উ : সাধারণ ভাবে যে সব পুকুরে দেশি পোনার চাষ করা হয়, সেই সব পুকুরই গলদা চিংড়ি চাষের উপযুক্ত।
উ : মাছখেকো বা রাক্ষুসে মাছ, পোকামাকড় ও আগাছা দূর করার জন্য প্রথমে পুকুর শুকিয়ে ফেলতে হবে। পুকুর শুকিয়ে গেলে তলাকার মাটি রোদে ফাটল ধরলে লাঙল দিয়ে চাষ দিতে হবে। পুকুর শুকোনো সম্ভব না হলে মহুয়া খইল প্রয়োগ করে এদের মেরে ফেলতে হবে। প্রতি বিঘা পুকুরের প্রতি এক মিটার উচ্চতার জলের জন্য ৩০০ কিলোগ্রাম মহুয়া খইল জলে ছড়িয়ে দিতে হবে। মহুয়া খইল দেওয়ার ৭ দিন পর বিঘা প্রতি ৪০ থেকে ৫০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত চুন প্রয়োগ করতে হবে।
উ : গলদা চিংড়ির ডিম ফুটে যখন বাচ্চা বেরোয়, তখন এগুলিকে সরু সুতোর মতো দেখায়। পিঠে একটি কালো রেখা থাকে। প্রথম অবস্থায় এরা লম্বায় প্রায় ১০ থেকে ১২ মিলিলিটার হয়। গলদা চিংড়ির বাচ্চার এই অবস্থাটিকে রেণুকণা বলা হয়।
উ : প্রাকৃতিক ভাবে রেণুকণা ইছামতী, শিলাবতী ও কেলেঘাই নদীতে পাওয়া যায়। এ ছাড়া হুগলি নদীর মোহনায় ডিসেম্বর থেকে জুলাই পর্যন্ত চিংড়ির চারা পাওয়া যায়।
গলদার উন্নত মানের রেণুকণা বর্তমানে আমাদের রাজ্যেও হ্যাচারি থেকে উত্পাদন করা হচ্ছে। যথা (১) দিঘা এক্সিপেরিমেন্টাল হ্যাচারি, দিঘা, (২) সি এ ডি সি হ্যাচারি, তমলুক, (৩) দামোদর হ্যাচারি, শ্যামপুর (৪) মণ্ডল হ্যাচারি, কুলপি, (৫) বেঙ্গল স্কাম্পি, দিঘা।
উ : গলদা চিংড়ির রেণুকণা থেকে চারা চিংড়ি পোনা হতে সময় লাগে প্রায় দেড় মাস।
উ : গুণগত মান দেখে চিংড়ির রেণুকণা নির্বাচন করতে হবে। রেণুকণা মজুত করার ঘনত্ব নির্ভর করে পুকুরের উত্পাদনশীলতার উপর। সাধারণত ১৫ থেকে ২০ মিলিমিটার আকারের রেণুকণা বিঘা প্রতি সাড়ে তিন লক্ষ থেকে ৪ লক্ষ হিসাবে মজুত করা যেতে পারে।
উ : চিংড়ির বীজের জন্য আশ্রয়স্থল তৈরি করে দেওয়া একটা অতি প্রয়োজনীয় কাজ। খোলস বদল করে চিংড়ি বড় হয়, খোলস বদলের সময় চিংড়ি দুর্বল থাকে। এই সময় তাদের আশ্রয়স্থলের প্রয়োজন। এ জন্য তাল/নারিকেল/খেজুর গাছের শুকনো পাতা পুকুরে পুঁতে দিতে হবে। প্লাস্টিকের পাইপের টুকরো, সিমেন্টের পাইপ, বাঁশের চোঙা, সুপারি বা কেয়া গাছের চোঙা ইত্যাদি দিয়েও আশ্রয়স্থল পুকুরে বসিয়ে দিতে হয়।
উ : রেণুকণা পুকুরে ছাড়ার সময় দেখা দরকার যেন এগুলি একই রকম আকারে হয়, ছোট বড় না হয়। রেণুকণা পুকুরে ছাড়ার সময় দেখা দরকার যেন পুকুরে যথেষ্ট পরিমাণে প্রাকৃতিক খাবার থাকে।
উ : আসল গলদা চিংড়ির পিঠের দিকে খোলসটিতে লম্বালম্বি কয়েকটি কালো রেখা থাকে। ছোট চারার ক্ষেত্রে কেবলমাত্র একটি ও অপেক্ষাকৃত বড় চারার ক্ষেত্রে ৭ থেকে ৮টি লম্বা লম্বি কালো রেখা দেখা যায়।
উ : অপেক্ষাকৃত বড় চিংড়িগুলি ছোট ছোট ধানি চিংড়িগুলোকে খেয়ে ফেলে। সেই কারণে একই আকারের হলে সব চিংড়িই নিরাপদে থাকে।
উ : স্বাস্থ্যবান চিংড়ির বাচ্চার রং স্বচ্ছ। কালচে রঙের হলে বুঝতে হবে বাচ্চাগুলিকে বয়ে নিয়ে আসার সময় কোনও আঘাত লেগেছ বা অন্য কোনও কারণে কাহিল হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্যবান চিংড়ির বাচ্চার পৌষ্টিক নালি সম্পূর্ণ ভাবে ভর্তি থাকে। অর্ধেক ভরা বা খালি পৌষ্টিক নালি দেখলে বোঝা যাবে যে চিংড়ি ঠিকমতো খাচ্ছে না। এই অবস্থা রোগ আক্রমণের লক্ষণ।
উ : চারা মজুত করার আগে চিংড়ির পোনাকে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। পলিথিন ব্যাগে চারা পরিবহন করলে ব্যাগটি পুকুরের জলে বেশ কিছুক্ষণ ভাসিয়ে রেখে তাপমাত্রার সমতা আনতে হবে। এর পর ব্যাগের মুখ খুললে কিছুক্ষণ বাদে পুকুরের কিছু জল ব্যাগে ডুবিয়ে দিতে হবে। এতে উভয় জলের মিশ্রণ হয়ে পকুরের জল ও ব্যাগের জলের তাপমাত্রা সমান হয়ে যাবে। এর পর চারা চিংড়ি সমেত ব্যাগটিকে পকুরের জলের মধ্যে কাত করে ধরলে চারাগুলি ধীরে ধীরে পুকুরের জলে চলে যাবে।
উ : রেণুকণা বা চিংড়ি পুকুরে মজুত করার আগে অবশ্যই শোধন করে নিতে হবে। শোধন করার জন্য লিটার প্রতি জলে ৮ থেকে ১০ ফোঁটা ফরমালিন মিশিয়ে চারাগুলিকে ৫ মিনিট ডুবিয়ে রেখে পরে পুকুরে ছাড়তে হবে।
উ : হুগলি নদীর মোহনায় ডিসেম্বর থেকে জুলাই মাসের মধ্যে চিংড়ির চারা পাওয়া যায়। বর্তমানে আমাদের রাজ্যে বিভিন্ন হ্যাচারি যেমন দিঘার এক্সপেরিমেন্টাল হ্যাচারি, তমলুকের সি এ ডি সি হ্যাচারি, শ্যামপুরের দামোদর হ্যাচারি, কুলপির মণ্ডল হ্যাচারি ও দিঘার বেঙ্গল স্কাম্পি থেকে গলদা চিংড়ির চারা পাওয়া যেতে পারে।
উ : গলদা চিংড়ির চাষে কোনও সমস্যা দেখা দিলে ব্লকের মৎস্য উন্নয়ন আধিকারিক, কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র অথবা পশ্চিমবঙ্গ প্রাণীপালন ও মত্স্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করা দরকার।
উ : মজুত পুকুরে গলদা চিংড়ি ৬ ইঞ্চির মতো হলে বাজারে পাঠানো যেতে পারে।
ছাগল পালন সংক্রান্ত কয়েকটি প্রশ্ন ও উত্তর
ডিম পোনার চাষ নিয়ে যে সব প্রশ্ন প্রায়শই করা হয়ে থ...
ডিম পোনার চাষ নিয়ে যে সব প্রশ্ন প্রায়শই করা হয়ে থ...
জিওল মাছ চাষ নিয়ে যে সব প্রশ্ন প্রায়শই করা হয়ে থাক...