমপি সার সম্পূর্ণ মাত্রায় দিতে হবে। এছাড়াও গ্রোথ হরমোন স্প্রে করতে পারেন।
  • ৪. ফুলের মধ্যে পিঁপড়া আক্রমণ করলে ছাই অথবা সেভিন ছিটাতে পারেন।
  • ৫. ইঁদুরের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য বিষটোপ অথবা ফাঁদ দিতে পারেন। যা হোক লাউ চাষে ওই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারলে লাউয়ের ফলন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়

মাছি ও জাবপোকা

এ পোকা গাছের কচি ডগা বা পাতার রস শুষে খেয়ে গাছকে দুর্বল করে দেয়। ফলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। মাছি পোকা লাউয়ের ওপর খোসার নিচে দিকে ডিম পারে। ডিম পাড়ার কয়েকদিনের মধ্যেই কীড়া রেব হয়ে আসে এবং লাউয়ের কচি অংশ খেয়ে ফেলে।

পাউডারি বা ডাউনি মিলউড

এ রোগে আক্রমণ করলে গাছের পাতায় পাউডারের মতো আবরণ দেখতে পাওয়া যায়। মাটিতে রস থাকলে এ রোগ হয়। ডাউনি মিলউড রোগে গাছের পাতা বাদামি রঙ ধারণ করে। ছত্রাক আক্রমণে পাতা কুঁচকে যায়।

প্রতিকার

এ রোগের প্রতিকারের জন্য আপনার কাছের কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে পরামর্শ নিন।

ফলের মাছিপোকা : পূর্ণবয়স্ক মাছিপোকা বাদামি বর্ণের গাঢ় হলুদ দাগযুক্ত হয়ে থাকে। স্ত্রী মাছি কচি ফলের গায়ে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে পোকার কিড়া আক্রান্ত ফলের ভেতর ঢুকে পড়ে এবং লাউয়ের কচি অংশ খেয়ে নষ্ট করে। ফলে আক্রান্ত লাউ পচে যায় এবং অকালে ঝরে যায়। বিষটোপ তৈরি করে এর আক্রমণ রোধ করা যায়।
কীটনাশক ব্যবহার করে এ পোকা দমন করতে হলে গাছে কচি ফল দেখা দেয়ার সাথে সাথে প্রতি লিটার পানিতে ডিপটেরক্স-৮০ এসপি ১.০ গ্রাম অথবা ডিপটেরক্স-৫০ ইসি ১.৫ মিলিলিটার মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর গাছে স্প্রে করতে হবে।

সূত্রঃপোর্টাল কনটেন্ট টিম

সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/4/2019



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate