অন্যান্য প্রাণীদের মতো মাছেরও নানা রকম রোগ-পোকা হয়ে থাকে। মানুষ বা অন্য গৃহপালিতদের অসুস্থতা তো চোখের সামনে দেখা যায়। তার আর্তনাদ বা লক্ষণ থেকে রোগ নির্ণয় বা তার প্রতিকারের চেষ্টার অবকাশ থাকে। মাছের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি একটু আলাদা। সাধারণ ভাবে মাছেদের যে সব রোগ দেখা যায় সেগুলির জন্য মূলত দায়ী জীবাণুগুলি অন্যদের রোগের মতোই। যেমন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম উকুন জাতীয় পোকা, খাদ্য উত্পাদনের অভাব, খাদ্যের বিষক্রয়া, দূষিত জল ইত্যাদি। প্রায়শই যে রোগগুলি দেখা যায় ও মাছ চাষে ক্ষতি করে তাদের কয়েকটির সম্পর্কে দু-একটি কথা।
|
এই রোগ পশ্চিমবঙ্গে মহামারি ক্ষত রোগ নামে পরিচিত। এই রোগ ১৯৮৮ সালে প্রথম আমাদের দেশে মহামারির আকার ধারণ করে। এর পর প্রতি বছরেই শীতের শুরুতে এই রোগ অল্প সংখ্যক মাছে দেখা যাচ্ছে। ১৯৮৮-এর পর ১৯৯৩, এবং তার পর ১৯৯৫ সালে এই রোগের প্রকোপ অনেক বেশি দেখা যায়। বিগত কয়েক বছর আগে আলসারেটিভ সিনড্রোম অথবা এপিজওটিক আসলারেটিভ সিনড্রোম নামক এক রোগের প্রাদুর্ভাব মাছ চাষিরা লক্ষ করেন। এই রোগ মাছ চাষে ব্যাপক ক্ষতি করে। এই রোগের মূল কারণ ভাইরাস হলেও পরবর্তীতে ব্যাকটেরিয়া বেশি ক্ষতি করে থাকে। প্রথমে ভাইরাস দ্বারা মাছ আক্রান্ত হয়ে দুর্বল হয়ে যায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। পরে এক প্রকার ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে রোগটি মারাত্মক আকার ধারণ করে। প্রথমে আক্রান্ত মাছের দেহে লাল লাল ছোপ ছোপ দাগের মতো সৃষ্টি হয়। মাছ ঝিমিয়ে পড়ে। গতি কমে যায়। ক্রমে ওই দাগ শরীরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এই দাগগুলিই ক্রমে ক্ষতের আকার ধারণ করে। পচতে আরম্ভ করে। পিঠের দিকের মাংস খসে যেতে থাকে। ধীরে ধীরে শিরদাঁড়া আলগা হতে থাকে এবং মাছের মৃত্যু ঘটে।
প্রতিকার : ভাইরাসঘটিত কোনও রোগের চিকিত্সা খুবই কঠিন। এই রোগে চিকিত্সার সময়ও তেমন পাওয়া যায় না। তবুও চিকিত্সা পদ্ধতি নিন্মরূপ।
|
এই রোগে মাছের পাখনা পচতে থাকে। প্রথমে সাদা সাদা ক্ষত তৈরি হয়। পরে ক্ষত বাড়তে থাকে। মাছ দুর্বল হয়ে পড়ে, চলার শক্তি কমে যায়, অন্য মাছেরা বিরক্ত করতে থাকে। ক্রমশ বেড়ে চলে, শেষে মাছটি মারা যায়।
প্রতিকার :
সাধারণত গ্রীষ্মকালে পুকুরে জল কমে গেলে এই রোগ হয়। এই রোগের কারণ ফ্যাসেকোমাই সিস্টিস নামে এক জাতীয় ছত্রাক। প্রথমে ছত্রাক ফুলকায় বাসা বাঁধে। আস্তে আস্তে রক্তবহা নালিগুলি বন্ধ হয়ে যায়, মাছের শ্বাস কষ্ট হতে থাকে। ফলে উপর দিকে ভেসে ওঠে। ফুলকা সাদা সাদা হয়ে যায়, পরে ফুলকা পচে গিয়ে মাছটি মারা যায়।
প্রতিকার :
এই রোগে মাছের শরীরে জল জমে শরীর ফুলে যায়। রোগের কারণ এক রকম ব্যাকটেরিয়া।
