অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

রঙিন মাছ

রঙিন মাছ

রঙিন মাছ বা শৌখিন মাছ কাকে বলে — যে সমস্ত মাছকে আমরা আমাদের বাড়ি, বাগানবাড়ি, অফিস-কাছারি, চিড়িয়াখানা, দর্শনীয় স্থান অলঙ্কৃত করার জন্য খুব ছোট জলাশয় বা কাচে ঘেরা ছোট জলাশয়ে রাখি তাদেরই রঙিন মাছ বলা হয়। যে কোন মাছকেই আমরা শৌখিন মাছ বলতে পারি যদি তাকে দর্শনীয় জায়গায় অলঙ্কৃত করে সাজিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। কিন্তু বস্তুত রঙিন মাছ বা শৌখিন মাছের কিছু বিশেষত্ব থাকে। যেমন —

  • এরা খুব বড় হয় না। ছোট ছোট জলাশয়ে রাখার মতো গড়নেও ছোট ছোট হয়।
  • সাধারণত শান্ত প্রকৃতির হয়ে থাকে।
  • সাধারণ মাছের থেকে এদের গড়ন একটু আলাদা হয় — বিচিত্র রঙের হয়। লেজ, পাখনা, মাথা ও দেহের গঠনে বৈচিত্র্য থাকে। দৃষ্টিনন্দন হয়। তাদের গতিবিধি দেখে আবাল–বৃদ্ধ–বনিতা পুলকিত হয়।

প্রসঙ্গ অ্যাকোয়ারিয়াম

রঙিন মাছ জিইয়ে রাখার সুব্যবস্থাপন্ন ও সুসজ্জিত ছোট জলাশয়। এই জলাশয়গুলিতে আলো বাতাসের সহজ যাতায়াতের বন্দোবস্ত থাকতে হবে যাতে ওতে রাখা মাছগুলো অক্সিজেনের অভাব অনুভব না করে। দর্শকরা রঙিন মাছের গতিবিধি উপভোগ করতে পারে এমন ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাই চার ধার না হলেও তিন দিক স্বচ্ছ (কাচ, পলিথিন, প্লাস্টিক, ফাইবার গ্লাস ইত্যাদি) পদার্থের নির্মিত দেওয়াল থাকতে হবে। এ ছাড়া মাছ, জল ও ভিতরের সব কিছু ভালো করে পরিদর্শন ও পরিচর্যা করতে পারার ব্যবস্থা রাখতে হবে। মাছদের নিয়মিত খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। জল পরিবর্তন, জলে বাতাস সংমিশ্রণ বা অক্সিজেন সংযোজনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রয়োজনে অতি গরম বা ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচানোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। ভিতরে-বাইরে আলোর বাহার করা যেতে পারে।

অধুনা কাচ বা কাচ জাতীয় স্বচ্ছ জিনিসের তৈরি অ্যাকোয়ারিয়ামই সকলের বেশি পছন্দ এবং বহুল প্রচলিত। এই রকম অ্যাকোয়ারিয়ামে কাচের পাতগুলো দৃঢ় ভাবে আটকানো হয় রবার সিলিকন দিয়ে। এতে সুবিধা হল যে কোনও আকার ও প্রকারের অ্যাকোয়ারিয়াম বানানো যায়। তৈরির পদ্ধতিও খুব সরল এবং স্বল্প খরচে বানানো সম্ভব। এতে অ্যাকোয়ারিয়ামে সূক্ষ্ম ছিদ্রও এড়িয়ে যাওয়া যায়।

প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি

অ্যাকোয়ারিয়াম তৈরির জন্য যে সব বস্তুর দরকার সেগুলি হল —গ্লাস নির্মিত ঢাকা বাক্স, বৈদ্যুতিক আলো ও তার সামগ্রী, বাতাস প্রবেশ করার যন্ত্র (এয়ার পাম্প), ছোট ছোট নুড়ি পাথর, খাবার পাত্র (ফিডিং কাপ), স্বয়ংক্রিয় তাপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র (থারমোস্ট্যাট হিটার), নানা রকম দৃষ্টি নন্দন খেলনা, পিছনে লাগানো সুন্দর সুদৃশ্য, ছবি (সিনারি), পরিষ্কার করার জন্য ব্যবস্থা, মগ, বালতি, জল পরিবর্তনের জন্য পাইপ, বাতাস প্রবেশের জন্য পাইপ, সংযোজক জল, খোলা বন্ধের চাবি, মিথিলিন ব্লু, পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট জাতীয় রাসায়নিক দ্রব্য।

অ্যাকোয়ারিয়াম কোথায় কোথায় রাখা হয় ?

যে হেতু কোনও স্থানকে আরও সুসজ্জিত ও দৃষ্টিনন্দন করার জন্য অ্যাকোয়ারিয়ামকে কাজে লাগানোটাই আসল উদ্দেশ্য, তাই সহজে মানুষের দৃষ্টিগোচর হয় এমন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও আলোকিত জায়গায় এটাকে স্থাপন করতে হবে। মাটি বা মেঝে থেকে অন্তত ১ মিটার উপরে স্থাপন করাই ভালো। যদি খুব বড় এবং মাটি বা সিমেন্টে তৈরি অ্যাকোয়ারিয়াম হয় তবে অবশ্য আলাদা কথা। এগুলো ছাদের উপরে, বাগানে, বসার ঘরে, অফিসে, পার্কে, হোটেলে, অতিথিশালায়, পরিদর্শন স্থানে, শিশুদের আনাগোনা হয় এমন চিকিত্সাস্থলে এদের বেশ মানায়।

অ্যাকোয়ারিয়াম পরিচর্যা

অ্যাকোয়ারিয়ামের পরিচর্যা মানে এর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, মেরামতি, জল পাল্টানো ও তার সংশোধন এবং মাছেদের খাবার, স্বাস্থ্য, চিকিত্সা রোগ প্রতিরোধ ইত্যাদি।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা

যে হেতু এটা উপভোগ্য ও দর্শনীয়, তাই অ্যাকোয়ারিয়ামের পরিচ্ছন্নতা মানে এর বাইরে, ভিতরে ও চার পাশের পরিচ্ছন্নতা বোঝায়। নিয়ম করে অ্যাকোয়ারিয়ামের পারিপার্শ্বিক জায়গা সুন্দর সুসজ্জিত আলোকিত ও পরিষ্কার করা দরকার। ভিতর পরিষ্কার রাখা আরও প্রয়োজনীয়।

অ্যাকোয়ারিয়ামের জলে মাছের অতিরিক্ত খাবার, মাছের মল-মূত্র নানা রকম পরিবর্তিত রাসায়নিক দ্রব্য গুলে থাকে, যেগুলো মাছেদের স্বাস্থ্যের পরিপন্থী। জল অস্বচ্ছ হওয়ার জন্য অ্যাকোয়ারিয়ামের মূল উদ্দেশ্য বিঘ্নিত হয়। তাই মাঝেমধ্যে জল পরিবর্তন অবশ্য করণীয়। সাধারণত ১২ – ১৪ দিন অন্তর জল পাল্টানো প্রয়োজন। জলের নোংরা সাধারণত নীচের দিকে বেশি থাকে। তাই ২০% জল নীচের দিক থেকে সাইফন করে বা অন্য উপায়ে বের করে নেওয়া হয়। এবং পরিষ্কার জল উপর দিয়ে পূরণ করা হয়। মাছ রোগাক্রান্ত না হলে অ্যাকোয়ারিয়ামের সম্পূর্ণ জল এক সঙ্গে পাল্টানোর দরকার হয় না।

অ্যাকোয়ারিয়ামের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি ও মাছের বসবাস আরও সুন্দর করার জন্য আরও যে সব দ্রব্য রাখা হয় সেগুলো হল ---

  1. বালি : অ্যাকোয়ারিয়ামের নীচে সুন্দর পরিষ্কার মোটা বালি দেওয়া হয়। মাছের বসবাসকে একটু প্রাকৃতিক করার জন্য। এ ছাড়া জলের তাপ নিয়ন্ত্রণেও বালির ভূমিকা আছে।
  2. জলজ ক্ষুদ্র ও সুন্দর উদ্ভিদ : এগুলো সৌন্দর্য্য বাড়ানোর পাশাপাশি জলে কিছুটা অক্সিজেনও যোগ করে, যা মাছের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয়। ছোট ছোট মাছ বা মাছের বাচ্চাদের লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করে। ডিম পাড়ার সময় মাছের আশ্রয় হিসাবেও মাছ এগুলো কাজে লাগে। পরিচিত জলজ উদ্ভিদ যেমন, ভ্যালিসনেরিয়া, লুডিজিয়া, ওয়াটার ফার্ণ, হাইড্রোফিলা উল্লেখযোগ্য। বড় অ্যাকোয়ারিয়ামে পদ্ম, শাপলা ইত্যাদি রাখা হয়। মাছেরা অনেক সময় প্রয়োজনে এগুলোতে গা ঘসে তৃপ্তি লাভ করে।
  3. গেড়ি, গুগলি, ঝিনুক : এরা জলে থাকলে জল পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। দেখতেও অনেক সময় ভালো হয়। তবে জীবন্ত গেড়ি গুগলি বেশি না রাখাই ভালো।
  4. নুড়ি : বালির উপরেই সাধারণত অপেক্ষাকৃত বেশ বড় বড় কিছু নুড়ি রাখা হয়। এই নুড়ি অ্যাকোয়ারিয়ামের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং মাছেরা নানা কারণে এর নীচের দিকে আশ্রয় নিয়ে থাকে।

মাছ নির্বাচন

মাছের গুণ

কোন জাতি বা প্রজাতির মাছ অ্যাকোয়ারিয়ামে রাখা হবে তার নির্বাচন নির্ভর করে অ্যাকোয়ারিয়ামের আকৃতি প্রকৃতি ও কোন স্থানে রাখা হয়েছে, দর্শকের চাহিদা, আবহাওয়া, জলবায়ু এবং মাছের প্রজাতির প্রাপ্তিযোগ্যতার উপর।

কতগুলি মাছের জাতি বা প্রজাতি আছে যেগুলো খুবই জনপ্রিয় এবং তারা শুধুই রঙিন মাছ বা শৌখিন মাছ। যেমন, গাপ্পি।

মাছ নির্ণয়

এই সময় দেখতে হয় যেন মাছটি বা মাছগুলো স্বাস্থ্যবান, নীরোগ, ও উত্ফুল্ল হয়। সমস্ত পাখা, লেজ, কানকো সম্পূর্ণ থাকে। কোনও রকম ক্ষত যেন না থাকে বা দুর্বল যেন না হয়। কত মাছ থাকবে

মাছের সংখ্যা বা অ্যাকোয়ারিয়ামের ভিতরের জায়গা নির্ণয়ের জন্য একটা সাধারণ নিয়ম মানা হয়। প্রতি একক লম্বার জন্য তার ২০০ গুণিতকের বর্গ পরিমাপের বর্গ জায়গা। অর্থাৎ কোনও মাছ যদি ১ সেমি দীর্ঘ হয় তবে তার সুষ্ঠু ভাবে থাকার জন্য ন্যূনতম ২০ বর্গ সেমি জলতল থাকতে হবে। মাছের সংখ্যা এবং মাছের পুর্ণ বয়সের দৈর্ঘ্য ইত্যাদি বিচার্য বিষয়। যদি যন্ত্র বা পাম্পের সাহায্যে বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা থাকে তবে এই ক্ষেত্র হবে প্রতি একক দৈর্ঘ্যের ৫ গুণ ক্ষেত্রফল অর্থাৎ ১ সেমি দৈর্ঘ্যের মাছের জন্য ৫ বর্গসেমি জলতল (জলের উপরিতলের ক্ষেত্র) লাগবে। নির্ধারিত মাছের সমস্ত মাছই এক দিনে বা এক বারে রাখা উচিত নয়। অ্যাকোয়ারিয়ামে ৩ – ৪ বারে মাছ প্রয়োগ করা ভালো।

মাছের খাবার ও স্বাস্থ্য রক্ষা

মাছের খাদ্য

মাছকে নিয়মিত খাওয়ানো দরকার। যে হেতু কোনও প্রাকৃতিক খাবার (প্লাঙ্কটন বা জুপ্লাঙ্কটন) অ্যাকোয়ারিয়ামে তৈরির কোনও সুযোগ নেই, তাই মাছকে খাবার সরবরাহ করতে হয়। খাবার দেওয়ার ১০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে মাছেরা খাবার খেয়ে নেয়। খাবার দিনের নির্দিষ্ট সময়ে দেওয়া ভালো। এবং যতটা এরা খেতে পারে ততটাই দেওয়া উচিত। বেশি দিলে জল দূষিত হবে, কম দিলে মাছ অভুক্ত বা অর্ধভুক্ত থাকবে। অ্যাকোয়ারিয়ামে দু’ ধরনের খাবার দেওয়া হয়ে থাকে।

  1. জীবন্ত খাবার
  2. এই খাবার দু’ ধরনের।

    • উদ্ভিদ জাতীয় প্লাঙ্কটন : এগুলো সূক্ষ্ম জলজ উদ্ভিদকণা। জলের খাবার নিয়ে সূর্যালোক ও ক্লোরোফিলের সাহায্যে এগুলো বৃদ্ধি পায়, বংশ বিস্তার করে। পুকুরের জলের উপরের স্তরেই থাকে। এগুলো অ্যাকোয়ারিয়ামে তৈরি করা হয় না। বাইরে তৈরি করা খাবার মাছকে খাওয়ানো হয়। শাকাহারি মাছ এগুলো বেশি পছন্দ করে। যেমন, বিভিন্ন অ্যালগি।
    • জুপ্লাঙ্কটন : এগুলি সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম জলজ প্রাণী। জলেই এদের জন্ম এবং জলের খাবার খেয়ে এদের বৃদ্ধি ও বংশবিস্তার। পুকুরের জল একটা পরিষ্কার সাদা গ্লাসে রেখে ভালো করে দেখলে অনেক সময় এদের নাড়াচাড়া বোঝা যায়। এগুলোও অন্য জলাশয়ে তৈরি করে তৈরি খাবার হিসাবে মাছকে খাওয়ানো হয়। যেমন, ময়না, ডাফনিয়া, কেরেটেল্লা, সাইক্লোপস, বসমিনা, ব্রাকিওনাস ইত্যাদি। এ ছাড়াও বিভিন্ন কীটের ডিম বা শূককীট, ব্লাড ওয়ারমও মাছের খুব পছন্দের খাবার। এ ছাড়া ব্রাইন শ্রিম্প, ইনফুসুরিয়ান্স, ওয়াটার ফ্লি, স্লাজ ওয়ারম, কেঁচো ইত্যাদিও খাওয়ানো হয়।
  3. তৈরি করা বা নকল খাদ্য।
  4. খাবার তৈরি করা হয় ছোট ছোট দানার আকারে। প্রথমে একটা মণ্ড মতো তৈরি করা হয়। এই মণ্ডে চাল ও গমের গুঁড়ো, ছাতু, মাছের গুঁড়ো, চিংড়ির গুঁড়ো, শুকনো রক্ত, মাংসের গুঁড়ো, ঝোলা গুড়, খনিজ পদার্থ, ভিটামিন, ইস্ট পাউডার ইত্যাদি থাকে। এর পর এই মণ্ডকে দানা খাদ্যে পরিণত করা হয়।

স্বাস্থ্য রক্ষা

অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছকে নিয়মিত নিরীক্ষণের মধ্যে রাখতে হবে। এরা ক্ষুদ্র জীব, প্রাকৃতিক পরিবেশের বাইরে ঘেরা টোপের নিয়ন্ত্রিত বদ্ধ জায়গায় এদের বাস, তাই রোগ ও অসুস্থতা খুব সহজ ব্যাপার। তাই সর্বদা নজর রাখতে হয় কোনও রকম অস্বাভাবিক কিছু ঘটছে কি না। মাছেদের চলন, গতি ও গায়ের রঙের পরিবর্তন এবং গায়ে কোনও রকম সাদা বা লাল ছোপ খুব খারাপ লক্ষণ। অনেক সময় রোগের কারণে মাছের পেট ফুলে যায়। আনেক রোগে পাখনা ভেঙে যায়। পাখনা ছড়িয়ে যায়। এই রকম ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে আলাদা জায়গায় (কুয়ারেনটিন ট্যাঙ্ক) রেখে তাদের চিকিত্সা করতে হবে, যাতে অন্য মাছেরা রোগাক্রান্ত না হয়। মৃত মাছ দেখার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকোয়ারিয়াম থেকে বের করে ফেলতে হবে। মাঝেমধ্যে ওষুধ প্রয়োগ করা উচিত (যেমন মেথিলিন ব্লু ২-৪ ফোঁটা প্রতি সাধারণ মাপের অ্যাকোয়ারিয়ামে ।

কয়েকটি রঙিন মাছ

বাচ্চা-দেওয়া মাছ

ব্ল্যাক মলি

পরিবার Poecillidae, বৈজ্ঞানিক নাম Poecilia sp.

এগুলো খুব বড় হয় না। কিন্তু বিভিন্ন আকারের হয়, ৪ থেকে ১২ সেমিমিটার পর্যন্ত। এরা বিভিন্ন ধরনের হয়। ছোট পাখনা, বড় পাখনা, পাখনার বিভিন্ন বাহার। পুচ্ছ- পাখনার বাহার বিচিত্র ধরনের হয়ে থাকে। রং কালো। স্ত্রী মাছের আকৃতি বড়। পুরুষ মাছ স্ত্রী মাছের তুলনায় আকৃতিতে ছোট, অপেক্ষাকৃত সরু। এদের অ্যানাল ফিন পরিবর্তিত হয়ে গনপোডিয়াম তৈরি হয়। এরা প্রায় সব আবহাওয়ায় মানিয়ে নিতে পারে। এদের বসবাসের উপযোগী জলের উষ্ণতা ২২ – ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং পিএইচ ৭–৮। এরা ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন ও জুপ্ল্যাঙ্কটন এবং প্রদত্ত সব রকম খাবারই খেয়ে থাকে। এরা শান্ত স্বভাবের, কিন্তু সব সময়ই সাঁতার কাটতে থাকে। এরা দল বেঁধে থাকে এবং অন্যদের সঙ্গে থাকতেও কোনও আপত্তি করে না।

বংশ বিস্তার

এরা জীবন্ত ছোট ছোট বাচ্চা প্রসব করে। বাচ্চা প্রসব করার পর এরা খুব ক্ষুধার্ত থাকে। নিজেদের এই বাচ্চাও তারা অনেক সময় খেয়ে ফেলে। তাই বাচ্চা পেতে আগ্রহী হলে সব থেকে ভালো হয়, বাচ্চা দেওয়ার আগে সন্তানসম্ভবা স্ত্রী মাছ চিহ্নিত করে (এদের স্ত্রী চরিত্রের সঙ্গে গ্রেভিড দাগ দেখে) আলাদা রাখতে হবে। বাচ্চা হওয়ার পরে বাচ্চাগুলিকে আলাদা করে নিতে হবে নইলে অনেক বাচ্চা খোয়া যাবে।

গাপ্পি

পরিবার Poecillidae, বৈজ্ঞানিক নাম Poecilia reticulate

এরা ভেনেজুয়ালা, ব্রাজিল ইত্যাদি দেশের মাছ। এরা নানা জাতের হয়, বিচিত্র রঙেরও হয়। এদের আকতি-প্রকৃতিও নানা রকম। এদের চোখগুলো বড় বড়, ঠোঁট একটু উপরের দিকে ওঠা। পুরুষদের পাখাগুলো মেয়েদের পাখার চেয়ে বড়। পুরুষের রঙের বাহারও মেয়েদের চেয়ে বেশি। মেয়েরা আকারে বড় (২ – ৬ সেমি ) হয় ছেলেদের (১.৫ – ৩ সেমি ) তুলনায়। এরা সব রকম আবহাওয়ায় বাঁচে। জলাশয়ের উপরের স্তরেই মূলত ঘোরাফেরা করে। ২০ ডিগ্রি থেকে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাই এদের বেশি পছন্দ। এরা সব রকম খাবারই খেয়ে থাকে। এদের চলন, সঙ্গতবদ্ধতা এবং বংশ বৃদ্ধির প্রক্রিয়া প্রায় ব্ল্যাক মলির মতোই।

সোর্ডটেল

পরিবার Poecillidae , বৈজ্ঞানিক নাম Xiphophorus helleri

উত্তর আমেরিকার মেক্সিকো, মধ্য আমেরিকার গুয়াতেমালা এদের স্বদেশ বলে মনে করা হয়। এরা গাপ্পির মতোই, তবে গাপ্পির থেকে হৃষ্টপুষ্ট। পুরুষ মাছ সাধারণত ২ – ৮ সেমি দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে। মেয়েরা কিঞ্চিৎ বড় হয় (১২ সেমি পর্যন্ত)। বিভিন্ন রঙের হয়। তবে সবুজ বা লাল বা তাদের মিশ্রণই বেশি। এই জাতের পুরুষের লেজের একটি দিক বেড়ে বেশ লম্বা হয়ে একটা তলোয়ারের মতো হয়। জলবায়ুর প্রায় সব রকম অবস্থাতেই বেঁচে থাকে। বেশি পছন্দের উত্তাপ ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরা সর্বভুক, সবই খায়। এদের চলাফেরা, বসবাস ব্ল্যাক মলির মতোই। তবে সঙ্গবদ্ধ ভাবে থাকাটা একটু বেশি পছন্দ করে।

প্লেটি

পরিবার Poecillidae , বৈজ্ঞানিক নাম Xiphophorus variatus

উত্তর আমেরিকার মেক্সিকো এদের নিজের দেশ বলে ধরা হয়। এরা দেখতে নানা রকম হয়। এদের স্বভাবচরিত্র অনেকটাই ব্ল্যাক মলির মতো। এরা রঙবেরঙের হলেও হলুদ রঙেরই বেশি হয়। পুরুষের গণপোডিয়াম স্পষ্ট। পুরুষদের দৈর্ঘ্য ২.৫ – ৫.৫ সেমি এবং মেয়েদের দৈর্ঘ্য ৭.০ সেমি অবধি দেখা যায়। এদের বাঁচার উপযোগী আবহাওয়াও ব্ল্যাক মলির মতোই। সব থেকে পছন্দ হল ২০ – ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় থাকা। বংশ বিস্তারও ব্ল্যাক মলির মতো।

ডিম-পাড়া মাছ

অ্যাঞ্জেল ফিশ

পরিবার Cichlidae, বৈজ্ঞানিক নাম Pterophyllum scalare

দক্ষিণ আমেরিকাকে এদের আদি বাসস্থান ভাবা হয়। এরা লম্বায় ব্ল্যাক মলি, গাপ্পির চেয়ে বেশ বড়। দৈর্ঘ্যে ১৫ – ২৬ সেমি। চওড়া ১১ – ১৫ সেমি। পায়ুর কাছের পাখা বড় এবং খাড়া। গায়ে সাদা ও কালো রঙের ছোপ। পুরুষের ব্রিডিং টিউব বড় এবং মেয়েদের ভোঁতা মতো হয়। বসবাসের উপযোগী জলের উত্তাপ কমপক্ষে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পছন্দের উত্তাপ ২৫ – ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এরা জীবন্ত খাবার বেশি পছন্দ করে, কিন্তু তৈরি খাবারও খায়। এরা শান্তিপ্রিয়, অন্য মাছের সঙ্গে এদের থাকতে কোনও অসুবিধা হয় না। তবে খুব ছোট মাছ বা মাছের বাচ্চা থাকলে খেয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। এদের স্ত্রী মাছেরা ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার পর মাছগুলোকে আলাদা করে রাখাই ভালো। ডিম থেকে বাচ্চা হওয়ার জন্য একটু অম্ল (পিইএচ ৬) মিঠে জল উত্কৃষ্ট। জলের গভীরতা ৪ – ৬ সেমি হওয়া দরকার। খাবার হিসাবে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম প্রাণীকণা বা জুপ্ল্যাঙ্কটন এদের পক্ষে বেশি উপযোগী।

টেক্সাস সিক্লাইড

পরিবার Cichlidae, বৈজ্ঞানিক নাম Cichlosoma cyanoguttatum

এদের জন্মস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, উত্তর আমেরিকার মেক্সিকো বলে ধরা হয়। এদের শরীর তেলাপিয়া মাছের মতো চ্যাপটা, অসংখ্য সাদা নীল ছোপ এদের শরীরের পাশ বরাবর। পূর্ণ বয়স্ক মাছের মাথায়, পাখায় ও শরীরে নীল-সবুজ ছোপ বা ঢেউখেলানো দাগ দেখা যায়। এরা দৈর্ঘ্যে প্রায় ১০ – ৩০ সেমি হয়। মেয়েদের শরীরের দৈর্ঘ্য অপেক্ষাকৃত কম। স্ত্রী মাছের পিঠের ও পায়ুর নিকট পাখা একটু গোলাকার হয়ে থাকে। এরা প্রায় সব রকম পরিবেশে বাঁচে। তবে জলের পিএইচ ৭ – ৭.৫ এবং ২০ – ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে তাপমাত্রায় ভালো থাকে। এরা নীচে পাথরওয়ালা জলাশয় বেশি পছন্দ করে থাকে। এরা জলাশয়ের নীচের দিকেই ঘুরে বেড়ায়। এরা সর্বভুক, প্রায় সব রকমের খাবারই খায়। এরা ডিম পাড়ে। অধিকাংশ সময়েই স্ত্রী-পুরুষ জোড়ায় থাকে। ডিম পাড়ার আগে নুড়ি পাথরের নীচে লুকিয়ে ওরা ডিম ছাড়ে। মা-বাবা উভয়ে মিলে ডিম ও সদ্যোজাত বাচ্চাদের পাহারা দেয়। এদের ডিম সহজে পাওয়া যায়, যদি এদের জোড়কে একটা বড় অ্যাকোয়ারিয়ামে লুকিয়ে রেখে ডিম পাড়ার ব্যবস্থা করা যায়। এদের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার জন্য ১৫ – ২০ সেমি জলের গভীরতা চাই।

ফায়ার মাউথ সিক্লাইড

পরিবার Cichlidae , বৈজ্ঞানিক নাম Thorichthys meeki

এদের উত্পত্তি স্থল মধ্য আমেরিকার গুয়াতেমালা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বলে বিশ্বাস। এদের আকৃতি প্রায় সিক্লাইডের মতো, কিন্তু এদের মাথা খুব বড়, মুখের উপরের ঠোঁট অনেকটা উপরের দিকে বাঁকা। এদের গায়ের রং নীলচে ধূসর বা বাদামি। গায়ের চামড়ার রঙ বেগুনে। পুরুষের গলা ও মুখের নীচের দিকটা ইটের মতো লাল রঙের হয়ে থাকে। একটা কালো দাগ বা রেখা মাছের কানকোর কাছ থেকে লেজ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। মাঝেমাঝে এটা উপর-নীচের ছোপ ছোপ দাগের বিভাজকের মতো দেখায়। এরা অন্য মাছের সঙ্গে থাকতে পারে, তাতে কারওরই অসুবিধা হয় না।

