শশা পশ্চিমবঙ্গ এ ব্যাপক ভাবে চাষ হচ্ছে এবং সারা বছরই বাজারে পাওয়া যায়।
বর্তমানে দেশে সরকারী ও বেসরকারী ভাবে বেশ কিছু উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে, নিচে তা উল্লেখ করা হলো-
জাত |
বীজ বপনের সময় |
---|---|
হাইব্রীড শশা গ্রিন বয় |
মার্চ থেকে অক্টোবর |
হাইব্রীড শশা আলভী, (উফসী-গ্রীন কিং, শিলা, বারমসী) |
ফেব্রুয়ারী থেকে আগষ্ট মাস পর্যন্ত |
হাইব্রীড শশা আদুরী, আদুরী এক্সট্রাগ্রীন, আদুরী গ্রীন লাইফ |
সারা বছর |
হাইব্রীড শশা তিতুমির |
ফাল্গুন থেকে আশ্বিন |
হাইব্রীড শশা বিএসএস-৬৪৭ |
সারা বছর |
হাইব্রীড শশা হিমেল, কিরিণ, নন্দিনী, গ্রীন লাইন (তাকী জাপান) |
শীত কাল সারা বছর |
হাইব্রীড শশা জি-০০৩, জোতি (উফশী) |
ফলন ভালো বপনের সময় ফেব্রুয়ারী-সেপ্টেম্বর |
বন্যামুক্ত দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ মাটিতে শশা ভাল হয়। শশা জলবদ্ধতা সহ্য করতে পারেনা।
বীজ
ভালো বীজ নির্বাচনঃ- ভালো বীজের বৈশিষ্ট্য গুলো নিম্নোরুপ-
রোগমুক্ত, পরিষ্কার, পরিপুষ্ট ও চিটামুক্ত হতে হবে।
সকল বীজের আকার আকৃতি একই ধরনের হবে।
বীজের হার
সাধারণ ভাবে প্রতি শতকে ১.৫ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। তবে উচ্চ ফলনশীল জাতের ক্ষেত্রে বীজের প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশিকা অনুসরন করতে হবে।
বীজ শোধনঃ- নার্সারিতে চারা তৈরির পূর্বে ভিটাভেক্স ২০০ / টিলথ অনুমোদিত মাত্রায় ব্যবহার করে বীজ শোধন করা ভাল।
জমি তৈরী
জমি চাষঃ- প্রথমে জমি ভাল করে আড়াআড়িভাবে চাষ ও মই দিয়ে সমতল করে নিতে হয় এবং সেচ দেবার এবং অতিরিক্ত জল সুনিষ্কাশনের সুবিধার্থে নির্দিষ্ট দূরত্বে নালা কেটে কয়েক ভাগ করে নিতে হবে।
বীজ তলা তৈরীঃ- নার্সারী বা বীজ তলায় চার তৈরী করে জমিতে লাগানো উত্তম। এক্ষেত্রে ৫০:৫০ অনুপাতে পচা গোবর বা কম্পোষ্ট ও মাটি একত্রে মিশিয়ে ৬ x ৮ ইঞ্চি সাইজের পলিথিনের ব্যাগে ভরতে হবে। প্রতি ব্যাগে ২টি করে বীজ বপন করতে হবে।
বীজ বপন এর সময়
সাধারন ভাবে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত শশার বীজ বপন করা ভাল। তবে উচ্চ ফলনশীল জাতের ক্ষেত্রে বীজের প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশিকা অনুসরন করতে হবে।
লাইনে রোপন
সাধারণত মাদা থেকে মাদার দূরত্ব ৫ ফুট আর লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৪-৬ ফুট হওয়া ভালো।
রোপন
চারার বয়স ১৬-২০ দিন হলে পলিব্যাগ সরিয়ে মাদায় চারা রোপণ করতে হবে। প্রতি ব্যাগে ২টি চারা থাকলে মাঠে লাগানোর ৬-৭ দিন পর অপেক্ষাকৃত দুর্বল চারাটি তুলে প্রতি মাদায় ১ টি করে চারা রাখতে হবে।
মাদা তৈরী