প্রতিকার : পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ৫ মিলি গ্রাম প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে তাতে আক্রান্ত মাছকে ২ মিনিট কাল ডুবিয়ে রাখলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
|
এই রোগের কারণ মিস্কোস্পোরিডিয়াম নামে এক ধরনের এক কোষী প্রাণী। সাধারণত ছোট মাছ বা মাছের পোনা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। জলাশয়ে যদি জল কম থাকে, নোংরা, পচা বা আবদ্ধ জলে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। জলাশয়ে খুব বেশি মাছ থাকলে এই রোগ হতে পারে। এই রোগের জন্য যদিও হঠাৎ–ই দু-এক দিনের মধ্যেই মড়কের আকার ধারন করে না কিন্তু মাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। নিস্তেজ হয়ে যায়, চলাফেরা করতে পারে না। পরে মারা যায় বা অন্য মৎস্যভুক বা বড় মাছের পেটে যায়।
প্রতিকার
এই রোগ সাধারণত দুই প্রকার কৃমির আক্রমণে হয়ে থাকে ---গাইরোড্যাক্টাইলাস ও ড্যাক্টাইলোগাইরাস। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বর্ষায় এই দুই কৃমিতে চারা মাছ আক্রান্ত হয়ে থাকে।
এরা ফুলকার সঙ্গে লেগে থাকে এবং রক্ত শোষণ করে। ফলে ফুলকা থেকে বেশি পরিমাণ শ্লেষ্মা ক্ষরিত হয়। মাছ নিস্তেজ হয়ে থাকে। পরে মারা যায়। এই কৃমি মাছের চামড়াও আক্রমণ করে। রক্ত শোষণ করে। মাছের জীবনীশক্তি কমে যায়। উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়। শেষ পর্যন্ত মারা যায়।
এগুলি আরগুলাস নামে এক রকম সন্ধিপদ প্রাণী। এরা নোংরা জলে বেশি বংশ বিস্তার করে। এরা মাছের চামড়ার সঙ্গে দৃঢ় ভাবে লেপটে থাকে। মাছের রক্ত শোষণ করে। এদের আক্রমণে মাছ খুব বিরক্ত হয়। আমরা মাছকে চঞ্চল অবস্থায় দেখি। চারি দিক ছোটাছুটি করে। জলাশয়ের পাড়ে এসে কোনও কিছুর সঙ্গে গা ঘসতে থাকে। বৃদ্ধি কমে যায়, রোগা ও দুর্বল হয়ে পড়ে। মরে যায় অথবা মানুষ বা মৎস্যভুকের পেটে যায়।
প্রতিকারের উপায়
এটা জীবাণুঘটিত রোগ। কাতলা মাছকেই বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। এই রোগে মাছ অন্ধ হয়ে যায়।
প্রতিকার : বেশি আকারে এই রোগ দেখা দিলে সম্পূর্ণ মাছ তুলে অন্যত্র ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। পুকুরে চুন দিয়ে শোধন করা দরকার। জল শুকিয়ে নিয়ে চুন প্রয়োগ করলে বেশি ভালো ফল পাওয়া যায়। আক্রান্ত মাছকে ধরে লিটার প্রতি ৮ মিলিগ্রাম হারে ক্লোরোমাইসেটিন জলে গুলে তাতে ১ মিনিট কাল ডুবিয়ে রাখলেও ফল পাওয়া যায়।
সুত্রঃ পোর্টাল কনটেন্ট টিম
ভারতের আদিবাসী মাত্রেই উত্সবপ্রিয় জাতি।
মাছের রোগ প্রতিরোধ নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা।
এখানে ভারতে মহিলাদের স্থিতি নিয়ে বলা হয়েছে।