কজাল অরগানিজম – হেলিকভারপা ওরমিগেরা/স্পোডোপটেরা লোটুরা
ফল ধরার সময় থেকে এই পোকার লোদা, সবুজ বা মেটে, বাদামি রঙের এবং গায়ে ডোরা দাগ আছে। এরা প্রথমে পাতা খায় পরে ফলের মাথা থেকে ঢুকে ভেতরের অংশ খেয়ে নষ্ট করে। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্য এর প্রাদুর্ভাব বেশি হয়।
ক্ষেতের চার পাশে গাঁদা ফুলের গাছ প্রতি ১৪–১৬টি রোয়ার মাঝে ফাঁদ ফসল হিসাবে লাগানো যায়। এ ছাড়াও, কেরোমন ফাঁদ পাতা যায়। আর এন. পি. ডি. (হলিমাইড) ১ মিলি/লি জলে গুলে স্প্রে করা যেতে পারে। রাসায়নিক কীটনাশক হিসাবে। এডোসালফান, কুইনালথাস, সাইপার মেট্রিন, স্পিনোগড, থায়োডাকার্ব, বানিমজাতক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
কজাল অরগানিজম – এপিটাকরা- ভিজিনটিওকটো পাঙ্কাটাটা
অক্টোবর–নভেম্বর বা মার্চ–এপ্রিলে এই পোকার প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। এরা পাতা খেয়ে ঝাঁঝরা করে দেয়।
বেগুনের মতো। কার্বারিল ৫০% ২.৫ গ্রাম বা আয়োডাকার্ব ৭৫% ১ গ্রাম বা ডাউক্লোরোওস ৭৬% ০.৭৫ মিলি, ম্যালাথিয়ন ৫০% ২.০ মিলি জাতীয় রাসায়নিক ওষুধ প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
কজাল অরগানিজম - লিরিওমিজা – ট্রিফোলি
গ্রীষ্মকালে এর প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। হলুদ বা সাদা রঙের পোকা পাতার দু’ ত্বকের মাঝে সুড়ঙ্গ সৃষ্টি করে তার মধ্য থেকে সবুজ অংশ খেতে খেতে এগোয় ও শুকিয়ে যায়। আক্রান্ত পাতা ওপর থেকে দেখলে জালের বা ম্যাপের মতো মনে হয়।
রাসায়নিক ওষুধের মধ্যে মনোক্রটোফস ৩৬% ১.৫ মিলি, ফিপ্রোনিল ৫% ১ মিলি, ডাইমিথোয়েট ৩০% ২ মিলি বা মিথাইল ডেমিটন ২৫% ২.০ মিলি অথবা অ্যামিফেট ৭৫% ০.৭৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করা যাবে।
কজাল অরগানিজম - বেমিসিয়া টাবাসি/আমরাসা এসপি
অক্টোবর–নভেম্বর বা ফেব্রুয়ারি–এপ্রিলের মধ্যে পোকার প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। এরা পাতার নীচে থেকে রস শুষে খায়। পরবর্তীতে পাতা কোকড়ানো রোগের ভাইরাস ছড়ায় ।
নালী পোকার মতো।
কজাল অরগানিজম - পাইথিয়াম আফুইডারমাটাম/ফাইটোপথেরা এসপিপি রিজোকটোরিয়া এসপিপি
ছত্রাকজনিত এই রোগ মাটিতে পটাশের অভাবের জন্য ও বালি মাটিতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। পাতা হলদে হয়ে হঠাৎ সতেজ চারা ঢলে পড়ে শুকিয়ে যায়। রোগটি মূলত কাণ্ডের নীচের অংশের মধ্য আবদ্ধ থাকে।
উপযুক্ত পরিমাণ জৈবসার ও পটাশ ঘটিত সার প্রয়োগে রোগ কম হয়। এ ছাড়াও বীজ শোধন অবশ্যই করতে হবে। যে কোন একটি রাসায়নিক ওষুধ যেমন ক্যাপটান ৫০% / আইরাম ৮০% ডব্লুপি / কার্বাডোজিম ৫০% ডব্লুপি ইত্যাদির যে কোনও একটি পরিমাণমতো জলে গুলে তাতে বীজ দশ মিনিট জলে ভিজিয়ে রেখে তার পর ছায়ায় জল ঝরিয়ে নিয়ে ওই দিন তা বীজতলায় বোনা উচিত। এ ছাড়াও, জৈবঘটিত ছত্রাক নাশক ওষুধ যেমন সিউডোমনাস ফ্লুরোসেন্স ৫৮ গ্রাম/কেজি বীজে ট্রাইকোডারমা ভিরিডি ৮ গ্রাম/কেজি বীজে মিশিয়েও বীজ শোধন করা যায়।
আর রোগের আক্রমণ প্রতিরোধে বীজ তলায় ক্যাপটান ৫০% ডব্লুপি ২.৫ গ্রাম জলে গুলে ভালো ভাবে বীজতলায় ভিজিয়ে দিতে হবে।
কজাল অরগানিজম – এমএলও মাইকোপ্লাজমা ঘটিত রোগ
বেগুনের মতো। প্রথমে কচি পাতা ফ্যাকাশে হলুদ হয়ে যায়। বড় পাতার কোলে এক গুচ্ছ ছোট পাতা দেখা যায়। গোটা গাছে মাথায় ভীষণ ছোট ছোট পাতায় ভরে যায়। গাছের বৃদ্ধি কমে যায় এবং আক্রান্ত গাছে ফুল ফল প্রায় ধরেই না। এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া আক্রমণে গাছের ডগা ঝিমিয়ে যায়। সমস্ত গাছ হঠাৎ ঢলে পড়ে পাতা ঝরে যায়।
রাসায়নিক ওষুধ প্রয়োগ করে এই রোগকে কমানো যায় না। প্রতিরোধক ব্যবস্থা হিসাবে আক্রান্ত জমিতে ২–৩ বছর বেগুন, টমেটো, আলু, লঙ্কা চাষ বন্ধ করে শিম জাতীয় ফসলের চাষ করতে হবে। সহনশীল জাতের চাষ করতে হবে। এ ছাড়াও বেগুনের ন্যায় রাসায়নিক ওষুধে বীজ শোধন করতে হবে। চারা লাগানোর আগে ১৫ কেজি/হেক্টর ব্লিচিং পাউডার মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়াও জৈবজাত কীটনাশক ইসউডমনাস ফ্লুরোসেন্স প্রয়োগ করতে হবে।
কজাল অরগানিজম – ফাইটোথোরা ইনফেসটার্স
ছত্রাকজনিত রোগের লক্ষণ প্রথমে গাছের পাতার ধারে বিশেষ, করে নীচের দিকের পাতায় বাদামি বা কালচে বর্ণের ভিজে ভিজে দাগ হয়ে পাতা শুকিয়ে যায়। সবুজ ফলেও এই ধরনের দাগ দেখা যায়। কুয়াশা ও ভিজে আবহাওয়া থাকলে আক্রমণের প্রাদুর্ভাব দ্রুত হয়। এর ফলে গাছ দ্রুত শুকিয়ে যা ও ফলও পচে যায়।
কুয়াশা বেশি হলে বা বৃষ্টি হলে রাসায়নিক ওষুধ যেমন ম্যাঙ্কোজেব ৭৫ ডব্লুপি ২ গ্রাম বা কপার অক্সিক্লোরাইড ৫০% ডব্লুপি ৪ গ্রাম বা ম্যাঙ্কোজেব ৫০ – ৬০ ডব্লুজি ৪–৫ গ্রাম বা ম্যাটাইলসল ৮৬ + ম্যাঙ্কোজেব ৬৪% ডব্লুপি ২.৫৪ গ্রাম বা ক্যাপটান ৫০% ডব্লুপি ৪ গ্রাম বা এই জাতীয় অন্যান্য রাসায়নিক ওষুধ ১০–১৫ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে আক্রমণের তীব্রতা ও আবহাওয়ার পরিস্থিতি অনুযায়ী।
ছত্রাকজনিত এই রোগের আক্রমণে গাছের পাতায় বাদামি গোলাকার দাগ হয়। দাগের মাঝে চক্রাকার সরু রেখা দেখা যায়। এই দাগ কাণ্ড বা ফলেও দেখা যেতে পারে। ফলে গাছ শুকিয়ে যায় ও ফল পচে যায়।
কুয়াশা বেশি হলে বা বৃষ্টি হলে রাসায়নিক ওষুধ যেমন ম্যাঙ্কোজেব ৭৫ ডব্লুপি ২ গ্রাম বা কপার অক্সিক্লোরাইড ৫০% ডব্লুপি ৪ গ্রাম বা ম্যাঙ্কোজেব ৫০ – ৬০ ডব্লুজি ৪–৫ গ্রাম বা ম্যাটাইলসল ৮৬ + ম্যাঙ্কোজেব ৬৪% ডব্লুপি ২.৫৪ গ্রাম বা ক্যাপটান ৫০% ডব্লুপি ৪ গ্রাম বা এই জাতীয় অন্যান্য রাসায়নিক ওষুধ ১০–১৫ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে আক্রমণের তীব্রতা ও আবহাওয়ার পরিস্থিতি অনুযায়ী।
জলদি ফসলে এই রোগের প্রকোপ বেশি হয়। পাতায় ফুটো, কোঁচকানো, দাগ ধরা পাতাগুলি ভাইরাস আক্রান্ত। প্রধানত সাদা মাছি ও শ্যামা পোকার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। আক্রান্ত গাছের ডালপালা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হয়। ফুল, ফল ঠিকমতো ধরে না, ফলনও কমে যায়।
বীজতলায় ও চারা রোপনের সময় দানাদার জাতীয় রাসায়নিক কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলে পুড়িয়ে দিতে হবে। তা ছাড়াও রোগের আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য বাহক পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য ডাইমিথোয়েট ৩০% ইসি, ১.৫ মিলি বা ইমিডাক্লোপিড ১৭.৮% এস এল ১/০.৭৫ মিলি ইত্যাদি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
কজাল অরগানিজম – তামাক পাতার জেমিনি ভাইরাস
এই রোগে গাছের পাতা ছোট ছোট হয়ে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ফুল–ফল ধরে না। বাহক পোকার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়।
বাহক পোকা দমনের/নিয়ন্ত্রণের জন্য মোজাইক ভাইরাস রোগের মতো রাসায়নিক ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/26/2020