৬-৭ ফুট দূরত্বে ১ ফুট গভীর ও ১ ফুট ব্যাসের গর্ত / মাদা তৈরী করতে হবে এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ১.৫-২ মি.।
সারের নাম
|
মোট পরিমাণ (শতাংশ প্রতি) |
জমি তৈরির সময় (শতাংশ প্রতি) |
চারা রোপণের ৫-৬ |
চারা রোপণের ১০-১৫ |
ফুল আসার পর (মাদা প্রতি) |
চারা রোপনের ৫০-৫৫ |
ফল ধরার সময় (২ বার ১৫ দিন অন্তর) (মাদা প্রতি) |
পঁচাগোবর |
৬০ কেজি |
৩০ কেজি |
২ কেজি |
– |
– |
– |
– |
টিএসপি |
৬০০ গ্রাম |
২০০ গ্রাম |
১২ গ্রাম |
৫ গ্রাম |
– |
– |
– |
ইউরিয়া |
৭০০ গ্রাম |
১০০ গ্রাম |
১০ গ্রাম |
৫ গ্রাম |
১৫ গ্রাম |
১৫ গ্রাম |
৫+৫ গ্রাম, ১০+১০ গ্রাম |
এমপি |
৭০০ গ্রাম |
২০০ গ্রাম |
২০ গ্রাম |
– |
– |
– |
– |
জিপসাম |
৪০০ গ্রাম |
৪০০ গ্রাম |
– |
– |
– |
– |
– |
দস্তাসার |
৫০ গ্রাম |
৫০ গ্রাম |
– |
– |
– |
– |
– |
বোরাক্স |
৪০ গ্রাম |
৪০ গ্রাম |
– |
– |
– |
– |
– |
সময়ঃ জমি সবসময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
দমন পদ্ধতিঃ শসার শিকড় মাটির গভীরে যায় না তাই হালকাভাবে নিড়ানির সাহায্যে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
সেচের সময়
গ্রীষ্মকালে ৪/৫ দিন অন্তর সেচ দেওয়া আবশ্যক। সেচের সুবিধার জন্য ২ টি বেডের মধ্যে ১২-১৫ ইঞ্চি নালা রাখা উচিৎ।
সেচের পরিমাণ
কদাল দিয়ে মাটি আলগা করে পরিমিত পরিমাণে সেচ দিতে হবে।
নিষ্কাশন
শসার জমিতে জল দাঁড়ালে, গাছ হলদে হয়ে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি বাঁধা প্রাপ্ত হয়ে মাদা ও মাদার চার পাশের মাটি শুকায়ে গেলে। তাই কোন অবস্তাতেই গাছের গোড়ায় জল জমে থাকতে দেয়া যাবেনা।
রোগের নাম
|
লক্ষন |
প্রতিকার |
বালাইনাশকের নাম |
সাদা গুড়া রোগ বা পাউডারী মিল্ডিউ |
পাতার উভয় পাশে প্রথমে সাদা সাদা পাউডারের মত দাগ দেখা যায়। ধীরে ধীরে দাগগুলো বড় ও বাদামী হয়ে শুকিয়ে যায়। আক্রান্ত লতা ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়, ফল ঝরে পড়ে এমনকি সম্পূর্ন গাছ মরে যায়। |
১. জমির আশে পাশে কুমড়া জাতীয় অন্য যে কোন রকমের সবজি চাষ থেকে বিরত থাকা। ২. আক্রান্ত পাতা ও গাছ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলা। ৩. থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউজি- প্রতি ১০ লিটার জলতে ৫০ গ্রাম থিয়োভিট মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে ১৫ দিন পর পর সেপ্র করুন। |
থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউজি |
এমকোজিম ৫০ ডবলিউপি ৭০-৭৫ এম.এল / বিঘতে(৩৩ শতাংশ) ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। |
এমকোজিম ৫০ ডবলিউপি |
||
হেকোনাজল ৫ ই সি ২০০ মি লি প্রতি একরে (১ মিলি/ ১ লিটার জলতে) স্প্রে করতে হবে। |
হেকোনাজল ৫ ই সি |
||
ডাউনি মিল্ডিউ |
