শহরে এমএসও এবং কেবল অপারেটরের মারফত ব্রডব্যান্ড পরিষেবার খরচ কমতে চলেছে। গ্রাহকদের মাসিক খরচ কমতে পারে অন্তত ১০ থেকে ২০ শতাংশ। কারণ, এ বার কেবল টিভির তারের মাধ্যমে ঘরে ঘরে ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দিতে এমএসও-দের সঙ্গে গাঁটছাড়া বাঁধার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিএসএনএল। আর বাজার ধরতে তারা দাম কমিয়ে প্রতিযোগিতায় নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এ বছর পুজোর আগেই সারা দেশের মধ্যে কলকাতাতে এই পরিষেবা প্রথম বার চালু হবে। বিএসএনএল-কলকাতার জেনারেল ম্যানেজার অসীম সিনহা বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রচুর ব্যান্ডউইডথ আছে। আর যে হেতু সারা দেশে ন্যাশনাল ইন্টারনেট ব্যাকবোন একমাত্র আমাদের সংস্থারই রয়েছে, তাই আমাদের চেয়ারম্যান সারা দেশেই এই পরিষেবা চালু করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কলকাতাতে আমরা এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে প্রাথমিক কাজকর্ম শুরু করে দিয়েছি। যে হেতু এই বাজারে আমরা নতুন, তাই বাজার ধরতে আমরা কম দামে এই পরিষেবা দেব।’ কতটা দাম কম হতে পারে? বিএসএনএল সূত্রে খবর, বর্তমান বাজার দরের তুলনায় ন্যূনতম ১০ শতাংশ থেকে সর্বাধিক ২০ শতাংশ পর্যন্ত দাম কম হতে পারে। কলকাতা ও তার সন্নিহিত এলাকায় ৩০ লক্ষের বেশি কেবল টিভি গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে দেড় লক্ষের মতো গ্রাহক কেবল অপারেটরদের থেকে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা ব্যবহার করে। ব্যান্ডউইডথ এবং কানেকশন স্পিডের উপর ভিত্তি করে গ্রাহকদের মাসে খরচ পড়ে ১৯৯ থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত।
এমএসও এবং কেবল অপারেটরদের সূত্রে খবর, কম দাম এবং উন্নততর পরিষেবা পেলে আরও অন্তত ১০ লক্ষ গ্রাহক কেবল অপারেটরদের থেকে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা নিতে পারে। এদের অধিকাংশই এখন বিভিন্ন টেলিকম অপারেটরের ব্রডব্যান্ড পরিষেবা ব্যবহার করে। এমএসও সংস্থা সিটি কেবলের কর্তা সুরেশ শেঠিয়ার কথায়, ‘আমরা এখন চারটি বেসরকারি টেলিকম অপারেটর সংস্থা থেকে ব্যান্ডউইডথ কিনে তা কেবলের তার মারফত গ্রাহকদের বাড়িতে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা দিচ্ছি। যদি বিএসএনএল কম দামে আমাদের ব্যান্ডউইডথ দেয়, তা হলে আমরা অবশ্যই গ্রাহকদের কম দামে এই পরিষেবা দেব। ফলে, গ্রাহক স্বার্থে বিএসএনএলের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই।’ অপর এক এমএসও সংস্থা এএমবিসি-র কর্তা সুজিত দাস অবশ্য বিএসএনএলের পরিষেবা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই পরিষেবার ক্ষেত্রে দু’টি জিনিস আছে ---ব্যান্ডউইডথ ম্যানেজমেন্ট এবং কাস্টোমার সাপোর্ট। বিএসএনএল এর কোনটা কী ভাবে দেবে সেটা দেখতে হবে। আর এই ধরনের পরিষেবার ক্ষেত্রে গ্রাহক সন্তুষ্টি সব থেকে বড় বিষয়, যেটা বিএসএনএলের নেই। তবে দাম কম করলে গ্রাহকদেরই লাভ হবে।’ তাঁরই সুরে উত্তর শহরতলির এক কেবল অপারেটর সংস্থার কর্ণধার মৃণাল চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘বিএসএনএলের সঙ্গে কোনও এমএসও গাঁটছাড়া বাঁধবে কেন? ওদের তার কেটে গেলে দিনের পর দিন কেটে যায়। তার আর জোড়া লাগে না। আর এখন প্রত্যেক সংস্থার ব্যান্ডউইডথের দামও অনেক কমে গিয়েছে।’ বিএসএনএলের পরিষেবা সংক্রান্ত এই অভিযোগের কথা অস্বীকার করছেন না অসীমবাবু। তবে তাঁর যুক্তি, ‘আমরা এখন প্রতি বাড়িতে যে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা দিই, তাতে এই ধরনের সমস্যা হয়। তবে এমএসও-দের মাধ্যমে পরিষেবা দিলে এই সমস্যা হবে না। কারণ, আমরা একটি ডেডিকেটেড তার এমএসও-র কন্ট্রোল রুমে পৌঁছে দেব। তার পর বাড়িতে বাড়িতে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট এমএসও-র। আর আমাদের একটিই ডেডিকেটেড লাইন থাকার কারণে, তার রক্ষণাবেক্ষণ করতেও আমাদের সুবিধা হবে।’
সূত্র : কৌশিক প্রধান, এই সময়, ১২ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019