বৈজ্ঞানিক নাম : অ্যালেরোডেস এসপিপি
পোকাগুলি সাধারণ ভাবে ফলের মাছির মতো। গায়ের রং সাদা বা ছাই রঙা। শরীর নরম ও আধ মিলিমিটার লম্বা হয়। স্ত্রী পোকারা পাতার নীচে গোল করে ডিম পাড়ে। কিছু দিনের মধ্যে ডিম থেকে ছোট কীড়া বের হয়। কীড়াগুলি কিছু দিনের মধ্যে এক জায়গায় পুত্তলি বাঁধে। পরে ওই পুত্তলিগুলি থেকেই পূর্ণাঙ্গ পোকা বেরিয়ে আসে। পূর্ণাঙ্গ পোকাগুলি বা ছোট কীটগুলি পাতার রস চুষে খায়। ফলে পাতাগুলি নিস্তেজ হয়ে বিবর্ণ হয়ে যায়। যে সব পাতায় ডিম পাড়ে সেই পাতাগুলি দেখতে বিশ্রী হয়, ফলে পাতার দাম কমে যায়।
তামাক পাতার জল দু-তিন দিন অথবা নিম তেল স্প্রে করা যেতে পারে। আর রাসায়নিক ওষুধ যেমন ডাইক্লোরোভস ০.৭৫ মিলি বা ম্যালাথিয়ন ২.০ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে ১ সপ্তাহ পাতা তোলা বন্ধ রাখতে হবে।
১০০ গ্রাম তামাকের ডাঁটা এক লিটার জলে সারা রাত্রি ভিজিয়ে রাখতে হবে। ৫০ গ্রাম বার সাবান এক লিটার জলে আধ ঘণ্টা ফুটিয়ে ঠান্ডা করতে হবে। ঠান্ডা হলে তামাকের জল ছেঁকে নিয়ে সাবান গোলা জলের সাথে মেশাতে হবে। ওই মিশ্রণের সাথে আরও ৮ লিটার জল মিশিয়ে স্প্রে করার জন্য তৈরি হবে।
বৈজ্ঞানিক নাম : রিপিফোরোথ্রিপ্স এসপিপি
পোকাগুলির গায়ের রং হালকা হলুদ, খুব ছোট, নরম আর লম্বায় ১ মিলি থেকে কম হয়। পাতার নীচের দিকে এক সাথে ছোট কীট ও পূর্ণাঙ্গ পোকাগুলি থাকে। পোকাগুলি পাতার বহিঃত্বক সরিয়ে কোষের মধ্য থেকে রস চুষে খায়, ফলে পাতা সাদাটে হয়ে যায়।
সাদা মাছির ন্যায়।
বৈজ্ঞানিক নাম : পোকুডোকোসিউস এসপিপি
পোকাগুলি খুব ছোট আর গায়ের রং লালচে। খালি চোখে পোকাগুলি দেখতে পাওয়া যায় না। পাতার নীচের এক জায়গায় জোট বেঁধে থাকে, আর পাতার রস শুষে খায়, ফলে পাতা শুকিয়ে যায়।
সাদা মাছি, চিরানী পোকার মতো পাতার নীচের দিকে স্প্রে করতে হবে।
বৈজ্ঞানিক নাম : সাইক্লোপেলটাসিসাইলোলিয়া
পোকাগুলি ৫– ৬ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়। গায়ের রং কালচে তামাটে বা কালো আর পা-গুলো বেশ শক্ত, পূর্ণাঙ্গ পোকা পাতার উপর ডিম পাড়ে। পরে ডিম থেকে ছোট পোকা বেরিয়ে আসে আর ঝাঁক বেঁধে থাকে। ছোট বা পূর্ণাঙ্গ পোকা গাছের কচি পাতা বা ডাঁটা থেকে রস চুষে খায়। ফলে পাতা কুঁকড়িয়ে যায়। পরে আক্রান্ত পাতা শুকিয়ে যায়।
সাদা মাছি, চিরানী পোকা, দয়ে পোকার মতো।
নিমাটোডের আক্রমণে পাতার শিকড় ফুলে গিয়ে গাঁট তৈরি হয়, পরে শিকড় পচে যায়। আক্রমণের কারণে পাতা কুঁকড়ে যায় এবং পাতার বৃদ্ধি কমে যায়। সাধারণত বালি মাটিতে আক্রমণের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। আক্রান্ত জমিতে খোল হিসাবে নিম খোল ব্যবহার করলে আক্রমণের প্রাদুর্ভাব কমে।
কজাল অর্গানিজম : ফাইটোপথেরা নিকোটিয়ানেন অথবা ফাইটোপথেরা পালমিভোরা
ছত্রাকঘটিত এই রোগের আক্রমণের ফলে আক্রান্ত পাতা, বিশেষ করে পাতাগুলি কিছুটা কম উজ্জ্বল ও নিষ্প্রভ হয়ে যায়। আর মাটির সংলগ্ন কাণ্ডে দু’টো গাঁটের মাঝে মাঝে কালো দাগ দেখা যায়। আক্রান্ত ডাঁটা পচে যায় এবং ডাঁটার ওপরের অংশ ঢলে পড়ে শুকিয়ে যায়। ছত্রাক মাটি থেকে কাণ্ডে প্রবেশ করে এই রোগ হয়।
