অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

আগাছা নিয়ন্ত্রণ

বোনা জমিতে আগাছানাশক

বোনা ও রোয়া দু’ ধরনের ধান চাষেই আগাছা বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে। বোনা জমিতে চারার শৈশবকালে আগাছার উপদ্রবে চারার বাড়বৃদ্ধি ব্যাহত হয়ে ফলন ২০% পর্যন্ত পড়ে যেতে পারে। রোয়ার জমিতেও বিশেষ করে, মাটি শুকিয়ে গেলে আগাছা বেড়ে উঠে ফসলের ক্ষতি করে। মূলত ধানের চারার বাড়বৃদ্ধির জন্য যে সার দেওয়া হয় তার অনেকটাই আগাছা টেনে নেয়।

বোনা আউশের জমিতে বোনার ১৫ দিন পর প্রথম বার ও ৩০ দিন পর দ্বিতীয় বার নিড়ান দিয়ে আগাছা তুলে ফেলতে হবে। ‘বাসী’ বীজতলা পদ্ধতি অর্থাৎ বোনার ১ মাসে আগে চাষ দিয়ে আগাছা তুলে মই টেনে উত্পাটিত আগাছা মাটি চাপা দিয়ে ফেলে রেখে ১ মাস পর ধান বুনলে আগাছার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে থাকবে। বর্তমানে জনমজুর লাগিয়ে আগাছা নিয়ন্ত্রণ ব্যয়বহুল হয়ে পড়ায় রাসায়নিক আগাছানাশক ব্যবহার করার ঝোঁক পরিলক্ষিত হচ্ছে।

বোনা ধানে ধান বোনার ১ বা ২ দিন পর ২০০ লিটার জলে গুলে নীচের যে একটি রাসায়নিক আগাছানাশক ছিটোলে আগাছার উত্পাত কমবে।

আগাছা নাশক রাসায়নিক

প্রতিলিটার জলে রাসায়নিক পরিমাণ (মিলি/গ্রাম)

একর প্রতি রাসায়নিকের পরিমাণ (মিলি/গ্রাম)

অক্সাডায়াজিনন ২৫%

৮০০

বুটক্লোর ৫০%

১০০০

অক্সিফ্লুরফেন ২৩.%

২০০

প্রেটিলাক্লোর ৫০%

১০০০

অক্সাডিয়াজিল ৮০%

.২৫

৫০

কোন কারণে বোনার ১/২ দিন পর আগাছানাশক প্রয়োগ করা না গেলে বোনার ৩০ দিন পর ২ – ৪ – ডি (সোডিয়াম লবণ) একর প্রতি ৪০০ গ্রাম হারে একই ভাবে প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

রোয়া জমিতে আগাছানাশক

রোয়া জমিতে রোয়ার ১০ দিন ও ২০ দিন পর ২ বার নিড়ান যন্ত্র বা হাত দিয়ে আগাছা তুলে ফেলে মাটি ঘেঁটে দিতে হবে। রোয়া ধানের উপযুক্ত রাসায়নিক আগাছানাশকের নাম ও প্রয়োগমাত্রা নীচে দেওয়া হলো। ধান রোয়ার ৩ – ৪ দিনের মধ্যে যে কোনও একটি আগাছানাশক ২০০ লিটার জলে গুলে জমিতে স্প্রে করতে হবে। স্প্রে করার সময় জমিতে ছিপছিপে জল থাকা আবশ্যিক। স্প্রে করার পর অন্তত ২ দিন জমিতে নতুন করে জল ঢোকানো যাবে না। সুতরাং স্প্রে করার আগে জমিতে ছিপছিপে জল বেঁধেই স্প্রে করতে হবে। নতুবা ফল পাওয়া যাবে না।

আগাছানাশক রাসায়নিক

প্রতিলিটার জলে রাসায়নিক পরিমাণ (মিলি/গ্রাম)

একর প্রতি রাসায়নিকের পরিমাণ (মিলি/গ্রাম)

