কজাল অরগানিজম – অ্যাসিরিয়া নেরেরনিস
নারকেলের নীচের দিকের ওমিরিস্টেমটিক অংশে এই মাকড়ের আক্রমণ ঘটে। ওই অংশ থেকে মাকড়গুলি রস শুষে খায়। ফলে নারকেলের গায়ে সাদা লাইন দেখা যায়। পরে সেটি ক্রমশ বাদামি রঙের হতে শুরু করে ও ত্রিকোণা বৃক্ষ হয়। ফল বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, আক্রমণের প্রাদুর্ভাব বেশি হলে নারকেলের ওজন কমে যায় এবং খোসা বা ছোবড়ার গুণগত মান ভীষণ কমে যায়। সঙ্গে সঙ্গে উত্পাদনের মাত্রাও ভীষণ কমে যায়। সাধারণত সারা বছরই এই মাকড়ের প্রাদুর্ভাব থাকে। তবে ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রাদুর্ভাব কম হয়।
সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ একান্ত জরুরি। পাশাপাশি সার ও সেচের ব্যবহারেও আক্রমণ কমানো যায়। নাইট্রোজেনঘটিত সার বারে বারে ও বেশি মাত্রায় পটাশঘটিত সার ৩৫০০ গ্রাম প্রতি গাছে প্রতি বছরে প্রয়োগ করতে হবে। এ ছাড়াও রাসায়নিকঘটিত মাকড়নাশক যেমন মনাপটোফস ৩৬ এস এল ২.৫ মিলি বা ফেনাজাকুইন ১০ ই সি ২.০ মিলি অথবা ডাইকোফল ১৮.৫ ইসি ৫.৫ মিলি বা সালফার ৮০ ডব্লিউ পি ৫.০ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে সরাসরি ফুলে এবং নীচের দিকে স্প্রে করতে হবে। প্রতি গাছে ১-১.৫ লিটার জল, সঙ্গে অবশ্যই যে কোনও স্টিকার ১.০ প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে তিন বার প্রথম মার্চ – এপ্রিল, দ্বিতীয় অক্টোবর – নভেম্বর এবং তৃতীয় বার ডিসেম্বর – জানুয়ারি নাগাদ স্প্রে করতে হবে। এ ছাড়াও নিম্নজাত ওষুধ অ্যাজোব্যাকটেরিন ০.৫ % বা ১% এক বার ৩ – ৫ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করা যায়।
আর অন্য ভাবে নিমতেল ২০০ মিলি + রসুন ২০০ গ্রাম সাথে স্টিকার মিশিয়ে স্প্রে করলেও এই মাকড় নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
বড় গাছের ক্ষেত্রে যে হেতু গাছের ওপরে স্প্রে অসুবিধাজনক, সে কারণে শিকড়ের মাধ্যমে রাসায়নিক, জৈবজাত ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে।
কজাল অরগানিজম – রাইনোকোপোরাস ফেরিঙ্গিনিয়াস এফবি
লাল বাদামি রঙের উইভিল কাণ্ডের ভিতরে ডিম পাড়ে। পরে পূর্ণাঙ্গ পোকা গর্ত করে বেরিয়ে আসে এবং কাণ্ডের নরম তন্তুগুলি খায়। ফলে পরবর্তীতে পুরো গাছ শুকিয়ে মারা যায়।
কাণ্ডের গর্তগুলি বালির সঙ্গে বি এইচ সি অথবা ক্লোরোডেন ৫% গুঁড়ো মিশিয়ে গর্তগুলি বন্ধ করে দিতে হবে, যাতে উইভিল কাণ্ডের ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে এবং ডিম না পাড়তে পারে। এ ছাড়া গর্তগুলিতে ১% পাইরিনন (১ অংশ পাইরিথিন তার সঙ্গে ১০% প্রিপ্রোনিল অক্সাইড ) ইনজেস্ট করতে হবে।
কজাল অরগানিজম – নেফারতিস সেরিনোপা মেয়ার
ছাই রঙের ধূসর মথ থেকে কিড়া দশায় মঞ্জুরির নীচের অংশ খেতে থাকে এবং ওই অংশটি ধূসর রঙ হয়ে যায় এবং ‘নাট’ গুলি পড়তে শুরু করে এবং গাছটির মাথা পুড়ে যাওয়ার মতো লাগে।
আক্রান্ত অংশটি কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এবং কাঠারিল, দুইনালমাট ক্লোরোপাইরিকস, জাতীয় রাসায়নিক ওষুধ স্টিকারে মিশিয়ে মাত্রানুযায়ী স্প্রে করে দিতে হবে।