ওই একই ছত্রাক পাতা পচা রোগের কারণ। আক্রান্ত পাতার কিনারার দিকে থেকে গোলাকার গাঢ় বাদামি বা কালো রঙের ভেজা ভেজা পচা দাগ দেখা যায়। দাগগুলি দ্রুত বাড়তে থাকে এবং গোটা পাতাটি নষ্ট হয়ে যায়। গছের নীচের দিকের পাতাগুলি বেশি আক্রান্ত হয়। আর বর্ষাকালীন সময়ে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়।
বর্ষাকালে প্রতি মাসে এক বার ১% বোর্দো মিশ্রণ দিয়ে গাছের গোড়া ভিজিয়ে দেওয়া উচিত। এ ছাড়া, কপার অক্সিক্লোরাইড (৪ গ্রাম) বা ০.৫% বোর্দো মিশ্রণ ১৫ দিন অন্তর পাতার নীচের দিকে স্প্রে করতে হবে।
১% বোর্দো মিশ্রণের জন্য ৫ লিটার জলে ১০০ গ্রাম তুঁতে আর ৫ লিটার জলে ১২০ গ্রাম কলিচুন আলাদা ভাবে মাটির বা প্লাস্টিকের পাত্রে রাত্রে ভিজিয়ে দিতে হবে। পর দিন সকালে আলাদা আলাদা ভাবে দু’টো মিশ্রণ কাপড়ে ছেঁকে নিয়ে আরেকটি পাত্রে ধীরে ধীরে কাঠি দিয়ে নেড়ে মেশাতে হবে। ওই মিশ্রণে একটি পরিষ্কার ব্লেড ডোবালে যদি ব্লেডের ওপর মরচের দাগ পড়ে তা হলে আরও কিছুটা চুন মেশাতে হবে। ০.৫% বোর্দো মিশ্রণ একই ভাবে একই পরিমাণ জলের সাথে অর্ধেক হারে চুন ও তুঁতে মেশাতে হবে।
কজাল অর্গানিজম : স্ক্লেরোসিয়াম রলফসাই
সাধারণত জ্যৈষ্ঠের প্রথম থেকে আষাঢ় – শ্রাবণ মাস পর্যন্ত এই রোগের প্রকোপ দেখা যায়। মাটি সংলগ্ন ডাঁটা ভেজা ভেজা মতো হয়ে পচে যায়, গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়ে এবং গাছ ঢলে শুকিয়ে যায়। পচা জায়গার ওপর সাদা তুলোর মতো ছত্রাকের আবরণ দেখা যায়।
আক্রান্ত পাতা ৬’’ – ৯’’ মাটি সমেত তুলে ফেলে পুড়িয়ে বা গভীর গর্ত করে পুঁতে দিতে হবে। এ ছাড়া প্রতি ১০০ বর্গমিটার জায়গায় ব্রাসিকল ২০% গুঁড়ো ২৫০ গ্রাম হারে মাটিতে ভালো ভাবে ছড়িয়ে দিয়ে সামান্য জল দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। অথবা ব্রাসিকল ৭৫% ৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে পাতার গোড়ায় মাটি ও মাটি সংলগ্ন কাণ্ডটি ভালো ভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে।
কজাল অর্গানিজম : কোলেটোট্রিকাম ক্যাটসিসাই অথবা কোলেটোট্রিকাম দস্তুরি
এই রোগের আক্রমণে পাতায় কালো বা বাদামি বর্ণের অসংখ্য দাগ দেখা যায়। লতার নীচের দিকের পাতায় প্রথমে দেখা যায় পরে উপরের পাতাও আক্রান্ত হয়। ওই দাগগুলি ঘিরে থাকে হলুদ আভা। অপেক্ষাকৃত গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় এই রোগ লতার কাণ্ডে আক্রমণ করতে পারে। কাণ্ডের সবুজ ত্বকের নীচে গোলাকার ছোট দাগ পড়ে। পরে অনুকূল আবহাওয়ার কারণে দুই বা ততোধিক দাগ একত্রে মিলে কাণ্ডের চারিদিকে ছড়িয়ে যায়। দাগগুলি শেষে ফেটে গিয়ে ফোঁটা ফোঁটা আঠাও বেরোতে পারে। সাধারণত বর্ষার প্রারম্ভে বা শেষে এই রোগের প্রকোপ বাড়ে।
প্রতিরোধক ব্যবস্থা হিসাবে বর্ষা শুরুর আগে কপার অক্সিক্লোরাইড ৪ গ্রাম / লিটার বা ০.৫% বোর্দো মিশ্রণ বা জাইরাস ৮০% ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে ডাঁটায় ও পাতায় ভালো ভাবে স্প্রে করতে হবে। ২০ দিন অন্তর ২ – ৩ বার স্প্রে করা যেতে পারে।
লক্ষণগুলি কোলেটোট্রিকাম জনিত রোগের ন্যায়। তবে এ ক্ষেত্রে পাতার নীচের দিকে হলুদ আভা অংশে জলে ভেজা দাগ থাকে।
কোলেটোট্রিকাম জনিত রোগের ন্যায় প্রতিরোধক ব্যবস্থা নিতে হবে।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 3/5/2024