কাল দাগ (Black spot) রোগ
রোগের কারণ
ডিপ্লোকারপন রোসি (Diplocarpon rosae) নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তার
পাতার পরিত্যক্ত অংশে জীবানু বেঁচে থাকতে পারে।
রোগের লক্ষণ
- রোগাক্রান্ত গাছের পাতার উভয় পৃষ্ঠায় গোলাকার কাল রংয়ের দাগ পড়ে।
- দাগগুলো একত্রিত হয়ে বড় দাগের সৃষ্টি করে।
- আক্রান্ত গাছের পাতা ঝড়ে গিয়ে গাছ পাতা শুন্য হয়ে যায়।
- কালো দাগ কান্ডেও দেখা যায়।
|
|
|
|
চিত্র: গোলাপের কাল দাগ রোগের লক্ষণ |
রোগের প্রতিকার
- গাছে সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে।
- গাছের গোড়ায় যেন পানি না জমে সেদিকে খেয়াল করতে হবে ।
- গাছের অঙ্গ ছাটাই করতে হবে, যাতে গোড়ায় সুর্যালোক প্রবেশ করে।
- গাছের অঙ্গ ছাটাই করে সেগুলো পুড়ে ফেলতে হবে।
- জমিতে রোগ দেখা দিলে কার্বেন্ডাজিম (যেমন-অটোস্টিন) প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ গ্রাম হারে অথবা টেবুকোনাজল (যেমন-ফলিকুর ২৫০ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে গাছে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
ডগা শুকানো (Die back) রোগ
রোগের কারণ
ডিপ্লোডিয়া রোসেরাম (Diplodia rosarum) নামক ছত্রাক দ্বারা সাধারণত এ রোগ হয়ে থাকে। অনেক সময় কোলেটোট্রিকাম এসপি. (Colletorichum sp.) নামক ছত্রাক দ্বারাও এ রোগ করে থাকে।
রোগের বিস্তার
পূরাতন বাগানে এ রোগের প্রকোপ বেশী। ছত্রাকটি গোলাপের পরিচর্যা বা ডাল ছাঁটার সময় সিকেচারের সাহায্য ছড়ায়। আর্দ্র আবহাওয়াতে প্রচুর পিকনিডিয়া ও স্পোর তৈরী হয় বলে রোগও বাড়ে।
রোগের লক্ষণ
- রোগাক্রান্ত গাছের কঁচি ডাল আগা থেকে শুকাতে শুরু করে।
- শুকানোটা ধীরে ধীরে ক্রমশ: নীচের দিকে নামতে থাকে।
- শুকানো অংশটা কালচে বাদামী রংগের পচা ছালযুক্ত হয়।
- এটা ফুলের বোঁটা, প্রশাখা থেকে শাখা, মূল কান্ড হয়ে পুরো গাছ ছেয়ে ফেলে।
- গোড়ায় পৌঁছালে পূরো গাছটি মরে যায়।
- রোগাক্রান্ত গাছে কলি ও ফুল হয় না।
|
|
|
চিত্র: গোলাপের ডগা শুকানো রোগের লক্ষণ |
রোগের প্রতিকার
- আক্রান্ত ডাল কেটে পুড়ে ফেলতে হবে।
- ডাল কাটার সময় কাল অংশসহ কেটে বাদ দিতে হবে।
- কাটা ডালের মাথায় ৪ ভাগ ক্যালসিয়াম কার্বোনেট, ৪ ভাগ রেড লেড ও ৫ ভাগ তিসির তেল মিশিয়ে পেস্ট তৈরী করে লাগাতে হবে।
- ডিপ্লোডিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলে কার্বেন্ডাজিম (যেমন-অটোস্টিন) প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে গাছে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
- কোলেটোট্রিকাম দ্বারা আক্রান্ত হলে প্রোপিকোনাজোল (যেমন-টিল্ট ২৫০ ইসি) ১ লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
সাদা গুড়া (Powdery mildew) রোগ
রোগের কারণ
ওইডিয়াম এসপি. (Oidium sp. ) নামক ছত্রাক দ্বারা এরোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তার
গাছের পরিত্যক্ত অংশে জীবানু বেঁচে থাকতে পারে। আবহাওয়ার আর্দ্রতা বেড়ে গেলে এ রোগটি বেশী হয়।
রোগের লক্ষণ
- গাছের পাতার উপর পিঠে ছোপ ছোপ সাদা পাউডারের আস্তরণ দেখা যায়।
- পরে সমস্ত পাতায় এই সাদা আস্তরণ ছড়িয়ে পড়ে।
- পাতার বিকৃতি ঘটে।
- কচি ফুল ও কলিতেও সাদা রংগের পাউডারের মত লেগে থাকে।
- পরবর্তীতে সমস্ত গাছ আক্রান্ত হয়।
- ফলে পাতা ও ফুল ঝড়ে যায়।
|
|
|
|
চিত্র: গোলাপের সাদা গুড়া রোগের লক্ষণ |
রোগের প্রতিকার
- রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করতে হবে।
- আক্রান্ত পরিত্যক্ত অংশ পুড়ে ফেলতে হবে।
- রোগের প্রকোপ কম হলে দ্রুত বেগে পানি স্প্রে করেও দমন করা যায়।
- সোডিয়াম বাইকার্বোনেট (যেমন-বেকিং সোডা) ১ লিটার পানিতে ৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ৩-৫ বার স্প্রে করতে হবে।
- রোগ দেখা মাত্রই সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন-থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউজি বা কুমুলাস ডিএফ) ১ লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে অথবা প্রোপিকোনাজোল (যেমন-টিল্ট ২৫০ ইসি) ১ লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
ইয়োলো মোজাইক (Yellow mosaic) রোগ
রোগের কারণ
ইয়োলো মোজাইক ভাইরাস (Yellow mosaic Virus) দ্বারা এরোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তার
বিকল্প পোষক উদ্ভিদে জীবানু বেঁচে থাকে ও সাদা মাছির মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ায়।
রোগের লক্ষণ
- গাছের যে কোন বয়সেই এ রোগ হতে পারে।
- পাতায় সবুজ হলুদের মিশ্রন দেখা যায়।
- হলুদ দাগগুলো পাতার শিরা উপশিরা বরাবরও দেখা যায়।
- রোগ মারাত্মক হলে সম্পূর্ন পাতাই হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
- পাতাগুলো কুকড়ায়ে যায়।
- আক্রান্ত গাছ খর্বাকৃতি হয়।
- ফুলও আকারে ছোট হয়।
|
|
|
|
চিত্র: গোলাপের ইয়োলো মোজাইক ভাইরাস রোগের লক্ষণ |
রোগের প্রতিকার
- ভাইরাস রোগমুক্ত নার্সারী হতে গোলাপের কলম সংগ্রহ করতে হবে।
- রোগাক্রান্ত গাছ দেখা মাত্র তুলে পুড়ে ফেলতে হবে।
- বাহক পোকা দমন করার জন্য ইমিডাক্লোপ্রিড (অ্যাডমায়ার বা ইমিটাফ) ১ লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
সূত্র ও লেখকঃ বিজ্ঞানী ড. কে. এম. খালেকুজ্জামান