ফাইটিং ফিশ

পরিবার Anabantidae, বৈজ্ঞানিক নাম betta splendens

এশিয়া মহাদেশের মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এদের স্বদেশ বলে মনে করা হয়। লম্বা, দুই পার্শ্বদেশ চ্যাপটা, পায়ুর পাখনা বেশ প্রশস্ত। পিঠের পাখনা বেশ লম্বা ও উঁচু। লেজের পাখনা গোলাকৃতি। এরা নানা রঙের হয়। পুরুষ মাছেরা বেশি রঙবাহারি হয়। পিঠের ও লেজের পাখনা পুরুষদের বড় হয়। এরা দৈর্ঘ্যে ৬ সেমি মতো হয়। ২৫ – ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস উত্তাপে সাধারণ জল এদের বসবাসের পক্ষে উপযোগী।

জলাশয়ের নীচের দিকে শ্যাওলার মধ্যে থাকতে এরা বেশি পছন্দ করে। এরা মুখ্যত জুপ্ল্যাঙ্কটনই খায়। তৈরি খাবারেও এদের অনীহা নেই। এদের একটা পুরুষ অন্য পুরুষ মাছের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন। যুদ্ধং দেহি ভাবে থাকে। তাই দু’টি বা তার বেশি পুরুষ একই অ্যাকোয়ারিয়ামে না রাখাই উচিত। স্ত্রী মাছেরা শান্ত, তারা অন্য জাতীয় বা সমগোত্রীয় মাছের প্রতি অশান্ত ভাবাপন্ন হয় না।

বংশ বিস্তার

এদের ডিম থেকে জন্ম এবং এদের পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী মাছেরা ডিম পাড়ে। এদের স্ত্রীদের ডিম পাড়ার সময় হলে পুরুষ মাছ ভেসে থাকা ছোট ছোট উদ্ভিদের নীচে গোলাকার বুদবুদের মতো তৈরি করে। তার পর অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে পুরুষ ও স্ত্রী মাছের মিলন ঘটে। পুরুষ মাছ এই সময় স্ত্রী মাছকে জড়িয়ে ধরে। তখন স্ত্রী মাছ ডিম পাড়তে থাকে। এক এক বারে ৬ – ২০টি ডিম পাড়ে। পুরুষ মাছ এই ডিমগুলি মুখের ভিতরে নিয়ে ওই বুদবুদাকার গোলে সংরক্ষণ করে। জলের গভীরতা ১০ – ১৫ সেমি উপযোগী। এই প্রক্রিয়া কয়েক বার চলতে থাকে। এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পর স্ত্রী মাছকে আলাদা করে নেওয়া হয়। পুরুষরা ওই ডিম এবং পরে সদ্যোজাত ছোট বাচ্চাদের পাহারা দেয়। সংরক্ষণ করে। পরে তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে পুরুষ মাছের নিষ্কৃতি। তখন পুরুষকে আলাদা করে নেওয়া হয়।

ব্লু গৌরামি

পরিবার Belontiidae , বৈজ্ঞানিক নাম Trichogaster trichopterus

মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ ভিয়েতনাম, বৃহত্তর সুন্দরবন এই জাতীয় মাছের বসবাস বলে বিশ্বাস। এরা লম্বাকৃতির, সরু, চ্যাপটা ধরনের, সুন্দর দখতে। পিঠের পাখনা ছোট, বৈচিত্রময়, রঙ কালচে নীল, দু’ দিকে রুপোলি আভা। পেট রুপোলি, তাতে দু’টো গোল গোল গাঢ় ছোপ থাকে। অনেক সময় এই রঙ ছোট ছোট টুকরো হয়ে ছড়িয়েও থাকতে পারে। দু’ দিকে অস্পষ্ট রেখাও অনেক সময় দেখা যায়।

এরা দৈর্ঘ্যে প্রায় ১৫ সেমি হয়ে থাকে। পুরুষেরা বেশি বিচিত্র রঙের হয়ে থাকে। পুরুষ মাছের পিঠে ও পায়ুর পাখনা বেশ সূচলো হয়ে থাকে, কিন্তু এগুলো স্ত্রী মাছের ক্ষেত্রে গোলাকৃতি। এরা প্রায় সাধারণ সব অবস্থাতেই বসবাস করতে পারে। বেশি পছন্দের উত্তাপ ২০ – ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদের জন্য অ্যাকোয়ারিয়ামে সাঁতার কাটার বেশি জায়গা থাকলে ভালো এবং জলজ ক্ষুদ্র উদ্ভিদ থাকলে বেশি ভালো। এরা সর্বভুক। জলজ উদ্ভিদকণা ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীবন্ত প্রাণী (ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন এবং জুপ্ল্যাঙ্কটন) এবং তৈরি খাবার এরা খায়। এরা শান্তিপ্রিয়, অন্য মাছেদের সঙ্গে স্বচ্ছন্দেই থাকতে পারে।

বংশ বিস্তার

এরাও ফাইটিং ফিশের মতোই জলে গোল গোল বুদবুদ তৈরি করে তার মধ্যে ডিম সংরক্ষণ করে। পুরুষ মাছ পাহারা দেয়। বাচ্চা স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে তারা নিশ্চিত হয়।

পার্ল গৌরামি

পরিবার Belontiidae, বৈজ্ঞানিক নাম Trichogaster leeri

মালেয়শিয়া, থাইল্যান্ড, সুমাত্রা অঞ্চলে এই জাতীয় মাছের জন্মস্থান। এদের শরীরের আকৃতি অনেকটায় ব্লু গৌরামীর মতো। গায়ের রং বাদামি, সঙ্গে অসংখ্য ছোট বড় সাদা মুক্তোর মতো ছোপ থাকে। পুরুষদের গলা ও বুকের দিকটা উজ্জ্বল কমলা বা লাল রঙের হয়। পুরুষের পিঠের ও পায়ুর পাখা সূচলো হয় এবং হঠাৎ করে এর একটা অংশ লম্বা হয়ে থাকে। এদের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ সেমি হয়ে থাকে।

