টিক্কা বা পাতায় দাগ (Tikka or leaf spot) রোগ
রোগের কারণ
সারকোস্পোরা এ্যারাচিডিকোলা (Cercospora arachidicola) ও সারকোস্পোরা পারসোনেটা (Cercospora personata) নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তার
কনিডিয়া বাতাস ও বৃষ্টির পানির মাধ্যমে এক স্থান হতে অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। অপেক্ষাকৃত উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া এবং প্রবল বায়ু প্রবাহ এ রোগ বৃদ্ধির সহায়ক।
রোগের লক্ষণ
- বীজ গজানোর এক মাসের মধ্যে সারকোস্পোরা এ্যারাচিডিকোলা নামক ছত্রাকের আক্রমন পরিলক্ষিত হয়।
- সারকোস্পোরা এ্যারাচিডিকোলা ছত্রাকের আক্রমণে পাতায় সৃষ্ট দাগগুলি লালচে বাদামী বা কালো রঙের হয়।
- এগুলো আকারে গোল বা অনিয়মিত এবং অনেক বড় হয়।
- দাগগুলো হলুদ রঙের বলয় দ্বারা আবৃত থাকে।
- দাগগুলো নানা আকারের হয় এবং পাতার উপর ইতস্তত ছড়িয়ে থাকে।
- গাছের বয়স ৫৫-৬০ দিন হলে সারকোস্পোরা পারসোনেটা নামক ছত্রাকের আক্রমণে পাতার নীচের পৃষ্ঠে দাগ দেখা যায়।
- সারকোস্পোরা পারসোনেটা ছত্রাকের আক্রমণে পাতায় ছোট ছোট গোলাকার ধুসর বাদামী হতে কালো রঙের দাগ সৃষ্টি হয় এবং দাগগুলো একত্রিত হয়ে বড় হয়।
- উভয় ছত্রাকের ক্ষেত্রেই গাছের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দাগের সংখ্যা বেড়ে যায়; পাতা ঝলসে যায়, ফলে গাছ ফ্যাকাশে দেখায় ও ফলন কমে যায়।
- পাতার দাগ রোগের আক্রমনের ফলে গাছের বাদাম পরিপুষ্ট হতে পারে না এবং দানা আকারে ছোট হয়।
|
|
আগাম পাতায় দাগ (C. arachidicola) |
নাবী পাতায় দাগ (C. personata) |
|
|
চিত্র: চীনাবাদামের টিক্কা বা পাতায় দাগ রোগের লক্ষণ |
রোগের প্রতিকার
- রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করতে হবে, যেমন বারি চীনাবাদাম ৬, বারি চীনাবাদাম ৭, বারি চীনাবাদাম ৮, বারি চীনাবাদাম ৯ এবং বারি চীনাবাদাম ১০।
- ফসলের পরিত্যক্ত অংশ, আগাছা এবং আবর্জনা পুড়ে ফেলতে হবে।
- জানুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহে বীজ বপন করলে রোগের প্রকোপ কম হয়।
- সুষম সার ব্যবহার ও সময়মত সেচ প্রয়োগ করতে হবে।
- কার্বেন্ডাজিম (যেমন-অটোস্টিন) প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম অথবা প্রোপিকোনাজোল (যেমন-টিল্ট ২৫০ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।
গোড়া পচা/কান্ড পচা (Foot and root rot/Stem rot) রোগ
রোগের কারণ
স্ক্লেরোশিয়াম রফসি (Slerotium rolfsii) নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তার
আর্দ্র আবহাওয়া এ রোগ বিস্তারে সহায়ক। মাটিতে বসবাসকারী ছত্রাক গুটিকা এ রোগ সৃষ্টি করে। আক্রান্ত বীজ, পানি, পাখি, কৃষি যন্ত্রপাতি দ্বারা এক স্থান হতে অন্য স্থানে ছড়ায়। উচ্চ তাপমাত্রা (২৫ সেঃ-এর বেশী) রোগ বিস্তারের জন্য অনুকুল অবস্থা।
রোগের লক্ষণ
- এ রোগ গাছের যে কোন অবস্থায় আক্রমণ করতে পারে।
- সাধারণত গাছের যে সকল অংশ মাটির কাছাকাছি বা নিচে থাকে সে অংশ সমূহ এ রোগে আক্রান্ত হয় ।
- গাছের গোড়া ও কান্ডের সংযোগস্থলে বাদামী হতে কালো দাগের সৃষ্টি হয়।
- এ দাগ পরে কান্ডের উপরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
- আক্রান্ত স্থানে ছত্রাকের সাদা মাইসেলিয়া এবং সরিষার দানার মত স্ক্লেরোশিয়া লক্ষ্য করা যায়।
- গাছের মূল শিকড় আক্রান্ত হলে গাছ ঢলে পড়ে ও মারা যায়।
|
|
চিত্র: চীনাবাদামের গোড়া পচা/কান্ড পচা রোগের লক্ষণ |
রোগের প্রতিকার
- রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করতে হবে।
- জমিতে শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে।
- ফসলের পরিত্যক্ত অংশ, আগাছা এবং আবর্জনা পুড়ে ফেলতে হবে।
- সুষম সার ব্যবহার করতে হবে।
- অর্ধকাচা মুরগির বিষ্ঠা হেক্টর প্রতি ৫ টন হারে বীজ বপনের ২-৩ সপ্তাহ আগে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
- কার্বেন্ডাজিম (যেমন-অটোস্টিন) অথবা কার্বোক্সিন + থিরাম (যেমন-প্রোভ্যাক্স ২০০ ডব্লিউপি) প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করতে হবে।
- কার্বেন্ডাজিম (যেমন-অটোস্টিন) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর গাছের গোড়ায় মাটিতে ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
মরিচা (Rust) রোগ
রোগের কারণ
পাকসিনিয়া এ্যারাচিডিস (Puccinia arachidis) নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তার
ফসলের পরিত্যক্ত অংশে ছত্রাক বেচে থাকতে পারে। বিকল্প পোষক হতে বায়ুর মাধ্যমে এ রোগ সুস্থ গাছে ছড়ায় এবং আর্দ্র্র্র আবহাওয়ায় বিস্তার লাভ করে। বয়স্ক গাছে রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়।
রোগের লক্ষণ
- এ রোগ গাছের যে কোন অবস্থায় আক্রমণ করতে পারে, তবে বয়স্ক গাছে (৯০-১০০ দিন) রোগের প্রকোপ বেশী।
- সাধারণত পাতায় নিচের পৃষ্ঠে লাল লোহার মরিচা পড়ার ন্যায় সামান্য স্ফিত ছোট বিন্দুর মত দাগ দেখা যায়।
- এ দাগ ধীরে ধীরে আকৃতিতে বড় হতে থাকে।
- অনুকুল আবহাওয়ায় কিছুদিনের মধ্যেই সমস্ত পাতা রাষ্ট বা মরিচায় ছেয়ে যায়।
- আক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে পাতার উপরের পৃষ্ঠেও এ রোগ দেখা যায় এবং ধীরে ধীরে আক্রান্ত পাতাগুলি শুকিয়ে ঝরে পড়ে।
- আক্রান্ত গাছে বাদামের দানা ছোট ও কুচকানো হয়।
- মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হলে বাদাম গাছ শুকিয়ে মারা যায়।
|
|
|
|
চিত্র: চীনাবাদামের মরিচা রোগের লক্ষণ |
রোগের প্রতিকার
- রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করতে হবে, যেমন বারি চীনাবাদাম ৬, বারি চীনাবাদাম ৭, বারি চীনাবাদাম ৮, বারি চীনাবাদাম ৯ এবং বারি চীনাবাদাম ১০।
- জমিতে শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে।
- ফসলের পরিত্যক্ত অংশ, আগাছা এবং আবর্জনা পুড়ে ফেলতে হবে।
- কার্বেন্ডাজিম (যেমন-অটোস্টিন) অথবা কার্বোক্সিন + থিরাম (যেমন-প্রোভ্যাক্স ২০০ ডব্লিউপি) প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করতে হবে।
- জানুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহে বীজ বপন করলে রোগের প্রকোপ কম হয়।
- হেক্সাকোনাজল (যেমন-কনটাফ ৫ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি অথবা প্রোপিকোনাজোল (যেমন-টিল্ট ২৫০ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।
সূত্র ও লেখকঃ বিজ্ঞানী ড. কে. এম. খালেকুজ্জামান
সর্বশেষ সংশোধন করা : 3/6/2024
0 রেটিং / মূল্যাঙ্কন এবং 0 মন্তব্য
তারকাগুলির ওপর ঘোরান এবং তারপর মূল্যাঙ্কন করতে ক্লিক করুন.
© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.