অ্যানিলোফস ৩০%

৪০০

বুটক্লোর ৫০%

১২০০

পেন্ডিমিথিলিন ২৫%

১২০০

অক্সাডায়াজিনন ২৫%

৮০০

বেন্টাজেন ৪৫%

৮০০

প্রেটিলাক্লোর ৫০%

৪০০

পাইরাজো সালফুরন ইথাইল ১০%

.৩৩

উচ্চ ফলনের জন্য চাই সার

তিন খাদ্যপ্রাণ না-ফ-প

জমির নিজস্ব উর্বরতা ফসল উত্পাদনের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই অধিক ফলনের জন্য বাইরে থকে মাটিকে সমৃদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন। মাটিকে উচ্চ ফলনের আধারে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে ব্যবহার করতে হবে জৈব সারের সংমিশ্রণে অজৈব সার। নাইট্রোজেন (না) ফসফেট (ফ) ও পটাশ (প) ফসলের প্রধান অজৈব সার। ধান চাষে এই তিনটি খাদ্যপ্রাণ ২ না : ১ ফ : ১ প অনুপাতে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে নাইট্রোজেন ব্যাতীত অন্য খাদ্যপ্রাণ দু’টি সাধারণত এক সাথে দেওয়া হয় মূল সার হিসাবে শেষ চাষের সময়। নাইট্রোজেন সারের পরিমাণকে ৪ ভাগে ভাগ করে কয়েক কিস্তিতে প্রয়োগ করাই রীতি। জৈব সারের পুরোটাই এক সাথে ছড়াতে হবে প্রথম চাষের আগে। জমির উর্বরতার মান অনুযায়ী বিভিন্ন মেয়াদি ধানের ক্ষেত্রে এই ধরনের খাদ্যপ্রাণ প্রতি একর জমিতে কতটা দিতে হবে তার হিসাব নীচে দেওয়া হল :

জমির উর্বরতার মান

নাইট্রোজেন

একরে কেজি

ফসফেট

একরে কেজি

পটাশ

একরে কেজি

চাপান সার প্রয়োগবিধি

: জাতের মেয়াদ ১০০ বা তার কম দিন

উচ্চ

.

.

.

৫০% রোয়ার সময়

৫০% থোড় আসার মুখে

মধ্যম

১২.

.

.

নিম্ন

১৬.

.

.

. জাতের মোয়াদ ১০০ – ১২৫ দিন

উচ্চ

১২.

.

.

২৫% মূল সার

৫০% রোয়ার ১৫ – ২০ দিনের মাথায়

২৫% থোড় আসার মুখে

মধ্যম

১৬.

.

.

নিম্ন

২৪.

.

.

. জাতের মেয়াদ ১২৫ - ১৪৫ দিন

উচ্চ

১৬.

.

.

মধ্যম

২০.

১০.

১০.

নিম্ন

২৪.

১২.

১২.

. জাতের মেয়াদ ১৪৫ দিনের বেশি হলে

উচ্চ

২০.

১০.

১০.

মধ্যম

২৮.

১২.

১২.

নিম্ন

৩২.

১৬.

১৬.

  • এ ছাড়া পিছু কম করেও ৩ টন খামার সার ব্যবহার করতে হবে। এই হারে সার ব্যবহার করলে নাইট্রোজেনের পরিমাণ ২.৫ কেজি কমানো যাবে।

ক্লোরোফিল মাপতে কালার চার্ট

নাইট্রোজন সারের কিস্তির পরিমাণ বোনার রকমফের অথবা মাঠে দাঁড়ানো জলের গভীরতা ভেদে পাল্টাতে হবে। রোয়া বোনার ধানের চাষে মূল সার হিসাবে নাইট্রোজেন না ব্যবহার করে ৫০% নাইট্রোজেন নিড়ান দিয়ে বোনার ১৫ – ২০ দিন পর এবং বাকিটা বোনার ৩০ – ৩৫ দিন পর ব্যবহার করতে হবে। রোয়া ধানের ক্ষেত্রে নিচু জমিতে যেখানে দাঁড়ানো জলের গভীরতা ৫০ সেমি ছাড়িয়ে যায় সেখানে দেয় নাইট্রোজেনের পুরোটাই মূল সার হিসাবে ব্যবহার করা দরকার।

বর্তমানে ‘লিফ কালার চার্ট’ ব্যবহার করে নাইট্রোজেন ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এই চার্টটি আসলে বিশেষ ভাবে তৈরি একটি ইঞ্চি স্কেল। স্কেলের প্রতিটি ইঞ্চির রং আলাদা। এই রঙ গাছের পাতার ক্লোরোফিল মেপে তৈরি করা হয়েছে। স্কেলটিতে রঙের বিস্তার হালকা হলদে থেক গাঢ় সবুজ। রঙের স্ট্রাইপ ধান পাতার মতো। লিফ কালার চার্ট ব্যবহার করে নাইট্রোজেন সার ব্যবহার করলে সারের অপচয় কমে। ফলে ২৫% নাইট্রোজেন কম লাগে। সবুজ রঙের ঘনত্ব ভেদে চার্টে প্রতিটি রঙের জন্য একটি নম্বর আছে।