খাদ্যাভ্যাস, স্বভাব চরিত্র, বংশ বিস্তার কম বেশি ব্লু গৌরামীর মতোই।

গোল্ড ফিশ

পরিবার Cyprinidae , বৈজ্ঞানিক নাম Carassius Auratus

এদের জন্মস্থান হিসাবে পূর্ব এশিয়া, সাইবেরিয়া, চিন দেশকে চিহ্নিত করা হয়। এরা সাধারণ কার্পের মতোই প্রায় দেখতে । পেট বেশ মোটা। নানা রঙের ও ঢঙের হয়। প্রায় ৪৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়। এরা জলজ উদ্ভিদসমেত স্থির জল পছন্দ করে। এরা অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা। ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস জলে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করে। জলের বিভিন্ন পিইএচ মাত্রা এদের জীবনধারণে খুব একটা অসুবিধা ঘটায় না। এরা সর্বভুক। জলজ ক্ষুদ্র উদ্ভিদ ও প্রাণী এবং তৈরি খাবার এরা খায়। এরা শান্ত এবং উচ্ছৃঙ্খল নয়। অন্য মাছেদের সঙ্গে বসবাসে কোনও ঝামেলা নেই।

বংশ বিস্তার

এরা ডিম থেকে জন্মায়। জলের নিচে জলজ উদ্ভিদের মধ্যে এদের মিলন ও ডিম পাড়ার কাজ সম্পন্ন হয়। জলের উত্তাপের অল্প উত্থান-পতনেই এরা উত্তেজিত হয়। ডিম দেওয়ার ও তার থেকে বাচ্চা হওয়ার কাজ ৭ – ১৫ দিনে সমাপ্ত হয়।

রেড ফিন সার্ক

পরিবার Cyprinidae , বৈজ্ঞানিক নাম Labeo erythrurus

থাইল্যান্ড এদের স্বদেশ বলে মনে করা হয়। এদের লম্বাকৃতির টর্পেডো-জলজাহাজের মতো শরীর। সোজা পেট। পিঠের দিকটা অনেকটা ত্রিকোণাকৃতি। মুখ চুষে ও চিবিয়ে খাওয়ার উপযুক্ত। মুখের সামনে দু’ জোড়া শুঁড়ের মতো থাকে। পিঠের দিকের রঙ ধূসর, নীলচে, কালো হয়ে থাকে। নীচের দিকে রঙ একেবারে হালকা। সমস্ত পাখনা লাল রঙের। এদের দৈর্ঘ্য ১২ সেমি মতো হয়ে থাকে। মেয়েদের পেট একটু ঝোলা ও ফোলা। ক্ষুদ্র প্রাণী-খাবারই এদের বেশি পছন্দের, উদ্ভিদ খাদ্য এবং তৈরি খাবারও ওরা ভালোই খায়। এদের বাচ্চারা এক সঙ্গে দল বেঁধে থাকতে বেশি পছন্দ করে। অন্য মাছের সঙ্গে এই জাতীয় মাছেদের বসবাসে কোনও সমস্যা হয় না। এরা জলের নীচের দিকে থাকতে বেশি চায়, উপরেও ঘোরাফেরা করে।

বংশ বিস্তার

এদের প্রাকৃতিক উপায়ে প্রজনন যেমন সম্ভব তেমনই সাধারণ বড় মাছের মতো প্রণোদিত প্রজননও করানো যায়।

এই রকম নানা জাতি ও প্রজাতির মাছ আছে যেগুলো অ্যাকোয়ারিয়ামকে অলঙ্কৃত করে। এ ছাড়া জলাশয়ের আকার, আকৃতি, প্রকৃতি, জলবায়ু, দর্শকের পছন্দের ইত্যাদিকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা সাধারণ মাছকেও অ্যাকোয়ারিয়ামে বদ্ধ করে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারি।

বংশ বিস্তার

ডিম-পাড়া রঙিন মাছ

ডিম-পাড়া রঙিন মাছ। এরা আবার দু’ প্রকারের হয়।

  1. জন্মের পরে যারা মা বাবার তত্ত্বাবধানে থাকে : সিচলিডি, অ্যানাবেনটাইডি বা বিলন্টাইডি ফ্যামিলির মাছরা এই শ্রেণির। এদের মা-বাবারা ডিম ও ডিমের পরবর্তী কয়েক ঘণ্টা বয়সের বাচ্চাদের সুরক্ষিত অবস্থায় রাখার চেষ্টা করে। এদের আবার ডিম পাড়ার ধরনের উপর নির্ভর করে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।
    • ডিম সংগ্রহী (এগ ডিপোসিটার বা এক এঙ্কোরার ): যেমন অ্যাঞ্জেল, ডিসকাস ইত্যাদি জাতের মাছ। এরা ডিম পাড়ে এবং জেলির মতো আঠালো পদার্থের মধ্যে থাকে, যাতে ডিমগুলি ছড়িয়ে না পড়ে, পাহারা দিতে সুবিধা হয় এবং শত্রুরা খেতে না পারে। জলের নীচের দিকে এরা সাধারণত ডিম পেড়ে থাকে।
    • ডিম লুকোনো জাতীয় মাছ (এগ হাইডার): এই জাতীয় মাছেরা কোনও আড়াল বা লুকোনোর মতো জায়গায় জলের নীচের দিকে ডিম পেড়ে থাকে। এবং পাহারার ব্যবস্থা করে। যেমন রেমেবেজি জাতীয় মাছ।
    • জাল বাসা তৈরি কারক (নেস্ট বিল্ডার) : যেমন ব্লু গোরামি। এরা একটা বড় বুদবুদ বা ব্লাডারের মতো তৈরি করে। ডিমগুলো এর ভিতরে থাকে এবং ব্লাডারটি জলের উপর দিকে ভেসে থাকে। পাতার নীচেও অনেক সময় এগুলো থাকে।
    • জল ছেটানো ডিম (এগ স্প্ল্যাশার) : এই জাতীয় মাছে জলের কিনারায় কোনও গাছের ঝুলন্ত পাতায় ডিম পাড়ে। মাঝেমধ্যে জলের ঝাপটা দিয়ে ডিমগুলো ভিজিয়ে রাখে। পাথরের নীচের দিকেও এরা ডিম পেড়ে থাকে। এবং ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার আগে অবধি জল ছিটোতে থাকে। যেমন, টেট্রা জাতীয় মাছ।
  2. পিতামাতার সহায়তা ছাড়া যারা বড় হয় : এই জাতীয় মাছের ডিম পেড়েই দায়িত্ব শেষ। ডিম বা বাচ্চাদের তাঁদের ছত্রছায়ায় রাখে না। এই সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ডিম পাড়ে। মেয়েরা ভাসমান অবস্থায় ডিম ছাড়তে ছাড়তে যায় আর পুরুষের বীর্জ ওই ডিমগুলিকে নিষিক্ত করে পিছে পিছে। এই ডিম আঠালো হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। যেমন, লাল পাখা শার্ক (রেড ফিন শার্ক), নিওন টেট্রা, গোল্ড ফিশ ইত্যাদি। এদের মধ্যে আবার কিছু কিছু মাছের ডিম জলের কিনারায় গাছের ডগায় বা পাতায় ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। যেমন, ব্লু পানচ্যাক্স। অনেকে আবার তাদের ডিম মাটির নীচে লুকিয়ে রাখে। যেমন, সাইনোলিবিয়াস।

বাচ্চা-দেওয়া রঙিন মাছ

এই জাতীয় মাছ ডিম পাড়ে না, এরা সরাসরি বাচ্চা দেয়। এদের স্ত্রী এবং পুরুষ মাছদের এ ক্ষেত্রে চেনা অপেক্ষাকৃত সহজ। পুরুষদের পেটে সামনে সূচলো পাখা হয়। একে গনপোডিয়াম বলে। আর ওই পাখা স্ত্রী মাছের ক্ষেত্রে গোলাকার হয়। স্ত্রী মাছের পেট বেশ ফোলা থাকে। কালো কালো দাগ দেখা যায় (গেভিড স্পট)। ডিম-পাড়া জাতের ডিম হয় অনেক বেশি, কিন্তু বাচ্চা-পাড়া মাছের বাচ্চা হয় অপেক্ষাকৃত অনেক কম। এদের জন্মের সময় বাচ্চাগুলো বেশ বড় থাকে। এরা নিজেদের আত্মরক্ষায় বেশ পারদর্শী। সাধারণত এদের সঙ্গম বা বাচ্চা দেওয়ার নির্দিষ্ট কোনও ঋতু নেই। তবে দুরূহ কোনও আবহাওয়ায় এরা বাচ্চা দেওয়া বা সঙ্গম এড়িয়ে চলে। বাচ্চা থেকে পূর্ণাঙ্গ হতে বিভিন্ন মাছের ভিন্ন সময় লাগে। যেমন, গাপ্পির ও প্ল্যাটির জন্মের পর পূর্ণাঙ্গ হতে সময় লাগে ৬ – ৮ সপ্তাহ, সেখানে মলি নেয় ১২ – ১৫ সপ্তাহ সময়। পুরুষের গনপোডিয়ামে থাকে শুক্র থলি। প্রজননকালে এই থলি স্ত্রী মাছের শরীরে ঢুকিয়ে দেয়। একবার এই থলি দেহে প্রবেশ করার পর স্ত্রী মাছ কয়েক বার বাচ্চা দিয়ে থাকে। এরা শুক্র শরীরে অনেক দিন ধরে রাখতে পারে।

প্রজননের জন্য স্ত্রী ও পুরুষ মাছকে প্রথমে চিহ্নিত করতে হবে। কিছু দিন স্ত্রী ও পুরুষকে আলাদা জলাশয়ে রাখার পর প্রতি ২টি স্ত্রী মাছের জন্য ১টি হারে পুরুষ আঁতুড়-পুকুরে ছাড়তে হবে। সময়মতো খেলতে খেলতে পুরুষ মাছ তার গনপোডিয়াম স্ত্রী মাছের শরীরে প্রবেশ করিয়ে শুক্র প্রবেশ করিয়ে দেবে।

স্ত্রী মাছের শরীরের মধ্যেই অন্ত্যজ

এই শ্রেণির মাছের ডিম নিষিক্ত হয়ে ক্রমে বাচ্চায় পরিণত হবে। স্ত্রী মাছ সময়মতো সেগুলো বাচ্চা হিসাবে জলে ছাড়তে থাকবে। অন্য দিকে, অন্ত্যজ শ্রেণির মাছের ডিম নিষিক্ত ও ডিম ফুটে বাচ্চা হওয়া শরীরের বাইরে জলে হয়। এ ক্ষেত্রে স্ত্রী মাছ উত্তেজিত হয়ে ডিম ছাড়তে ছাড়তে এগিয়ে যায় আর পুরুষ পিছনে শুক্র দিয়ে সেগুলি নিষিক্ত করে। পরে সেগুলি থেকে ডিম ফুটে বাচ্চা হয়।

সুত্রঃ পোর্টাল কনটেন্ট টিম

সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/15/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate