রেজাল্ট বেরনোর পর প্রাপ্ত নম্বর নিয়ে অনেক সময়েই সন্দেহ জাগে। সে ক্ষেত্রে নিজেদের পরীক্ষার খাতা হাতে পাওয়ার জন্য আরটিআই আইনে আবেদন জানান ছাত্রছাত্রীরা। বহু ক্ষেত্রেই তাতে ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয় বিস্তর। পড়ুয়াদের সেই অসুবিধা দূর করতে এ বার আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করে অভিনব এক পদক্ষেপ নিতে চলেছে গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়। এটি সফল হলে দেশের বাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এই উদ্যোগ, যার ফলে উপকার পাবেন তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ। তবে কিছু প্রশ্নও রয়েছে।
তা, কী সেই উদ্যোগ? গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয় (জিইউ) কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছে, মেডিসিন, ম্যানেজমেন্ট, জনসংযোগের (মাস কমিউনিকেশন) মতো বৃত্তিমুখী বা ‘প্রো-প্রফেশনাল’ কোর্সগুলির ক্ষেত্রে অন্তিম বর্ষের ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষার খাতার কপি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। পড়ুয়ারা সরাসরি নিজেদের খাতা ইন্টারনেটে দেখতে পাবেন। আবার, শুধু নিজের খাতা নয়, অন্যদের খাতাও দেখা যাবে এই ভাবে। ফলে তুলনামূলক বিচার সম্ভব হবে। এমনকী সংশ্লিষ্ট কোর্সগুলির জুনিয়র ছাত্রছাত্রীদেরও এই খাতাগুলি দেখার অধিকার থাকবে, যাতে সিনিয়রদের উত্তর লেখার কায়দা দেখে তারা নিজেদের পড়াশোনার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন বিষয় শিখতে পারে। জিইউ সূত্রের খবর, মাস কয়েক পর থেকেই এই কাজ পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে। আপাতত বিষয়টিকে পাইলট প্রকল্প হিসেবেই দেখা হচ্ছে, যাতে ভালো সাড়া মিললে সমস্ত বিষয়ের কোর্সের ক্ষেত্রেই এই প্রক্রিয়া চালু করবে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এই উদ্যোগটা অবশ্য ছোট স্তরে প্রথম বার নিয়েছিল গুজরাত টেকনোলজিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (জিটিইউ), যেখানে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দেখা খাতার কপি পড়ুয়াদের জন্য সংস্থার ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়। সেখানকার পড়ুয়ারা এই প্রক্রিয়াকে সাধুবাদ জানানোর পর জিইউ-ও তা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। উপাচার্য এম এন প্যাটেলের কথায়, ‘এর ফলে মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আসবে এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারাও পড়ুয়াদের সাহায্য করার ব্যাপারে আরও যত্নবান হওয়ার উত্সাহ পাবেন। বিশ্ববিদ্যালয় ধীরে-ধীরে নিজেদের কাজকর্ম ডিজিটালাইজ করছে৷ পড়ুয়াদের ভর্তি, বিভিন্ন অফিস রেকর্ড এবং প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্মগুলি ইতিমধ্যেই অনলাইনে তোলা হয়েছে। দরকারি নথিপত্রগুলির ডিজিটাল সংস্করণ তৈরি করা হচ্ছে, যাতে সহজে সেগুলি পাওয়া যায়। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই বৃত্তিমুখী কোর্সগুলির ফাইনাল সেমেস্টারের পড়ুয়াদের পরীক্ষার খাতা অনলাইনে প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ প্যাটেলের বক্তব্য, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়নমূলক কাজের প্রচুর সম্ভাবনা থাকলেও, পড়ুয়াদের বেড়ে চলা সংখ্যা কয়েক লক্ষ ছাড়িয়ে যাওয়ায় বিষয়টি বিশাল চ্যালেঞ্জের মতো ঠেকছে। তাই এই পাইলট প্রকল্পের উদ্যোগ। ছাত্রছাত্রীদের প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পরই আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’ কিন্তু কয়েকটি আশঙ্কাও রয়ে যাচ্ছে। জিটিইউ-তে পরীক্ষকদের কাছে খাতার ডিজিটাল সংস্করণ পৌঁছলেও ব্যান্ডউইডথ (সিগন্যাল)-এর সমস্যা থাকায় সেগুলি দেখতে অসুবিধা হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের একাংশও কিছু বিষয়ে ‘সাবধানী’ প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। বি জি মেডিক্যাল জুনিয়র ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন-এর সদস্য হীরেন রানা বলেন, ‘ভালো উদ্যোগ। তবে মেডিক্যাল পরীক্ষার এক একটি খাতা তো ৭০-৮০ পাতা লম্বা হয়। উত্তর লেখার কায়দাতেও পার্থক্য থাকতে পারে। তা নিয়ে পরে বিতর্ক তৈরি হতে পারে। কেউ কেউ এই সুবিধার অপব্যবহার করতে পারেন।’ কয়েক জন আবার প্রশ্ন তুলেছেন পরিকাঠামো নিয়ে। এক পড়ুয়ার মন্তব্য, ‘বড় বড় পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বহু দিন হল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটটাই আপডেট করা হয়নি। দরকারি বহু তথ্য সেখানে আপলোড করা হয় না। ওয়েবসাইটটিতে রেজাল্ট বেরনোর ঘোষণাটাও সময়মতো করা হয় না। আগে এই সব প্রাথমিক বিষয়গুলোয় মনযোগ দেওয়া হোক।’
সূত্র : এই সময়, ৩ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020