এর জন্য গাছের পাতা ধূসর হয়ে যায়। পাতায় সাদা পাউডার দেখা যায় |
১. থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউজি- প্রতি ১০ লিটার জলতে ৫০ গ্রাম থিয়োভিট মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে ১৫ দিন পর পর সেপ্র করুন। |
থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউজি |
মোজাইক ভাইরাস |
কচি চারার বীজপত্র হলুদ হয় এবং চারা নেতিয়ে পড়ে। কচি ডগা জটলার মত দেখায়। আক্রান্ত পাতা ছোট, বিবর্ণ, বিকৃত ও নীচের দিকে কুঁকড়ানো হয় এবং শিরা-উপশিরাও হলুদ হয়ে যায়। |
১. আক্রান্ত গাছ তুলে ধ্বংস করতে হবে।২. ক্ষেত আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।৩. বাহক পোকা সাদা মাছি দমন করতে হবে (একতরা ২৫ ডব্লিউজি- ২.৫ গ্রাম একতারা প্রতি ১০ লিটার জলতে মিশিয়ে ভালভাবে গাছ ভিজিয়ে সেপ্র করতে হবে)। |
একতরা ২৫ ডব্লিউজি |
গেমোসিস |
গোড়ার কান্ডে পুঁজ বের হয়, কালো দাগ পড়ে এবং অবশেষে কান্ড পচে গাছ মারা যায়। |
প্রতি লিটার জলতে ২ গ্রাম কুপ্রাভিট মিশিয়ে ১০ দিন অন্তর গাছের গোড়ায় স্প্রে করতে হবে। |
কুপ্রাভিট |
পোকামাকড়ের নাম |
লক্ষন |
প্রতিকার |
কীটনাশকের নাম |
মাছি পোকা |
১. স্ত্রী মাছি কচি ফলে ডিম পাড়ে। ২. ডিম ফুটে কীড়াগুলো বরে হয়ে ফলের শাস খায় এবং ফল পচে যায় ও অকালে ঝরে পড়ে। |
১. প্লেনাম ৫০ ডব্লিউজি- আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে প্রতি লিটার জলতে ১ গ্রাম হারে প্লেনাম মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।২. সবিক্রন ৪২৫ ইসি- প্রতি লিটার জলতে ২ এমএল হারে মিশিয়ে ভালভাবে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করুন। |
প্লেনাম ৫০ ডব্লিউজি, সবিক্রন ৪২৫ ইসি |
পামকিন বিটল |
র্পূণাঙ্গ পোকা চারা গাছের পাতা ছিদ্র করে খায়। কীড়া গাছের গোড়ায় মাটিতে বাস করে এবং গাছের শিকড়ের ক্ষতি করে। |
১. আক্রান্ত গাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ পোকা হাতে ধরে মেরে ফেলা। ২০-২৫ দিন চারা মশারির জাল দিয়ে ঢেকে রাখা।২. কীড়া দমনের জন্য প্রতি গাছের গোড়ায় ২.৫ গ্রাম ফুরাডান ৫ জি, মিশিয়ে দিয়ে তারপর সেচ দিতে হবে।৩. সবিক্রন ৪২৫ ইসি- প্রতি লিটার জলতে ২ এমএল হারে মিশিয়ে ভালভাবে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করুন। |
সবিক্রন ৪২৫ ইসি, |
টিডো ২০ এস.এল-৫০-৫৫ এম এল / একর জমিতে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। |
টিডো ২০ এস.এল |
||
জাব পোকা |
পূণবয়স্ক ও নিম্ফ উভয়েই পাতা, কচি কান্ড, ফুল ও ফলের কুঁড়ি, বোঁটা এবং ফলের কচি অংশের রস চুষে খায়। ফলে গাছ প্রথমে দুর্বল ও পরে হলুদ হয়ে যায়। গাছে ফুল ও ফল অবস্থায় আক্রমণ হলে ফুলের কুঁড়ি ও কচি ফল ঝরে পড়ে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে কচি ডগা মরে যায়। |
