অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

জিওল মাছের চাষ

মাছ চাষ বলতে আমরা সাধারণত রুই, কাতলা, মৃগেলের কথা ভাবি। সংগঠিত ভাবে নিয়ম করে জিওল মাছের চাষ খুব বেশি চাষি করে না। সাধারণত নদী, নালা, খাল, বিল, ডোবাতেই এই সব মাছ পাওয়া যায়। অথবা এই সব জলাশয় থেকে কোনও কারণে ভেসে আসা মাছই পুকুরে আশ্রয় নেয়, বৃ্দ্ধি পায়, বংশ বৃদ্ধি করে থাকে। এখন মাছের নিয়ন্ত্রিত প্রজননের যুগে কেনা মাছের পোনার সাথেও মিশে আসার সম্ভাবনা প্রায় থাকে না। অথচ মানুষের কাছে জিওল মাছের চাহিদা প্রায়শই অনেক বেশি হয়ে থাকে। চাষিরা এই মাছ চাষ করে বাজারদরও অনেক বেশি পায়। এখন নিয়ম করে একক, মিশ্র বা সংহত চাষের মাধ্যমে এদের ফলন বাড়িয়ে মানুষের চাহিদা মেটানোর সঙ্গে সঙ্গে চাষির উপার্জনের রাস্তাও তৈরি হতে পারে।

মাগুর,শিঙি, কৈ, শাল, শোল, ল্যাঠা ইত্যাদি জিওল মাছ নামে পরিচিত। জিওল মাছ পুষ্টিকর মাছ। এ মাছের চাহিদা এবং দাম বেশি। হাজা, মজা বিলে জিওল মাছ নিজের থেকে জন্মায় এবং বড় হয়। এই সব মাছের অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র আছে, বাতাস থেকে শ্বাস নিতে পারে। জলে কম অক্সিজেনে এবং বেশি কার্বন ডাই অক্সাইডে বাঁচতে পারে। বিশেষ করে যে সব পুকুর কোনও কাজে আসে না সেই সমস্ত পুকুরে জিওল মাছ চাষ করে উত্পাদন বাড়ানো যেতে পারে।

নার্সারি কিংবা আঁতুড়-পুকুর বর্ষাকালের পর শীতকালে প্রায়ই খালি পড়ে থাকে। ওই সমস্ত পুকুরে জিওল মাছ চাষ করা যায়। ময়লা জলের পুকুরে জিওল মাছ চাষ করা যায়। মাছ তাড়াতাড়ি বাড়ে। যে সকল মিশ্র মত্স্য চাষ করা হয়, সেখানে সাইপ্রিনাস কার্পের পরিবর্তে মাগুর, শিঙি মাছ চাষ করা হয়।

পুকুর নির্বাচন

ছোট বড় সব পুকুরেই জিওল মাছ চাষ করা যায়। গরমের সময় ১.৫ হতে ২ ফুট জল থাকলে ভালো হয়। পুকুরের উপরি ভাগের জলজ উদ্ভিদ পরিষ্কার করে দেওয়া ভালো। মহুয়া খোল আবশ্যিক নয়।

মাগুর শিঙি চারাপোনা ছাড়ার সংখ্যা

প্রতি হেক্টরে ৫০,০০০ মাগুর যায় প্রতিটি ওজন ৮ গ্রাম থেকে ১০ গ্রাম এবং সাইজ ৮ সেমি হতে ১২ সেমি। শিঙি মাছের চারা ৭০,০০০ হতে ১,০০,০০০/হেক্টর যার প্রতিটির ওজন ৬ গ্রাম হতে ৮ গ্রাম এবং সাইজ ৭ সেমি হতে ১০ সেমি।

খাবার পরিবেশন

২ ভাগ ফিশমিল বা শুকনা মাছের গুঁড়ো এবং ১ ভাগ ধানের কুড়ো মিশিয়ে দিনে ২ বার খাবার দিতে হয়। পুকুরে যত চারাপোনা ছাড়া হয় তার ওজনের শতকরা ৪ ভাগ হতে ৫ ভাগ খাবার দিতে হয়। মাছ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খাবার বাড়াতে হয়। মাগুর মাছ গোবর ভালো খায়। পুকুরের কোণায় ৭০০ কেজি হতে ৮০০ কেজি গোবর/হেক্টর মাসে ১০–১৫ দিন দিতে হয়। টুকরা কেঁচো, গেড়ির মাংস জিওল মাছের খাদ্য। সরষে, বাদাম খোল, নষ্ট হওয়া চাল, গমের গুঁড়ো খাবার হিসাবে দেওয়া যেতে পারে।

জিওল মাছ চাষ কত দিন করা হয়

জিওল মাছ চাষ করা হয় ৫ হতে ৬ মাস। শেষের মাসে খাবার বাড়ানোর দরকার নেই। মাছের বৃদ্ধি প্রতি দিন ১ গ্রাম। গরমে মাছের বৃদ্ধি দ্রুত হয়। পাঁচ মাসে মাগুর মাছ প্রতিটি ১৫ গ্রাম হইতে ২০০ গ্রাম হয়। মাগুর মাছ চাষে ক্ষতি কম হয়। শতকরা ৮০ ভাগ মাছ পাওয়া যায়। কৈ ও শিঙি মাছ চাষের পদ্ধতি মাগুরের মতো

কৈ চারা মাছ ছাড়া হয় ১০০,০০০ হতে ১,২৫,০০০/হেক্টর। প্রতিটি চারা কৈ মাছের ওজন ৪ গ্রাম হতে ৫ গ্রাম। খাবার মাছের ওজনের শতকরা ৪ ভাগ হতে ৫ ভাগ। কৈ মাছ চাষের সময় ৭ – ৮ মাস। কৈ মাছ বৃষ্টির সময় উপরে উঠে আসে – এই মাছ বর্ষার আগে পুকুর থেকে ধরে নিলে ভালো হয়।

শিঙি মাছের খাবার মাছের ওজনের শতকরা ২ ভাগ হতে ৩ ভাগ। মাগুর মাছের খাবার অনুযায়ী শিঙি ও কৈ মাছের খাবার দিতে হয়।

মাছ ধরা

খ্যাপলা জাল, টানা জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। সব মাছ তুলতে হলে পুকুরের জল পাম্প দিয়ে শুকনা করে মাছ ধরা যায়। ছোট পুকুর হলে মাছ ধরার সমস্যা নেই। জিওল মাছ চাষ লাভজনক। খরচ কম,আয় বেশি।

বাঁশের খাচায় জিওল মাছের চাষ

২ মি বাই ১ মি বাই ৭৫ সেমি আয়তনের বাঁশের খাঁচা তৈরি করা হয়। উপর বাদ দিয়ে খাঁচার চার দিক ঢাকা থাকে। খাঁচাগুলি পুকুরের জলে এ রকম ভাবে বসানো হয় যাতে খাঁচার অর্ধেক অংশ জলে থাকে। ওই ধরনের খাঁচায় ২০০ থেকে ৩০০ মাগুর বা শিঙি বা কৈ মাছ ছাড়া হয়। পুকুরের মতো এখানেও খাবার দেওয়া হয়। ৫ – ৬ মাস পরে খাঁচা উঠিয়ে নেওয়া হয়। এই চাষে শতকরা ৯০ ভাগ মাছ বেঁচে থাকে। মাছের বৃদ্ধিও কম হয় না। সব রকম জলায় বিশেষ করে পতিত জলাশয়ে এই রকম খাঁচা বসিয়ে পুষ্টিকর মাছের উত্পাদন সহজ করা যাবে। পুকুরে জিওল মাছের চাষ, গ্রামীণ অর্থনীতির সহায়ক। মাগুর ও শিঙির সর্বোচ্চ উত্পাদন ৫ টন/হেক্টর/৬ মাস করা সম্ভব।

খাদ্য ও খাদ্যগ্রহণ রীতি

প্রজাতি

খাদ্য

খাদ্য গ্রহণ রীতি

কাতলা

ছোট অবস্থায় প্রাণীকণা বা জুপ্লাংকটন খায়। মাছ বড় হলে শৈবাল, প্লাংকটন এবং খোলসযুক্ত অতি ক্ষুদ্র প্রাণী খায়। বাইরে থেকে পরিবেশন করা খাদ্য গ্রহণ করে।

কাতলা তরঙ্গাশ্রয়ী মাছ। পুকুরের জলের উপরের অংশে খাদ্য খোঁজে। শাকাশী মাছ।

রুই

ছোট অবস্থায় প্রাণীকণা বা জুপ্লাংকটন খায়। মাছ বড় হলে প্লাংকটন, জলজ উদ্ভিদের নরম পাতা, পচা জলজ অংশ এবং তলাকার মাটি খায়। বাড়তি পরিবেশিত খাবার খায়।

রুই মাছ পুকুরের মাঝামাঝি অংশে খাদ্য গ্রহণ করে। রুই মাছ শাকাশী।

মৃগেল

ছোট অবস্থায় প্রাণীকণা বা জুপ্লাংকটন খায়। মাছ বড় হলে শৈবাল, প্লাংকটন, পচা জলজ উদ্ভিদ, পুকুরের তলদেশের গলিত ক্ষুদ্র প্রাণীর অবশিষ্টাংশ ও কাদামাটি খায়। বাড়তি পরিবেশিত খাদ্য খায়।

মৃগেল পঙ্কাশ্রয়ী শাকাশী মাছ।

সাইপ্রিনাস

কার্পিও

ছোট অবস্থায় প্রাণীকণা বা জুপ্লাংকটন খায়। বড় হলে সর্বভুক। শৈবাল, প্লাংকটন, পচা জলজ উদ্ভিদ, কাদামাটি ইত্যাদি এবং বাইরে থেকে পরিবেশিত খাবার খায়।

পঙ্কাশ্রয়ী মাছ। পুকুরের তলদেশের খাবার খায়।

সিলভার কার্প

ছোট অবস্থায় ক্ষুদ্র শৈবাল খায়। বড় হলে সবুজ কণা বা ফাইটোপ্লাংকটন, পচা জলজ উদ্ভিদের অংশ এবং অতিরিক্ত পরিবেশিত খাদ্য ইত্যাদি খায়।

তরাঙ্গাশ্রয়ী মাছ। পুকুরের উপরিভাগের খাদ্য খায়।

গ্রাস কার্প

ছোট অবস্থায় ক্ষুদ্র শৈবাল খায়। বড় হলে সবুজ কণা বা ফাইটোপ্ল্যাংকটন এবং অতিরিক্ত পরিবেশিত খাদ্য ইত্যাদি খায়।

পুকুরের উপরিভাগ এবং মাঝামাঝি অংশে খাদ্য গ্রহণ করে

মাগুর, শিঙি ও কৈ মাছ

ছোট অবস্থায় সবুজ কণা ও প্রাণীকণা, আধাপচা পাতা, কীট, জলজ সন্ধিপদ প্রাণী, পতঙ্গ খায়। শুকনো মাছের গুঁড়ো, ধানের কুড়ো, সরিষা খৈল, গোবর খায়।

পুকুরের তলদেশ থেকে খাবার খায়।

প্রাপ্তিস্থান: মৎস্য বিভাগ,পশ্চিমবঙ্গ সরকার

সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/3/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate