আমরা সাধারণত দু’ রকমের প্রজাতির মাগুর মাছ দেখে থাকি।
হাইব্রিড মাগুর মাছ বৃহদাকারের হয়। এই মাছ মাংসাশী রাক্ষুসে। প্রচুর খায়। ভীষণ তাড়াতাড়ি এদের দেহের বৃদ্ধি হয়। এরা সুযোগ পেলে মানুষের মাংসও খাবলে খেয়ে নেয়। ওই জলাশয়ে অন্য মাছ রাখা বিপজ্জনক। এদের স্বাদ ও খাদ্যগুণ দেশি মাগুরের স্বাদ ও খাদ্যগুণের চেয়ে কম। এমনবিধ বিভিন্ন কারণে এদের চাষে সরকারের নানা বিধিনিষেধ আছে। তাই এদের সম্পর্কে আর বিস্তারিত আলোচনা করা হল না। আমরা দেশি মাগুর মাছেই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখব।
মাগুর মাছ আমাদের দেশে বহু পুরাতন মাছ। এই মাছ যেমন সুস্বাদু তেমনই এদের খাদ্যগুণ। এই মাছের টিসু ও কোষ খুব নরম। সাধারণত ছিবড়ে হয় না। এই মাছের প্রোটিন উৎকৃষ্ট মানের। অনেক সহজপাচ্য অ্যামাইনো অ্যাসিড, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ বর্তমান। এতে চর্বি জাতীয় পদার্থ কম থাকে। ফলে এই মাছ ছোট বাচ্চা, বৃদ্ধ, অন্তঃসত্ত্বারা এবং দুর্বল বা রোগীর জন্য উৎকৃষ্ট। মাগুর মাছ খুব বড় হলে বা এদের বয়স বেশি হেয় গেলে এদের চামড়া বেশ পুরু হয়ে যায়। মা-বোনেদের এই মাছ উপযুক্ত সাবধানতার সঙ্গে ভাজতে হয়। নইলে ভাজার সময় গরম তেল ছিটে আসার আশঙ্কা থাকে। মাগুর মাছ জিওল মাছের অন্তর্গত। জীবন্ত অবস্থায় বিক্রি করাটাই প্রথা ও প্রয়োজন। এই সময় এদের বাজারদর প্রচুর। সাধারণ মাছের থেকে দেশি মাগুর মাছের বাজারদর অনেক বেশি, কিন্তু এই মাছ মারা যাওয়ার পর এদের দাম এক বারেই কমে যায়। তাই এই মাছ ধরার আগে থেকেই এদের জীবন্ত অবস্থায় প্রয়োজনমতো সময়ের জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হয়। বাজারজাতও করা হয় জীবন্ত অবস্থায়। এদের রান্নার আগে পর্যন্ত জিইয়ে রাখার পর জীবন্ত অবস্থায় কাটাই সাধারণত প্রচলিত প্রথা। আজকাল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরই এই কাজ করে দিতে হয়।
মাগুর মাছ যে কোনও জলাশয়ে থাকতে পারে। সাধারণ মিঠা জল বা নোনা জলে (লবণতা ৮ পিপিটি) এরা সচ্ছন্দে বসবাস করতে পারে। এরা ভীষণ নোংরা নর্দমার ময়লা জল এমনকী অগভীর পাট পচানো জলেও বেঁচে থাকে ও বৃদ্ধি পায়। মাগুর মাছ সাধারণত এঁদো, নোংরা, ঘোলা অগভীর জলায় থাকতে ভালোবাসে। এর মূল কারণ এরা ছোট ছোট পোকামাকড়, তাদের ডিম, শুককীট, মুককীট এদের ভীষণ প্রিয় খাবার। আর ঘোলা, নোংরা জলই এদের জন্ম, বৃদ্ধি ও বংশ বিস্তারের উৎকৃষ্ট আধার। যে জলাশয় এদের চাষের জন্য পছন্দ করা হবে সেটাতে যেন অন্তত ছয় / সাত মাস জল থাকে। সাধারণ মাছের জন্য যে সব আঁতুড় পুকুর বা পালন পুকুরে যেখানে ডিম ফোটানো হয় বা ধানি পোনা থেকে চারা পোনা তৈরি করা হয়, পরবর্তী সময়ে সেগুলিকেও দেশি মাগুর চাষের কাজে লাগানো যেতে পারে।
যদিও দেশি মাগুর নোংরা, ঘোলা জলেও স্বচ্ছন্দে বেঁচে থাকে ও তাদের বৃদ্ধি হয়, কিন্তু এদের চাষের জন্য উন্মুক্ত অঞ্চল হবে, অক্সিজেনের ঘাটতি হবে না এ রকম স্থানই পছন্দের। এদের চাষের ও ব্যবস্থাপনার জন্য ছোট জলাশয়ই (পাঁচ কাঠা থেকে এক বিঘার মধ্যে ) বেশি উপযুক্ত। মাগুর মাছ চাষের জন্য জলের গভীরতাও খুব বেশি প্রয়োজন নেই। তবে জলের গভীরতা কখনওই দু’ ফুটের কম হলে চলবে না। হলে নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে। জলের গভীরতা একদম কমে গেলে অন্য সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে মাছের অন্য শত্রু যেমন বক, উদবিড়াল, এমনকী মানুষের উপদ্রব হতে পারে। এই মাছ চাষের জন্য আয়তাকার জলাশয়ই বেশি পছন্দের। যে হেতু মাগুর মাছ জলের নিম্নস্তরেই বেশি থাকে এবং এরা আমিষভোজী তাই মাগুর মাছ চাষের জলাশয়ের নীচে বালির চেয়ে পলিমাটি বা স্বল্প পাঁক মাটি থাকা ভালো, যাতে মাছের প্রাকৃতিক খাবারের জোগান ভালো থাকে।
এদের চাষের জন্য জলাশয়ের পাড় বেশ চওড়া করা দরকার। মাগুর মাছের বুকে হেঁটে বাইরে চলে যাওয়ার একটা প্রবণতা আছে। তাই পাড়টা একটু উঁচু করারও দরকার যাতে জলের থেকে অন্তত এক ফুট উঁচু থাকে অর্থাৎ ওই জলাশয়ে সর্বোচ্চ জলের তল যত হওয়ার সম্ভাবনা তার থেকে অন্তত একটু বেশি উচ্চতা থাকে। বর্ষাতে যদি বড় মাছ থাকে ওই জলাশয়ে, তবে জাল দিয়ে বা বাঁশের তৈরি চাটাইয়ের ব্যবস্থা রাখা দরকার যাতে মাছ অন্যত্র চলে যেতে না পারে। পুকুরের পাড় প্রায়শই ইঁদুর বা সাপের বসবাসের জন্য গর্ত থাকে। এগুলি থেকে রেহাই পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পুকুরের পাড়ের ঢাল থাকা বাঞ্ছনীয়। এই ঢাল বাইরের দিকে ৩ : ১ এবং ভিতরের দিকে ৩ : ১ থেকে ৪ : ১ প্রয়োজন।
পুকুরের সমস্ত আগাছা তুলে ফেলে উচিত বা মাগুর মাছের চাষ করার জন্য পুকুর আগাছাশূন্য হওয়া দরকার। বিশেষ করে পুরাতন জলাশয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আগাছায় আক্রান্ত থাকে। মাগুর মাছ উদ্ভিদভোজী নয়। তাই ছোট বড় কোনও উদ্ভিদই এদের খাদ্য নয়। পরন্তু চলাফেরায় এরা ব্যাঘাত ঘটায়। এ ছাড়া এরা জলের নীচের দিকে থাকে। জলে অধিক আগাছা থাকলে জলের নীচের স্তরে আলো-বাতাস প্রবেশে বাধা দেয়।
অবাঞ্ছিত মাছ বা অন্য জলজ পোকা পুকুরের জলে থাকলে মাছের বাড়বাড়ন্তে ব্যাঘাত ঘটায়। মাছের খাদ্য বা প্রাকৃতিক অনেক দান থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বার বার জাল টেনে এইগুলিকে নির্মূল করা উচিত। প্রয়োজনে জল শুকিয়ে গেলে অথবা জল কমে গেলে পুকুরে মহুয়া খোল প্রয়োগ করে এগুলিকে দমন করা যেতে পারে। মহুয়া খৈল প্রয়োগে সমস্ত ছোট প্রাণীর মৃত্যু ঘটে স্যাপোলিন নামক এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থের জন্য। এই রাসায়নিক ক্রিয়ার প্রভাব মহুয়া প্রয়োগের ১২ – ১৫ দিন পরে আর থাকে না। এই খৈলই পরে মাছের সোজাসুজি খাবার হিসাবে এবং মাছের প্রাকৃতিক খাবার উৎপাদনে সহায়ক হিসাবে কাজ করে।
মাগুর মাছের চারা সাধারণত প্রাকৃতিক নিয়মে পাড়া ডিম থেকে বাচ্চা হওয়ার পর সংগ্রহ করা হয়। বর্ষাকালে খাল, বিল, বাওড়, নালা প্রভৃতি জলাশয় থেকে পরিণত বয়সের প্রজননক্ষম-প্রজনেনচ্ছ মাছ সুযোগ পেলে বেরিয়ে এসে ধানক্ষেত বা আগাছাপূর্ণ অগভীর জলাশয়ে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ডিম পাড়ে। সেই ডিম নিষিক্ত হয় এবং পরে তার থেকে বাচ্চা পরিস্ফুটিত হয়। এই রকম সম্ভাব্য জলাশয় থেকে সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসে এই চারা সংগ্রহ করা হয়। এই সময় এদের ওজন প্রায় ৭ থেকে ১০ গ্রাম মতো হয়ে থাকে। এই পরিমাপের চারাই পালন ও মজুত পুকুরে চালান করে দেশি মাছের চাষ করা হয়।
পশ্চিমবঙ্গে এই চারার কয়েকটি প্রাপ্তিস্থান : প্রাকৃতিক উপায়ে প্রজননের পর প্রাকৃতিক ক্ষেত্র থেকে বিশেষ করে চারা পাওয়া যায় মেদিনীপুরের ঘাটাল মহকুমায়। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রাম মহকুমা এবং সদর মহকুমার বালিচক, রাধামোহনপুর প্রভৃতি অঞ্চলে। একই ভাবে উত্তর চব্বিশ পরগনার বসিরহাট, ইটিন্ডাঘাট, হাসনাবাদ, সাকিলা; দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ক্যানিং, মালঞ্চ, বাসন্তী, সন্দেশখালি, হেড়োডাঙ্গা, ধামাখালি প্রভৃতি অঞ্চলে পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক জলাশয়ে এই সব চারা পাওয়া যায়। তাই এই অঞ্চলে দেশি মাগুর মাছের চারা বিক্রির ছোট ছোট বাজারও তৈরি হয়েছে। অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এর ফলে। প্রাকৃতিক নিয়মে মাগুর মাছের কোনও অভাব হওয়ার কারণ ছিল না। কিন্তু উপযুক্ত পরিণত প্রজননক্ষম মাছের সংখ্যা নানা কারণে পর্যাপ্ত না হওয়া, উপযুক্ত জলাশয়ের অভাব ও সর্বোপরি ধানক্ষেতে এবং কৃষিক্ষেত্রে কীটনাশক ব্যবহারের জন্য দেশি মাগুর মাছের চারা উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এর সমাধানসূত্র প্রণোদিত প্রজননের মাধ্যমেই খুঁজতে হবে।
উপযুক্ত জলাশয় নির্বাচন অথবা তৈরির পর দেখে নিতে হবে যেন জলে আগাছা, আমাছা, মাছ খেকো বড় মাছ না থাকে। জলের রঙ হালকা কালো। মহুয়া খোল প্রয়োগের ২০ / ২১ দিন পরে এবং অন্যান্য জৈবসার প্রয়োগের অন্তত ৭ দিন পর মাছের চারা ছাড়া উচিত। এই সময় চারা মাছের দৈর্ঘ্য ৭ – ১০ সেমি (৩ – ৪ ইঞ্চি) যার ওজন ৮ / ১০ গ্রাম হবে। মজুতকাল সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে।
মজুত চারা খুব সুস্থ ও সবল হবে। মাথায় মুকের কাছের শুঁড় অক্ষত অবস্থায় থাকবে। গায়ে কোনও রকম ক্ষত, বিবর্ণ বা বিকৃত ঢং-এর হবে না। চামড়ার উপর পিচ্ছিল ভাব বর্তমান থাকবে। রোগ-পোকা মুক্ত হবে।
প্রাপ্তিস্থান থেকে চারাগুলি সযত্নে, উপযুক্ত ভান্ডে, স্বাস্থ্যসম্মত উপায় ও পদ্ধতিতে, যথাসম্ভব স্বল্প সমেয় স্থানান্তরিত করতে হয়। চারা গন্তব্যস্থানে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে পুকুরে ছাড়া বিধিসম্মত নয়। পুকুরে ছাড়ার আগে কিছু সময় (অন্তত ২ / ৩ ঘণ্টা) ছায়ায় রাখতে হবে। প্রয়োজনে হাত দিয়ে জলের মধ্যে অল্পবিস্তর বাতাস প্রবেশের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এর পর ছাড়ার আগেই মাছের চারাগুলিকে সংশোধিত করতে হবে। এই সময় প্রতি লিটার জলে ৮ – ১০ ফোঁটা ফরম্যালিন মিশিয়ে ওই মিশ্রণে ১০ – ১৫ মিনিট ডুবিয়ে রেখে অথবা ০.৩% অ্যাক্রিফ্লাভিন মেশানো জলে ৫ মিনিট ডুবিয়ে রেখে তার পর ছাড়তে হবে। ছাড়ার আগে প্রয়োজনে পাত্রসমেত মাছ জলের মূল জলের (পুকুরের) উপর কিছু সময়কাল ভাসিয়ে রাখা হয়। উভয় জলের উত্তাপের সামঞ্জস্য তৈরির জন্য।
চারা পুকুরের জলে ছাড়ার সময় নির্ধারণ করার আগে স্মরণে রাখা দরকার যে প্রখর রোদে বা ভীষণ অস্বাভাবিক আবহাওয়ায় কিছু চারার জীবনহানি হতে পারে। তাই সকালের দিকে অথবা পড়ন্ত বেলা সন্ধ্যার আগে এই কাজ সম্পন্ন করা যুক্তিযুক্ত।
দেশি মাগুর নানা ভাবে চাষ করা হয়ে থাকে। বাজারে এমনিতেই দেশি মাগুর মাছের আমদানি অপর্যাপ্ত। যেগুলি পাওয়া যায় তার অর্ধেকের বেশিটাই নদী–নালা-খাল–বিল ইত্যাদি জলাশয়ে প্রাকৃতিক ভাবেই জন্মানো ও বেড়ে ওঠা জিওল মাছ, বিশেষ করে দেশি মাগুর মাছ। আজকাল দেশি মাগুরের অগ্নিমূল্য বাজারদর ও চাহিদার কথা মনে রেখে কিছু কিছু মাছ চাষি সংগঠিত ভাবে দেশি মাগুরের চাষ করে থাকেন। এই চাষগুলির পদ্ধতি তিন প্রকার ---
এই ক্ষেত্রে শুধু মাগুর মাছের চাষ করা হয়। মাগুর মাছের নিজস্ব পছন্দের কিছু খাবার ও পরিবেশ আছে। একক মাগুর চাষের সময়ে আমরা ওই খাবার ও পরিবেশের ব্যবস্থা করে থাকি। আবার অনেক জলাশয় আছে যেখানে মাগুর মাছ স্বচ্ছন্দে বসবাস করতে পারে অথবা কোনও কোনও সময় অন্য মাছের উপযোগী না হলেও মাগুর মাছ বাঁচতে পারে। সেই সব ক্ষেত্রে একক মাগুর মাছ চাষ করা হয়। এই সময় ৪৮৭৫০ প্রতি হেক্টরে (৬৫০০টি প্রতি বিঘায়) চারা মাছ ছাড়া হয়।
শিঙি মাছের স্বভাব ও খাদ্যাভ্যাস অনেকটাই দেশি মাগুরের মতো। এদের খাদ্যগুণ মাগুর মাছের খাদ্যগুণের দিক থেকে নিকৃষ্ট নয়। তবে এদের দেহের বৃদ্ধি মাগুর মাছের বৃদ্ধির চেয়ে একটু কম। এ ছাড়া এদের কাঁটা মারার প্রবণতা একটু বেশি এবং খুব জ্বালাময়ী। এদের মাথার আকার আকৃতিতে ছোট হলেও বাজারদর মাগুর মাছের দামের চেয়ে একটু কম। যা হোক অনেক সময় দেশি মাগুরের সঙ্গে শিঙি মাছের চাষও করা হয়ে থাকে। এই সময় এই দুই প্রকার মাছের চারার সংখ্যা হবে ৩৩৭৫০টি মাগুরের চারা ও ১৫০০০টি শিঙি প্রতি হেক্টারে (৪৫০০টি মাগুর ও ২০০০টি শিঙ্গি মাছের চারা প্রতি বিঘায় --- শিঙি মাছ ৭ – ১০ সেমি লম্বা ও ৬ থেকে ৮ গ্রাম ওজনের)।