কজাল অরগানিজম – ওরিসেটস শিনোসেরস
বর্ষার আগে ও পরে এই পোকার প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। এরা কচি পাতা ও ফুল চিবিয়ে খায়।
প্রথমত গাছের পার্শ্ববর্তী যে এলাকাগুলিতে পোকা জন্মায় যেমন পচা সব্জির গাদা, সেখানে কাঠারিল বা ক্লোরোপাইরিফস জাতীয় রাসায়নিক ওষুধের গুঁড়ো ছড়াতে বা স্প্রে করতে হবে বত্সরে চার বার, জানুয়ারি, এপ্রিল, জুলাই এবং অক্টোবর মাসে।
কজাল অরগানিজম – ওডেন্টো ট্রেমস এসপি
উইপোকা সাধারণত বীজতলা ও মূল জমি দু’টিতেই গাছকে আক্রমণ করে। ফলে মধ্যবর্তী মাখাটি ঢোলে পড়ে, বৃদ্ধি কমে যায়, অবশেষে ধূসর রঙের হয়ে যায়।
নালির মাধ্যমে সেচ দিতে হবে এবং সেচের জলে ক্লোরোপাইরিফস বা এন্ডোসালফান জাতীয় ওষুধ দিতে হবে। এ ছাড়াও উইয়ের ঢিবিগুলি ভেঙে দিতে হবে। আর উইপোকা জন্মায় এমন অঞ্চলে কার্বারিল ০.২% বা নিমতেল ২% স্প্রে করতে হবে।
কজাল অরগানিজম – পেস্টালোসিওসিস প্যাল্মারিউন
পূর্ণ বয়স্ক পাতায় বাইরের দিকে ধূসর, সাদা দাগ দেখা যায় এবং সেটি বাদামি রঙের দাগ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। পরবর্তীতে ওই দাগগুলি মিলে গিয়ে কালো ছাপ ছাপ তৈরি হয়ে যায়। ফলে পাতার কিনারা বরাবর সম্পূর্ণ ভাবে শুকিয়ে যায়, ফলনও ভীষণ ভাবে কমে যায়।
পুরনো আক্রান্ত পাতাগুলি নির্মূল করতে হবে। তার পর পাতায় ১% ও বাডোক্স মিশ্রণ বা ম্যাঙ্কোজেব ৭৫% ডব্লিউপি স্প্রে করলে রোগের আক্রমণ প্রতিহত করা যায়।
কজাল অরগানিজম – বাইপোলারিস হ্যালোডেস
প্রথমে মধ্যবর্তী বা কিছু নতুন পাতায় কালো এবং কুঁকড়ে যাওয়ার মতো দেখতে হয় পাতার দূর প্রান্তে। পরে ওই অংশ থেকে পাতা ভেঙে পড়ে যায়। পাতার অংশ কমে যাওয়ার কারণে ফলনও ভীষণ ভাবে ব্যাহত হয়।
বোরো দাক্স মিশ্রণ ১ % বা ম্যাঙ্কোজেব ৭৫% ডব্লিউপি প্রতি তিন মাস অন্তর পাতায় স্প্রে করতে হবে এবং আক্রান্ত পাতা গুলি ছেঁটে ফেলতে হবে।
কজাল অরগানিজম – সেরাটোসিসটিস প্যারাডোয়া
কাণ্ডের লম্বা ফাটল থেকে লাল রঙের রস বের হয় এবং তা শুকিয়ে কালো হয়ে যায়। ফাটলের ভিতরে কাণ্ডে পচন হয়। বেশি বয়সের গাছেই সাধারণত এই রোগটি হয়।
আক্রান্ত জায়গাটির তন্তুগুলি ভালো ভাবে ধারালো ছুরি দিয়ে চেঁচে ফেলতে হবে। পরে ওই অংশে ক্লোরোডাক্স ১ % মিশ্রণ বা ব্লাইটক্স বা কাঠারিল ৫০ ডব্লিউপি নারকেল বা তিসির তেলের সঙ্গে ভালো ভাবে মিশিয়ে মিশ্রণটি আক্রান্ত অংশে মলমের মতো ভালো ভাবে লাগিয়ে দিতে হবে। এর এক দিন পর ওই অংশে গরম আলকাতরা ভালো করে লাগাতে হবে।
নারকেলের ভিতরে শাঁস বা জল এক দম থাকে না। নারকেলের ভিতরটি এক দম ফোপরা হয়। এটি কোনও রোগ নয়। মূলত খাদ্যর অভাবের জন্য এটি হয়। এ জন্য নিয়মিত ভাবে সুপারিশ মাত্রার মিউরেট অফ পটাশ সারটি অবশ্যই প্রয়োগ করতে হবে।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/8/2020
প্রখ্যাত এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ডাঃ সুদীপ চ্যাটারজির মত...