১. আক্রান্ত পাতা, ডগা, ফুল পোকাসহ সংগ্রহ করে ধ্বংস করা।২. একতারা ২৫ ডব্লিউজি- আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে ২.৫ গ্রাম একতারা প্রতি ১০ লিটার জলতে মিশিয়ে ভালভাব গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।৩. প্লেনাম ৫০ ডব্লিউজি- আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে প্রতি লিটার জলতে ১ গ্রাম হারে প্লেনাম মিশিয়ে ভালভাবে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। |
একতারা ২৫ ডব্লিউজি, প্লেনাম ৫০ ডব্লিউজি |
টিডো ২০ এস.এল-১০০-১০৫ এম এল / একর জমিতে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। |
টিডো ২০ এস.এল |
||
ফাস্টাক ২ ই সি, ২০২ মি লি ১ একর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে(১ এম এল/১ লি. জল) |
ফাস্টাক ২ ই সি |
তারের নেট অথবা সুতলী অথবা বাশের কঞ্চির সাহায্যে বাউনি দিতে হবে। বাউনি/মাচা নিকাশ নালার উভয় পাশের ২ বেড বরাবর ১টি দিলে চলবে এবং মাঝে মাঝে মাটি ঝুরঝুরে করে দিতে হবে।
সময়
শসার জাত ভেদে বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে গাছে ফুল আসতে শুরু করে। ফুল ফোটার ১৫-২০ দিনের মধ্যে ফল সবজি হিসাবে আহরণের উপযুক্ত হয়। কচি ও পুষ্ট উভয় অবস্থায়ই শসা তোলা হয়। ফল ধরতে আরম্ভ করলে ৩/৪ দিন অন্তর শসা তোলা দরকার।
পদ্ধতি
সামান্য বোটা সহ কেটে বা ফলের সঙ্গে যুক্ত স্থানে বোটা ভেঙ্গে শসা তোলা হয়।
পরিবহনের সময়
ফসল সংগ্রহের পর প্রথমে ডালিতে কলা পাতা বিছিয়ে তার উপর শশা সাজায়ে রাখতে হবে যাতে কোনো দাগ না পরে।
পরিবহণের মাধ্যম
সাধারনত ঝুড়ি / ডালিতে করে পরিবহন করা হয় তবে বেশি আকারে হলে পিক-আপ / ট্রাকের মাধমেও পরিবহন করে হয়।
প্যাকেজিং পদ্ধতি
প্যাকেজিং এর জন্য ফুড রেপিং পেপার, পেরফোরেটেড পেপার, ঝুড়ি, খাঁচা, প্লাস্টিক কেস, ব্যবহার করা যেতে পারে। শশা প্যাকেজিং এর জন্য ২১ কেজি প্লাস্টিক ঝুড়ি ব্যবহার করা ভালো।
স্বল্প পরিসরে
শীতল পরিবেশে ৩-৫ দিন সংরক্ষণ করা যায়।
বাজার ব্যবস্থা
পার্শবর্তী কোনো হাট-বাজারে বিক্রয় করতে পারেন।
শশা বাছাইকরণ ও শ্রেণীকরণ পদ্ধতি
মাঠ থেকে শস্য নিয়ে আসার পর বাছাইকরণ ও শ্রেণীকরণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কাজ। বাল্ক বায়ার বা বৃহৎ ক্রেতার চাহিদা অনুসারে কৃষিজাত শস্য/পণ্য বিক্রয় করতে হলে মান নিয়ন্ত্রনের স্বার্থে বাছাইকরণ ও শ্রেণীকরণ করতে হবে। শশা শ্রেনীকরণের ক্ষেত্রে নিম্নে দেয়া নির্দেশক গুলোর প্রতি জত্নবান হতে হবে।
সুত্রঃ পোর্টাল কনটেন্ট টিম।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 3/5/2024