সাধারণত চাষিদের সাধারণ কার্প মাছের চাষের প্রতি একটা প্রবণতা আছে। এ ছাড়া সাধারণ কার্প মাছের চারা অন্য মাছের চারার চেয়ে সহজে পাওয়া যায়। মৎস্যপ্রিয় মানুষের দিক থেকে সাকুল্যে সাধারণ কার্প মাছের চাহিদা বিভিন্ন কারণে অনেক বেশি। তাই সাধারণ কার্প মাছের সঙ্গেও মাগুরের মিশ্র চাষ হয়ে থাকে। যে হেতু মাগুর মাছ জলাশয়ে নিম্ন স্তরের মাছ এবং মৃগেল মাছ ও সাইপ্রিনাস মাছও জলাশয়ের নিম্ন স্তরের মাছ, তাই এই মিশ্র চাষে এদের বাদ দিতে হবে। ফলে রুই, কাতলা, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্পের মতো উপর ও মধ্য স্তরের মাছ এই চাষে অন্তর্ভুক্ত করলে উপর ও মধ্য স্তরের খাবার ও প্রাকৃতিক সম্পদ আরও সুন্দর ভাবে ব্যবহৃত হবে। ফলন বাড়বে। এই সময় মাগুর মাছের চারা ২৪৩৭৫টি এবং ৪৮৭৫টি সাধারণ কার্পের চারা প্রতি হেক্টরে (৩২৫০টি মাগুর ও ৬৫০টি কার্প প্রতি বিঘায়, কার্প ১০ – ১৫ সে মি লম্বা ও ২০ – ২৫ গ্রাম ওজনের) ছাড়া হয়।
মাগুর মাছ জলজ উদ্ভিদকণায় (ফাইটো প্ল্যাঙ্কটন) খুব উৎসাহী নয়। তাই দেশি মাগুর চাষে রাসায়নিক সার প্রয়োগের তেমন প্রয়োজন নেই। তবে সাধারণ কার্প জাতীয় মাছের মিশ্রণ থাকলে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়, অন্যথায় নয়।
মাগুর মাছ চাষে প্রতি মাসে বিঘা প্রতি ১০০ – ১২৫ কেজি (৭৫০ – ৮৫০ কেজি হেক্টর প্রতি ) কাঁচা গোবর প্রয়োগ করতে হয়। এই গোবর মাগুর মাছ সোজাসুজি খাবার হিসাবে নেয়। এ ছাড়া জলে সূক্ষ্ম প্রাণীকণার জন্ম হয়, যেগুলি মাগুর মাছের প্রিয় খাদ্য। তাই নিয়ম করে মাগুর মাছ চাষে কাঁচা গোবর প্রয়োগ প্রয়োজন। গোবর প্রয়োগের ফলে এবং নানাবিধ কারণে জল দূষণের প্রবণতা থাকে। এ ছাড়া চুন মাছের খাদ্য হিসাবে প্রয়োজন। তাই কাঁচা গোবর প্রয়োগের অন্তত ৭ – ১০ দিন বাদে বিঘা প্রতি ৮ – ১০ কেজি কলি চুন (৬০ – ৭৫০ কেজি হেক্টরে) প্রয়োগ ভালো ফল পাওয়া যায়।
প্রতি মাসে অন্তত এক বার টানা জাল টেনে অথবা খ্যাপলা জালের সাহায্যে মাছ ধরে তাদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা, তাদের বৃদ্ধির গতি ইত্যাদি পরীক্ষা করতে হবে, যাতে মাছ সম্পর্কে আমাদের সম্যক জ্ঞান থাকে — প্রয়োজনমতো ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে জলে জাল টানলে মাছের ব্যায়াম হবে যা তাদের বৃদ্ধিতে সহায়ক।
গ্রীষ্মের সময়, বিশেষ করে মার্চ-এপ্রিল মাসে জলাশয়ের জল একেবারে কমে যায়। তখন জলে শ্যাওলার আধিক্য ঘটে যা মাগুর মাছ চাষে বিঘ্ন ঘটায়। এই শ্যাওলা নির্মূল করার ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষ লাগিয়ে এগুলি নানা উপায়ে তুলে ফেলতে হবে। তুঁতে প্রয়োগ করতে হবে। এ ছাড়া এই সময় জলের উত্তাপ ভীষণ বেড়ে যেতে পারে। ফলে মাছ অস্বস্তিতে থাকতে পারে। অন্যত্র চলে যাওয়ার সুযোগ খুঁজতে পারে। মানুষ (চোর) বা অন্য মৎস্যভূক প্রাণীর পেটে যেতে পারে। তাই
রাত্রে জলাশয়ের উপরে আলোক ফাঁদের ব্যবস্থা করলে এই আলোয় আকৃষ্ট হয়ে পতঙ্গ উড়ে আসবে এবং জলে পড়ে মারা যাবে, যেগুলি মাগুর মাছের প্রিয় খাবার। মাগুর মাছের রাত্রিবেলায় খাওয়ার অভ্যাস থাকায় খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কর্ম ব্যস্ততা ও ব্যায়ামের সময় বেড়ে যায়। বৃদ্ধি সন্তোষজনক হয়।
প্রাকৃতিক খাবার ছাড়াও উপযুক্ত বৃদ্ধির জন্য মাছকে নিয়ম করে পরিপূরক খাবার প্রয়োগ করার প্রয়োজন রয়েছে। এরা রাত্রেও খাবার খেয়ে থাকে। তাই সকাল ও সন্ধ্যাবেলায় খাবার দিলে খাবারের সুষ্ঠু ব্যবহার হয়।
দেশি মাগুর মাছের ফলন আশানুরূপ পেতে হলে প্রাকৃতিক খাবারের ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে পরিপূরক খাবারও দিতে হয়।
সাধারণত মাছের গড়পড়তা ওজনের শতকরা ৪ – ৫ ভাগ হারে পরিপূরক খাবারের প্রয়োজন হয়। যদিও এই মাপ সম্পূর্ণ নির্ভর করে জলাশয়ের ও মাছের এবং প্রকৃতির অভ্যাস ও গতিপ্রকৃতির উপর। প্রাকৃতিক খাদ্য কত পরিমাণে আছে, কেমন উৎপন্ন হচ্ছে প্রাকৃতিক অন্যান্য অবস্থার উপরই এগুলি নির্ভর করে যার সাধারণ কোনও পরিমাপযন্ত্র নেই। তাই চাষিই ঠিক করবেন কোন অবস্থায় কতটা কোন খাবারের ব্যবস্থা করবেন। অন্য কার্প জাতীয় মাছের সঙ্গে মিশ্র চাষে এই খাবারের কিছু তারতম্য ঘটে।
মাগুর মাছের জন্য পরিপূরক খাদ্যের উপাদানগুলি হল —উদ্ভিদ উপাদান, প্রাণীজ উপাদান, অন্যান্য উপাদান। খনিজ পদার্থ, ভিটামিন, ওষুধ ইত্যাদি।
মাগুর মাছের পরিপূরক খাদ্যে শর্করা, প্রোটিন, চর্বি, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিনের উপস্থিতি থাকলেও এই খাবারে মুখ্যত প্রোটিনের পরিমাণের ব্যাপারটি বেশি করে খেয়াল রাখতে হয়। তাই এই খাদ্যে প্রোটিনসমৃদ্ধ উপাদান বেশি থাকে। এর একটি অতি সাধারণ তালিকা ও তাদের অনুপাত বর্ণিত হল
ক্রমিক নং |
খাদ্যের উপকরণ |
অনুপাত |
---|---|---|
১ ) |
সরষে / বাদাম খৈল : রেশমগুটি পোকার গুঁড়ো : কাঁচা গোবর |
১ : ১ : ১ |
২ ) |
স্বল্প মূল্যের শুটকি মাছের গুঁড়ো / চিংড়ি / রেশন গুটি পোকার গুঁড়ো : চালের কুড়ো : বাদাম / সরষে খৈল |
১ : ১ : ১ |
৩ ) |
সামুদ্রিক মাছের গুঁড়ো : বাদাম / সরষের খৈল : গোবর গ্যাসের স্লারি |
১ : ১ : ১ |
৪ ) |
গেঁড়ি – গুগলি / ঝিনুক / শামুকের মাংস : বাদাম / সরষে খৈল : চালের গুঁড়ো |
১ : ১ : ১ |
৫ ) |
বাদাম / সরষে খৈল : চালের কুড়ো : শুটকি মাছের গুঁড়ো |
১ : ১ : ১ |
৬ ) |
মাছ / মুরগির নাড়িভুঁড়ি সিদ্ধ : সয়াবিন গুঁড়ো : চালের গুঁড়ো |
১ : ১ : ১ |
বি:দ্র: প্রতি কেজি খাবারে ১০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ও সামান্য খনিজ লবণ ভালো করে মিশিয়ে দিলে ভালো হয়।
উপাদান সমূহ (%) |
পরিমাণ (%) |
ফিশ মিল |
৬০ |
ভাজা সোয়াবিন মিল |
১৫ |
বাদামের খৈল |
১০ |
বেকার ইস্ট |
৩ |
সূর্যমুখী তেল |
২.৫ |
কডলিভার তেল |
২.৫ |
শ্বেতসার জাতীয় শর্করা |
৪.৫ |
ভিটামাইন–খনিজ মিশ্রণ |
২ |
আকর্ষক (মেথি ও একাঙ্গি মূল-চূর্ণ) |
০.৫
|
উপাদান |
প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমাণ |
ফিশ মিল |
১৫.০ |
সোয়াবিন মিল |
১৭.০ |
গম (গুঁড়ো) |
১০.০ |
জোয়ার / বাজরা |
৫৬.৮৫ |
ডি এল মিথিয়োনিন |
০.১৫ |
ভিটামিন ও মিনারেল মিশ্রণ |
১.০ |
মাগুর মাছের ৭ – ১০ সে মি লম্বা ৮ / ১০ গ্রাম ওজনের চারা ৭ / ৮ মাসে ১২৫ থেকে ১৫০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। একক মাগুর চাষে হেক্টর প্রতি ৩৩৭৫ – ৩৫০০ কেজি (বিঘা প্রতি ৪৫০ – ৪৮০ কেজি ) পর্যন্ত মাছের ফলন হতে পারে। শিঙি মাছের সঙ্গে মিশ্র চাষ করলে বিঘা প্রতি প্রায় ৩৫০ – ৪০০ কেজি (২৬২৫ – ২৮০০ কেজি প্রতি হেক্টরে ) এবং কার্পের সঙ্গে মিশ্র চাষে ১৮৭ – ২২৫ কেজি হেক্টর প্রতি ( ২৫০ – ৩০০ কেজি বিঘায়) ফলন হতে পারে।
খাল, বিল, নদী, ছোট জলাশয় --- সব ক্ষেত্রেই খাঁচায় মাগুর মাছ চাষ হতে পারে। যে জলাশয়ে জলজ উদ্ভিদ, শেওলা বা জলাশয়ের তলদেশ খুব গভীর বা খুবই অসমান, যেখানে মাছ চাষ হতে পারে অথচ মাছ ধরার অসুবিধা প্রখর বা চাষি স্বল্পাকারে চাষে ইচ্ছুক, সে ক্ষেত্রে খাঁচায় মাগুর মাছ করা যেতে পারে।
বাঁশ বা নাইলনের অথবা উভয়ের মিশ্রণে এই খাঁচা তৈরি করা যেতে পারে। বাঁশের চাটাই বা নাইলনের জালের তৈরি খাঁচা ব্যবহারে বেশ সুবিধা। এগুলি নানা আকার বা আকৃতির হতে পারে ২মি x ১মি x১ মি, ৩মি x ১মি x ১মি ইত্যাদি মাপের করা হয়। এগুলির উপর দিক খোলা রাখার ব্যবস্থা থাকে, মাছ চারা বা খাবার দেওয়ার জন্য বা পরীক্ষার জন্য। ব্যবহারের পর বন্ধ করে দেওয়া হয়। খাঁচাগুলিকে জলাশয়ে (এক জায়গায় বা একাধিক জায়গায় ) প্রয়োজনমতো স্থাপন করা হয়। এগুলিকে বয়ার সাহায্যে ভাসিয়ে রাখা হয় বা খুঁটির সাহায্যে স্থাপন করা হয়। খাঁচার ৩/৪ অংশ জলের ভিতর, বাকিটা জলের উপর রাখার ব্যবস্থা হয়।
সারা বছরই এই ভাবে পালন সম্ভব।
৭ – ১০ সেমি লম্বা ৮/১০ গ্রাম ওজনের মাগুর মাছের চারা প্রতি বর্গমিটারে ২০০টি পর্যন্ত পালন করা যায়।
ভালো ফলন পাওয়ার জন্য পরিপূরক খাবার অবশ্যই দিতে হবে। এদের ওজনের শতকরা ১০ ভাগ পরিপূরক খাবার দেওয়া দরকার।
এই ভাবে দেশি মাগুর মাছের পালনে প্রতি বর্গমিটার গড়পড়তায় ফলন ৯ / ১০ কেজি আশা করা যায় বছরে।
এই ভাবে মাগুর মাছের চাষে শতকরা ৮৫ – ৯০টি মাছ ধরা পড়ে। অর্থাৎ ১০০টি চারা মাছ ছাড়লে প্রায় ৮৫ – ৯০টি মাছ আমরা ফেরত পাই। মাগুর মাছ অতি আনন্দে (প্রজননের সময়) এবং বিপদে জল কমে গেলে, জল দূষিত হলে, খাবারের সন্ধানে, মৎস্যভুকের কাছে ধরা পড়ার ভয়ে এদের পালিয়ে যায় বা মাটির কাদার নীচে/কোনও গর্তের ভিতর লুকিয়ে থাকে। অনেকক্ষণ ধরে এই লুকনো অবস্থায় থাকতে পারে।
আমাদের দেশ ও বাংলাদেশে হাইব্রিড মাগুর নামে একটা বৃহদাকারের মাগুর মাছ সম্পর্কে নানা জনের নানা মন্তব্য আমাদের সমাজে প্রায়শই প্রচলিত। এই মাছ আদতে আমাদের দেশের মাছ নয়। আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে এই মাছ পাওয়া যায়। এই মাছ আকৃতিতে মাগুর মাছ, প্রকৃতিতেও মাগুর মাছ এবং মাগুর মাছই। কিন্তু এগুলি আমাদের সাধারণ ভাবে পরিচিত দেশি মাগুরের তুলনায় বৃহদাকার। তার খাবারের চাহিদাও বৃহৎ। মাছ প্রায় ১৫ – ১৬ কেজি ওজনের হতে পারে। লম্বায় ১৩০ সেন্টিমিটারও হয়ে থাকে। এই মাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম ‘ক্ল্যারিয়াস গেরিয়েপিনাস’।
থাইল্যান্ডেও এই মাছের চাহিদা খুব আছে। আমাদের দেশে মাঝেমধ্যে কারও কারও কাছে বাজারে বা পাড়ায় পাড়ায় বিক্রি করতে অল্প স্বল্প দেখা যায়। বস্তুত এই মাছ চোরাপথে কেউ কেউ বিক্রি করে থাকে। এই মাছ সরকারি ব্যবস্থাপনায় এখানে আসেনি। চোরাপথে বাংলাদেশ হয়ে এই দেশে ঢুকে পড়েছে। এই মাছ চাষে সুবিধাগুলি —
সবই যে এদের ভালো এমন কথা বলা যাবে না। মাছ চাষে এদের অসুবিধাগুলি হল —
এই সমস্ত দিক বিচার করে আমাদের সরকার এই মাছ (আফ্রিকান মাগুর যা হাইব্রিড মাগুর নামে পরিচিত) চাষে বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন।
মাগুর মাছ এক প্রকার জিওল মাছ। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, চিন, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে এই মাছের বিস্তার। এই মাছ ফুলকার সাহায্যে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র দিয়ে বাতাস থেকে সরাসরি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র থাকার ফলে মাগুর মাছ জলের বাইরে অনেকক্ষণ পর্যন্ত বাঁচতে পারে। এই জন্য এদের জিওল মাছ বলে। এদের দেহে আঁশ নেই, বক্ষ পাখনায় কাটা আছে এবং মুখে চার জোড়া শুঁড় আছে। এদের ক্যাট ফিশও বলা হয়। মাগুর মাছ সহজেই বক্ষ পাখনার দুই কাঁটার সাহায্যে শুকনো স্থান দিয়ে অতি দ্রুত পুকুর থেকে চলে যেতে পারে। আমাদের দেশে বর্তমানে তিনটি প্রজাতির মাগুর মাছ পাওয়া যায় —
এদের মধ্যে থাই মাগুর অল্প সংখ্যায় পাওয়া যায়। বর্তমানে আমাদের দেশে আফ্রিকান মাগুরের প্রবেশের ফলে অনেকে দেশি ও বিদেশি মাগুরের তফাত হঠাৎ করে বুঝতে পারেন না। ছোট অবস্থায় এই তিন ধরনের মাগুর দেখতে প্রায়ই একই রকম। আফ্রিকান মাগুরের গায়ের রঙ অন্য দুই মাগুর মাছের থেকে একটু আলাদা। এদের গায়ের রঙ হালকা ছাই এবং পেটের দিক সাদা। দেশি মাগুর মাছের গায়ের রঙ কালচে বা হলুদাভ হয়। এদের সনাক্তকরণের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল মাথার খুলির খাঁজ।
মাগুর মাছ অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং সহজে হজম হয়। এতে প্রোটিনের এবং আয়রনের শতকরা পরিমাণ খুবও বেশি। অথচ ফ্যাট কম থাকে তাই সহজ পাচ্য। প্রতি ১০০ গ্রাম মাগুর মাছে রয়েছে —
ক) |
জলীয় পদার্থ |
৭৮.২০ গ্রাম |
খ ) |
প্রোটিন |
১৫.০০ গ্রাম |
গ ) |
খনিজ পদার্থ |
১.৩৯ গ্রাম |
ঘ ) |
স্নেহ পদার্থ |
১.০০ গ্রাম |
ঙ ) |
ফসফরাস |
২৯০ মিলিগ্রাম |
চ ) |
ক্যালসিয়াম |
২১০ মিলিগ্রাম |
ছ ) |
লৌহ |
৭৪ মিলিগ্রাম |
জ ) |
গ্রহণযোগ্য লৌহ |
৭০ মিলিগ্রাম |
এই মাছ অত্যন্ত সুস্বাদু ও কাঁটাবিহীন। রোগীর এবং শিশুর খাদ্য হিসাবে এর উপযোগিতা প্রচণ্ড
সমস্ত জিওল মাছের মধ্যে মাগুর মাছ খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে। এক বছরে ১০০ থেকে ১২০ গ্রামের মতো হয় এবং ক্রেতার অত্যন্ত পছন্দের তালিকায় থাকায় এর বাজারদরও বেশ ভালো। সুতরাং এই মাছ চাষ করলে চাষির তুলনামূলক ভাবে লাভের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। মাগুরের আরও একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল ৬ মাসেই এই মাছ বাজারকৃত করার আকার ধারণ করে।
প্রত্যন্ত গ্রামে পোনামাছ চাষ করলে যথোপযুক্ত বাজারদর পাওয়ার জন্য দূরবর্তী শহরের বাজারে পাঠাতে হয়। পোনামাছ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে পচে যেতে শুরু করে। কিন্তু মাগুর মাছ জল ছাড়া অবস্থায় বেঁচে থাকতে সক্ষম হওয়ায় দূরবর্তী বাজারে তাকে বিক্রি করতে অসুবিধা হয় না।
আমাদের রাজ্যে একটা বড় পরিমাণ জলাশয়ে সারা বছর জল থাকে না। বর্ষার সময় ভর্তি হওয়া এই জলাশয়গুলিতে সাধারণত ৫ – ৬ মাস জল থাকে। এই সমস্ত জলাশয়ে যেখানে পোনা মাছ চাষ করা যায় না সেখানে মাগুর মাছ চাষ করা সম্ভব এবং স্বল্পকালীন চাষ করে যা বৃদ্ধি হবে তা বাজারজাত করে ভালো মূল্য পাওয়া যাবে। গ্রামে যে সমস্ত হাজা-মজা পুকুর এবং কচুরিপানা আবৃত বড় বড় বিল আছে যার থেকে কোনও উপার্জন তো হয় না উপরন্তু গ্রামীণ পরিবেশকে দূষিত করে, সেই সমস্ত বিল এবং ডোবাকে মাগুর মাছ চাষের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ধরনের জলাশয়ে সাধারণত অক্সিজেনের পরিমাণ কম ও অন্যান্য ক্ষতিকারক গ্যাসের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই এখানে পোনা মাছ চাষ করা যায় না। কিন্তু মাগুর মাছের অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র থাকায় এরা বাতাস থেকে সরাসরি অক্সিজেন নিতে পারে। ফলে এদের চাষ অনায়াসে এখানে করা যায়। ফলত, মাগুর মাছ চাষের মাধ্যমে এ ভাবে এক ব্যাপক পরিমাণ প্রায় অব্যাবহৃত জলাশয়কে মাছ চাষের আওতায় আনা সম্ভব।
পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে (বিশেষত উত্তর ও দিক্ষণ চব্বিশ পরগনা, মেদিনীপুর) প্রচুর পরিমাণে ধান জমি আছে যাতে প্রায় ৫ – ৬ মাস গড়ে ৩ ফুট উচ্চতায় জল থাকে। এই সমস্ত জমিতে ধান চাষের সাথে সম্বনিত চাষের ক্ষেত্রে মাগুর মাছকে পছন্দের প্রজাতি হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে। এখানে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকায় মাগুর চাষ করা ভালো। এ ছাড়া ধান জমিতে থাকা প্রাণীকণা এবং পোকামাকড় মাগুরের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হওয়ার সুযোগ থাকে। এ ছাড়াও পাশাপাশি মাগুরের ঠুকরানো স্বভাবের জন্য ধান গাছের গোড়ায় জন্মানো শ্যাওলার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ধান গাছ মুক্ত থাকে। আর চাষি ধানের সাথে মাছ থেকেও কিছু পরিমাণ অতিরিক্ত আয় করে।
দেশি মাগুর সাধারণত আমিষ জাতীয় খাদ্য পছন্দ করে। এরা কীটপতঙ্গ, গেঁড়ি, গুগলি, ঝিনুকের মাংস, প্রাণীদেহের পচা গলা অংশ, কেঁচো, পোকামাকড়ের লার্ভা খেতে অভ্যস্ত। মাগুর মাছ পুকুরে চাষ করার সময় বাইরে থেকে পরিবেশন করা খাদ্যও গ্রহণ করে। এই মাছ চাষের জন্য সরষের খোল, শুকনো চিংড়ি বা মাছের গুঁড়ো, চালের কুঁড়ো এক সঙ্গে মিশিয়ে পরিপূরক খাদ্য হিসাবে দেওয়া হয়।
সাধারণত মিষ্টি জলে এদের বাসস্থান। নদী, নালা, খাল, বিল, ধানক্ষেত এবং পুকুরে এরা থাকে। পরিত্যক্ত পচা ডোবা পুকুরেও এরা নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। এরা মিষ্টি জলের মাছ হলেও অনেকটা নোনাজল (৬ – ৮ পিপিটি লবণাক্ত) সহ্য করে বেঁচে থাকতে পারে। বর্ষাকালে এদের প্রজনন হয়। মে মাস থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত স্ত্রী মাছের পেটে ডিম পাওয়া যায়। বর্ষাকালে পরিযায়ী স্বভাবের পরিপক্ক পুরুষ ও স্ত্রী মাছ পুকুর, খাল বা নালা থেকে উঠে আসে এবং যৌনমিলনের জন্য নতুন জলজ পরিবেশ খোঁজ করে। ধানক্ষেত কিংবা আগাছাপূর্ণ জলাশয়ে এরা ডিম পাড়ে। মাগুর মাছের ডিম জলীয় আগাছার সঙ্গে যুক্ত থাকে। এই সমস্ত জায়গায় বর্ষার পরে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর অবধি মাসগুলিতে ৮ – ১২ গ্রাম ওজনের মাগুর মাছের চারা পাওয়া যায়। স্ত্রী মাগুর মাছের ডিমের সংখ্যা খুবই কম। স্ত্রী মাছের ডিমের সংখ্যা দেহের ওজনের উপর নির্ভর করে। সাধারণত একটি ১০০ গ্রাম ওজনবিশিষ্ট স্ত্রী মাছে ৩৫০০ – ৪০০০ ডিম পাওয়া যেতে পারে। দেশি মাগুর মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ছাড়াও এদের কৃত্রিম ভাবে প্রজনন করানো হয়।
পুরুষ মাগুর মাছ |
স্ত্রী মাগুর মাছ |
||
---|---|---|---|
১) |
পেট স্বাভাবিক থাকে। |
১) |
ডিম থাকার জন্য পেট স্ফীত থাকে। |
২) |
জনন অঙ্গ লম্বাটে, সূঁচালো এবং আগায় লাল বিন্দু থাকে। |
২) |
জনন অঙ্গ গোলাকার বা ডিম্বাকৃতি, ফোলা ও মাঝখানে স্পষ্ট কাটা দাগ থাকে। |
৩) |
পেটে হাল্কা চাপ দিলে কোনও তরল পদার্থ শুক্রাণু বের হয় না। |
৩) |
ফোলা পেটে হাল্কা চাপ দিলে জনন অঙ্গ দিয়ে ডিম বের হয়। |
দেশি মাগুর মাছ অনুকূল পরিবেশে পুকুর, বিল এবং অন্যান্য বদ্ধ জলাশয়েও ডিম পাড়ে। বর্ষাকালে স্ত্রী মাগুর জলাশয়ের কিনারায় জলতলের ৩০ – ৪০ সেমি নীচে ঘাসযুক্ত অগভীর অংশে গর্ত করে বাসা বাঁধে। গর্ত প্রায় গোলাকার হয়। এর গভীরতা ২০ থেকে ৩০ সেমি মতো হয় এবং গর্তের ব্যাস ২০ – ২৫ সেমি হয়। স্ত্রী ও পুরুষ মাছ একত্রে গর্তের মধ্যে মিলিত হয়। এই গর্তের মধ্যে স্ত্রী মাছ ডিম পাড়ে। ডিমগুলো আঠালো হওয়ায় মাটির গায়ে গর্তের মধ্যে থাকা ঘাসের মধ্যে আটকে থাকে। স্ত্রী মাছ গর্ত থেকে বেরিয়ে যায় এবং আশপাশে থাকে। পুরুষ মাছ গর্তের মধ্যে থেকে ডিমভর্তি বাসা পাহারা দেয়। ডিমগুলো গোলাকার, হলুদাভ – বাদামি বর্ণের হয় এবং এদের ব্যাস ১.৩ – ১.৬ মিলিমিটার হয়। ২৫ – ৩২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ১৮ – ২০ ঘণ্টার মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বেরোয় এবং গর্তের মধ্যে ঝাঁক বেঁধে থাকে। ফ্রাই বা বাচ্চাগুলো তিন চার দিন কোনও খাদ্য গ্রহণ করে না। এই সময় তারা নিজেদের কুসুমথলি থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে। এর পর ধীরে ধীরে এরা খাদ্যের খোঁজে গর্তের বাইরে বেরিয়ে আসে। একটা গর্ত থেকে ২০০০ – ১৫০০০ মতো ফ্রাই পাওয়া যেতে পারে।
বর্তমানে প্রণোদিত প্রজননের মাধ্যমে মাগুর মাছের চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। মাগুর মাছের প্রণোদিত প্রজনন ও পোনা মাছের প্রণোদিত প্রজননের মধ্যে মূল পার্থক্য হল পোনা মাছকে হরমোন ইনজেকশন দ্বারা উদ্দীপিত করে স্রোতযুক্ত জলাধারে ছাড়া হয়। কিন্তু মাগুর মাছের ক্ষেত্রে পুরুষ মাছের শুক্রাণু ও স্ত্রী মাছের ডিম্বাণু সংগ্রহ করে কৃত্রিম উপায়ে নিষেক ক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। এই পদ্ধতিকে স্ট্রিপিং বা চাপ পদ্ধতি বলা হয়।
কৃত্রিম প্রজননের জন্য বড় মাগুর মাছ নির্বাচন করা দরকার। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এক বছর বয়সের ১০০ – ১৫০ গ্রামবিশিষ্ট মাছ বাজার থেকে কিংবা কোনও প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে সংগ্রহ করে আগে থেকে নির্মিত কোনও পুকুরে কিংবা সিমেন্টের তৈরি জলাধারে রাখতে হবে। পুকুরের বা সিমেন্টের জলাধারে জলের পরিবেশ ভালো রাখতে হবে এবং উচ্চ প্রোটিন জাতীয় খাদ্য প্রত্যহ দিতে হবে। প্রজননকারী মাছের স্বাস্থ্য যাতে ভালো থাকে তার জন্য সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। মাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে ডিমের পরিমাণ বেশি হয়। মাছকে প্রত্যহ গুঁড়ো শুকনো মাছ ও চালের কুঁড়ো ৯ : ১ অনুপাতে মিশিয়ে মাছের দেহের ওজনের ১০ শতাংশ হারে প্রয়োগ করতে হবে। পুকুরে বা সিমেন্টের চৌবাচ্চায় প্রজননকারী মাছ ছাড়ার ঘনত্ব (স্টকিং ডেনসিটি) প্রতি ৪ বর্গমিটারে এক জোড়া (একটি স্ত্রী ও একটি পুরুষ)।
বাহ্যিক লক্ষণ দেখে স্ত্রী মাছকে সনাক্ত করে আলাদা করতে হয়। এর পর পোনামাছের প্রণোদিত প্রজননের জন্য যে ভাবে পিটুইটারি গ্রন্থির নির্যাস প্রস্তুত করা হয় সেই ভাবেই তৈরি করে স্ত্রী মাছের দেহে এই নির্যাস প্রয়োগ করতে হয়। প্রতি কিলোগ্রাম দৈহিক ওজনের জন্য ৩০ – ৪০ মিলিগ্রাম পিটুইটারি গ্রন্থির নির্যাস বা হরমোন প্রয়োগ করতে হয়। বর্তমানে বাজারে বাণিজ্যিক ভাবে বিভিন্ন ধরনের সিন্থেটিক হরমোন (ওভাপ্রিম, ওভাটাইড, ওভা এফ এইচ) ইত্যাদি পাওয়া যায়। এদের ব্যবহার করা যেতে পারে। মাগুর মাছের দেহে নিম্নলিখিত তিনটি অংশের যে কোনও একটি অংশে এই ইনজেকশন দেওয়া হয়ে থাকে —
স্ত্রী মাছকে হরমোন প্রয়োগের কারণ হল এদের মধ্যে উত্তেজনা আনা এবং ডিম্বাশয়ের মধ্যে আটকে থাকা ডিমগুলোকে ক্রমশ বন্ধনমুক্ত করা যা পরবর্তীতে হাল্কা চাপ দিলে দেহের বাইরে বেরিয়ে আসবে। স্ত্রী মাছকে ইনজেকশন দেওয়ার পর মাছকে জলভর্তি অ্যাকোরিয়াম বা চৌবাচ্চায় বা প্লাস্টিক গামলায় রাখা হয়। ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা পরে এই মাছগুলোকে চাপ বা স্ট্রিপিং-এর জন্য ব্যবহার করা হয়।
শুক্রাশয় থেকে শুক্রাণু সংগ্রহের সঙ্গে সঙ্গে আগে থেকে হরমোন ইনজেকশন দেওয়া স্ত্রী মাছটির মাথায় চেপে ধরে পেটে হাল্কা চাপ দিয়ে নির্গত ডিমগুলোকে একটি পরিষ্কার বড় এনামেল গামলাতে সংগ্রহ করা হয়। এই অবস্থাকে বলে ডিমের ফ্রি ফ্লোয়িং কন্ডিশন। স্ট্রিপিং–এর সময় পেটে যেন খুব জোরে চাপ না পড়ে সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। চাপ জোরে হলে মাছের দেহের অভ্যন্তরের সম্পূর্ণ যন্ত্র নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং জননছিদ্র দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে। স্ত্রী মাছের পেট থেকে যতক্ষণ না সম্পূর্ণ ডিম বেরিয়ে আসে ততক্ষণ হাল্কা চাপ দিয়ে যেতে হবে। হলুদাভ খয়েরি রঙের ডিমগুলো পেট থেকে বেরিয়ে গামলায় জমা হবে। পেটে চাপ দিতে দিতে যখন দেখা যাবে জননঅঙ্গে হাল্কা রক্তের দ্রবণ বেরোতে শুরু করবে তখন বোঝা যাবে সম্পূর্ণ ডিম বেরিয়ে গেছে, এই সময় চাপ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। সাধারণত একটি ১০০ গ্রাম মাগুর মাছ থেকে ৩ – ৪ হাজার ডিম বেরোতে পারে। ডিম নির্গমণ শেষ হলে স্ত্রী মাছটিকে জলের পাত্রে ছেড়ে দিলে পুনরায় সতেজ হয়ে যায়। মাছটিকে ২ – ৩ ঘণ্টা রেখে সম্পূর্ণ উজ্জীবিত হলে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণে ৫ – ১০ মিনিট ডুবিয়ে রেখে পুকুরে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে।
ডিমের নিষিক্তকরণ
ডিম সংগ্রহ শুরু হলেই শুক্রাণু মিশ্রিত স্যালাইন দ্রবণ ড্রপার দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা করে ডিমের উপর ফেলে নরম তুলি দিয়ে ভালো ভাবে মেশাতে হবে যাতে ডিমের নিষিক্তকরণ ভালো হয়। এর পর ডিম সমেত গামলাটিকে ভালো ভাবে নাড়াতে হবে। এর ফলে শুক্রাণুগুলো সমস্ত ডিমের উপর সমান ভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং নিষেকের হার বৃদ্ধি পায়। এর পরে আবার কিছুটা পরিষ্কার জল দিয়ে নিষিক্ত ডিমগুলিকে ভালো ভাবে ধুয়ে নিতে হয়। এর ফলে অতিরিক্ত মিল্ট বা শুক্ররস ধুয়ে যায় এবং ডিমের চটচটে ভাব প্রায় থাকে না।
শুক্রাশয় থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ, স্ত্রী মাছের পেট থেকে ডিম বের করা এবং ডিমের নিষিক্তকরণ এই সমস্ত পদ্ধতিগুলি ২ – ৩ মিনিটের মধ্যে হওয়া দরকার। এর বেশি সময় অতিবাহিত হলে নিষেকের মাত্রা কমতে থাকে।
পুরুষ মাছে কোনও পিটুইটারি গ্রন্থির নির্যাস প্রয়োগ করতে হয় না। কারণ পরিণত মাছের শুক্রাশয় কেটে স্ত্রী মাছের ডিম্বাণুর সঙ্গে নিষিক্তকরণ করা হয়। এর ফলে পুরুষ মাছটি মারা যায়। যে স্ত্রী মাছের ডিমের সঙ্গে নিষিক্ততকরণ হবে সেই স্ত্রী মাছের সমান ওজনের পুরুষ মাছ নির্বাচিত করতে হবে। অনেক সময় পুরুষ মাছের শুক্রাশয় থেকে সংগৃহীত শুক্রাণুর পরিমাণ কম হয় তাই দু’টো পুরুষ মাছ নির্বাচিত করে কোনও চৌবাচ্চা বা প্লাস্টিক গামলায় পৃথক করে রাখতে হবে।
যে হেতু মাগুর মাছে কাঁটা থাকে এবং শুক্রাণু ও ডিম্বাণু সংগ্রহের জন্য নাড়ানাড়ি করতে হয় তাই কাজের সুবিধার জন্য এদেরকে অচেতন করে নিতে হয়। পুরুষ ও স্ত্রী মাছকে লবঙ্গ তেল ও অ্যাবসোলিউট অ্যালকোহলের দ্রবণ মিশ্রিত জলে ছাড়া হয়। লবঙ্গ তেল ও অ্যাবসোলিউট অ্যালকোহলের মিশ্রণের অনুপাত ১ : ৪। ৫০ লিটার জলে ৫ মিলিলিটার দ্রবণ ভালো ভাবে মিশিয়ে দিতে হয়। এই মিশ্রণটি চেতনানাশকের কাজ করে। পাত্রে অবশ্যই বায়ু সঞ্চালনের ব্যবস্থা রাখা উচিত। ২০ – ২৫ মিনিটের মধ্যে মাছ চেতনা হারায়। অচেতন মাছকে প্রয়োজনমতো নাড়াচাড়া করা যায়। আবার কাজ হয়ে গেলে পরিষ্কার জলের স্রোতে রাখলে পুনরায় চেতনা ফিরে আসে। যাঁরা এই কাজে অভিজ্ঞ তাঁরা সরাসরি জ্যান্ত মাছকে নিয়ে কাজ করতে পারেন।
পুরুষ মাছের শুক্রাণু ছেদনের মাধ্যমে ০.৯ শতাংশ নর্মাল স্যালাইন দ্রবণে শুক্রাণু সংগ্রহ পুরুষ মাছটির পেট উপর দিকে করে সার্জিক্যাল ব্লেড দিয়ে পেট চিরে ক্ষুদ্রান্তের নীচে থেকে শুক্রাশয় দু’টি বের করা হয়। তুলো দিয়ে শুক্রাশয় দু’টিকে পরিষ্কার করে নিতে হয় যাতে এর গায়ে রক্ত, মাংসপিণ্ড লেগে না থাকে। এর পর শুক্রাশয় দু’টিকে কাঁচির সাহায্যে ছোট ছোট করে কেটে নিতে হয় এবং সংগৃহীত টুকরোগুলোকে খুব সূক্ষ্ম ফাঁসযুক্ত জালে বা কাপড়ে সংগ্রহ করে কাচের বাটিতে ০.৯ শতাংশ নর্মাল স্যালাইন দ্রবণে রাখতে হবে। ছোট ছোট কাচের বাটিতে প্রায় ২ মিলিলিটার নর্মাল স্যালাইন দ্রবণ রাখা হয়। ঘন ফাঁসের জালের মধ্যে থাকা টুকরো শুক্রাশয়গুলিকে আঙুলের দ্বারা চাপ দিলে যে মিল্ট বা শুক্ররস বেরোবে তা নর্মাল স্যালাইন দ্রবণে সংগৃহীত হবে। দেখা গেছে নর্মাল স্যালাইনের মধ্যে শুক্রাণু ৩ মিনিট পর্যন্ত সক্রিয় অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারে। সুতরাং এই শুক্রাণু ৪ মিনিটের মধ্যে ব্যবহার করে ফেলতে হবে, তা না হলে নিষেকের মাত্রা অত্যাধিক কম বা একেবারেই হবে না।
নিষিক্ত ডিমগুলিকে একটি মশারির জালের ফ্রেমের উপর নরম ব্রাশের সাহায্যে এমন ভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে যেন একটি ডিম আর একটি ডিমের সঙ্গে লেগে না থাকে। এই মশারির জালটি লোহার ফ্রেমের সঙ্গে টান টান করে লাগানো হয়। নেট ফ্রেমটি কোনও সিমেন্টের চৌবাচ্চা বা প্লাস্টিক ট্যাঙ্ক বা ফাইবারের ট্যাঙ্কে এমন ভাবে বসাতে হবে যাতে এই ডিম-সহ ফ্রেমটি জলের উপরিতল থেকে ২ ইঞ্চি নীচে থাকে। এই চৌবাচ্চা বা ট্যাঙ্কের জলের গভীরতা ৪ – ৫ ইঞ্চি হওয়া বাঞ্ছনীয়। এই ট্যাঙ্কে সর্বক্ষণ জল পরিবর্তনের ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন এবং নিষিক্ত ডিমগুলোর উপর দিয়ে সর্বদা একটি হাল্কা জলের স্রোত থাকবে। এর জন্য ট্যাঙ্কের জল প্রবেশের দ্বার বা ইনলেট এবং জল নির্গমনের দ্বার বা আউটলেট থাকবে। আউটলেট বা জল নির্গমনের পথটি ট্যাঙ্কের নীচের দিকে এমন ভাবে করতে হবে যাতে ট্যাঙ্কের দূষিত জল অনায়াসে বেরিয়ে যায়। এ ছাড়া এই ব্যবস্থা থাকার ফলে ডিমগুলি সর্বদা অক্সিজেনযুক্ত জল পাবে এবং অনিষিক্ত ডিমের খোসা পচে জল দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। যাতে মাগুরের পোনা বা হ্যাচলিং ট্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে যেতে না পারে তার জন্য ইনলেট ও আউটলেটের মুখ সূক্ষ্ম নেট দ্বারা আটকানো থাকবে।
নিষিক্ত ডিমগুলিকে দেখতে স্বচ্ছ হবে এবং অনিষিক্ত ডিমগুলি অস্বচ্ছ হবে। এই ভাবে ডিমগুলোর উপর দিয়ে জলপ্রবাহ থাকার ১৮ – ২২ ঘণ্টার মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এদেরকে হ্যাচলিং বলে। হ্যাচলিং-এর পেটের কাছে একটি কুসুমথলি থাকে। প্রায় ৪ দিন পর্যন্ত হ্যাচলিং কুসুমথলি থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। এই সময় এরা বাইরের খাবার খায় না। জলে পিএইচ ৭.০ – ৭.৫ এবং তাপমাত্রা ২৮ – ৩১ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেডের মধ্যে থাকা উচিত। তাপমাত্রার পরিবর্তনের উপর হ্যাচিং-এর সময়কাল বাড়ে বা কমে। হ্যাচিং সম্পূর্ণ হওয়ার পর ট্যাঙ্ক থেকে অনিষিক্ত ডিম, ডিমের খোসা সাইফন করে বের করে দিতে হবে। সর্বক্ষণ জলের প্রবাহ ছাড়াও প্রতি ৩ – ৪ ঘণ্টা অন্তর ট্যাঙ্কের নীচের জল সাইফনের মাধ্যমে বের করে দেওয়া দরকার। যতক্ষণ না হ্যাচলিং দশা স্পন দশায় পৌঁছয় ততক্ষণ পর্যন্ত এই ভাবে ট্যাঙ্কের নীচের জল বের করে দিতে হবে। হ্যাচলিং অবস্থায় এদের দৈর্ঘ্য ৪ – ৫ মিলিমিটার এবং ওজনে ২৮ – ৩.২ মিলিগ্রাম হয়।
মাগুরের চারার বয়স ১৫ দিন হলে এদের ধানীপোনা বা ফ্রাই বলা হয়। এই সময় এরা দৈর্ঘ্যে ১৫ – ২০ মিলিমিটার পর্যন্ত হয় এবং ওজনে প্রায় ৩০ – ৫০ মিলিগ্রাম মতো হয়। এই বয়সের পোনাকে প্রতি বর্গমিটারে ১০০০ – ১২০০টির বেশি না রাখা ভাল। ধানীপোনার বৃদ্ধি খুব দ্রুত হারে হয় এবং এদেরকে তৈরি করা খাবার বা জীবন্ত টিউবিফ্যাক্স খাবার হিসাবে দিতে হয়। পরিপূরক খাবার হিসাবে ঝিনুক, ডিম ও সোয়াবিনের বড়ি ভালো ভাবে সেদ্ধ করে মিক্সার মেশিনে দিয়ে লেই বানানোর পর তার সঙ্গে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স ও ভিটামিন সি মেশানো হয়। দিনে কমপক্ষে ৪ বার খাবার দেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত খাবার যাতে পড়ে না থাকে সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। বাড়তি খাবার সাইফনের মাধ্যমে বের করে দিতে হবে, তা না হলে জল যেমন দূষিত হবে সেই সঙ্গে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ দেখা যাবে। অক্সিজেনের ঘাটতি মেটাতে এবং জল পরিবর্তনের জন্য ফোয়ারার সাহায্যে জল ফেলা দরকার এবং সেই সঙ্গে নিকাশি ব্যবস্থার দ্বারা তা বের করা প্রয়োজন। মাগুর মাছের একটি বৈশিষ্ট্য হল হ্যাচিং–এর ১০ – ১২ দিন পরে এদের অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র সৃষ্টি হয় এবং এরা উলম্ব ভাবে জলের উপর ভেসে উঠে গিয়ে বাতাসে অক্সিজেন নেয়। এই ভাবে জলের নীচ থেকে জলের উপরিতলে যাওয়ার জন্য এদের প্রচুর শক্তি ক্ষয় হয়। জলে পরিমাণমতো অক্সিজেন থাকলেও এদের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যের জন্য অতি অবশ্যই মাঝে মাঝে জলের উপরিতলে উলম্ব ভাবে এসে বাতাস থেকে অক্সিজেন নিতে হবে। এদের এই ধরনের বৈশিষ্ট্যের কথা মাথায় রেখে লালন ট্যাঙ্কের জলের উচ্চতা বেশি রাখা চলবে না। জলের উচ্চতা খুব বেশি হলে এই ছোট ছোট বাচ্চারা জলের উপরিভাগে আসার দূরত্ব অতিক্রম করতে প্রচুর শক্তি নষ্ট করবে বা যদি এরা বায়ু থেকে অক্সিজেন (যেটা এদের বাধ্যতামূলক করতে হবে) এই ভাবে নিতে না পারে তবে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই সব চিন্তাভাবনা করে লালন ট্যাঙ্কে প্রথমে জলের গভীরতা ৪ – ৫ ইঞ্চি হওয়া এবং ফ্রাইগুলোর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জলের গভীরতা ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। তবে জলের গভীরতা যেন কোনও সময় ৮ ইঞ্চির উপর না হয়। এই লালন ট্যাঙ্কে ফ্রাইকে আরও ১২ – ১৫ দিন রাখা হয়। এই সময়ের মধ্যে এরা ৩ – ৪ সেন্টিমিটার হয়ে যায় এবং ওজনে ১ – ১.৫ গ্রাম হয়।
হ্যাচলিং দশা শেষ হওয়ার পর এরা খাবার খেতে শুরু করে। এই অবস্থাকে ডিমপোনা বা স্পন বলে। হ্যাচিং পুল বা ট্যাঙ্ক থেকে এদের সাইফনিং পদ্ধতিতে সংগ্রহ করে লালন ট্যাঙ্কে রাখা হয়। এই প্রক্রিয়া অতি সাবধানে করা দরকার কারণ স্পন অতি ক্ষুদ্র ও অল্প বয়সের হওয়ার জন্য মারা যাওয়া বা আঘাতজনিত সমস্যা দেখা যেতে পারে। লালন ট্যাঙ্ক সিমেন্টের বা ফাইবারের হতে পারে। এদেরও জল প্রবেশ ও নির্গমনের দ্বার থাকবে। দ্বারের মুখে সূক্ষ্ম জাল থাকবে যাতে স্পন বেরিয়ে যেতে না পারে। লালন ট্যাঙ্কে প্রতি বর্গমিটারের ১৫০০ – ২০০০টি স্পন রাখা যায়। ট্যাঙ্কে সর্বক্ষণ জলের নিরবচ্ছিন প্রবাহ থকা দরকার। খাবার দেওয়ার সময় ২ ঘণ্টা জল পরিবর্তন বন্ধ রাখতে হবে যাতে এরা সহজে খাবার খেতে পারে। খাবার হিসাবে ১০ – ১৫ দিন পর্যন্ত জীবন্ত প্রাণীকণাই (জুপ্লাঙ্কটন) ভালো। দিনে ২ – ৩ বার এই খাবার প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। প্রতি দিন কমপেক্ষ ২ বার মরে যাওয়া প্রাণীকণাকে ট্যাঙ্ক থেকে সাইফন করে বের করে দেওয়া দরকার। প্রতি লিটার জলে ২ – ৩ মিলিলিটার প্রাণীকণা স্পনের খাওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। খুব ছোট অবস্থায় ১০ – ১২ দিন পর্যন্ত এদের অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র সৃষ্টি হয় না বলে ট্যাঙ্কে জল পরিবর্তন করা খুবই জরুরি এবং জলে অক্সিজেন দ্রবীভূত করার জন্য অ্যারেশন বা বায়ুপূরণের ব্যবস্থা করা দরকার।
খাদ্য উৎপাদন |
শতাংশ |
---|---|
ঝিনুকের মাংস |
৭০ |
ডিম সিদ্ধ |
২০ |
সোয়াবিনের বড়ি |
১০ |
ভিটামিন বি ও সি |
প্রতি কেজি খাবারের সঙ্গে ৫০০ মিলিগ্রাম |
স্ট্রিপিং পদ্ধতিতে মাগুরের ডিম ৮০ শতাংশ পর্যন্ত নিষিক্ত হতে পারে। হ্যাচলিং থেকে স্পন দশা পর্যন্ত বাঁচার হার ৬৫ – ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত পাওয়া যায়। স্পন থেকে ৬০ শতাংশ মতো ফ্রাই পাওয়া যেতে পারে।
দশা |
দিন |
খাবারের প্রকার |
খাবারের পরিমাণ |
দৈনিক প্রদত্ত খাবার কত বার দেওয়া দরকার |
খাবার দেওয়ার মধ্যবর্তী সময় |
মন্তব্য |
হ্যাচলিং |
১ – ৪ |
— |
— |
— |
— |
কুসুমথলি থেকে খাবার খায় |
ডিমপোনা |
৫ - ২০ |
প্রাণীকণা |
২ -৩ মিলি প্রতি লিটার জলে |
২ – ৩ বার |
৮ – ১২ ঘণ্টা |
— |
ধানীপোনা |
২১ – ৩৫ |
তৈরি খাবার |
চাহিদামতো |
৪ বার |
৬ ঘণ্টা |
— |
জলের গুণগত মানের পরিবর্তনের জন্য নিষিক্ত ডিম থেকে হ্যাচলিং-এ রূপান্তর হওয়ার পূর্বে ভ্রূণের হঠাৎ মৃত্যু।
জলে অক্সিজেনের ঘাটতি হতে দেওয়া চলবে না। প্রতিনিয়ত হ্যাচিং পুলের জল পরিবর্তন করতে হবে।
মাছের চারার সাইজের পার্থক্য হওয়ার জন্য এবং খাবারের পরিমাণ কম হলে বড় চারাপোনাগুলো ছোটদের খেয়ে ফেলে।
বড় ও ছোট মাছ আলাদা করে দিতে হবে ও চাহিদামতো খাবার সরবরাহ করতে হবে।
এই অবস্থায় ধানীপোনাগুলো খাবার খায় না। শরীর খুবই পাতলা ও দুর্বল হয়ে পড়ে।
জলে ১০ – ১৫ পিপিএম ফুরাজলিডন ২ বার করে ৭ দিন ব্যবহার করতে হবে।
শরীরে সাদা বা লাল দাগ দেখা যায়। শরীরে কোনও কোনও অংশে পচন হয়।
চারার মাথা ফুলে যায় এবং অস্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করে।
চারাপোনার পেট অস্বাভাবিক রকম ফুলে যায় এবং পোনার চলাফেরা মন্থর হয়ে যায়।
জলে ১০ – ১৫ পিপিএম ফুরাজলিডন দিয়ে ২ বার করে ৭ দিন প্রয়োগ করতে হবে।
এই ধরনের রোগে ডিমপোনার খুব তাড়াতাড়ি মৃত্যু হয়।
ছোট ডোবা, চৌবাচ্চা বা ট্যাঙ্কে কৃত্রিম উপায়ে প্রাণীকণা উৎপাদন করা সম্ভব। ডোবা বা পুকুরে প্রাণীকণার আধিক্য ঘটানোর জন্য প্রতি মাসে নিয়মমাফিক জৈব ও অজৈব সার ব্যবহার করা প্রয়োজন। ট্যাঙ্ক বা চৌবাচ্চায় প্রাণীকণা উৎপাদনের জন্য প্রথমে এটিকে জলপূর্ণ করা হয়। প্রতি হাজার লিটার জলের জন্য ২৫০ – ৩০০ গ্রাম মুরগির মল (পোলট্রি লিটার) বস্তা বা নেটের মধ্যে দিয়ে ৭ – ১০ দিন জলে ডুবিয়ে রাখলে জলের রং হাল্কা সবুজাভ অর্থাৎ উদ্ভিদকণার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এর পর পুকুর থেকে প্লাঙ্কটন নেটের বা মার্কিন কাপড় দিয়ে প্রাণীকণা সংগ্রহ করে এর মধ্যে ছাড়তে হয়। বিভিন্ন প্রাণীকণার মধ্যে ডাফনিয়া ও ময়না আলাদা ভাবে চাষ করলে ভালো কারণ মাগুর মাছের বাচ্চারা যে পরিমাণ পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার খায় তার মধ্যে ময়না ও ডাফনিয়া অন্যতম। প্রতি হাজার লিটার জলে ২০ লিটার প্রাণীকণা প্রাথমিক ভাবে ছেড়ে দিলে ১৫ – ২০ দিন পরে এরা বংশবিস্তার করতে শুরু করে। প্রতি ১৫ দিন অন্তর মুরগির মল পরিবর্তন করা দরকার। বাষ্পীভবনের জন্য যে পরিমাণ জল কমবে তা প্রতি ৫ দিন অন্তর দেখে নিয়ে ট্যাঙ্কের বা চৌবাচ্চার জলের পরিমাণ ঠিক রাখা দরকার।
সূত্র : মৎস্য বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/27/2019