পাতার রঙের পরীক্ষা

আমন রোয়ার ১৫ দিন ও বোরো রোয়ার ২০ দিন পর মাঠে স্কেলটি নিয়ে পাতার রঙের পরীক্ষা শুরু হয়। ধানের মাঠে চারা সমান ভাবে বেড়ে উঠেছে এমন জায়গা থেকে ১০টি গুছি বেছে নিয়ে প্রতিটি গুছির পুরোপুরি বের হওয়া সব চেয়ে বড় পাতাটির মাঝের অংশের রঙের সঙ্গে চার্টের রঙ মেলানো হয়। চার্টের যে রঙ পাতার রঙের সাথে মিলবে তার নম্বর লিখে নেওয়া হয়। ৫টির বেশি গুছির নির্ধারণ নম্বর ৪-এর কম হলে তখন একর প্রতি আমন ধানের ক্ষেত্রে ৯.৫ কেজি ও বোরো ধানের ক্ষেত্রে ১২.৩ কেজি নাইট্রোজেন চাপান হিসাবে দিতে হবে। প্রতি ১০ দিন অন্তর এ ভাবে মাপ নিয়ে নাইট্রোজেন প্রয়োগ করতে হবে। পাতার রঙ ৪ বা তার বেশি হলে কোনও নাইট্রোজেন সার দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।

উচ্চ ফলনশীল বোরো ধানের ক্ষেত্রে একর প্রতি ৫২ কেজি নাইট্রোজেন ২৬ কেজি ফসফেট ও ২৬ কেজি পটাশ ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রেও নাইট্রোজেন সারের ২৫% রোয়ার আগে, ৫০% পাশকাঠি ছাড়ার সময় ও বাকি ২৫% থোড় আসার মুখে প্রয়োগ করতে হবে।

গন্ধক-দস্তা-বোরন

অজৈব সার হিসাবে শুধু নাইট্রোজেন ফসফেট ও পটাশ ব্যবহার করলেই চলবে না। কেননা চাষের নিবিড়তা বাড়ার ফলে বিস্তৃত অঞ্চলে অনুখাদ্য এমনকী গৌণ খাদ্য গন্ধক বা সালফারের ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ধানের ক্ষেত্রে অনুখাদ্যের মধ্যে প্রধান দস্তা বা জিঙ্ক। ধানের ফসলে একর প্রতি দস্তার চাহিদা ৭৬ – ৭৭ গ্রাম। অভাবে রোয়ার ৭ – ১০ দিন পর থেকে চারা খয়রা রোগে আক্রান্ত হয়। সেই জন্য একর পিছু ১০ কেজি জিঙ্ক সালফেট প্রয়োগ জরুরি। কোন কোন জেলায় বোরনের অভাবও ধানের ফলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সেই সমস্ত অঞ্চলে ধানে ফুল আসার মুখে প্রতি লিটার জলে ১.৫ গ্রাম – ২.০ গ্রাম ডাই সোডিয়াম অক্টাবোরেট – ২০ গুলে ধানের পাতায় ছিটোতে হবে। প্রতি কেজি ধান উত্পাদনে গন্ধকের চাহিদা ২.৫ – ৩.৫ গ্রাম। ধান চাষে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে গন্ধকের অভাব দেখা গেছে। একর পিছু ৬ – ৮ কেজি গন্ধক ব্যবহার করলে ধানের ফলন ১৭% শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। তবে ফসফেট সারের উত্স হিসাবে সিঙ্গল সুপার ফসফেট ব্যবহার করলে অধিকন্তু গন্ধক ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। কেননা সিঙ্গল সুপার ফসফেট সারে ১৬% ফসফেটের সাথে পাওয়া যায় ১২% গন্ধক।

সূত্র:

  1. কৃষি দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
  2. ধান গবেষণা কেন্দ্র, চুঁচুড়া
  3. সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি ডেভেলপমেন্ট, সল্টলেক
  4. বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

সর্বশেষ সংশোধন করা : 10/30/2023



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate