মাছ চাষ আরও সুন্দর ও লাভজনক করে তোলা যায় যদি সংগঠিত ভাবে ধারাবাহিক ভাবে এর চাষ করা সম্ভব হয়। মাছ চাষের নানান দিক আছে। যদি ডিম থেকে শুরু করা যায় তবে ভালো ডিম পাওয়ার পর বিজ্ঞানসম্মত ভাবে সুন্দর পরিবেশে তার ফোটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তা থেকে ধানি পোনা — চারা পোনা করতে হবে, সেখান থেকে তাকে বাজারজাত করার মতো বড় করে পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় আনতে হবে এবং শেষ পর্যন্ত তাদের প্রজননক্ষম ও প্রজননের ব্যবস্থা করে আবার ডিম উৎপাদন করতে হবে। যদি এই সমস্তগুলিই এক ছাদের নীচে খুব পরিকল্পিত উপায়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত করা যায়, তার পর আবার চক্রাকারে শুরু করার সুষ্ঠু প্রকল্প করা যায়, তবে প্রতি ধাপেই আমরা সুন্দর ও মনের মতো কাজ করার সুযোগসুবিধা তৈরি করতে পারব।
বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে, প্রকল্প লাভজনক হবে। মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে, সমাজ উন্নত হতে সহায়ক হবে।
এই প্রকল্প সুষ্ঠু ও কৃতকার্য করতে যে পরিকাঠামো প্রয়োজন আমাদের সাধারণ চাষিদের তা নেই। এই প্রকল্প হাতে নিতে পারে কোনও সরকারি খামার, কোনও সমবায় বা ওই ধরনের কোনও উদ্যোগপতি।
এই ধরনের মাছ চাষের জন্য খামারে বিভিন্ন রকমের পুকুর থাকা প্রয়োজন। যেমন ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তোলার জন্য আঁতুড়-পুকুর। আঁতুড়-পুকুরে কয়েক দিন রাখার পর এই ক্ষুদ্র বাচ্চাদের নিয়ে যাওয়া হয় লালন-পুকুরে। এখানে কয়েক দিন পর ধানি পোনা তৈরি হয়। এর পর ধানি পোনাকে চালান করা হয় পালন-পুকুরে, যেখানে ধানি পোনা থেকে এরা আঙুলে পোনা বা চারাপোনায় পরিণত হয়। লালন-পুকুরের তুলনায় পালন-পুকুরের আয়তন অন্তত ৫ / ৬ গুণ হওয়া দরকার। পালন-পুকুরের আঙুলে পোনা নিয়ে যাওয়া হয় মজুত-পুকুরে — যেখানে এগুলিকে বড় করা হয়। যেখান থেকে প্রয়োজনমতো এবং পরিকল্পনামতো আকার–আকৃতি দেখে ও ওজন করে তাদের তোলা হয়। এদেরই পূর্ণবয়স্কদের স্ত্রী ও পুরুষ বাছাই করে নির্দিষ্ট উপায় অবলম্বন করে ডিম পাড়ানোর জন্য যেখানে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে হাপা বলে।
আধুনিক মৎস্য খামারে মাছের প্রজনন সুন্দর ও স্বাস্থ্যসম্মত এবং নিজের নিয়ন্ত্রনাধীন রাখার জন্য পাকা মাছ অর্থাৎ পূর্ণবয়স্ক সুস্থ্ সবল মাছ রাখারও যথেষ্ট প্রয়োজন আছে। এদের নির্দিষ্ট আহার-বিহার ও প্রয়োজনে হাপায় নিয়ে যাওয়া যাবে, এমন ব্যবস্থার জন্য এই পুকুর খুব প্রয়োজনীয়। এখানে এক বা একাধিক বড় মাপের মাছ রাখা যেতে পারে।
মাছের মড়ক কোনও নতুন ঘটনা নয়। নানান রোগ-পোকা বা জল বা পারিপার্শিক দূষণের কারণে মাছের মড়ক হতে পারে। অনেক সময় ওই জলাশয়ের মাছ অন্য জলাশয়ে স্থানান্তরিত করতে পারলে সমূহ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এই রকম আপৎকালীন সময়ে চটজলদি মাছ-মড়কের সূচনা সংকেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ মাছকে অন্য জলাশয়ে স্থানান্তরিক করার জন্য নির্দিষ্ট পুকুর থাকে। তাকে বলে হাসপাতাল-পুকুর। এ ছাড়া স্বল্প সংখ্যক মাছ আক্রান্ত হলে বাকিদের সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অনেক সময় আক্রান্ত মাছদের আলাদা রেখে তাদের চিকিৎসারও রীতি আছে।
মাছের চাহিদা সব সময় এক রকম থাকে না। বাজার দরও ওঠা-নামা করে। মাছ পচনশীল পণ্য। আবার যে কোনও সময়, যে কোনও অবস্থাতে মাছ ধরার সুবিধা সব সময় নাও থাকতে পারে বা ব্যয়সাপেক্ষ হতে পারে। তাই অগ্রিম মাছ ধরে রাখা বাজারে সরবরাহ করার জন্য ধরা মাছ জিইয়ে রাখার সুবন্দোবস্ত রাখতে হলে বাজার-পুকুর প্রয়োজন। এই পুকুর রাস্তার কাছাকাছি হলে পরিবহনে সুবিধা হয়।
সূত্র : মৎস্য বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019