অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

ডিজিটাল ভারত

ডিজিটাল ভারত

  1. ডিজিটাল ভারত কর্মসূচি : সরকারি প্রশাসন সংস্কারে নজিরমূলক উদ্যোগ
    1. ই-প্রশাসনে ভারত অনেক পিছিয়ে
    2. তিনটি মূল বিষয়
    3. ন’টি আবশ্যিক বিষয়
    4. দূর হবে ‘ডিজিটাল বিভেদ’
    5. ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ
    6. চাই লাগাতার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা
    7. উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি
  2. নজর যেখানে
    1. প্রত্যেক নাগরিকের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান হিসাবে ভিত্তিক ডিজিটাল পরিকাঠামো
    2. চাহিদা অনুযায়ী প্রশাসন এবং পরিষেবা
    3. নাগরিকদের ডিজিটাল ক্ষমতায়ন
  3. ডিজিটাল ভারতের এক্তিয়ার
    1. ডিজিটাল ভারতের ন’টি স্তম্ভ
  4. ডিজিটাল ভারত কর্মসূচি
    1. ই-ক্রান্তি বা জাতীয় ই-গভর্ন্যান্স পরিকল্পনা ২.০
      1. ই-ক্রান্তির নীতি
      2. প্রয়োগ এবং প্রদান
      3. ই-ক্রান্তির অন্তর্ভুক্ত মিশন মোড প্রকল্প
    2. মাইগভ
    3. আধার-ভিত্তিক বায়োমেট্রিক উপস্থিতি
      1. আধার-ভিত্তিক বায়োমেট্রিক উপস্থিতি কী
      2. বায়োমেট্রিক উপস্থিতি পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য
      3. প্রধান বৈশিষ্ট্য
    4. জীবন প্রমাণ
      1. জীবন প্রমাণ কী ও কেন
      2. লক্ষ্য
      3. কী ভাবে কাজ করবে জীবন প্রমাণ
      4. নাম নথিভুক্ত করুন
      5. আধারের প্রমাণীকরণ
      6. জীবন শংসাপত্র
      7. আপনার শংসাপত্রটি সংগ্রহ করুন
      8. পেনশন দাতা এজেন্সি
      9. ইলেকট্রনিক ডেলিভারি
    5. ডিজিটাল লকার
    6. ই-ভাষা
    7. ডিজিটাল পরিচয়পত্র হিসাবে মোবাইল
      1. আধারে সঙ্গে মোবাইলের সংযোগ ঘটিয়ে
      2. মোবাইল ডিজিটাল স্বাক্ষর
      3. মোবাইল ভয়েস (কণ্ঠস্বর) বায়োমেট্রিক
      4. আর্থিক লেনদেনে মোবাইলের অন্তর্ভুক্তি
    8. ‘ই-বস্তা’
      1. স্কুলের বই থেকে ই-বই
      2. কাদের জন্য ?
      3. প্রকাশক
      4. স্কুল
      5. ছাত্র-ছাত্রী
      6. ই-বস্তা অ্যাপ
      7. যে প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়
      8. সুবিধা
      9. স্কুল
      10. ছাত্র-ছাত্রী
    9. ই-জিসিএফ (ই-গভর্ন্যান্স সক্ষমতা কাঠামো)
      1. ই-গভর্ন্যান্স সক্ষমতা কাঠামোর উদ্দেশ্য
    10. ই-সঙ্গম
      1. মূল কার্যক্রম
      2. বৈশিষ্ট্য
    11. মোবাইল সেবা
    12. ডিজিটাল সাক্ষরতা উদ্যোগ
      1. ইলেকট্রনিক্স এবং আইসিটি অ্যাকাডেমি স্থাপনে আর্থিক সহায়তা
      2. জাতীয় ডিজিটাল সাক্ষরতা মিশন
      3. ডিজিটাল ভারতের অন্তর্ভুক্ত সাক্ষরতা অভিযান (দিশা)
    13. হার্ডওয়্যার উৎপাদন
      1. মুখ্য কয়েকটি কার্যক্রম
    14. ক্লাউড পরিষেবা, মেঘরাজ
      1. জাতীয় ক্লাউডের বৈশিষ্ট্য
      2. জাতীয় ক্লাউড পরিষেবা যা দিচ্ছে
    15. data.gov.in (মুক্ত সরকারি তথ্য মঞ্চ)
    16. ই-গ্রিটিংস এবং ই-সম্পর্ক
      1. ই-গ্রিটিংস
      2. ই-সম্পর্ক
    17. অন্য প্রকল্প
      1. জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সমন্বয় কেন্দ্র
      2. ক্রমাগত এবং দ্রুত মূল্যায়ন
      3. ভার্চুয়াল ক্লাসরুম
      4. ভৌগোলিক তথ্য প্রদান পদ্ধতি
      5. (জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম সংক্ষেপে জিআইএস)
    18. ডিজিটাল ভারত গড়তে এক সঙ্গে কাজ করবে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
    19. ডিজিটাল ভারত কর্মসূচি : সরকারি প্রশাসন সংস্কারে নজিরমূলক উদ্যোগ
      1. ই-প্রশাসনে ভারত অনেক পিছিয়ে
      2. তিনটি মূল বিষয়
      3. ন’টি আবশ্যিক বিষয়
      4. দূর হবে ‘ডিজিটাল বিভেদ’
      5. ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ
      6. চাই লাগাতার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা
      7. উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি
    20. ডিজিটাল ইন্ডিয়া কর্মসূচিতে গতি আনতে উদ্যোগী মোদী
    21. ডিজিটাল ইন্ডিয়া
      1. নজর যেখানে
      2. ডিজিটাল ভারতের এক্তিয়ার
      3. ই-সঙ্গম
      4. ই-ক্রান্তি বা জাতীয় ই-গভর্ন্যান্স পরিকল্পনা ২.০
      5. মাইগভ
      6. আধার-ভিত্তিক বায়োমেট্রিক উপস্থিতি কী ?
      7. জীবন প্রমাণ
      8. ডিজিটাল লকার
      9. ই-ভাষা
      10. ডিজিটাল পরিচয়পত্র হিসাবে মোবাইল
      11. ‘ই-বস্তা’
      12. ই-জিসিএফ (ই-গভর্ন্যান্স সক্ষমতা কাঠামো)
      13. ডিজিটাল সাক্ষরতা উদ্যোগ
      14. ক্লাউড পরিষেবা, মেঘরাজ
      15. ই-গ্রিটিংস এবং ই-সম্পর্ক
      16. অন্য প্রকল্প

গ্রাম পঞ্চায়েতের দফতরে গেলেই আধার কার্ড কিংবা প্যান কার্ড। চাকরির আশায় এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জে নাম লেখানো কিংবা জমির রেজিস্ট্রেশনও পঞ্চায়েতের দফতরে বসেই।

গ্রামের মানুষের দোরগোড়ায় যাবতীয় সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দিতেই ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ প্রকল্প ঘোষণা করেছিল মোদী সরকার। যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল দেশের প্রায় আড়াই লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতকে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে জুড়ে দেওয়া। তা হলে সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যাবে। কিন্তু গত কয়েক মাসে যে ভাবে এই প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে, তাতে মোটেই খুশি নন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পশ্চিমবঙ্গও ব্যতিক্রম নয়। রাজ্যেও অপটিক্যাল ফাইবার পাতার কাজ ধীর গতিতে এগোচ্ছে।

ক্যাবিনেট সচিব অজিত শেঠের নেতৃত্বে একটি শীর্ষ স্তরের কমিটি এই প্রকল্পের অগ্রগতি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে। সম্প্রতি ওই কমিটির পর্যালোচনায় দেখা গিয়েছে, শ্লথ গতিতে অপটিক্যাল ফাইবার পাতার কাজ এগোচ্ছে। ক্যাবিনেট সচিবের রিপোর্ট পেয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন, ২০১৬-র ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব গ্রাম অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে জুড়ে দেওয়ার কাজ শেষ করতে হবে। কাজের অগ্রগতি দেখতে আগামী সপ্তাহে ফের বৈঠকে বসবেন মোদী।

কতখানি পিছিয়ে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’-র কাজ? যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের বক্তব্য, গোটা দেশে ২ লক্ষ ৪৪ হাজার ৭২৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। এর মধ্যে ৯৭ হাজার ৪৮০টি গ্রাম পঞ্চায়েতকে প্রথম দফায় অপটিক্যাল ফাইবার জালে জুড়ে দেওয়ার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। পুরো প্রকল্পের খরচ ১.১৩ লক্ষ কোটি টাকা। যার মধ্যে সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে অপটিক্যাল ফাইবারের জাল ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ব্যয় হবে ৩০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ১,২৭৫টি গ্রামে কাজ শুরু হয়েছে। গোটা দেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও একই হাল। রাজ্যের ৩,৩৫৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে প্রথম দফায় ২,৬৪২টি গ্রাম পঞ্চায়েতে কাজ হওয়ার কথা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মাত্র ৩৮টি গ্রামে কাজ শুরু হয়েছে।

এই অপটিক্যাল ফাইবার পাতা হলে যাতে ‘রাইট অব ওয়ে’ কর আদায় করা না হয়, সে জন্য কেন্দ্র এর মধ্যেই রাজ্যগুলিকে বুঝিয়ে বলেছে, গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ব্রডব্যান্ড পৌঁছলে রাজ্যের যাবতীয় পরিষেবাও গ্রামের মানুষের হাতের মুঠোয় চলে আসবে। সে জন্য অধিকাংশ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই ওই কর তুলে দিতে সম্মত হয়েছেন। ফলে বাড়তি অর্থের বোঝা চাপেনি প্রকল্পের ঘাড়ে। তবু কাজ না এগোনোর কারণ মূলত লাল ফিতের ফাঁস।

গতি বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ঠিক হয়েছে, আগামী বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে দেড় লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতে ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দিতে হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি এক লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতে কাজ সেরে ফেলতে হবে।

যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “আমরাই গ্রাম পঞ্চায়েত পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছি।” রবিশঙ্করের কথায়, “জাতীয় অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক তৈরি করে তা চালানো ও দেখাশোনার জন্য ভারত ব্রডব্যান্ড নিগম নামের একটি পৃথক সংস্থা তৈরি হয়েছে। তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিএসএনএল, রেলটেল ও পাওয়ার গ্রিড নিগমও কাজ করছে।”

ডিজিটাল ভারত কর্মসূচি : সরকারি প্রশাসন সংস্কারে নজিরমূলক উদ্যোগ

ই-প্রশাসনে ভারত অনেক পিছিয়ে

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সরকারি প্রশাসন সংস্কার করলে বিভিন্ন পক্ষের জন্য হরেক সুযোগসুবিধে জোগানো সম্ভব (দ্বিবেদী ও অন্যান্য ২০১৩)। এ হেন সংস্কারের মাধ্যমে সরকারি প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা, কার্যকারিতা, স্বচ্ছতা বাড়ে। আমলাতান্ত্রিকতার ফাঁস কমে। যোগাযোগ ও সমন্বয়ের উন্নতি হয়। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এর ফলে সর্বত্র ও সব সময় নাগরিক-কেন্দ্রিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভর সরকারি পরিষেবার জোগান ও প্রাপ্তি নিশ্চিত করা যায় (দ্বিবেদী ও অন্যান্য ২০১৩)।

গত নব্বই দশকের শেষাশেষি ই-প্রশাসনের মাধ্যমে ভারতে এই সংস্কারের গোড়াপত্তন। ২০০৬-এ জাতীয় ই-প্রশাসন পরিকল্পনা (এনইজিপি) চালু হওয়ার পর সংস্কারের গতি বাড়ে। এ সত্ত্বেও, আমাদের দেশ এখনও পিছিয়ে। বিশ্ব ই-প্রশাসন উন্নয়ন সূচকে (রাষ্ট্রসংঘ ই-প্রশাসন সমীক্ষা, ২০১৪) ভারতের স্থান ১১৭ দেশের পর। যোজনা পত্রিকার আগে এক নিবন্ধে দ্বিবেদী এর কারণ চিহ্নিত করেছেন। যেমন — কেন্দ্র, রাজ্য ও জেলা স্তরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থার খণ্ডীকরণ, সংহত ব্যবস্থার অভাব, যথেষ্ট সংখ্যক সাধারণ পরিষেবা কেন্দ্র (কমন সার্ভিস সেন্টার) না থাকা, সচেতনতার অভাব, ডিজিটাল সাক্ষরতার কম হার, আঞ্চলিক ভাষায় ই-পরিষেবা অমিল, আস্থাহীনতা ও সেই সঙ্গে নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিয়ে আশঙ্কা (দ্বিবেদী ও অন্যান্য ২০১২; রানা ও অন্যান্য ২০১৩)।

ওই নিবন্ধে অবস্থার উন্নতির জন্য এক গোছা সুপারিশও ছিল। যেমন বর্তমান ব্যবস্থাগুলির ম্যাপ করা, হালফিলকার ব্যবস্থাগুলি সংহত ও সেগুলি মসৃণ ভাবে কাজে লাগানো, পরিষেবা পৌঁছে দিতে এক মোবাইল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার, ভয়েস-বেসড মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন-এর বিকাশ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে নাগরিকদের সড়গড় করার জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, দেশের আনাচেকানাচেও সাধারণ পরিষেবা কেন্দ্র পরিষেবা কেন্দ্র গড়ে তোলা। এ ছাড়া, আঞ্চলিক ই-পরিষেবার সংস্থান এবং ভারতের প্রেক্ষিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভর সরকারি প্রশাসন সংস্কার কর্মসূচিকে কার্যকর করে তুলতে ইলেকট্রনিক ব্যবস্থায় মানুষের আস্থা ও নিরাপত্তা বোধ সৃষ্টি করা দরকার (দ্বিবেদী ও অন্যান্য ২০১৩)।

অধুনা, ভারত সরকারের ঘোষিত নয়া দৃষ্টান্তমূলক উদ্যোগে উপরের প্রায় সব দিকই ঠাঁই পেয়েছ। এখন এ নিবন্ধে ‘ডিজিটাল ভারত কর্মসূচি’ নামে পরিচিত এই যুগান্তকারী উদ্যোগটি সাধারণ ভাবে খতিয়ে দেখা হবে। কর্মসূচিটির সফল রূপায়ণ হলে ভারতের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও সরকারি প্রশাসন সংস্কারে এক উল্লেখযোগ্য সদর্থক প্রভাব পড়বে।

তিনটি মূল বিষয়

এই কর্মসূচি বিভিন্ন মন্ত্রকের সম্মিলিত উদ্যোগ। ভারতকে এক ডিজিটাল-ভিত্তিক ও সক্ষম তথ্য সমাজ এবং জ্ঞান অর্থনীতিতে রূপান্তর করা এর লক্ষ্য। জাতীয় ই-প্রশাসন পরিকল্পনার এক বড়সড় নব কলেবর যেন এই কর্মসূচি। বৈদ্যুতিন ও তথ্য-প্রযুক্তি দফতরের পরিকল্পিত এই কর্মসূচি বাবদ বরাদ্দ অঙ্ক এক লক্ষ কোটিরও বেশি টাকা। গত ২০ আগস্ট ২০১৪, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা অনুমোদিত ডিজিটাল ভারত কর্মসূচি ২০১৮-এর মধ্যে এক উচ্চাকাঙক্ষী লক্ষ হাসিল করতে চায়। সরকারের প্রণালী আমূল বদলে নতুন ভাবে ছকা ও ডিজিটাইজ করা এবং সরকারি পরিষেবা ইলেকট্রনিক ভাবে পাওয়ার ব্যবস্থা করা এই বিরাট উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। সেই সঙ্গে কর্মসংস্থানেও অবদান রাখা।

ডিজিটাল ভারত কর্মসূচির চিন্তাভাবনার মূলে রয়েছে তিনটি বিষয়। এক, প্রত্যেক নাগরিকের জন্য পরিকাঠামোগত সুযোগ। দুই, চাহিদামতো শাসন ও পরিষেবা। তিন, নাগরিকদের ডিজিটাল ক্ষমতায়ন। এক নম্বর রেখাচিত্রে এই তিন ক্ষেত্রে তুলে ধরা হয়েছে। আর পরের অনুচ্ছেদগুলিতে এই তিন ক্ষেত্র নিয়ে বিশদ আলোচনা করা আছে।

প্রত্যেক নাগরিকের জন্য পরিকাঠামোগত সুযোগের মধ্যে আছে : নাগরিকদের ডিজিটাল ক্ষমতায়নে সব গ্রাম পঞ্চায়েতে হাইস্পিড ইন্টারনেটের ব্যবস্থা, নাগরিকদের ডিজিটাল আইডেনটিটি, আর্থ-সামাজিক ক্ষমতায়নে নাগরিকদের জন্য মোবাইল ফোন এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, কাছাকাছি সাধারণ পরিষেবা কেন্দ্রের সুযোগ, ইলেকট্রনিক পরিষেবার চল বাড়াতে দেশে এক নিরাপদ ও সুরক্ষিত সাইবার স্পেস গঠন।

চাহিদামতো শাসন ও পরিষেবার মধ্যে পড়ে বিভিন্ন মন্ত্রক বা দফতরের মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে এক-জানলা ব্যবস্থায় সহজে হরেক সরকারি পরিষেবার সুযোগ। অনলাইন ও মোবাইল প্লাটফর্ম কাজে লাগিয়ে এ হেন পরিষেবা যথা সময়ে পৌঁছে দেওয়া দরকার। ঝামেলা না পুইয়ে তথ্যের সুযোগ পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি নাগরিকের প্রাপ্য হক ক্লাউডে রাখতে হবে। ডিজিটাল সরকারি পরিষেবার ব্যবস্থা করে ব্যবসা-বাণিজ্যে ঝুটঝামেলা হঠানো উচিত। এতে ইলেকট্রনিক ও ক্যাশলেস আর্থিক কারবারের সুবিধে রহবে।

নাগরিকদের ডিজিটাল ক্ষমতায়ন জোর দিয়েছে : তাদের ডিজিটাল সাক্ষরতা, যাবতীয় সরকারি নথিপত্র /সার্টিফিকেট ক্লাউডে পাওয়ার ব্যবস্থা, আঞ্চলিক ভাষায় ডিজিটাল পরিষেবা মেলা এবং নাগরিকদের প্রাপ্য সব কিছু ক্লাউডের মাধ্যমে পোর্টেবল করা।

ন’টি আবশ্যিক বিষয়

ডিজিটাল ভারত কর্মসূচি তিন মূল ক্ষেত্র সফল করতে আবশ্যক ৯টি বিষয়ও চিহ্নিত করেছে।

  • ১) ব্রডব্যান্ড হাইওয়ে,
  • ২) সকলের জন্য মোবাইল সংযোগের সুযোগ,
  • ৩) পাবলিক ইন্টারনেট অ্যাকসেস কর্মসূচি,
  • ৪) ই-শাসন প্রযুক্তির মাধ্যমে শাসন ব্যবস্থার সংস্কার,
  • ৫) ই-ক্রান্তি—পরিষেবার বৈদ্যুতিন জোগান,
  • ৬) সকলের জন্য তথ্য,
  • ৭) বৈদুতিন উৎপাদন,
  • ৮) কর্মসংস্থানের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি এবং
  • ৯) আর্লি হার্ভেস্ট প্রোগ্রাম (ভারতকে এক ডিজিটাল ক্ষমতাধর সমাজ ও জ্ঞান অর্থনীতিতে রূপান্তর করা এই কর্মসূচির লক্ষ্য)।

ব্রডব্যান্ড হাইওয়ে জাতীয় তথ্য পরিকাঠামোর সমন্বয় এবং সব গ্রাম ও শহরের জন্য ব্রডব্যান্ডের ব্যবস্থা করবে। দ্বিতীয় বিষয়টি সকলের জন্য মোবাইল সংযোগের পরিকাঠামো গড়ে তোলার দিকে নজর দেবে। তৃতীয় বিষয়ের লক্ষ্য ২০১৭-র মার্চ নাগাদ দেশের আড়াই লক্ষ গ্রামের উপযুক্ত সংখ্যক সাধারণ পরিষেবা কেন্দ্র স্থাপন এবং পরের দু’বছরের মধ্যে দেড় লাখ ডাকঘরকে বহুপরিষেবা কেন্দ্রে পরিণত করা। চতুর্থটিতে, বিজনেস প্রসেস রি-ইঞ্জিনিয়ারিং ও ই-শাসনের মাধ্যমে সরকারি ফর্ম সরল করা, অনলাইন রিপোজিটারি ব্যবস্থার, সার্ভিস ও প্ল্যাটফর্মগুলির সমম্বয়, ওয়ার্কফ্লো অটোমেশন এবং নাগরিকদের ইস্যু নিয়ে সমস্যা সমাধানে স্বয়ংক্রিয় গণ অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা সংস্কার করার পরিকাঠামো নিয়েছে।

সরকারি পরিষেবা পেতে হলে নাগরিকদের জন্য টাচ পয়েন্টের ব্যবস্থা করা পঞ্চম বিষয়ের দায়িত্ব। ই-ক্রান্তি ব্যবহার করে বৈদ্যুতিন উপায়ে পরিষেবা জোগানো হবে। এর মধ্যে আছে ই-শিক্ষা, ই-স্বাস্থ্য, চাষিদের জন্য উপকরণের অনলাইন বরাতের প্রযুক্তি, নিরাপত্তার জন্য প্রযুক্তি, মোবাইল ব্যাঙ্কিং এবং মাইক্রো এটিএম প্রোগ্রামের মাধ্যমে সকলের জন্য আর্থিক পরিষেবা, ই-আদালত, ই-পুলিশ, ই-মেল। সকলের জন্য তথ্য ষষ্ঠ বিষয়টির আওতাধীন। সরকার অনলাইন তথ্য ও নথিপত্রের ব্যবস্থা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নাগরিকদের হালফিলের খবর দেওয়ার জন্য সামাজিক মিডিয়ার সঙ্গে সক্রিয় যোগাযোগ রাখতে তৎপর থাকবে। এ জন্য ইতিমধ্যে চালু হয়েছে মাইগভ.ইন পোর্টাল। বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতে নাগরিকদের জন্য থাকবে অনলাইন ম্যাসেজ। বৈদুতিন সামগ্রী উৎপাদনের ক্ষেত্রটিও সপ্তম বিষয়ের মধ্যে পড়ে। সরকারের লক্ষ দেশেই ২০২০ সাল নাগাদ যাবতীয় বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জন। তবে বর্তমান কাঠামো লক্ষ্য পূরণ করার পক্ষে যথেষ্ট নয়। এই ত্রুটিবিচ্যুতি দূর করতে বেশ কিছু কর্মসূচির ভাবনা চিন্তা করা হচ্ছে। অষ্টম ও ডিজিটাল ভারত কর্মসূচির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থান। উত্তরপূর্বাঞ্চলে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর পরিষেবার ব্যাপক বন্দোবস্ত গড়ে তোলা। আর নবম বিষয়টি হল আর্লি হার্ভেস্ট প্রোগ্রাম—এই কর্মসূচির লক্ষ্য ভারতকে এক ডিজিটাল সমাজ ও জ্ঞান অর্থনীতিতে রূপা্তরিত করা। মেসেজের জন্য একটি আইটি প্ল্যাটফর্ম, সরকারি ই-গ্রিটিং, সরকারি কার্যালয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা ইত্যাদির জন্য এই কর্মসূচি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে।

দূর হবে ‘ডিজিটাল বিভেদ’

ডিজিটাল ভারত উদ্যোগের জন্য ‘নজিরমূলক’ ও ‘যুগান্তকারী’ কথা দু’টি আমরা ব্যবহার করেছি যথেষ্ট ভেবেচিন্তেই। কারণ, আমাদের মতে এই উদ্যোগ ‘সার্বিক’ এবং শহর-গ্রাম নির্বিশেষে সব দেশবাসীকে অন্তর্ভুক্ত করা।

‘সার্বিক’ বলতে আমরা বুঝিয়েছি ডিজিটাল ভারত কর্মসূচি যাবতীয় আবশ্যক ও পরস্পর-সংযুক্ত দিকে দৃষ্টি দিয়েছে। যেমন— পরিকাঠামো উন্নয়ন, সংহত ও স্বচ্ছন্দ বৈদ্যুতিন পরিষেবা এবং নাগরিকদের ডিজিটাল সাক্ষরতা। এক নম্বর রেখাচিত্রে

দেখানো হয়েছে, নাগরিকদের প্রকৃত ডিজিটাল ক্ষমতায়নের লক্ষ্য অর্জনের জন্য শাসনের সঙ্গে পরিকাঠামো ও স্বচ্ছন্দ ই-পরিষেবা আবশ্যক। এই প্রধান ক্ষেত্রগুলির কোনও একটিতে দুর্বলতা থাকলে ভারতকে ডিজিটাল ভারতে রূপান্তরের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে। তাদের প্রাপ্তব্য সম্বন্ধে ব্যবহারকারীদের সচেতনতার অভাব এবং সেই সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থা ব্যবহারে প্রয়োজনীয় দক্ষতা না থাকলে পরিকাঠামো ও ই-পরিষেবা মূল্যহীন, ডিজিটাল সাক্ষরতার ক্ষেত্রে এ দিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি। ডিজিটাল ভারতের কর্মসূচি শুধুমাত্র শহরাঞ্চলের উন্নয়নের দিকে নজর রেখে দায়িত্ব শেষ করতে চায় না, বরং এটা সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। গ্রামের মানুষের উন্নতির দিকেই হয়তো বেশি নজর। পরিকল্পনা ঠিকঠাক কাজে লাগালে শহর ও গ্রামের মধ্যে ‘ডিজিটাল বিভেদ’ দূর করতে ইন্টারনেট সংযুক্তি বড় ভূমিকা নেবে। গড়ে উঠবে সবার জন্য সমতাভিত্তিক তথ্য সমাজ ও জ্ঞান অর্থনীতির বনেদ।

ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ

ডিজিটাল ভারত কর্মসূচির ব্যাপকতা (পরিসর, বাজেট, সুবিধে, দ্রুত সম্পন্ন করার উচ্চাকাঙক্ষার প্রেক্ষিতে), ভোল পালটে দেবার গুণ ও সেই সঙ্গে ব্যাপক কর্মসংস্থান ও দক্ষতা উন্নয়নে অবদানের কথা মনে রেখে আমরা একে ‘যুগান্তকারী’ আখ্যা দিয়েছি। ডিজিটাল ভারত কর্মসূচির লক্ষ্য ১.৭ কোটি সরাসরি ও ৮.৫ কোটি পরোক্ষ কর্মসংস্থান। দেশে আগের কোনও ডিজিটাল কর্মসূচি ধারেভারে এর কাছে ঘেঁষতে পারে না। গুগল, মাইক্রোসফটের মতো বৃহৎ আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ও ন্যাসকম হেন অ্যাসোসিয়েশন তো আর এমনি এমনি এই কর্মসূচি নিয়ে গরজ দেখাচ্ছে না! আর এক দিক থেকেও কর্মসূচিটি যুগান্তকারী — বৈদ্যুতিন বাণিজ্য ও ডিজিটাল বিপণনের ব্যাপক চল শুরু হওয়ায় গ্রামাঞ্চলে ভোগ্যপণ্যের খুচরো ব্যবসা আমূল পালটে যাবে। ‘নজিরমূলক’ ও ‘যুগান্তকারী’ হওয়ায় ডিজিটাল ভারত কর্মসূচির গুণকীর্তনে শিল্পমহলের কেষ্টবিষ্টুরা তো একেবারে গদগদ। দেশবিদেশের সংবাদমাধ্যমেও তা জায়গা কেড়ে নিয়েছে। যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হচ্ছে এই কর্মসূচির খবর।

ডিজিটাল ভারত কর্মসূচি রূপায়ণের কাজ এগোনোর পর এর উপকার বোঝা যাবে। এখন ভারতে এক মজবুত ও স্থায়ী সরকার হাল ধরেছে। কর্মসূচির একটা বড় অংশ তাই পরিকল্পনা মাফিক সম্পূর্ণ হবে বলে ধরে নেওয়া যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই অগ্রগতি হয়েছে। যেমন অফিস কাছারিতে হাজিরায় বায়োমেট্রিক প্রযুক্তি ধাপে ধাপে চালু করার কাজ এগোচ্ছে ভালো ভাবেই। তবে কিনা, ডিজিটাল সাক্ষরতা ও মানব উন্নয়নের মতো দিকে সবাইকে শামিল করতে সময় লাগাটা খুব স্বাভাবিক। দক্ষতার প্রসার ও সচেতনতা এবং মানুষের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গি কখনও শুধুমাত্র জটিল কর্মকাণ্ড নয়, এক জটিল ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে কাজের কাজ হতে বহু বছর লাগতে পারে। বিশেষ করে গ্রামে ডিজিটাল সাক্ষরতা উন্নয়ন ও প্রসারের জন্য আমরা এক স্পষ্ট, সুপরিকল্পিত ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগোনোর সুপারিশ করছি।

নির্দিষ্ট একটা সময়সীমা বেঁধে সবাইকে ডিজিটাল সাক্ষর করে তোলার কোনও জাদুমন্ত্র অবশ্য কারও হাতে নেই। বিপণনমুখী বিভাজন ও লক্ষ্যের কর্মপন্থা এ কাজ সফল করার হাতিয়ার হতে পারে। রেখাচিত্র ২-এ

এক বিপণনমুখী নাগরিক শামিলকরণ কাঠামো (সিমিনটিরাস ও অন্যান্য ২০১৪ থেকে নেওয়া) তুলে ধরা হয়েছে। ডিজিটাল সাক্ষরতা বিস্তারে এটা সাহায্য করতে পারে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সাক্ষরতা এবং এই প্রযুক্তি ব্যবহারের বিভিন্ন স্তরের ভিত্তিতে নাগরিকদের শ্রেণিবিভাগ করার পক্ষে সওয়াল আছে এই কাঠামোয়।

চাই লাগাতার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা

ডিজিটাল ভারত কর্মসূচি ইন্টারনেট সংযুক্তির জন্য ব্রডব্যান্ড, মোবাইল, পাবলিক ইন্টারনেট অ্যাক্সেস পয়েন্ট এবং সরকারি পরিষেবা পেতে সাধারণ পরিষেবা কেন্দ্রের ব্যবস্থার কথা বলেছে। ডিজিটাল বিভেদ কমানোর জন্য এ সব যথেষ্ট কার্যকর উপায়। সকলকে ডিজিটাল সাক্ষর করে তোলার উপযুক্ত সোপান। তবে এ ক্ষেত্রে এক বড় প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করা দরকার। এখনও বহু গ্রামে বিদ্যুৎ অধরা। অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ যখন-তখন চলে যাওয়াটা গা সওয়া। আর ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুতের জোগান ছাড়া ইন্টারনেট, সাধারণ পরিষেবা কেন্দ্র তো খোঁড়া। এই ঝামেলা এড়িয়ে বিদ্যুতের লাগাতার ব্যবস্থা করার জন্য সৌরবিদ্যুৎ বা বায়ুশক্তির মতো বিকল্প উৎস কাজে লাগানো উচিত। বাড়তি একটা লাভও হবে। শক্তির বিকল্প উৎস নিয়ে লোকজনের মধ্যে সচেতনতা গড়ে উঠবে।

ডিজিটাল ভারত কর্মসূচিতে ‘ম্যাসিভ অনলাইন ওপেন কোর্সেস’ বিকল্প পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করার সংস্থান আছে। একেবারে সামনের সারির এই উদ্ভাবনা এখনও ব্যাপক ভাবে গৃহীত হয়নি। এ হেন উদ্ভাবনা গ্রহণের জন্য মানসিকতা বা দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো দরকার। এ জন্য এই উদ্ভাবনার বিকাশে ব্যবহারকারীদের শামিল করার দিকটি গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া, ব্যাপক ভাবে চালু করার আগে এথনোগ্রাফিক গবেষণা ও কয়েকটি বড় পরীক্ষামূলক প্রকল্প হাতে নেওয়া উচিত। সরকারি বিদ্যালয়ের দশা বেহাল। বিশেষত কম অগ্রসর রাজ্যগুলিতে। উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে শিক্ষকরা ততটা দড় নন। এ হেন পরিস্থিতে স্কুলে ব্রডব্যান্ড জুড়লেই সব মুশকিল আসান ভাবাটা ভুল। পড়ুয়াদের শিক্ষাদানের জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি কাজে লাগানোর বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। ব্রডব্যান্ড বিস্তারে বিশ্বের অন্যতম অগ্রণী দেশ ব্রাজিল। এ ক্ষেত্রে ওই দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগালে আমাদের ভালো বই মন্দ হবে না। দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্রডব্যান্ডের প্রসারে স্কুলের ভূমিকা যথেষ্ট। রাষ্ট্রসংঘের বিশ্ব ই-শাসন উন্নয়ন সূচক সংক্রান্ত অধুনা সমীক্ষা অনুযায়ী দেশটির স্থান এক নম্বরে। স্কুলে ব্রডব্যান্ড সংযোগ, ই-বইয়ের চল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে দক্ষতা সৃষ্টি করলে দেশের ছেলেমেয়েরা ‘ডিজিটাল নাগরিক’ হতে পারবে। এর ফলে ডিজিটাল ভেদ হঠানো যাবে আগামী কুড়ি বছরের মধ্যে।

উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি

কোন দিকের কাজ সম্পূর্ণ হলে তার মূল্যায়ন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ঘাটতি আছে ডিজিটাল ভারত কর্মসূচিতে। দ্বিবেদী ও অন্যদের কথায় (২০১৩) ‘বাঞ্ছিত লক্ষ্য অর্জন করার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মূল্যায়ন আবশ্যক। আগামী দিনে বৈদ্যুতিন পরিষেবার বিকাশের জন্য আগের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতেও তা সাহায্য করবে। সঠিক মূল্যায়নের একই রকম ভুলচুক ফের ঘটলে আশ্চর্যের কিছু নেই।’ ভারতে দুর্নীতি ছেয়ে আছে আগাপাশতলা। এ হেন দেশে ডিজিটাল ভারত কর্মসূচি সঠিক দিশায় এগোচ্ছে কিনা তা সুনিশ্চিত করতে ‘নিরপেক্ষ’ মূল্যায়ন খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখানে নিরপেক্ষ বলতে আমরা দেশবিদেশের পণ্ডিত ও গবেষকদের বোঝাচ্ছি। খেদের কথা, এ যাবৎ এ ক্ষেত্রে তেমন কোনও উচ্চবাচ্য নেই।

এই কর্মসূচি প্রযুক্তি বাণিজ্য ও ব্যবস্থাপনা, সমাজ বিজ্ঞানে গবেষক ছাত্রদের অংশগ্রহণ করার এক মূল্যাবান সুযোগ দেয়। ইন্টারডিসিপ্লিনারি ও ট্রান্সডিসিপ্লিনারি গবেষণা চালানোর এক অসাধারণ ও উপযুক্ত পরিবেশ জোগায়। এর দরুন শুধু ডিজিটাল ভারত কর্মসূচির রূপায়ণ হাসিলে সাহায্য হয় ভাবাটা ভুল। ইন্টারডিসিপ্লিনারি ও ট্রান্সডিসিপ্লিনারি গবেষকরাও উপকৃত হন। গবেষণা কৃষ্টির বিকাশে তা সাহায্য করে।

আজকের ভারতকে ২০২২-এর মধ্যে ‘ডিজিটাল ভারত’-এ পরিণত করার লক্ষ্যে এই রূপান্তর যাত্রার বিষয়ে এখন আমাদের ভাবনা-চিন্তা পেশ করছি। ডিজিটাল ভারত কর্মসূচি চালু করে কেন্দ্রীয় সরকার এই রূপান্তর যাত্রার একটি পথ খুলে দিয়েছে। এই পথ মোটামুটি মসৃণ, স্বচ্ছন্দ। তবে কোনও ভাবেই এটা সিধে সড়ক নয়। আগেই বলেছি বাধাবিঘ্ন, ঝুটঝামেলা আছে। এ সব বাধা কাটাতে এখনও তেমন প্রস্তুত নয় জাতীয় তথ্য কেন্দ্র (এনআইসি)। এ জন্য এ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা জরুরি। এ ছাড়া চূড়ান্ত লক্ষ্য ছোঁয়ার আগে যাত্রা চালিয়ে যেতে হবে। পথে কোনও শৈথিল্য নৈব নৈব চ। এটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ, এই যাত্রাকালে নাগরিকদের লাগাতার ওয়াকিবহাল রাখা উচিত। ডিজিটাল ভারতের বাস্তবায়নের জন্য তাদের প্রস্তুত করতে হবে। সড়গড় করতে হবে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে।

ডিজিটাল ভারতের কর্মসূচি যথাথই এক বৈপ্লবিক উদ্যোগ। সবার ডিজিটাল দক্ষতা গড়ে তোলার সুযোগ দিয়ে এই কর্মসূচি সার্বিক সামাজিক অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছে। মনে রাখতে হবে, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সব নাগরিকের সামাজিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য অজর্ন মাত্র আংশিক ভাবে সম্ভব। গোটা দেশের জন্য তাই এই ডিজিটাল ভারত কর্মসূচি শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি নয়, এক চমকপ্রদ সুযোগ। স্বপ্নকে বাস্তবে হাসিল করতে হলে অবশ্য দেশবাসীকে তাদের অভ্যাস, আচরণ এবং মননে কৃষ্টিগত রদবদল আনতে হবে। ডিজিটাল ভারত কর্মসূচির কারিগরদের কাছে সম্ভবত এটাই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অথচ চিত্তাকর্ষক চ্যালেঞ্জ।

নির্দ্বিধায় বলা যায়, কর্মসূচিটি প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জনে সমর্থ হলে ভারত স্থায়ী জাতীয় বিকল্প ধরে রাখতে পারবে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভারতের ক্ষমতা জোরদার করতে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চাকাঙ্ক্ষী ডিজিটাল ভারত কর্মসূচির কথায় এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ হাতছানি দিচ্ছে ভারতকে।

নজর যেখানে

ডিজিটাল ভারতদেশের সমাজ এবং জ্ঞান অর্থনীতিকে ডিজিটাল মাধ্যমে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে ডিজিটাল ভারত কর্মসূচি। সরকারি পরিষেবা যাতে বৈদ্যুতিন মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে সহজলভ্য হয়, সে দিকে লক্ষ রেখেই এই ডিজিটাল ভারত কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। বিশেষ আইডি এবং ই-প্রমাণের উপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য সরবরাহ এবং নির্দিষ্ট মানের পরিষেবা প্রদানই এর উদ্দেশ্য। বর্তমান বছর থেকে প্রতি বছর ধাপে ধাপে এই কার্যক্রমকে রূপায়িত করা হবে এবং ২০১৮-এর মধ্যে একে সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

মূলত তিনটি এলাকায় এর লক্ষ্যকে কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে

  • ১. প্রত্যেক নাগরিকের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান হিসাবে ডিজিটাল পরিকাঠামো
  • ২. চাহিদা অনুযায়ী প্রশাসন এবং পরিষেবা
  • ৩. নাগরিকদের ডিজিটাল ক্ষমতায়ন

প্রত্যেক নাগরিকের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান হিসাবে ভিত্তিক ডিজিটাল পরিকাঠামো

  • পরিষেবা প্রদানের জন্য দ্রুতগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট
  • প্রত্যেক নাগরিকের জন্য অনন্য, জীবনব্যাপী, অনলাইন এবং বিশ্বাসযোগ্য ডিজিটাল পরিচয়পত্র
  • আর্থিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণে নাগরিকের মোবাইল ফোন এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ব্যবহার
  • কমন সার্ভিস সেন্টারের সহজলভ্যতা
  • সরকারি ক্লাউড ভাগ করে নিয়ে ব্যক্তিগত স্থান
  • নিরাপদ এবং সুরক্ষিত সাইবার স্পেস

চাহিদা অনুযায়ী প্রশাসন এবং পরিষেবা

  • প্রতিটি বিভাগ এবং তার এলাকাকে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জুড়ে দেওয়া
  • অনলাইন এবং মোবাইল প্লাটফর্ম থেকে বাস্তব সময়ে পরিষেবার প্রাপ্যতা
  • সরকারি ক্লাউডে প্রত্যেক নাগরিকের সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা
  • ব্যবসাকে সহজ করার জন্য সরকারি পরিষেবাকে ডিজিটালে রূপান্তরকরণ
  • আর্থিক লেনদেনকে নগদবিহীন এবং বৈদ্যুতিনে রূপান্তর
  • সিদ্ধান্ত সমর্থন পদ্ধতি এবং উন্নয়নের জন্য জিআইএসের ওঠানামা

নাগরিকদের ডিজিটাল ক্ষমতায়ন

  • সর্বজনীন ডিজিটাল সাক্ষরতা
  • সমস্ত ডিজিটাল সম্পদের সর্বজনীন লভ্যতা
  • ক্লাউডে সমস্ত সরকারি নথি/শংসাপত্রের প্রাপ্যতা
  • ভারতীয় ভাষায় ডিজিটাল সম্পদ/পরিষেবার প্রাপ্যতা
  • অংশগ্রহণমূলক প্রশাসনের জন্য সহযোগিতামূলক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম
  • ক্লাউডের মাধ্যমে ব্যক্তির জন্য সমস্ত এনটাইটেলমেন্টের পোর্টেবিলিটি

ডিজিটাল ভারতের এক্তিয়ার

এই কার্যক্রমের সার্বিক এক্তিয়ার হল :

  • ১. জ্ঞান-নির্ভর ভবিষ্যতের জন্য ভারতকে প্রস্তুত করা
  • ২. আইটি (ইন্ডিয়ান ট্যালেন্ট) + আইটি (ইনফরমেশন টেকনোলজি)= আইটি (ইন্ডিয়া টুমরো) -- এই সমীকরণে পৌঁছনোর প্রয়াস
  • ৩. প্রযুক্তিকে কেন্দ্রে রেখে পরিবর্তন
  • ৪. এক ছাতার তলায় বিভিন্ন বিভাগকে এনে কার্যক্রম পরিচালনা
    • একাধিক ভাবনা-চিন্তাগুলোকে একটি বৃহৎ লক্ষ্যের অধীনে এনে কার্যক্রম পরিচালনা, যাতে প্রতিটি ভাবনা-চিন্তা ওই লক্ষ্যের অংশীদার হতে পারে। প্রতিটি উপাদান তার স্বকীয়তা বজায় রেখে একটি বিশাল ছবির অংশ হতে পারে।
    • এইগুলি এক সঙ্গে মিশনের রূপান্তরকে সম্পূর্ণতা দেবে
  • ৫. ডিজিটাল ভারত কার্যক্রম বর্তমানে চালু প্রকল্পগুলিকে সুসহংত ভাবে পুনর্গঠন করবে। ডিজিটাল ভারত হিসাবে কার্যকমের সাধারণ ব্র্যাডিং তাদের রূপান্তরের প্রভাব তুলে ধরবে।

ডিজিটাল ভারতের ন’টি স্তম্ভ

ডিজিটাল ভারত তার ন’টি স্তম্ভের উন্নয়নে জোর দেবে। এই স্তম্ভগুলি হল :

  • ১. ব্রডব্যান্ড হাইওয়ে
  • ২. মোবাইল সংযোগে সর্বজনীন প্রবেশাধিকার
  • ৩. জনগণের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারের কার্যক্রম
  • ৪. ই-গর্ভন্যান্স: প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রশাসনের সংস্কার
  • ৫. ই-ক্রান্তি : বৈদ্যুতিন মাধ্যমে পরিষেবা প্রদান
  • ৬. সকলের জন্য তথ্য
  • ৭. বৈদ্যুতিন উৎপাদন
  • ৮. কাজের জন্য তথ্য প্রযুক্তি
  • ৯. দ্রুত বিস্তৃতি

সূত্র : DeitY

ডিজিটাল ভারত কর্মসূচি

ই-ক্রান্তি বা জাতীয় ই-গভর্ন্যান্স পরিকল্পনা ২.০

ই-ক্রান্তির নীতি

ই-গর্ভন্যান্স পরিকল্পনাকে সফল ভাবে রূপায়িত করতে ক্রমবিকাশমান প্রযুক্তি যেমন ক্লাউড কমপিউটিং এবং মোবাইল প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সে দিকে লক্ষ্য রেখেই জাতীয় ই-গর্ভন্যান্স পরিকল্পনাকে (এনইজিপি) আরও সমৃদ্ধশালী করতে জাতীয় ই-গর্ভন্যান্স পরিকল্পনা ২.০ (এনইজিইপি ২.০) বা ই-ক্রান্তি নেওয়া হয়েছে। বিগত আট বছরে এনইজিপি-কে প্রয়োগ করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা গেছে তার উপর ভিত্তি করেই এর কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে।

ই-ক্রান্তি বা এনইজিপি ২.০-র নীতিগুলি হল --

  • ১. অনুবাদ নয় রূপান্তর
  • ২. একক নয় সমন্বিত পরিষেবা
  • ৩. প্রত্যেক মিশন মোড প্রোগ্রামে (এমএমপি) জিপিআর বাধ্যতামূলক
  • ৪. চাহিদা অনুযায়ী পরিকাঠামো
  • ৫. স্বাভাবিক ভাবে ক্লাউড
  • ৬. মোবাইলকে অগ্রাধিকার
  • ৭. দ্রুত অনুমোদন
  • ৮. বাধ্যতামূলক মান এবং প্রোটোকলের মান্যতা
  • ৯. স্থানীয় ভাষার ব্যবহার
  • ১০. জাতীয় জিআইএস
  • ১১. নিরাপত্তা এবং বৈদ্যুতিন ডাটা সংরক্ষণ
  • ১২. জাতীয় ই-গর্ভন্যান্স অ্যাকাডেমি
  • ১৩. ই-গর্ভন্যান্স জ্ঞান পোর্টাল
  • ১৪. ই-গর্ভন্যান্সের প্রভাব সংক্রান্ত ইনডেক্স তৈরি করা
  • ১৫. সোশ্যাল মিডিয়ার কার্যকর ব্যবহার
প্রয়োগ এবং প্রদান
  • ১. প্রদানের মাধ্যমগুলির রূপান্তর : এটা ধরে নেওয়া খুবই যুক্তিসঙ্গত যে আগামী অন্তত দশ বছর নাগরিকরা, বিশেষ করে, গ্রামের বাসিন্দারা বিভিন্ন ধরনের ই-পরিষেবার জন্য এজেন্ট দ্বারা পরিচালিত বিভিন্ন ই-কিয়স্কের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন।
  • ২. সচেতনতা এবং যোগাযোগ : এনইজিপি-র মাধ্যমে বৃহৎ সংখ্যায় লেনদেন হলেও এখনও সে ভাবে এই প্রকল্প পরিচিত হয়ে উঠতে পারেনি। কারণ এর মনে দাগ কাটার মতো কোনও ব্র্যান্ড নাম নেই। তাই একে জনপ্রিয় করতে ই-ক্রান্তির মতো ব্র্যান্ড নাম দেওয়া হয়েছে।
  • ৩. নতুন ধরনের ব্যবসায়িক মডেল প্রবর্তন : এনইজিপি-র একটি অন্যতম দুর্বলতা হল প্রযোগের ক্ষেত্রে এবং কিছুটা পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সঠিক মান বজায় রাখা। সময়মতো পরিষেবা না দেওয়া গেলে তা উপভোক্তাদের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। পিপিপি এবং আউটসোর্স মডেলে এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যাবে।
  • ৪. জাতীয় উৎপাদনশীলতার উপর নজর : দেশীয় ভাবে উৎপাদিত তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রেই জোর দেওয়া হবে, সমস্ত উৎপাদন ক্ষেত্রে বিশেষত ছোট এবং মাঝারি শিল্পে।
  • ৫. ডিজিটাল ভারত কার্যক্রমের অধীনে ন’টি স্তম্ভের মধ্যে একটি ই-ক্রান্তি। ডিজিটাল ভারত কার্যক্রমের মধ্যে একে ঢোকানোর জন্য খসড়া ক্যাবিনেট নোট সংশোধন করা হচ্ছে।
  • ৬. পরিষেবার ক্ষেত্র বাড়াতে আরও মিশন মোড প্রোগ্রামকে (এমএমপি) অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
ই-ক্রান্তির অন্তর্ভুক্ত মিশন মোড প্রকল্প

১৫টি এমএমপি পরিষেবা প্রদান করছে। এর মধ্যে রয়েছে :

  • গেটওয়ে
  • সিএসসি
  • ইন্ডিয়া পোর্টাল
  • ইডিআই
  • এফআই
  • পাসপোর্ট
  • ভিসা
  • আয়কর
  • এমসিএ ২১
  • বিমা
  • শুক্ল বিভাগ
  • জাতীয় আইডি
  • পেনশন
  • ব্যাঙ্কিং
  • সড়ক পরিবহন

৯টি এমএমপি যেগুলি অংশত পরিষেবা প্রদান করছে।

  • ই-প্রোক
  • ই-কোর্ট
  • ই-অফিস
  • ই-জেলা
  • কৃষি
  • পুরসভা
  • বাণিজিক কর
  • জমি রেকর্ড
  • ট্রেজারি

৫টি এমএমপি বাস্তবায়নের পথে।

  • ই-বিজ
  • ই-পোস্ট
  • গ্রাম পঞ্চায়েত
  • পুলিশ
  • সরকারি বণ্টন ব্যবস্থা

৩টি এমএমপি পরিকল্পনা এবং বিকাশের পথে।

  • এনজিআইএস
  • সিএপিএফ
  • এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ

৯টি ক্ষেত্রে এমএমপির সুযোগ রয়েছে।

  • রাহি
  • সামাজিক সুবিধা
  • ই-সংসদ
  • ডব্লু ও সি উন্নয়ন
  • গ্রামোন্নয়ন
  • কৃষি ২.০
  • ই-বিধান
  • শিক্ষা
  • স্বাস্থ্য

ডিজিটাল ভারত প্রকল্পে ই-ক্রান্তিকে (এনইজিপি ২.০) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই প্রকল্পের ৪ এবং ৫ নম্বর স্তম্ভে অন্তর্ভুক্ত কার্যক্রমের নাম দেওয়া হয়েছে যথাক্রমে ই-গভর্ন্যান্স: প্রযুক্তির মাধ্যেমে প্রশাসনের উন্নয়ন এবং ই-ক্রান্তি। বর্তমানে ৪১ এমএমপি-র মধ্যে ২৪ এমএমপি নাগরিককে পরিষেবা দিচ্ছে। ১০ এমএমপি বিভিন্ন ধাপে বিকাশের পথে রয়েছে। ১৮ মার্চ, ২০১৪-এ ই-ক্রান্তি কাঠামোর মধ্যে ১০ এমএমপিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মাইগভ

বিভিন্ন নীতি, কর্মসূচি, প্রকল্প সম্পর্কে তাঁদের ধ্যানধারণা, অভিজ্ঞতা জানিয়ে এবং পরামর্শ দিয়ে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির কাজে সরকারের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে বিভিন্ন প্রান্তের নাগরিকরা যাতে অংশ নিতে পারেন তার জন্যই এই ‘মাইগভ’ পরিকল্পনা।

প্রযুক্তির সহায়তায়, ভারতের উন্নয়নের লক্ষ্যে, সরকার এবং নাগরিকের মধ্যে অংশিদারিত্ব গড়ে তুলতে ‘মাইগভ’ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি একটি প্রযুক্তি নির্ভর মঞ্চ যার মাধ্যমে নাগরিকরা সুপ্রশাসন গড়ে তোলার কাজে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এর মাধ্যমে দেশের নাগরিকরা উন্নয়নের কাজে সহযোগিতা করতে পারবেন। দরিদ্র থেকে দ্ররিদ্রতর মানুষের আশা-আকাঙ্খা পূরণে অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠবে এই মঞ্চ।

‘মাইগভ’ মূলত একটি ওয়েবপোর্টাল। এর মাধ্যমে দেশবাসী একাধারে যেমন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মত বিনিময় করতে পারবেন, তেমনি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজেও অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এর জন্য রয়েছে দু’টি বিভাগ ‘ডিসকাস’ (আলোচনা) ‘ডু’(কাজ করা)।

‘মাইগভ’ নাগরিকের কাছে একাধিক রাস্তা খুলে দিচ্ছে। তিনি যেমন বিভিন্ন কাজের স্বেচ্ছাসেবক হতে পারেন, তেমনি কাজের ভাবনাও এখানে রাখতে পারেন। তার এই ভাবনা অন্যান্য সদস্য এবং বিশেষজ্ঞরা পর্যালোচনা করবেন। কাজটি অনুমোদিত হলে, ‘মাইগভ’-এর অন্য সদস্যরা সেটা ভাগ করে নেবেন এবং সম্পন্ন করবেন। প্রত্যেটি অনুমোদিত কাজ সম্পন্ন হলে ক্রেডিট পয়েন্ট পাওয়া যাবে।

বর্তমানে এই মঞ্চটি বেশ কয়েকটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলি হল, পরিষ্কার গঙ্গা, শিশু কন্যার শিক্ষা, স্বচ্ছ ভারত, দক্ষ ভারত, ডিজিটাল ভারত, কাজের সুযোগ। প্রতিটি গ্রুপে অবদানকারীর নেওয়া কর্মপদ্ধতির মধ্যে থাকবে অনলাইন এবং মাঠে নেমে কাজ। প্রতিটি গ্রুপেরই লক্ষ্য হল জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে গুণগত পরিবর্তন। সময়ের সঙ্গে গ্রুপ, কাজ এবং আলোচনার সংখ্যা বাড়বে।

২৬ জুলাই ২০১৪ ‘মাইগভ’-এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নতুন সরকারের ক্ষমতায় থাকার ৬০ দিন যে দিন সম্পূর্ণ হল, সে দিন এই উদ্যোগের সূচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনসাধারণের অংশগ্রহণ ছাড়া গণতন্ত্রের সাফল্য অসম্ভব। উদ্বোধনের পর থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে ছ’লক্ষের বেশি মানুষ ‘মাইগভ’-এর বিভিন্ন আলোচনা এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছেন।

আধার-ভিত্তিক বায়োমেট্রিক উপস্থিতি

আধার-ভিত্তিক বায়োমেট্রিক উপস্থিতি কী

ডিজিটাল ভারতের অংশ হিসাবে দিল্লিতে অবস্থিত কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিটি অফিসে সাধারণ বায়োমেট্রিক উপস্থিতি পদ্ধতি (বিএএস) বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। তবে পরবর্তীকালে রাজ্য সরকারি অফিস এবং অন্যান্য সরকারি অফিসে এই বায়োমেট্রিক উপস্থিতি পদ্ধতি চালু করা হবে। এই পদ্ধতিতে একজন কর্মীকে তার বায়োমেট্রিক (হাতের ছাপ/চোখের মণি) দিয়ে উপস্থিতি নথিভুক্ত করতে হবে।

বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত সরকারি অফিসগুলিতে কর্মীদের উপস্থিতির হিসাব রাখা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। কম খরচে এ কাজ করা রীতিমতো চ্যালঞ্জ। বর্তমানে যে ধরনের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে কর্মীদের উপস্থিতির হিসাব রাখা হয় তারও প্রযুক্তিগত কিছু দুর্বলতা আছে। এই পদ্ধতিতে প্রতিটি সরকারি অফিসে উপস্থিতির হিসাব সমন্বিত ভাবে রাখা যায় না। আধার-ভিত্তিক বায়োমেট্রিক প্রমাণীকরণের মাধ্যমে কর্মীদের উপস্থিতির বর্তমান অবস্থা একটি পোর্টালে (attendance.gov.in) দেখা যাবে। এর ফলে স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা যাবে এবং সরকারি অফিসে কর্মসংস্কৃতি আনা সম্ভব হবে। কর্মীর আধার নম্বর অনুযায়ী ইউআইডিএআই-এ রাখা ডাটাবেসের সঙ্গে বায়োমেট্রিক ছাপ মিলিয়ে অনলাইনে তা যাচাই হয়ে যাবে।

বায়োমেট্রিক উপস্থিতি রূপায়ণের ধাপ

  • বায়োমেট্রিক উপস্থিতি পদ্ধতি চালুর প্রথম ধাপ হিসাবে প্রতিটি সরকারি সংস্থার একটি নোডাল অফিস থাকবে। যার মাধ্যমে সংস্থাটি attendance. gov.in সাইটে তার কর্মীদের নথিভুক্ত করতে পারবে।
  • দ্বিতীয় ধাপের প্রথমে ইউআইডিআই আধার অনুযায়ী নথিভুক্ত কর্মীদের যাচাই করবে। পরে সংশ্লিষ্ট নোডাল অফিসার যাচাই করবেন।

এই দু’টি ধাপের পরেই কর্মীরা স্থানীয় বায়োমেট্রিক টার্মিনাল থেকে উপস্থিতি নথিভুক্ত করতে পারবেন। প্রথম পর্যায়ে যে সমস্ত সরকারি অফিস নাম নথিভুক্ত করতে পারবে না তারা দ্বিতীয় পর্যায়ে নথিভুক্ত করতে পারবে। সমস্ত সরকারি অফিস এনআইসি ডাটা সেন্টারে বসানো সাধারণ ব্যাক-এন্ড পরিকাঠামো প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারবে।

বায়োমেট্রিক উপস্থিতি পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য
  • ক্লাউড-নির্ভর উপস্থিতি রাখার সফটওয়্যার বসানো হবে। এটি পরিচালিত হবে এনআইসি এবং জাতীয় ডাটা কেন্দ্র থেকে।
  • প্রমাণীকরণের জন্য জাতীয় ডাটা কেন্দ্র এবং ইউআইডিএআই মধ্যে একটি বিশেষ এবং নিরাপদ যোগাযোগের ব্যবস্থা করবে এনআইসি।
  • ভবনে সংযোজিত এনআইসি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রতিটি মন্ত্রক/দফতর/অধস্তন সংস্থাগুলি এটি ব্যবহার করতে পারবেন।
  • যাঁরা এই পদ্ধতিতে উপস্থিতি রাখবেন তাঁদের প্রত্যেকেই বায়োমেট্রিক সুবিধাযুক্ত টার্মিনাল/যন্ত্র রাখতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় টার্মিনালের সংখ্যা এবং অবস্থান সংশ্লিষ্ট অফিসকেই ঠিক করতে হবে। এই যন্ত্রগুলি রক্ষণাবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট অফিসই করবেন।
  • টার্মিনালগুলির সংযোগ জিপিআরএস/ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে করতে হবে।
  • কর্মীদের স্তর অনুযায়ী উপস্থিতি রাখার ব্যবস্থা তৈরি করবে ইউআইডিএআই/এনআইসি।
  • পাবলিক ডোমেনে প্রয়োজন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ভাবে উপস্থিতির সংকলন এবং প্রকাশ করা হবে।
প্রধান বৈশিষ্ট্য

সাধারণ বায়োমেট্রিক উপস্থিতিতে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য থাকছে :

  • আধারের উপর নির্ভর করে এই পদ্ধতি গড়ে উঠেছে। (আঙুলের ছাপ বা চোখের মণির উপর ভিত্তি করে প্রমাণীকরণ করা হবে)
  • এটি বাস্তব-সময়ে পর্যবেক্ষণ চালানোর সুবিধাযুক্ত উপস্থিতির পদ্ধতি।
  • বিস্তৃত তথ্য পরিচালনা পদ্ধতির (এমআইএস) সুবিধা রয়েছে।
  • খুবই হালকা ব্যবস্থা। এর জন্য বিশেষ কোনও হার্ডওয়ারের প্রয়োজন নেই।
  • একাধিক প্লাটফর্মের (উইনডোজ, অ্যান্ড্রয়েড ইত্যাদি) এবং একাধিক যন্ত্রে (ল্যাপটপ, ডেক্সটপ, ট্যাবলেট ইত্যাদি) একে ব্যবহার করা যাবে।
  • অল্প বিদ্যুৎ যেমন ট্যাবলেটেও ব্যবহার করা যাবে।
  • উপস্থিতি রেকর্ড করতে এক থেকে দু’ সেকেন্ড সময় লাগে, জিপিআরএস সিমের মাধ্যমে ওয়াইফাইতে আট থেকে ১১ সেকেন্ড।

ফেজ-১-এ নিম্নলিখিত কাজ সম্পন্ন করা গেছে :

একটি সাধারণ বায়োমেট্রিক উপস্থিতির পোর্টাল attendance.gov.in তৈরি করা গেছে। প্রথম দফায় ১৫০ কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসে ৫৫,০০০ কর্মীদের নাম নথিভুক্ত করা গেছে। ইউআইডিআই একটি ব্যাক-এন্ড পোর্টাল এবং ক্লায়েন্ট সাইড অ্যাটেডেন্স সফটওয়্যার তৈরি করেছে। ১০০০ শক্তপোক্ত বায়োমেট্রিক টার্মিন্যাল এবং ৫০০০ ডেক্সটপ এসটিকিউসি শংসাপত্রপ্রাপ্ত যন্ত্র বসানো সম্ভব হয়েছে।

প্রথম দফায় যন্ত্র বসানো এবং অন্যান্য খরচাপাতি করেছে এনআইসি এবং ইউআইডিএআই।

জীবন প্রমাণ

জীবন প্রমাণ কী ও কেন

পেনশনপ্রাপকদের জন্য আধারভিত্তিক ডিজিটাল জীবন শংসাপত্র হল জীবন প্রমাণ। দেশের প্রায় এক কোটিরও বেশি পেনশন প্রাপকদের ঝামেলাহীন ভাবে পেনশন পেতে এই ডিজিটাল শংসাপত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।

লক্ষ্য

এই প্রকল্পের লক্ষ্য হল :

  • এই ডিজিটাল শংসাপত্র থাকলে প্রতি বছর নভেম্বর মাসে পেনশনপ্রাপককে আর পেনশনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য শংসাপত্র দেখাতে হবে না।
  • আধারনির্ভর এই ডিজিটাল জীবন শংসাপত্র থাকলে প্রবীণ নাগরিকদের প্রতি বছর জীবন শংসাপত্র দেখানোর জন্য যে ঝঞ্ঝাট পোহাতে হয়, তা বন্ধ হবে।

এই সমগ্র প্রক্রিয়াটির জন্য ডিপার্টমেন্ট অফ ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড আইটি একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছে। যে সফটওয়্যারের মাধ্যমে পেনশনপ্রাপক তাঁর কমপিউটার এবং মোবাইল থেকে নিজের আধার নম্বর এবং বায়োমেট্রিক তথ্য রেকর্ড করতে পারবেন। তারিখ, সময় এবং বায়োমেট্রিক তথ্য সহ পেনশন প্রাপকের মূল তথ্য এন্টি করার সময়ই কেন্দ্রীয় ডাটাবেসে আপলোড হয়ে যাবে। পেনশন দাতা সংস্থা ডিজিটাল শংসাপত্র হিসাবে এই তথ্য দেখতে পারবেন। এর ফলে প্রমাণীকরণের সময় তিনি যে জীবিত ছিলেন তা বোঝা যাবে।

এর আগে পেনশন প্রাপককে পেনশন দাতা সংস্থার সামনে উপস্থিত থাকতে হত বা সেন্ট্রাল পেনশন অ্যাকাউন্টিং অফিস (সিপিএও) কর্তৃক নির্দিষ্ট সংস্থার ইস্যু করা জীবন শংসাপত্র দেখাতে হত। বর্তমানে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে পেনশন পান। রাজ্যগুলি এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রায় সমসংখ্যক ব্যক্তি পেনশন পান। ২৫ লক্ষেরও বেশি অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী পেনশন পান।

কী ভাবে কাজ করবে জীবন প্রমাণ

জীবন প্রমাণ একটি ডিজিটাল আধারভিত্তিক জীবন শংসাপত্র। নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে এটি কাজ করে থাকে।

নাম নথিভুক্ত করুন

নাম নথিভুক্ত করার জন্য পিসি/মোবাইল অ্যাপলিকেশন ডাউনলোড করুন অথবা নিকটবর্তী জীবন প্রমাণ কেন্দ্রে গিয়ে আপনার নাম নথিভুক্ত করুন।

এ জন্য তথ্য হিসাবে আপনার আধার নম্বর, পেনশন পেমেন্ট অর্ডার নম্বর, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর, ব্যাঙ্কের নাম এবং আপনার মোবাইল নম্বর সরবরাহ করতে হবে।

আধারের প্রমাণীকরণ

আপনার বায়োমেট্রিক হিসাবে আঙুলের ছাপ অথবা চোখের মণির মাধ্যমে নিজেকে সনাক্তকরণের প্রমাণ দিন। (অনলাইন প্রমাণীকরণের জন্য জীবন প্রমাণ আধারকেই ব্যবহার করে।)

জীবন শংসাপত্র

সফল ভাবে বৈধতাকরণের পর আপনার স্বীকৃতি স্বরূপ আপনার মোবাইলে একটি এসএমএস আসবে। যে এসএমএসে জীবন প্রমাণ শংসাপত্রের আইডি থাকবে। আপনার শংসাপত্রটি জীবন শংসাপত্র হিসাবে জমা থাকবে যাতে পেনশন প্রাপক বা পেনশন দাতা সংস্থা উভয়েই যে কোনও সময় যে কোনও জায়গা থেকে এটি ব্যবহার করতে পারবেন।

আপনার শংসাপত্রটি সংগ্রহ করুন

জীবন প্রমাণ ওয়েবসাইট থেকে আপনি শংসাপত্রটি পিডিএফ কপি ডাউনলোড করতে পারেন। এ জন্য আপনাকে জীবন প্রমাণ আইডি বা আধার নম্বর দিতে হবে।

পেনশন দাতা এজেন্সি

পেনশন দাতা এজেন্সি জীবন প্রমাণ ওয়েবসাইট থেক জীবন শংসাপত্র ডাউনলোড করতে পারবেন।

ইলেকট্রনিক ডেলিভারি

কোনও মধ্যস্থতা ছাড়াই জীবন শংসাপত্র ইলেকট্রনিক মাধ্যমে পেনশন দাতা এজেন্সিকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। (ই-ডেলিভারি সুবিধার জন্য এজেন্সিকে আমাদের টিমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে) মোবাইল বা কমপিউটার ছাড়াও এই সুবিধা কমন সার্ভিস সেন্টার থেকেও পাওয়া যাবে। এর ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে আধার-প্রাপ্ত ব্যক্তিরা এই সুবিধা নিতে পারবেন।

ডিজিটাল লকার

ডিজিটাল মাধ্যমে দেশের এক জন নাগরিক নিরাপদে তার সমস্ত নথি পরিষেবা প্রদানকারীকে দিতে পারেন। ওই পরিষেবা প্রদানকারী বৈধ্য পথে ইকেট্রনিক মাধ্যমে নথিগুলিকে ব্যবহার করতে পারবেন।

কাগজপত্রের নথি ব্যবহার কম করার জন্য ডিজিটাল লকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সমস্ত নথি আপলোড করার ফলে সেগুলি একাধিক এজেন্সি ব্যবহার করতে পারবে। এই পদ্ধতিতে ভুয়ো শংসাপত্র, ডিগ্রি ইত্যাদির ব্যবহার কমবে। কারণ প্রত্যেকটি নথিই ডিজিটাল মাধ্যমে প্রমাণীকরণের ব্যবস্থা থাকছে।

ডিজিটাল লকার হল একাধিক নথির ভাঁড়ার যেখানে পরিষেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষগুলি একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাটে নথি আপলোড করবে। ব্যক্তিগত লকার একটি মঞ্চ হিসাবে কাজ করে যে লিঙ্ক থেকে সরাসরি সমস্ত নথি ব্যবহার করা যাবে। এর ফলে নাগরিক তাঁর সমস্ত নথি নিরাপদে পরিষেবা প্রদানকারীকে দিতে পারবেন।

সমস্ত প্রক্রিয়াটিকে মসৃণ ভাবে কার্যকর করার জন্য ডিজিটাল লকার টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন (ডিএলটিএস) তৈরি করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ডিজিটাল লকারের দু’টি পাইলট প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রথম প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে মহারাষ্ট্রে। প্রস্তাবিত দ্বিতীয় প্রকল্পটি নেওয়া হবে ন্যাশনাল সিককিউরিটিস ডিপজিটরি লিমিটেড (এনএসডিএল)-এ।

ই-ভাষা

ই-ভাষা মিশন মোড প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে ভারতীয় ভাষাগুলির জন্য প্রযুক্তি উন্নয়ন কর্মসূচির অভিজ্ঞতা থেকে। ই-ভাষার লক্ষ্য ভারতীয় ভাষায় কমপিউটার প্রযুক্তির প্রকাশ, বিষয়বস্তু তৈরি, জ্ঞানের আদান-প্রদান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে জন পরিষেবা প্রদান। বিস্তৃত ভাবে ই-গভর্ন্যান্সের উদ্যোগ ছড়িয়ে দিতে ই-ভাষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়ে ই-গভর্ন্যান্সের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অনেক সহজতর হবে। ই-ক্রান্তিকে তার লক্ষ্যে পৌঁছতে ই-ভাষা বিশেষ জোর দেবে।

ই-ভাষা এমএমপি সমস্ত ই-গভর্ন্যান্স এমএমপি-র গুণগত মান এবং স্থানীয় ভাষায় এমএমপি রূপায়ণের জন্য প্রশিক্ষণে সহায়তা করবে। ই-ভাষা এমএমপি-কে বাস্তবায়িত করতে সেন্টার অফ এক্সলেন্স ফর লোকালাইজেশন ইন ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজেস স্থাপন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

ই-ভাষার প্রধান উদ্দেশ্য হল :

  • বিভিন্ন স্তরে স্থানীয় ভাবে সক্ষমতা তৈরি করা।
  • প্রযুক্তির ফাঁকগুলি খুঁজে বার করার চেষ্টা করা এবং গবেষণা, বিশেষত বলা এবং মোবাইল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ইন্ধন দেওয়া।
  • আন্তর্জাতিক সফটওয়্যার তৈরির নকশা এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয় সফটওয়্যার জীবনচক্রের বিকাশ ।
  • শিল্প এবং শিক্ষা ক্ষেত্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগে স্থানীয়করণ।
  • এক জানলা তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে নির্মাণের মান বজায় রাখা।
  • উদ্ভাবনী এবং বহুভাষিক পণ্যের নকশা ও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোগকে যুক্ত করা।

ডিজিটাল পরিচয়পত্র হিসাবে মোবাইল

দেশজুড়ে মানুষের মধ্যে মোবাইলের ব্যবহার বাড়ছে। তাই বিভিন্ন জনপরিষেবা পাওয়ার জন্য মোবাইলকে ডিজিটাল পরিচয় পত্র হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, বৃহৎ অর্থে এটি আমাদের গতিশীল জীবনে চলমান পরিচয়পত্র হবে উঠবে।

সম্ভাব্য তিন ভাবে মোবাইল আমাদের ডিজিটাল পরিচয়পত্র হয়ে উঠতে পারে।

আধারে সঙ্গে মোবাইলের সংযোগ ঘটিয়ে

অনলাইন প্রমাণীকরণের জন্য ইতিমধ্যেই আধার নম্বরের ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। একটি স্বতন্ত্র সনাক্তকারী সংস্থা ইউআইডিএআই এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সাহায্য দিচ্ছে। কোনও ব্যক্তির মোবাইল নম্বর যদি তার আধার নম্বরের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া হয় তবে, কোনও লেনদেনের সময় প্রত্যেক বার আধার নম্বর দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। তার মোবাইল নম্বরটি আধার নম্বরেরই প্রতিনিধিত্ব করবে। ইউআইডিএআই বা সরকার বা পাবলিক পরিষেবা প্রদানকারী বা টেলকম সার্ভিস প্রোভাইডার (টিএসপি)–তে এটি সম্ভব হতে পারে এসএমএসের মাধ্যমে আধার নির্ভর কেওয়াইসি ব্যবহার করে। পরবর্তীকালে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড এবং পিন—যেগুলির শুধু ব্যবহারকারী জানবেন, এই ব্যবস্থাগুলি যুক্ত করা যেতে পারে।

মোবাইল ডিজিটাল স্বাক্ষর

ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০০০ এবং তথ্যপ্রযুক্তি (সংশোধনী) আইন ২০০৮ অনুযায়ী ডিজিটার স্বাক্ষর শংসাপত্র (ডিএসসি) বৈধ। বর্তমানে এটি ইউএসবি ডিভাইসের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়। তবে এই শংসাপত্র মোবাইলের সিমেও স্টোর করে রাখা যায়। একে বলা হয় মোবাইল ডিএসসি। এর জন্য বিভিন্ন ধরণের এম্বেড প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যবহারকারীর ‘ব্যক্তিগত কি’ সিমে (ক্রিপ্টোগ্রাফিক সিম) সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এই প্রযুক্তিতে মোবাইল থেকে নিরাপদে তথ্য প্রদান করা যায়। ডিজিটাল শংসাপত্র প্রমাণীকরণের সব চেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি এবং ডিজিটাল স্বাক্ষর করা নথি (স্মার্ট ফোনে) আইনত বৈধ্যও বটে। চলমান অবস্থায় এটিকে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্যক্তিগত ‘কি’ নিরাপদ ‘ক্লাউডে’ সংরক্ষিত রাখা হয় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা যেতে পারে।

মোবাইল ভয়েস (কণ্ঠস্বর) বায়োমেট্রিক

প্রতিটি ব্যক্তির কণ্ঠস্বরের আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাই প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ভয়েস বায়েমেট্রিক অনলাইন প্রমাণীকরণের একটি শক্তিশালী পদ্ধতি হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক কালে একাধিক দেশ এই পদ্ধতিকে প্রমাণীকরণের পদ্ধতি হিসাবে গ্রহণ করছে। ভয়েস বায়োমট্রিককে যদি মোবাইল নম্বরে টেক্সট নির্ভর প্রমাণীকরণের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যায় তবে তা অনেক বেশি শক্তিশালী প্রমাণীকরণ পদ্ধতিতে পরিণত হয়। যা ই-প্রমাণ কাঠামোর নির্দেশিত প্রমাণীকরণের তিন নম্বর ধাপের সমান বা তার বেশি নির্ভরযোগ্য হয়। এটি ব্যবহারের জন্য কোনও ব্যক্তির কণ্ঠস্বর রের্কড করতে হবে এবং তাকে মোবাইল নম্বরের অধীনে স্টোর করতে হবে।

আর্থিক লেনদেনে মোবাইলের অন্তর্ভুক্তি

বিদ্যমান পদ্ধতিগুলির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে গ্রামাঞ্চলে এটিএমএ/ মাইক্রো এটিএম তৈরি। কিন্তু বিদ্যুতের সমস্যা, নিরাপত্তা, নগদ পরিচালনা এবং ক্যাশ ইন/ক্যাশ আউট পয়েন্ট তৈরির বাঁধা কাটিয়ে ওঠা রীতিমতো একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আবার অন্য দিকে মোবাইল প্রযুক্তি এবং টেলি কোম্পানিগুলির মোবাইল পরিষেবা ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক এই সমস্যা সমাধান করতে পারে। এর জন্য ব্যাঙ্ক যে সমস্ত সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলবে সেগুলি যাতে মোবাইলের মাধ্যমে পরিচালনার করা যায় তার ব্যবস্থা থাকতে হবে। তবে এই সমাধানগুলির পর্যালোচনা করতে হবে প্রতিটি ধাপে প্রয়োগের নিশ্চয়তা, চ্যালেঞ্জ এবং ঝুঁকি, বিদ্যামান ও প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানিক এবং আইনি কাঠামো, বাজারের বাস্তুতন্ত্রকে মাথায় রেখে।

সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম

‘ই-বস্তা’

স্কুলের বই থেকে ই-বই

সরকারের ডিজিটাল ভারত উদ্যোগের অন্যতম হল ই-বস্তা। এই প্রকল্পে স্কুলের বই ডিজিটাল মাধ্যমে ই-বইয়ের আকারে ট্যাবলেট বা ল্যাপটপে পড়া যাবে। এর মূল উদ্দেশ্য হল বিভিন্ন প্রকাশক (বাণিজিক প্রকাশনা সংস্থাও) এবং স্কুলকে এক প্ল্যাটফর্মে আনা। এর জন্য পোর্টালের পাশাপাশি, গোটা বিষয়টি পরিচালনার জন্য একটি পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ট্যাবলেটে এটি ব্যবহারের জন্য একটি ওয়েব নির্ভর অ্যাপ্লিকেশনও তৈরি করা হয়েছে।

কাদের জন্য ?
  • স্কুলগুলির ব্যবহারের জন্য প্রকাশকরা তাদের বই-পত্র এখানে প্রদর্শন করতে পারবেন।
  • স্কুলগুলি, ক্লাস অনুযায়ী তাদের বাছাই করা সম্পদ একসঙ্গে করে ই-বস্তা হিসাবে জমা রাখতে পারবেন।
  • ছাত্র-ছাত্রীরা এই ই-বস্তা পোর্টাল থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন অথবা স্কুল তাদের এসডি কার্ডের মাধ্যমে দিয়ে দেবে।

পোর্টালের এই কাঠামোর মধ্যে তিন ধরনের স্টেক হোল্ডারকে আনা হচ্ছে। এটি তাদের প্রাথমিক ভাবে নিম্নলিখিত সুবিধাগুলি দেবে :

প্রকাশক

মেটাডাটা সহ ক্লাস, ভাষা, বিষয়, দাম এবং কয়েকটি পৃষ্ঠা আপলোড করবেন ই-বিষয়বস্তু হিসাবে। প্রকাশের পূর্বেও বিষয়বস্তু রিভিউয়ের জন্য আপলোড করা হবে। তবে তা ডাউনলোড করা যাবে না। প্রকাশকরা তাদের বিষয়বস্তুর উপর ব্যবহারকারীর বিভিন্ন মন্তব্য এবং রেটিং দেখতে পাবেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ই-বিষয়বস্তুর পরিসংখ্যানও ডাউনলোড করতে পারবেন।

স্কুল

স্কুলের অনুমোদিত শিক্ষকরা এই পোর্টাল থেকে ক্লাস অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বিষয়বস্ত এক সঙ্গে রেখে দিতে পারবেন। বিভিন্ন প্রকাশকের আপলোড করা বিষয়বস্তু থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী খুঁজে শিক্ষকরা সংগঠিত ভাবে ই-বস্তা তৈরি করতে পারবেন। প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য আলাদা আলাদা নাম দিয়ে ই-বস্তা পোর্টালে রেখে দেওয়া যাবে। পরে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের নিজস্ব ই-বস্তা ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

ছাত্র-ছাত্রী

ছাত্র-ছাত্রীরা এই পোর্টালে এসে তাদের নির্দিষ্ট ই—বস্তা ডাউনলোড করতে পারবে। তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী এই পোর্টাল থেকে বিষয়বস্তুও ডাউনলোড করতে পারবে। যদি কোনও বিষয়বস্তু কিনতে হয়, তবে কেনার জন্য নির্দিষ্ট ‘পেমেন্ট’ পোর্টালে নিয়ে যাওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট অর্থ প্রদানের পর তারা সেই বিষয়বস্তু ডাউনলোড করতে পারবে। একাধিক ই-বস্তার ক্ষেত্রে আশা করা হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা নির্দিষ্ট অ্যাপটি ডাউনলোড করে নেবে।

সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম

ই-বস্তা অ্যাপ

এটি ই-বস্তার জন্য একটি বিশেষ অ্যাপ। নির্দিষ্ট পোর্টাল থেকে এই ই-বস্তা অ্যাপ ডাউনলোড করা যাবে। ডাউন লোড করা ই-বস্তা অ্যাপ যে কোনও অ্যানড্রয়েড ট্যাবলেটে বা মোবাইলে চলবে। এর মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রী খুব সহজে পোর্টালে তৈরি ই-বস্তা ব্যবহার করতে পারবে। ই-বস্তা অ্যাপের মাধ্যমে যে সমস্ত বিষয়বস্তু পাওয়া তা সবই নির্দিষ্ট স্কুল/শিক্ষক আগে থেকে নির্দিষ্ট করে রাখবেন। ই-বস্তার সঙ্গে যুক্ত ইবিএস ফাইলে ক্লিক করলে অ্যাপটি খোলা যাবে।

যে প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়

দ্রুপল সিএমএস সংস্করণ ৭.৩৩ ব্যবহার করে এই পোর্টালটিকে তৈরি করা হয়েছে। একে ই-বস্তা কাঠামো এবং সংশ্লিষ্ট কাজকর্ম চালনা করার জন্য আরও বিস্তৃত করা হয়েছে। ই-বস্তা অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে অ্যানড্রয়েড ৫.০ এপিআই লেভেল ২১ নির্ভর জাভা ৭-এ।

সুবিধা

স্কুল এবং ছাত্র-ছাত্রী উভয়ের জন্য ই-বস্তা অ্যাপে বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। সেই সুবিধাগুলি হল

স্কুল
  • শিক্ষকরা তাদের প্রাধান্য অনুযায়ী বিষয়বস্তু বাছাই করে এক সঙ্গে রেখে দিতে পারবেন।
  • সমৃদ্ধ এবং বিভিন্ন ধরনের বিষয়বস্তু পাওয়া যায়। যার মধ্যে রয়েছে অ্যানিমেশন, অডিও বুক এবং ভিডিও।
  • দ্রুত আপডেট সংস্করণ পাওয়া যায়।
  • কম শিক্ষক রয়েছে যে স্কুলগুলিতে তারা ভালো স্কুলগুলির সম্পদ ব্যবহার করতে পারে।
ছাত্র-ছাত্রী
  • বাস্তব বইয়ের ভার কমায়।
  • স্কুলের তৈরি সংগঠিত সম্পদ ব্যবহার করা যায়।
  • দীর্ঘমেয়াদি খরচ কমে।
  • অ্যানিমেশন, অডিও বই, ভিডিও-র মতো বিস্তৃত সম্পদ পাওয়া যায়।
  • অন্য স্কুলের ই-বস্তা ব্যবহার করা যায়।

মোবাইলের যুগে অ্যাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ই-বস্তা অ্যাপ শিক্ষকদের যেমন ছাত্রবন্ধু হয়ে উঠতে সুযোগ করে দেবে, তেমনি বাস্তব বইয়ের বোঝা কমিয়ে ছাত্র-ছাত্রীকে লেখাপড়ায় আরও আগ্রহী করে তুলবে। যেহেতু ই-বস্তায় মাল্টিমিডিয়ার সহায়তা নেওয়া হয়, তাই পাঠ্যবিষয় ভিত্তিক পড়াও ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে আরও আকর্ষণী হয়ে উঠবে।

সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম

ই-জিসিএফ (ই-গভর্ন্যান্স সক্ষমতা কাঠামো)

জাতীয় ই-গভর্ন্যান্স পরিকল্পনা সফল ভাবে রূপায়ণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেহেতু এটি সম্পূর্ণ একটি নতুন পদক্ষেপ তাই রাজ্যগুলির অংশগ্রহণ এর জন্য বিশেষ ভাবে জরুরি। এই পরিকল্পনা রূপায়ণের জন্য ২০০৮ সালের ১০ জানুয়ারি একটি সক্ষমতা তৈরি (ক্যাপাসিটি বিল্ডিং সংক্ষেপে সিবি) প্রকল্প নেয় ভারত সরকার। ই-গভর্ন্যান্সকে প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির পারদর্শিতায় যে ফাঁক রয়েছে তা পূরণ করাই এর উদ্দেশ্য। পেশাদারি সহায়তার জন্য তৈরি করা হয়েছে স্টেট ই-গভর্ন্যান্স মিশন টিম (এসইএমটিএস)। যার কাজ হবে রাজ্যে প্রকল্পগুলির পরিচালনা এবং পর্যবেক্ষণ।

ই-গভর্ন্যান্স সক্ষমতা কাঠামোর উদ্দেশ্য

ই-গভর্ন্যান্স সক্ষমতা কাঠামোর লক্ষ্য হল ই-গভর্ন্যান্সের কোনও প্রকল্পে কী ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন তা চিহ্নিত এবং সংজ্ঞায়িত করা। প্রাথমিক ভাবে এই কাজটি না করলে ই-গভর্ন্যান্স পরিকল্পনাকে সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে না। চিহ্নিতকরণ এবং সংজ্ঞায়িত করার উপর ভিত্তি করে সক্ষমতা তৈরির কর্মসূচিকে শক্তিশালী করা যাবে।

ই-জিসিএফ ই-গভর্ন্যান্সকে প্রয়োগের জন্য টুলকিট প্রকাশ করবে। এই টুলকিট ই-গভর্ন্যান্সকে কার্যকরী ভাবে প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি নির্দিষ্ট কাঠামো মেনে ধাপে ধাপে কী ভাবে একটি ই-গভর্ন্যান্স ব্যবস্থা তৈরি করা যাবে তা বলে দেবে এই টুলকিট।

এই কাঠামোর মধ্যে ই-গভর্ন্যান্সে প্রাথমিক ভাবে ১৯ কাজের ভূমিকা খুঁজে পাওয়া গেছে। কাজগুলিকে দু’টি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রশাসনিক/ পরিচালকের ভূমিকা এবং প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রের ভূমিকা।

যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যগুলিকে যদি ই-গভর্ন্যান্স উদ্যোগের ক্ষেত্রে সক্রিয় না করা যায় তবে এর বাস্তবায়ন কখনই সম্ভব নয়। সে কারণে ই-গভর্ন্যান্সকে প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির পারদর্শিতাকে তৈরি করা জরুরি এবং আশু কাজ। পারদর্শিতার ক্ষেত্রে যে ফাঁক রয়েছে তা পূরণ করতে সরকার সক্ষমতা তৈরির একটি প্রকল্প নেয়। ই-গভর্ন্যান্স পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি এই সক্ষমতা তৈরির প্রকল্পও একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে চালিয়ে যেতে হবে। না হলে মূল লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না।

সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম

ই-সঙ্গম

ই-সঙ্গম ব্যবহারকারী এবং মূল প্রকল্পের মধ্যে কার্যত সেতু হিসাবে কাজ করে। এই ধরনের সেতু ছাড়া ই-গভর্ন্যান্স প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করা বেশ সমস্যার। ই-গভর্ন্যান্সের ক্ষেত্রে ই-সঙ্গমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৮ সালের অগস্ট মাস থেকে ই-সঙ্গম কাজ করতে শুরু করেছে। ২০১৫-এর এপ্রিল মাসে এই প্রকল্প ফেজ-২-এ পা রাখবে। ই-সঙ্গমের লক্ষ্য হল ই-ক্রান্তির নীতি মেনে ই-গভর্ন্যান্সের ক্ষেত্রে যেগুলি নাগরিককে পরিষেবা প্রদান করে সেগুলি নিয়ে কাজ করা। ই-গভর্ন্যান্স উদ্যোগের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মুক্ত অ্যাপলিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস নীতি অনুযায়ী ভারত সরকার সমস্ত সরকারি অফিসে মুক্ত সফটওয়্যার ব্যবহারের জন্য উৎসাহ দিয়ে থাকে। বর্তমানে ২৫ রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ই-গভর্ন্যান্স প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত ২৯ পরিষেবা প্রদানের জন্য নথিভুক্ত করা হয়েছে।

মূল কার্যক্রম

ই-সঙ্গম ই-গভর্ন্যান্সের ক্ষেত্রে মধ্যবর্তী বা পরিষেবা নির্ভর কাঠামোরূপে কাজ করে । এটি থাকার ফলে ডিপার্টমেন্টের কাজও বেশ কিছুটা সুবিধাজনক হয়ে যায়। এর মূল কাজগুলি হল:

  • কয়েকটি ক্ষেত্রে অদৃশ্য কর্মপদ্ধতির সুবিধা প্রয়োজন তবে তা সময়সাপেক্ষ, যেমন ম্যাসেজিং লোড ম্যানেজমেন্ট, অফলাইন ম্যাসেজ ডেলিভারি, অডিট লগিং এবং মনিটারিং।
  • পুনর্ব্যাবহারযোগ্য উপাদানের সহজলভ্যতা।
  • ডিপার্টমেন্টগুলি সফটওয়্যারের কাজকর্মের উপর ধ্যান দিতে পারে। ফলে কাজ আরও সুবিধাজনক হয়ে যায়।
  • নথিভুক্ত পরিষেবাগুলির মধ্যে এক জায়গা থেকে নিরন্তর পরিষেবা প্রদান।
বৈশিষ্ট্য

ই-সঙ্গমের বেশ কয়েকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি হল:

  • বিক্রেতার বাধা ছাড়াই মুক্ত মঞ্চ
  • সমলয় এবং অসমলয় ম্যাসেজ আদান-প্রদানের সহয়তা
  • ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বজায় রাখে
  • স্যাপ অ্যাপ্লিকেশনের অনুমোদন
  • পিকেআই সহায়তা
  • ক্লায়েন্ট এবং গেটওয়ের মধ্যে দ্বিমুখী ম্যাসেজ প্রবাহ সুরক্ষিত করার জন্য এসএসএল
  • এক্সএমএল সিগনেচার সহায়তাযুক্ত
  • অডিট লগিং এবং টাইম স্টাম্পিং
  • আইএসও/আইইসি ২৭০০১:২০০৫ (আইএসএমএস) অনুবর্তী
  • কোনও ডাটা নষ্ট ছাড়াই কাজের ধারাবাহিকতা
  • পরিবর্তনযোগ্য কাঠামো
  • সুনিশ্চিত সবরাহ এবং লেনদেন লগ

সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম

মোবাইল সেবা

দেশে মোবাইল গভর্ন্যান্সকে প্রশাসনিক কাজের মূলধারায় আনতে মোবাইল সেবা একটি উদ্ভাবনী উদ্যোগ। এটি মোবাইলের মাধ্যমে দেশের নাগরিক এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে সমস্ত সরকারি সংস্থা এবং বিভাগের পরিষেবা পৌঁছে দিতে একটি সমন্বিত মঞ্চ হিসাবে কাজ করে। এসএমএস, ইউএসএসডি, আইভিআরএস এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে এই পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যায়।

মোবাইল গভর্ন্যান্স ইলেক্ট্রনিকস ও তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের (ডিইআইটি) অন্যতম আগ্রহের জায়গা। কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে মোবাইলের ব্যবহার ক্রমশ বাড়তে থাকায় ডিইআইটি একে গুরুত্ব দিয়েছে। বিভিন্ন ইলেকট্র্নিক পরিষেবা ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে মোবাইল বিশেষত গ্রামীণ বাসিন্দাদের মধ্যে। তা ছাড়া এলাকাভিত্তিক পরিষেবার জন্য মোবাইল একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ২০১২-র ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডিইআইটি মোবাইল গভর্ন্যান্স পরিকাঠামো তৈরি করে। সেটিই বর্তমানে দেশ জুড়ে সমস্ত সরকারি বিভাগ এবং সংস্থাগুলিতে মোবাইল গভর্ন্যান্সের চালুর ক্ষেত্রে অন্যতম চালক হিসাবে গৃহীত হয়েছে।

এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য হল, পৃথক পৃথক উদ্যোগ গ্রহণ ছাড়াই কেন্দ্রীয় ভাবে সমস্ত কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারি সংস্থাগুলিকে মোবাইল গভর্ন্যান্সের সুযোগ করে দেওয়া।

মোবাইল সেবা একটি সাধারণ ই-গভর্ন্যান্স কাঠামোর মধ্যে সমন্বিত মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ব্যাবহারকারীকে পরিষেবা প্রদান করবে। এর ফলে কম খরচে সমস্ত বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় সাধন অনেক সহজ হবে।

মোবাইল সেবার অংশ হিসাবে কেন্দ্রীভূত মোবাইল সার্ভিস ডেলিভারি গেটওয়ে (এমএসডিজি) জুলাই ২০১১ থেকে কাজ করছে। বর্তমানে এটিকে মোবাইল সেবার মূল পরিকাঠামো ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০১১ সালের জুলাই-তে এমএসডিজি অধীনে এসএমএস চ্যানেলও করা হয়েছে।

‘পুল এসএমএস’ পূর্বে বিন্যাস করা একটি নাগরিক প্রবর্তিত এসএমএস। ‘পুশ এসএমএস’ ব্যবহার করে বিভিন্ন সরকারি বিভাগ/সংস্থা। ১৯০০-এর বেশি বিভাগ/সংস্থা এর মধ্যে রয়েছে এবং ২০০ কোটিরও বেশি এসএমএস নোটিফিকেশন নাগরিক/ব্যবসায়ী সংস্থাকে পাঠানো হয়েছে।

জানুয়ারি ২০১২-তে মোবাইল সেবা পোর্টাল চালু করা হয়েছে। এই পোর্টালে দিনভর নাগরিক এবং সরকারি সংস্থার বিভিন্ন তথ্য লাইভ আপ-টু-ডেট-এর ভিত্তিতে দেওয়া হয়। পোর্টালের ডিপার্টমেন্ট সার্ভিসেস ট্যাবে আগ্রহী বিভাগ/সংস্থা অনলাইনে দ্রুত নিজেদের নথিভুক্ত করে মোবাইল সেবা পরিষেবা নিতে পারবে। ২০১২–তে কেন্দ্রীভূত অ্যাপ স্টোর হিসাবে এমএসডিজি বিভিন্ন সরকারি পরিষেবার অ্যাপ চালু করে। বর্তমানে ফ্রি ডাউনলোডের জন্য ৩১৫ অ্যাপ রয়েছে। মোবাইল সেবা ২০১৪ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের জন পরিষেবা পুরস্কার পেয়েছে।

সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম

ডিজিটাল সাক্ষরতা উদ্যোগ

ইলেকট্রনিক্স এবং আইসিটি অ্যাকাডেমি স্থাপনে আর্থিক সহায়তা

এই প্রকল্পের লক্ষ্য হল আইআইটি, আইআইআইটি, এনআইটি ইত্যাদিতে সাতটি ইলেকট্রনিক্স এবং আইসিটি অ্যাকাডেমি স্থাপন করা। এই অ্যাকাডেমির লক্ষ্য হবে ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্টস, কমার্স, সায়েন্স কলেজ এবং পলিটেকনিক সহ অন্যান্য ইনস্টিটিউটে বিশেষ প্রশিক্ষণ।

এই অ্যাকাডেমি জোর দেবে ইলেকট্রনিক্স এবং আইটিসি ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদীয়মান প্রযুক্তির ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ এবং পুনর্প্রশিক্ষণে। পাশাপাশি এনপিই ২০১২ এবং এনপিআইটি ২০১২ নির্দেশিত উদীয়মান শিল্প/বাজারের প্রয়োজন অনুযায়ীও প্রশিক্ষণ এবং পুনর্প্রশিক্ষণ চলবে।

জাতীয় ডিজিটাল সাক্ষরতা মিশন

আইটি ২০১২-র জাতীয় নীতির লক্ষ্য হল দেশের প্রতিটি ঘরে এক জন করে মানুষকে ই-সাক্ষর করে তোলা। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হল দু’ধাপ সাক্ষরতা কার্যক্রমে ১০ লক্ষ ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া। রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বাছাই করা ব্লকে প্রতিটি যোগ্য পরিবারে অন্তত এক জন ব্যক্তিকে ই-সাক্ষর করে তোলা।

এই প্রকল্পের সময়সীমা ধরা হয়েছে ১৮ মাস। বাজেট ৯৭.০২ কোটি। প্রকল্পটি চালু হয়েছে ২০১৪-র অগস্টে। সমাজের অনগ্রসর শ্রেণি সহ সাধারণ নাগরিকের ডিজিটাল সাক্ষরতা মিশনের কর্মসূচি হিসাবে ই-লার্নিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

ডিজিটাল ভারতের অন্তর্ভুক্ত সাক্ষরতা অভিযান (দিশা)

ডিজিটাল সাক্ষরতা অভিযানের উদ্দেশ্য হল বাছাই করা পরিবারের ৪২.৫ লক্ষ ব্যক্তিকে সাক্ষর করে তোলা। এই লক্ষ্যের বাইরেও প্রায় ৪ লক্ষ ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দেবে শিল্প সংস্থা বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাদের নিজস্ব সম্পদ ব্যবহার করে। বাকি ৩৮.৫ লক্ষ ব্যক্তি প্রশিক্ষণ দেবে সরকার। এর জন্য বাজেট অনুমোদন করা হয়েছে ৩৮০ কোটি টাকা।

সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম

হার্ডওয়্যার উৎপাদন

ডিজিটাল ভারত প্রকল্পের যে রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে তার লক্ষ্য হল সমাজের ডিজিটাল ক্ষমতায়ন এবং জ্ঞান অর্থনীতির বিকাশ। এই প্রকল্পের একটি স্তম্ভ হল ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনকে উৎসাহ দান। সেই লক্ষ্যে সরকার ২০১২ সালের ২৫ অক্টোবর ইলেকট্রনিক্সের জাতীয় নীতি (এনপিই) ২০১২ অনুমোদন করেছে। ২০২০-এর মধ্যে ভারতে ইলেকট্রনিক্স দ্রব্যের চাহিদা ৪০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের বর্তমান অবস্থায় ২০২০ সালের মধ্যে মাত্র ১০ হাজার কোটি ডলার চাহিদাকে ছোঁয়া যাবে। তাই সরকার ইলেকট্রনিক্স এবং আইটি উৎপাদনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বৃদ্ধি এবং কাজের সুযোগ বাড়বে। এই প্রকল্পের মোট বাজেট ৯,৫০৯ কোটি টাকা।

মুখ্য কয়েকটি কার্যক্রম
  • ১. ইলেকট্রনিক্সের জাতীয় নীতি ২০১২-র লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক ইলেকট্রনিক্স সিস্টেম ডিজাইন অ্যান্ড মেনুফ্যাকচারিং শিল্প স্থাপন। যার মাধ্যমে দেশের চাহিদা পূরণ এবং বিদেশের বাজারকে ধরা।
  • ২. পরিবর্তিত বিশেষ ইনসেনটিভ প্যাকেজ প্রকল্প (এম-এসআইপিএস) এই সেক্টরকে আর্থিক সহয়তা করবে সমস্ত দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা এবং বিনিয়োগ টানার জন্য।
  • ৩. ভারতে দু’টি সেমি কন্ডাক্টার ওয়াফের ফ্যাবরিকেশন উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
  • ৪. সরকারের নিজস্ব কাজকর্মের জন্য দেশে তৈরি ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র কেনার নীতি গ্রহণ করেছে। ন’টি এরকম যন্ত্রের মধ্যে থাকছে, ডেক্সটপ পিসি, ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টার, ট্যাবলেট পিসি, স্মার্ট কার্ড, এলইডি পণ্য, বায়োমেট্রিক অ্যাকসেস কন্ট্রোল ডিভাইসেস, বায়োমেট্রিক ফিঙ্গার প্রিন্ট সেনসর ইত্যাদি। দেশে তৈরি এই সমস্ত যন্ত্রাদি কিনে ই-গভর্ন্যান্স কার্যক্রমে ব্যবহার করা হবে।
  • ৫. স্বয়ংক্রিয় রুটে ইলেকট্রনিক্স হার্ডওয়্যার মেনুফ্যাকচারিং সেকটরে ১০০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগের অনুমোদন।
  • ৬. কন্ডিশনাল অ্যাকসেস সিস্টেম (ক্যাশ)-এর উন্নয়ন জন্য পদক্ষেপ এবং ভারতে উৎপাদিত সেটটপ বক্স, ডিটিএইচ টিভি-র চাহিদাপূরণ।
  • ৭. মূল্যায়ন পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করতে ডিইআইটি একটি প্রকল্প নিয়েছে। এই প্রকল্পটি হল ইলেকট্রনিক্স পণ্য পরীক্ষা/গুণমান নিয়ন্ত্রণ ল্যাবরেটরি তৈরি।

সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম

ক্লাউড পরিষেবা, মেঘরাজ

ক্লাউড কম্পিউটিং ইন্টারনেট ভিত্তিক প্রযুক্তি। যার মাধ্যমে আমরা সফটওয়্যার, ফাইল, কম্পিউটারের অন্যান্য তথ্য ব্যবহার ও শেয়ার করতে পারি। একটু সহজ দৃষ্টিকোণ থেকে মেঘজাল বা ক্লাউড হলে অন্তর্জাল বা ইন্টারনেটের ব্যবস্থার নয়া নামকরণ। ডিস্ট্রিবিউটেড, গ্রিড, ইউটিলিটি কম্পিউটিং, ওয়েব ২·০, ক্লায়েন্ট/সার্ভার এরই সমন্বয় হলো ক্লাউড কম্পিউটিং। খুব স্বাভাবিক ভাবে ই-গভর্ন্যান্স উদ্যোগকে প্রসারিত করতে ক্লাউড কম্পিউটিং-এর ব্যবহার জরুরি। এই ক্লাউড কম্পিউটিং-এর সুবিধা নিতে ভারত সরকার একটি উচ্চাকাঙ্খী উদ্যোগ নিয়েছে যার নাম জিআই ক্লাউড বা মেঘরাজ। এই উদ্যোগের মূল্য লক্ষ্য হল, দ্রুততার সঙ্গে ই-গভর্ন্যান্সের পরিষেবা প্রদান। মেঘরাজের জন্য একটি জাতীয় ক্লাউড পরিষেবা পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে। ই-গভর্ন্যান্স অ্যাপস্টোর এই পোর্টালের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় ক্লাউডের বৈশিষ্ট্য
  • মাল্টি লোকেশন ক্লাউড : এনআইসি-র জাতীয় ডাটা সেন্টারগুলিতে একাধিক ক্লাউড নোড তৈরি করা হবে। এগুলি ব্যবহারকারীকে সন্তোষজনক ভাবে হোস্টিং বা অ্যাপের উন্নয়ন ঘটাতে সাহায্য করবে।
  • সেল্ফ সার্ভিস পোর্টাল : ব্যবহারকারী খুব সহজ ভাবে ক্লাইড সম্পদের বিস্তার এবং পরিচালনা করতে পারে।
  • নিরাপদ ক্লাউড : বহু-স্তরীয় নিরাপদ এই ক্লাউড পরিকাঠামোকে পরিচালনা করবে এনআইসি-র সুদক্ষ সাইবার নিরাপত্তা টিম।
  • সুরক্ষিত ব্যবহার: ব্যবহারকারী যে কোনও জায়গায় যে কোনও সময় তার ডিভাইসে নিরাপদে ক্লাউড অ্যাক্সেস করতে পারবেন।
জাতীয় ক্লাউড পরিষেবা যা দিচ্ছে

জাতীয় ক্লাউড পরিষেবা ব্যবহারকারীদের পূর্বে কনফিগার করা ওয়েব অ্যাপলিকেশন এবং ডাটাবেস সার্ভার থেকে বাণিজিক/ওপেন সোর্স সিস্টেম সফটওয়্যার বেছে নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। অ্যাপ্লিকেশন সিস্টেম যা প্রকৃতিগত ভাবে জেনেরিক, সফটওয়্যার সার্ভিস মডেলের অধীনে একাধিক সরকারি সংস্থার ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে। যে পরিষেবাগুলি দেওয়া হয় :

  • ওয়েব সার্ভার
  • অ্যাপ্লিকেশন সার্ভার
  • ডাটাবেস সার্ভার
  • ডেভেলপমেন্ট সার্ভার
  • বেসিক সার্ভার
  • পরিষেবা হিসেবে স্টোরেজ
  • পরিষেবা হিসেবে সফটওয়্যার

সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম

data.gov.in (মুক্ত সরকারি তথ্য মঞ্চ)

প্রশাসনিক কাজকর্মে স্বচ্ছতা আনতে, বিভিন্ন সরকারি তথ্য জনগণের কাছে উন্মুক্ত হওয়া প্রয়োজন। ই-গভর্ন্যান্স এই সুযোগেকে বৃদ্ধি করে। সেই উদ্দেশ্যেই তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন পোর্টাল। এই সব পোর্টালে তুলে দেওয়া তথ্য সহজেই জনগণ দেখতে পারেন। প্রয়োজনে ব্যবহারও করতে পারেন। মূলত সেই লক্ষ্য নিয়েই তৈরি হয়েছে মুক্ত সরকারি তথ্য মঞ্চ data.gov.in। এই পোর্টালে বিভিন্ন মন্ত্রক/বিভাগ তাদের তাদের ডাটা সেট, নথি, পরিষেবা, টুল এবং অ্যাপ্লিকেশন জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য প্রকাশ করতে পারবে। এর উদ্দেশ্য হল সরকারি কাজকর্মে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং সরকারি তথ্যের উদ্ভাবনী ব্যবহারের রাস্তা উন্মুক্ত করা। মুক্ত সরকারি তথ্য মঞ্চ হল ভারত এবং মার্কিন সরকারের যৌথ উদ্যোগ। একে পণ্য হিসাবে প্যাকেজ তৈরি করে বিশ্বব্যাপী অন্যান্য দেশে বাস্তবায়নের জন্য ওপেন সোর্স হিসাবে রাখা হয়।সম্পূর্ণ পণ্যটি ডাউনলোড করা যাবে ওপেন সোর্স কোড শেয়ারিং প্লাটফর্ম, গিটহাব থেকে। চাইলে কোনও দেশ ডাউনলোড করে এটির প্রযোগ করতে পারে। ভারতের মুক্ত সরকারি তথ্য মঞ্চের চারটি প্রধান মডিউল আছে। এদের সম্পর্কে বিস্তারিত নীচে দেওয়া হল :

  • ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ডিএমএস): এই মডিউলটি বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ডাটা ক্যাটালগ জমা দেওয়ার জন্য। নির্দিষ্ট কর্মপদ্ধতিতে অনুমোদন প্রক্রিয়ার পর এটি ওয়েবসাইটে দেখা যায়।
  • কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিএমএস): এই মডিউলটি মুক্ত সরকারি তথ্য মঞ্চের বিভিন্ন বিষয়বস্ত এবং কাজকর্ম পরিচালনা ও আপডেট করার জন্য।
  • ভিজিটর রিলেশনসিপ ম্যানেজমেন্ট (ভিআরএম): বিভিন্ন সময় দর্শক কোনও বিষয়ের উপর মন্তব্য করতে চান। এই মডিউলটি দর্শকদের মন্তব্য প্রতিক্রিয়া পরিচালনার জন্য।
  • কমিউনিটিজ: এই মডিউলটি গোষ্ঠীভিত্তিক ব্যবহারকারীদের জন্য, তাদের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং মতামত সমআগ্রহী ব্যক্তিদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার জন্য।

এর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হল

  • আগ্রহউদ্দীপক ডিজাইন
  • সহজে সম্পদের লভ্যতা
  • মানচিত্র নির্ভর বিশ্বব্যাপী তথ্যসাইট
  • এসএমএস এবং ই-মেল অ্যালার্টের সুবিধা

সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম

ই-গ্রিটিংস এবং ই-সম্পর্ক

ই-গ্রিটিংস এবং ই-সম্পর্ক সরকার এবং নাগরিককে প্রশাসনিক কাজে সক্রিয় করতে একটি উদ্ভাবনী উদ্যোগ। সমস্ত সরকারি আধিকারিক, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং অন্যান্য পেশাদারদের তথ্য একীভূত আকারে রাখতে প্রথম উৎসর্গীকৃত উদ্যোগ ই-সম্পর্ক। প্রশাসনিক কাজকে আরও মশৃণভাবে করতে কর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নত হওয়া প্রয়োজন। সরকারের বিভিন্ন স্তরে ব্যক্তিগত ভাবে পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য উদ্যোগ হল ই-গ্রিটিংস।

ই-গ্রিটিংস

ই-গ্রিটিংসের লক্ষ্য হল পরিবেশবান্ধব মাধ্যমে বিভিন্ন জাতীয় ছুটি এবং অন্যান্য উৎসবের দিনগুলিতে সরকারি আধিকারিক, সহকর্মী এবং বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানানো। এর বিভিন্ন টেমপ্লেট থেকে একাধিক অনুষ্ঠানে ট্যাগ লাইন যোগ করে শুভেচ্ছা পাঠাতে পারবেন। পাশাপাশি ব্যবহারকারী বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক দিবসে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাতে পারবেন। শিক্ষা এবং তথ্যমূলক বার্তাও নাগরিকদের দিতে পারবেন। এই পারস্পরিক শুভেচ্ছা আদান-প্রদানের মাধ্যমে সরকারি কর্মী এবং ব্যবহারকারীর মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করতে সাহায্য করে ই-গ্রিটিংস। এই গ্রিটিংস আদান-প্রদানের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসের গুরুত্ব সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল হন কর্মী ও ব্যবহারকারীরা। পাশাপাশি আন্তর্বিভাগীয় কর্মীদের মধ্যে সম্পর্কও সুদৃঢ় হয়।

ই-সম্পর্ক

দেশ জুড়ে জনপ্রতিনিধি, সরকারি আধিকারিক এবং পেশাদারদের মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ গড়ে তোলার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে ই-সম্পর্ক। এর দু’টি উপাদান :

  • ১। বিভিন্ন মন্ত্রক, বিভাগ, রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির নোডাল অফিসারদের বিস্তারিত যোগাযোগে তথ্য আপলোড করার সুযোগ দেয়।
  • ২। ই-সম্পর্কে নথিভুক্ত আধিকারিক ই-মেল এবং এসএমএস পাঠাতে পারবেন। পেশা, মন্ত্রক, ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী মেল এবং এসএমএস পাঠানোর সুযোগ করে দেয়।

নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া ই-গভর্ন্যান্স উদ্যোগের সাফল্য সম্ভব নয়। দু’টি উদ্যোগই নাগরিকদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। সরকারি অধিকারিকদের যোগাযোগের একীভূত কোনও ডাটাবেস না থাকায় বর্তমানে কোনও মন্ত্রক বা বিভাগের তাদের কর্মীদের কাছে সব সময় পৌঁছতে পারেন না। ই-গভর্ন্যান্স কাঠামোর মধ্যে এই দু’টি পদ্ধতি সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।

সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম

অন্য প্রকল্প

জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সমন্বয় কেন্দ্র

বিভিন্ন ই-গভর্ন্যা্ন্স প্রকল্পকে নিরাপদ করতে নিয়মিত নজরদারি গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য প্রয়োজন একটি সাইবার নিরাপত্তা কেন্দ্রের। দেশের সমস্ত রাজ্যে ই-গভর্ন্যান্স প্রকল্পগুলি যাতে নিরাপদে চলতে পারে সেই জন্য এই কেন্দ্র নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সমন্বয়কারীর ভূমিকা নেবে। দেশের মধ্যে নিরাপদ ভাবে সাইবার স্পেস ব্যবহারের জন্য এটি স্থাপন করা হবে।

ক্রমাগত এবং দ্রুত মূল্যায়ন

ই-গভর্ন্যান্স পরিষেবাগুলির দ্রুত এবং ধারাবাহিক মূল্যায়ন গুরুত্বপূর্ণ। সেই মূল্যায়ন চালুর জন্য একটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়মিত তার প্রতিক্রিয়া জানাবে। যা পরিষেবাকে আরও উন্নত করতে সাহায্য করবে।

ভার্চুয়াল ক্লাসরুম

ভার্চুয়াল ক্লাসরুম অনলাইনে পাঠের একটি পদ্ধতি। এটি দু’ধরনের হতে পারে, একটি ওয়েব নির্ভর এবং অন্যটি সফটওয়্যার নির্ভর। সাধারণ একটি ক্লাস রুমের মতোই ভার্চুয়াল ক্লাসরুমেও ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষক-শিক্ষিকাকে প্রশ্ন করতে পারে। ভারত সরকার দেশের স্কুলগুলিতে ভার্চুয়াল ক্লাসরুম তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। সিটিসি সক্রিয় ট্রেনিং, শিক্ষাদান এবং মূল্যায়ন এই পরিষেবার মধ্য রয়েছে। কার্যকরী কমিটি ৩৫০০ স্কুল এবং ৫০ ডিআইইটিএস-এ ভার্চুয়াল ক্লাসরুম তৈরির সুপারিশ করেছে।

ভৌগোলিক তথ্য প্রদান পদ্ধতি
(জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম সংক্ষেপে জিআইএস)

ই-গভর্ন্যান্স প্রকল্পে সরকারি পরিষেবা আরও ভালো ভাবে পাওয়া যেতে পারে জিআইএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে। জিআইএস হল ভৌগলিক তথ্য ব্যবস্থা। এটি ভূপৃষ্ঠের কোনও স্থান সম্পর্কিত উপাত্ত সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য গৃহীত প্রযুক্তি।এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানচিত্র এবং উপগ্রহ চিত্রে উপস্থাপিত তথ্যের বিভিন্ন লেয়ার বা স্তর সহজে ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ করা যায়। জাতীয় ইনফরমেশন সিস্টেম (এনজিআইএস) বাস্তবায়িত হচ্ছে একাধিক সংস্থার ভূ-স্থানিক তথ্য একীভূত করে। এই সংস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে, সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স সেন্টার, এনআরএসএ এবং ভূবিজ্ঞান মন্ত্রক। এরা ই-গভর্ন্যান্সের জন্য জিআইএস প্লাটফর্ম তৈরি করেছে। এটি পরিষেবা হিসাবে বিভিন্ন মিশন মোড প্রকল্প এবং অন্য ই-গভর্ন্যান্স প্রকল্পকে সহায়তা করে।

সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম

ডিজিটাল ভারত গড়তে এক সঙ্গে কাজ করবে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

ডিজিটাল ভারত গড়ে তোলার জন্য এক সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে ঐকমত্য হল ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।

মার্কিন-ভারত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সংক্রান্ত ওয়ার্কিং গ্রুপের দু’দিনের বৈঠকে, ভারতীয় প্রতিনিধি দলের প্রধান তথ্যপ্রযুক্তি সচিব আর এস শর্মা এইচ ওয়ান বি ভিসা এবং বিপুল সংখ্যক দক্ষ ভারতীয় পেশাদারের ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান নিয়ে তাঁদের উদ্বেগের কথা জানান।

যৌথ বিব‌তিতে জানানো হয়েছে, ডিজিটাল পরিকাঠামো বাড়িয়ে, ই-গভর্ন্যান্স ও ই-পরিষেবা চালু করার মাধ্যমে ডিজিটাল ভারত গড়ে তুলতে এক সঙ্গে কাজ করতে একমত হয়েছে ভারত ও আমেরিকা। আর্থিক সুযোগ ব‌দ্ধ, কাজের সুযোগ বৃদ্ধি, উৎপাদন বাড়ানো ও নাগরিকদের ক্ষমতায়নের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে বৈঠকে একমত হয়েছে দুই পক্ষ। মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেত‌‌ৃত্বে ছিলেন আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও তথ্য সংক্রান্ত নীতি বিভাগের দফতরের কোঅর্ডিনেটর ড্যানিয়েল সেপালভেডা।

দুই প্রতিনিধি দল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ও টেলি কমিউনিকেশন নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করে। আলোচনায় গুরুত্ব পায় ব্রডব্যান্ডের প্রয়োগ, মোবাইল যুগের উপযুক্ত স্পেকট্রাম নীতি। ই-গভর্ন্যান্স ও আইসিটি ও টেলি কমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রণ নীতির ক্ষেত্রে সেরা অভিজ্ঞতাগুলি নিয়েও মতামত আদানপ্রদান হয়।

ভারতের দক্ষ পেশাদারদের বিদেশে কাজ করতে যাওয়া আসার সমস্যা নিয়েও এই বৈঠকে আলোচনা হয়। এ ব্যাপারে ভারতীয় প্রতিনিধিরা তাঁদের উদ্বেগের কথা জানান এবং মার্কিন প্রশাসন এই পেশাদারদের ভিসা সংক্রান্ত সমস্যার দিকটি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন বলে কথা দেন।

অন্য দিকে মার্কিন প্রতিনিধিরা উপকরণের পরীক্ষা ও শংসাপত্র দেওয়ার ব্যপারে কিছু সমস্যা নিয়ে তাঁদের উদ্বেগ জানান।

আইসিটি-র ব্যবহার বৃদ্ধি, তথ্যকে দেশের সীমানায় আটকে না রাখা এবং ইন্টারনেটকে অর্থনৈতিক উন্নতির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা বিষয়ে দু’পক্ষের ঐকমত্য হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

সরাসরি সরকারের সঙ্গে যুক্ত নন, এমন কয়েক জন বিশেষজ্ঞের একটি প্যানেল ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ ও ‘ডিজিটাল ভারত’ উদ্যোগকে সফল করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতি তৈরি করার ব্যাপারে তাদের মতামত দেন।

সূত্র: http://www.igovernment.in

ডিজিটাল ভারত কর্মসূচি : সরকারি প্রশাসন সংস্কারে নজিরমূলক উদ্যোগ

ই-প্রশাসনে ভারত অনেক পিছিয়ে

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সরকারি প্রশাসন সংস্কার করলে বিভিন্ন পক্ষের জন্য হরেক সুযোগসুবিধে জোগানো সম্ভব (দ্বিবেদী ও অন্যান্য ২০১৩)। এ হেন সংস্কারের মাধ্যমে সরকারি প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা, কার্যকারিতা, স্বচ্ছতা বাড়ে। আমলাতান্ত্রিকতার ফাঁস কমে। যোগাযোগ ও সমন্বয়ের উন্নতি হয়। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এর ফলে সর্বত্র ও সব সময় নাগরিক-কেন্দ্রিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভর সরকারি পরিষেবার জোগান ও প্রাপ্তি নিশ্চিত করা যায় (দ্বিবেদী ও অন্যান্য ২০১৩)।

গত নব্বই দশকের শেষাশেষি ই-প্রশাসনের মাধ্যমে ভারতে এই সংস্কারের গোড়াপত্তন। ২০০৬-এ জাতীয় ই-প্রশাসন পরিকল্পনা (এনইজিপি) চালু হওয়ার পর সংস্কারের গতি বাড়ে। এ সত্ত্বেও, আমাদের দেশ এখনও পিছিয়ে। বিশ্ব ই-প্রশাসন উন্নয়ন সূচকে (রাষ্ট্রসংঘ ই-প্রশাসন সমীক্ষা, ২০১৪) ভারতের স্থান ১১৭ দেশের পর। যোজনা পত্রিকার আগে এক নিবন্ধে দ্বিবেদী এর কারণ চিহ্নিত করেছেন। যেমন — কেন্দ্র, রাজ্য ও জেলা স্তরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থার খণ্ডীকরণ, সংহত ব্যবস্থার অভাব, যথেষ্ট সংখ্যক সাধারণ পরিষেবা কেন্দ্র (কমন সার্ভিস সেন্টার) না থাকা, সচেতনতার অভাব, ডিজিটাল সাক্ষরতার কম হার, আঞ্চলিক ভাষায় ই-পরিষেবা অমিল, আস্থাহীনতা ও সেই সঙ্গে নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিয়ে আশঙ্কা (দ্বিবেদী ও অন্যান্য ২০১২; রানা ও অন্যান্য ২০১৩)।

ওই নিবন্ধে অবস্থার উন্নতির জন্য এক গোছা সুপারিশও ছিল। যেমন বর্তমান ব্যবস্থাগুলির ম্যাপ করা, হালফিলকার ব্যবস্থাগুলি সংহত ও সেগুলি মসৃণ ভাবে কাজে লাগানো, পরিষেবা পৌঁছে দিতে এক মোবাইল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার, ভয়েস-বেসড মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন-এর বিকাশ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে নাগরিকদের সড়গড় করার জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, দেশের আনাচেকানাচেও সাধারণ পরিষেবা কেন্দ্র পরিষেবা কেন্দ্র গড়ে তোলা। এ ছাড়া, আঞ্চলিক ই-পরিষেবার সংস্থান এবং ভারতের প্রেক্ষিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভর সরকারি প্রশাসন সংস্কার কর্মসূচিকে কার্যকর করে তুলতে ইলেকট্রনিক ব্যবস্থায় মানুষের আস্থা ও নিরাপত্তা বোধ সৃষ্টি করা দরকার (দ্বিবেদী ও অন্যান্য ২০১৩)।

অধুনা, ভারত সরকারের ঘোষিত নয়া দৃষ্টান্তমূলক উদ্যোগে উপরের প্রায় সব দিকই ঠাঁই পেয়েছ। এখন এ নিবন্ধে ‘ডিজিটাল ভারত কর্মসূচি’ নামে পরিচিত এই যুগান্তকারী উদ্যোগটি সাধারণ ভাবে খতিয়ে দেখা হবে। কর্মসূচিটির সফল রূপায়ণ হলে ভারতের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও সরকারি প্রশাসন সংস্কারে এক উল্লেখযোগ্য সদর্থক প্রভাব পড়বে।

সূত্র : যোজনা, ফেব্রুয়ারি ২০১৫

তিনটি মূল বিষয়

এই কর্মসূচি বিভিন্ন মন্ত্রকের সম্মিলিত উদ্যোগ। ভারতকে এক ডিজিটাল-ভিত্তিক ও সক্ষম তথ্য সমাজ এবং জ্ঞান অর্থনীতিতে রূপান্তর করা এর লক্ষ্য। জাতীয় ই-প্রশাসন পরিকল্পনার এক বড়সড় নব কলেবর যেন এই কর্মসূচি। বৈদ্যুতিন ও তথ্য-প্রযুক্তি দফতরের পরিকল্পিত এই কর্মসূচি বাবদ বরাদ্দ অঙ্ক এক লক্ষ কোটিরও বেশি টাকা। গত ২০ আগস্ট ২০১৪, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা অনুমোদিত ডিজিটাল ভারত কর্মসূচি ২০১৮-এর মধ্যে এক উচ্চাকাঙক্ষী লক্ষ হাসিল করতে চায়। সরকারের প্রণালী আমূল বদলে নতুন ভাবে ছকা ও ডিজিটাইজ করা এবং সরকারি পরিষেবা ইলেকট্রনিক ভাবে পাওয়ার ব্যবস্থা করা এই বিরাট উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। সেই সঙ্গে কর্মসংস্থানেও অবদান রাখা।

ডিজিটাল ভারত কর্মসূচির চিন্তাভাবনার মূলে রয়েছে তিনটি বিষয়। এক, প্রত্যেক নাগরিকের জন্য পরিকাঠামোগত সুযোগ। দুই, চাহিদামতো শাসন ও পরিষেবা। তিন, নাগরিকদের ডিজিটাল ক্ষমতায়ন। এক নম্বর রেখাচিত্রে

এই তিন ক্ষেত্রে তুলে ধরা হয়েছে। আর পরের অনুচ্ছেদগুলিতে এই তিন ক্ষেত্র নিয়ে বিশদ আলোচনা করা আছে।

প্রত্যেক নাগরিকের জন্য পরিকাঠামোগত সুযোগের মধ্যে আছে : নাগরিকদের ডিজিটাল ক্ষমতায়নে সব গ্রাম পঞ্চায়েতে হাইস্পিড ইন্টারনেটের ব্যবস্থা, নাগরিকদের ডিজিটাল আইডেনটিটি, আর্থ-সামাজিক ক্ষমতায়নে নাগরিকদের জন্য মোবাইল ফোন এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, কাছাকাছি সাধারণ পরিষেবা কেন্দ্রের সুযোগ, ইলেকট্রনিক পরিষেবার চল বাড়াতে দেশে এক নিরাপদ ও সুরক্ষিত সাইবার স্পেস গঠন।

চাহিদামতো শাসন ও পরিষেবার মধ্যে পড়ে বিভিন্ন মন্ত্রক বা দফতরের মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে এক-জানলা ব্যবস্থায় সহজে হরেক সরকারি পরিষেবার সুযোগ। অনলাইন ও মোবাইল প্লাটফর্ম কাজে লাগিয়ে এ হেন পরিষেবা যথা সময়ে পৌঁছে দেওয়া দরকার। ঝামেলা না পুইয়ে তথ্যের সুযোগ পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি নাগরিকের প্রাপ্য হক ক্লাউডে রাখতে হবে। ডিজিটাল সরকারি পরিষেবার ব্যবস্থা করে ব্যবসা-বাণিজ্যে ঝুটঝামেলা হঠানো উচিত। এতে ইলেকট্রনিক ও ক্যাশলেস আর্থিক কারবারের সুবিধে রহবে।

নাগরিকদের ডিজিটাল ক্ষমতায়ন জোর দিয়েছে : তাদের ডিজিটাল সাক্ষরতা, যাবতীয় সরকারি নথিপত্র /সার্টিফিকেট ক্লাউডে পাওয়ার ব্যবস্থা, আঞ্চলিক ভাষায় ডিজিটাল পরিষেবা মেলা এবং নাগরিকদের প্রাপ্য সব কিছু ক্লাউডের মাধ্যমে পোর্টেবল করা।

সূত্র : যোজনা, ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ন’টি আবশ্যিক বিষয়

ডিজিটাল ভারত কর্মসূচি তিন মূল ক্ষেত্র সফল করতে আবশ্যক ৯টি বিষয়ও চিহ্নিত করেছে। ১) ব্রডব্যান্ড হাইওয়ে, ২) সকলের জন্য মোবাইল সংযোগের সুযোগ, ৩) পাবলিক ইন্টারনেট অ্যাকসেস কর্মসূচি, ৪) ই-শাসন প্রযুক্তির মাধ্যমে শাসন ব্যবস্থার সংস্কার, ৫) ই-ক্রান্তি—পরিষেবার বৈদ্যুতিন জোগান, ৬) সকলের জন্য তথ্য, ৭) বৈদুতিন উৎপাদন, ৮) কর্মসংস্থানের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি এবং ৯) আর্লি হার্ভেস্ট প্রোগ্রাম (ভারতকে এক ডিজিটাল ক্ষমতাধর সমাজ ও জ্ঞান অর্থনীতিতে রূপান্তর করা এই কর্মসূচির লক্ষ্য)।

ব্রডব্যান্ড হাইওয়ে জাতীয় তথ্য পরিকাঠামোর সমন্বয় এবং সব গ্রাম ও শহরের জন্য ব্রডব্যান্ডের ব্যবস্থা করবে। দ্বিতীয় বিষয়টি সকলের জন্য মোবাইল সংযোগের পরিকাঠামো গড়ে তোলার দিকে নজর দেবে। তৃতীয় বিষয়ের লক্ষ্য ২০১৭-র মার্চ নাগাদ দেশের আড়াই লক্ষ গ্রামের উপযুক্ত সংখ্যক সাধারণ পরিষেবা কেন্দ্র স্থাপন এবং পরের দু’বছরের মধ্যে দেড় লাখ ডাকঘরকে বহুপরিষেবা কেন্দ্রে পরিণত করা। চতুর্থটিতে, বিজনেস প্রসেস রি-ইঞ্জিনিয়ারিং ও ই-শাসনের মাধ্যমে সরকারি ফর্ম সরল করা, অনলাইন রিপোজিটারি ব্যবস্থার, সার্ভিস ও প্ল্যাটফর্মগুলির সমম্বয়, ওয়ার্কফ্লো অটোমেশন এবং নাগরিকদের ইস্যু নিয়ে সমস্যা সমাধানে স্বয়ংক্রিয় গণ অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা সংস্কার করার পরিকাঠামো নিয়েছে।

সরকারি পরিষেবা পেতে হলে নাগরিকদের জন্য টাচ পয়েন্টের ব্যবস্থা করা পঞ্চম বিষয়ের দায়িত্ব। ই-ক্রান্তি ব্যবহার করে বৈদ্যুতিন উপায়ে পরিষেবা জোগানো হবে। এর মধ্যে আছে ই-শিক্ষা, ই-স্বাস্থ্য, চাষিদের জন্য উপকরণের অনলাইন বরাতের প্রযুক্তি, নিরাপত্তার জন্য প্রযুক্তি, মোবাইল ব্যাঙ্কিং এবং মাইক্রো এটিএম প্রোগ্রামের মাধ্যমে সকলের জন্য আর্থিক পরিষেবা, ই-আদালত, ই-পুলিশ, ই-মেল। সকলের জন্য তথ্য ষষ্ঠ বিষয়টির আওতাধীন। সরকার অনলাইন তথ্য ও নথিপত্রের ব্যবস্থা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নাগরিকদের হালফিলের খবর দেওয়ার জন্য সামাজিক মিডিয়ার সঙ্গে সক্রিয় যোগাযোগ রাখতে তৎপর থাকবে। এ জন্য ইতিমধ্যে চালু হয়েছে মাইগভ.ইন পোর্টাল। বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতে নাগরিকদের জন্য থাকবে অনলাইন ম্যাসেজ। বৈদুতিন সামগ্রী উৎপাদনের ক্ষেত্রটিও সপ্তম বিষয়ের মধ্যে পড়ে। সরকারের লক্ষ দেশেই ২০২০ সাল নাগাদ যাবতীয় বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জন। তবে বর্তমান কাঠামো লক্ষ্য পূরণ করার পক্ষে যথেষ্ট নয়। এই ত্রুটিবিচ্যুতি দূর করতে বেশ কিছু কর্মসূচির ভাবনা চিন্তা করা হচ্ছে। অষ্টম ও ডিজিটাল ভারত কর্মসূচির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থান। উত্তরপূর্বাঞ্চলে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর পরিষেবার ব্যাপক বন্দোবস্ত গড়ে তোলা। আর নবম বিষয়টি হল আর্লি হার্ভেস্ট প্রোগ্রাম—এই কর্মসূচির লক্ষ্য ভারতকে এক ডিজিটাল সমাজ ও জ্ঞান অর্থনীতিতে রূপা্তরিত করা। মেসেজের জন্য একটি আইটি প্ল্যাটফর্ম, সরকারি ই-গ্রিটিং, সরকারি কার্যালয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা ইত্যাদির জন্য এই কর্মসূচি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে।

সূত্র : যোজনা, ফেব্রুয়ারি ২০১৫

দূর হবে ‘ডিজিটাল বিভেদ’

ডিজিটাল ভারত উদ্যোগের জন্য ‘নজিরমূলক’ ও ‘যুগান্তকারী’ কথা দু’টি আমরা ব্যবহার করেছি যথেষ্ট ভেবেচিন্তেই। কারণ, আমাদের মতে এই উদ্যোগ ‘সার্বিক’ এবং শহর-গ্রাম নির্বিশেষে সব দেশবাসীকে অন্তর্ভুক্ত করা।

‘সার্বিক’ বলতে আমরা বুঝিয়েছি ডিজিটাল ভারত কর্মসূচি যাবতীয় আবশ্যক ও পরস্পর-সংযুক্ত দিকে দৃষ্টি দিয়েছে। যেমন— পরিকাঠামো উন্নয়ন, সংহত ও স্বচ্ছন্দ বৈদ্যুতিন পরিষেবা এবং নাগরিকদের ডিজিটাল সাক্ষরতা। এক নম্বর রেখাচিত্রে

দেখানো হয়েছে, নাগরিকদের প্রকৃত ডিজিটাল ক্ষমতায়নের লক্ষ্য অর্জনের জন্য শাসনের সঙ্গে পরিকাঠামো ও স্বচ্ছন্দ ই-পরিষেবা আবশ্যক। এই প্রধান ক্ষেত্রগুলির কোনও একটিতে দুর্বলতা থাকলে ভারতকে ডিজিটাল ভারতে রূপান্তরের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে। তাদের প্রাপ্তব্য সম্বন্ধে ব্যবহারকারীদের সচেতনতার অভাব এবং সেই সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থা ব্যবহারে প্রয়োজনীয় দক্ষতা না থাকলে পরিকাঠামো ও ই-পরিষেবা মূল্যহীন, ডিজিটাল সাক্ষরতার ক্ষেত্রে এ দিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি। ডিজিটাল ভারতের কর্মসূচি শুধুমাত্র শহরাঞ্চলের উন্নয়নের দিকে নজর রেখে দায়িত্ব শেষ করতে চায় না, বরং এটা সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। গ্রামের মানুষের উন্নতির দিকেই হয়তো বেশি নজর। পরিকল্পনা ঠিকঠাক কাজে লাগালে শহর ও গ্রামের মধ্যে ‘ডিজিটাল বিভেদ’ দূর করতে ইন্টারনেট সংযুক্তি বড় ভূমিকা নেবে। গড়ে উঠবে সবার জন্য সমতাভিত্তিক তথ্য সমাজ ও জ্ঞান অর্থনীতির বনেদ।

সূত্র : যোজনা, ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ

ডিজিটাল ভারত কর্মসূচির ব্যাপকতা (পরিসর, বাজেট, সুবিধে, দ্রুত সম্পন্ন করার উচ্চাকাঙক্ষার প্রেক্ষিতে), ভোল পালটে দেবার গুণ ও সেই সঙ্গে ব্যাপক কর্মসংস্থান ও দক্ষতা উন্নয়নে অবদানের কথা মনে রেখে আমরা একে ‘যুগান্তকারী’ আখ্যা দিয়েছি। ডিজিটাল ভারত কর্মসূচির লক্ষ্য ১.৭ কোটি সরাসরি ও ৮.৫ কোটি পরোক্ষ কর্মসংস্থান। দেশে আগের কোনও ডিজিটাল কর্মসূচি ধারেভারে এর কাছে ঘেঁষতে পারে না। গুগল, মাইক্রোসফটের মতো বৃহৎ আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ও ন্যাসকম হেন অ্যাসোসিয়েশন তো আর এমনি এমনি এই কর্মসূচি নিয়ে গরজ দেখাচ্ছে না! আর এক দিক থেকেও কর্মসূচিটি যুগান্তকারী — বৈদ্যুতিন বাণিজ্য ও ডিজিটাল বিপণনের ব্যাপক চল শুরু হওয়ায় গ্রামাঞ্চলে ভোগ্যপণ্যের খুচরো ব্যবসা আমূল পালটে যাবে। ‘নজিরমূলক’ ও ‘যুগান্তকারী’ হওয়ায় ডিজিটাল ভারত কর্মসূচির গুণকীর্তনে শিল্পমহলের কেষ্টবিষ্টুরা তো একেবারে গদগদ। দেশবিদেশের সংবাদমাধ্যমেও তা জায়গা কেড়ে নিয়েছে। যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হচ্ছে এই কর্মসূচির খবর।

ডিজিটাল ভারত কর্মসূচি রূপায়ণের কাজ এগোনোর পর এর উপকার বোঝা যাবে। এখন ভারতে এক মজবুত ও স্থায়ী সরকার হাল ধরেছে। কর্মসূচির একটা বড় অংশ তাই পরিকল্পনা মাফিক সম্পূর্ণ হবে বলে ধরে নেওয়া যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই অগ্রগতি হয়েছে। যেমন অফিস কাছারিতে হাজিরায় বায়োমেট্রিক প্রযুক্তি ধাপে ধাপে চালু করার কাজ এগোচ্ছে ভালো ভাবেই। তবে কিনা, ডিজিটাল সাক্ষরতা ও মানব উন্নয়নের মতো দিকে সবাইকে শামিল করতে সময় লাগাটা খুব স্বাভাবিক। দক্ষতার প্রসার ও সচেতনতা এবং মানুষের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গি কখনও শুধুমাত্র জটিল কর্মকাণ্ড নয়, এক জটিল ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে কাজের কাজ হতে বহু বছর লাগতে পারে। বিশেষ করে গ্রামে ডিজিটাল সাক্ষরতা উন্নয়ন ও প্রসারের জন্য আমরা এক স্পষ্ট, সুপরিকল্পিত ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগোনোর সুপারিশ করছি।

নির্দিষ্ট একটা সময়সীমা বেঁধে সবাইকে ডিজিটাল সাক্ষর করে তোলার কোনও জাদুমন্ত্র অবশ্য কারও হাতে নেই। বিপণনমুখী বিভাজন ও লক্ষ্যের কর্মপন্থা এ কাজ সফল করার হাতিয়ার হতে পারে। রেখাচিত্র ২-এ

এক বিপণনমুখী নাগরিক শামিলকরণ কাঠামো (সিমিনটিরাস ও অন্যান্য ২০১৪ থেকে নেওয়া) তুলে ধরা হয়েছে। ডিজিটাল সাক্ষরতা বিস্তারে এটা সাহায্য করতে পারে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সাক্ষরতা এবং এই প্রযুক্তি ব্যবহারের বিভিন্ন স্তরের ভিত্তিতে নাগরিকদের শ্রেণিবিভাগ করার পক্ষে সওয়াল আছে এই কাঠামোয়।

সূত্র : যোজনা, ফেব্রুয়ারি ২০১৫

চাই লাগাতার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা

ডিজিটাল ভারত কর্মসূচি ইন্টারনেট সংযুক্তির জন্য ব্রডব্যান্ড, মোবাইল, পাবলিক ইন্টারনেট অ্যাক্সেস পয়েন্ট এবং সরকারি পরিষেবা পেতে সাধারণ পরিষেবা কেন্দ্রের ব্যবস্থার কথা বলেছে। ডিজিটাল বিভেদ কমানোর জন্য এ সব যথেষ্ট কার্যকর উপায়। সকলকে ডিজিটাল সাক্ষর করে তোলার উপযুক্ত সোপান। তবে এ ক্ষেত্রে এক বড় প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করা দরকার। এখনও বহু গ্রামে বিদ্যুৎ অধরা। অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ যখন-তখন চলে যাওয়াটা গা সওয়া। আর ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুতের জোগান ছাড়া ইন্টারনেট, সাধারণ পরিষেবা কেন্দ্র তো খোঁড়া। এই ঝামেলা এড়িয়ে বিদ্যুতের লাগাতার ব্যবস্থা করার জন্য সৌরবিদ্যুৎ বা বায়ুশক্তির মতো বিকল্প উৎস কাজে লাগানো উচিত। বাড়তি একটা লাভও হবে। শক্তির বিকল্প উৎস নিয়ে লোকজনের মধ্যে সচেতনতা গড়ে উঠবে।

ডিজিটাল ভারত কর্মসূচিতে ‘ম্যাসিভ অনলাইন ওপেন কোর্সেস’ বিকল্প পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করার সংস্থান আছে। একেবারে সামনের সারির এই উদ্ভাবনা এখনও ব্যাপক ভাবে গৃহীত হয়নি। এ হেন উদ্ভাবনা গ্রহণের জন্য মানসিকতা বা দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো দরকার। এ জন্য এই উদ্ভাবনার বিকাশে ব্যবহারকারীদের শামিল করার দিকটি গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া, ব্যাপক ভাবে চালু করার আগে এথনোগ্রাফিক গবেষণা ও কয়েকটি বড় পরীক্ষামূলক প্রকল্প হাতে নেওয়া উচিত। সরকারি বিদ্যালয়ের দশা বেহাল। বিশেষত কম অগ্রসর রাজ্যগুলিতে। উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে শিক্ষকরা ততটা দড় নন। এ হেন পরিস্থিতে স্কুলে ব্রডব্যান্ড জুড়লেই সব মুশকিল আসান ভাবাটা ভুল। পড়ুয়াদের শিক্ষাদানের জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি কাজে লাগানোর বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। ব্রডব্যান্ড বিস্তারে বিশ্বের অন্যতম অগ্রণী দেশ ব্রাজিল। এ ক্ষেত্রে ওই দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগালে আমাদের ভালো বই মন্দ হবে না। দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্রডব্যান্ডের প্রসারে স্কুলের ভূমিকা যথেষ্ট। রাষ্ট্রসংঘের বিশ্ব ই-শাসন উন্নয়ন সূচক সংক্রান্ত অধুনা সমীক্ষা অনুযায়ী দেশটির স্থান এক নম্বরে। স্কুলে ব্রডব্যান্ড সংযোগ, ই-বইয়ের চল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে দক্ষতা সৃষ্টি করলে দেশের ছেলেমেয়েরা ‘ডিজিটাল নাগরিক’ হতে পারবে। এর ফলে ডিজিটাল ভেদ হঠানো যাবে আগামী কুড়ি বছরের মধ্যে।

সূত্র : যোজনা, ফেব্রুয়ারি ২০১৫

উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি

কোন দিকের কাজ সম্পূর্ণ হলে তার মূল্যায়ন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ঘাটতি আছে ডিজিটাল ভারত কর্মসূচিতে। দ্বিবেদী ও অন্যদের কথায় (২০১৩) ‘বাঞ্ছিত লক্ষ্য অর্জন করার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মূল্যায়ন আবশ্যক। আগামী দিনে বৈদ্যুতিন পরিষেবার বিকাশের জন্য আগের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতেও তা সাহায্য করবে। সঠিক মূল্যায়নের একই রকম ভুলচুক ফের ঘটলে আশ্চর্যের কিছু নেই।’ ভারতে দুর্নীতি ছেয়ে আছে আগাপাশতলা। এ হেন দেশে ডিজিটাল ভারত কর্মসূচি সঠিক দিশায় এগোচ্ছে কিনা তা সুনিশ্চিত করতে ‘নিরপেক্ষ’ মূল্যায়ন খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখানে নিরপেক্ষ বলতে আমরা দেশবিদেশের পণ্ডিত ও গবেষকদের বোঝাচ্ছি। খেদের কথা, এ যাবৎ এ ক্ষেত্রে তেমন কোনও উচ্চবাচ্য নেই।

এই কর্মসূচি প্রযুক্তি বাণিজ্য ও ব্যবস্থাপনা, সমাজ বিজ্ঞানে গবেষক ছাত্রদের অংশগ্রহণ করার এক মূল্যাবান সুযোগ দেয়। ইন্টারডিসিপ্লিনারি ও ট্রান্সডিসিপ্লিনারি গবেষণা চালানোর এক অসাধারণ ও উপযুক্ত পরিবেশ জোগায়। এর দরুন শুধু ডিজিটাল ভারত কর্মসূচির রূপায়ণ হাসিলে সাহায্য হয় ভাবাটা ভুল। ইন্টারডিসিপ্লিনারি ও ট্রান্সডিসিপ্লিনারি গবেষকরাও উপকৃত হন। গবেষণা কৃষ্টির বিকাশে তা সাহায্য করে।

আজকের ভারতকে ২০২২-এর মধ্যে ‘ডিজিটাল ভারত’-এ পরিণত করার লক্ষ্যে এই রূপান্তর যাত্রার বিষয়ে এখন আমাদের ভাবনা-চিন্তা পেশ করছি। ডিজিটাল ভারত কর্মসূচি চালু করে কেন্দ্রীয় সরকার এই রূপান্তর যাত্রার একটি পথ খুলে দিয়েছে। এই পথ মোটামুটি মসৃণ, স্বচ্ছন্দ। তবে কোনও ভাবেই এটা সিধে সড়ক নয়। আগেই বলেছি বাধাবিঘ্ন, ঝুটঝামেলা আছে। এ সব বাধা কাটাতে এখনও তেমন প্রস্তুত নয় জাতীয় তথ্য কেন্দ্র (এনআইসি)। এ জন্য এ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা জরুরি। এ ছাড়া চূড়ান্ত লক্ষ্য ছোঁয়ার আগে যাত্রা চালিয়ে যেতে হবে। পথে কোনও শৈথিল্য নৈব নৈব চ। এটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ, এই যাত্রাকালে নাগরিকদের লাগাতার ওয়াকিবহাল রাখা উচিত। ডিজিটাল ভারতের বাস্তবায়নের জন্য তাদের প্রস্তুত করতে হবে। সড়গড় করতে হবে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে।

ডিজিটাল ভারতের কর্মসূচি যথাথই এক বৈপ্লবিক উদ্যোগ। সবার ডিজিটাল দক্ষতা গড়ে তোলার সুযোগ দিয়ে এই কর্মসূচি সার্বিক সামাজিক অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছে। মনে রাখতে হবে, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সব নাগরিকের সামাজিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য অজর্ন মাত্র আংশিক ভাবে সম্ভব। গোটা দেশের জন্য তাই এই ডিজিটাল ভারত কর্মসূচি শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি নয়, এক চমকপ্রদ সুযোগ। স্বপ্নকে বাস্তবে হাসিল করতে হলে অবশ্য দেশবাসীকে তাদের অভ্যাস, আচরণ এবং মননে কৃষ্টিগত রদবদল আনতে হবে। ডিজিটাল ভারত কর্মসূচির কারিগরদের কাছে সম্ভবত এটাই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অথচ চিত্তাকর্ষক চ্যালেঞ্জ।

নির্দ্বিধায় বলা যায়, কর্মসূচিটি প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জনে সমর্থ হলে ভারত স্থায়ী জাতীয় বিকল্প ধরে রাখতে পারবে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভারতের ক্ষমতা জোরদার করতে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চাকাঙ্ক্ষী ডিজিটাল ভারত কর্মসূচির কথায় এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ হাতছানি দিচ্ছে ভারতকে।

সূত্র : যোজনা, ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ডিজিটাল ইন্ডিয়া কর্মসূচিতে গতি আনতে উদ্যোগী মোদী

গ্রাম পঞ্চায়েতের দফতরে গেলেই আধার কার্ড কিংবা প্যান কার্ড। চাকরির আশায় এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জে নাম লেখানো কিংবা জমির রেজিস্ট্রেশনও পঞ্চায়েতের দফতরে বসেই।

গ্রামের মানুষের দোরগোড়ায় যাবতীয় সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দিতেই ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ প্রকল্প ঘোষণা করেছিল মোদী সরকার। যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল দেশের প্রায় আড়াই লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতকে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে জুড়ে দেওয়া। তা হলে সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যাবে। কিন্তু গত কয়েক মাসে যে ভাবে এই প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে, তাতে মোটেই খুশি নন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পশ্চিমবঙ্গও ব্যতিক্রম নয়। রাজ্যেও অপটিক্যাল ফাইবার পাতার কাজ ধীর গতিতে এগোচ্ছে।

ক্যাবিনেট সচিব অজিত শেঠের নেতৃত্বে একটি শীর্ষ স্তরের কমিটি এই প্রকল্পের অগ্রগতি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে। সম্প্রতি ওই কমিটির পর্যালোচনায় দেখা গিয়েছে, শ্লথ গতিতে অপটিক্যাল ফাইবার পাতার কাজ এগোচ্ছে। ক্যাবিনেট সচিবের রিপোর্ট পেয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন, ২০১৬-র ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব গ্রাম অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে জুড়ে দেওয়ার কাজ শেষ করতে হবে। কাজের অগ্রগতি দেখতে আগামী সপ্তাহে ফের বৈঠকে বসবেন মোদী।

কতখানি পিছিয়ে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’-র কাজ? যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের বক্তব্য, গোটা দেশে ২ লক্ষ ৪৪ হাজার ৭২৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। এর মধ্যে ৯৭ হাজার ৪৮০টি গ্রাম পঞ্চায়েতকে প্রথম দফায় অপটিক্যাল ফাইবার জালে জুড়ে দেওয়ার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। পুরো প্রকল্পের খরচ ১.১৩ লক্ষ কোটি টাকা। যার মধ্যে সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে অপটিক্যাল ফাইবারের জাল ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ব্যয় হবে ৩০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ১,২৭৫টি গ্রামে কাজ শুরু হয়েছে। গোটা দেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও একই হাল। রাজ্যের ৩,৩৫৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে প্রথম দফায় ২,৬৪২টি গ্রাম পঞ্চায়েতে কাজ হওয়ার কথা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মাত্র ৩৮টি গ্রামে কাজ শুরু হয়েছে।

এই অপটিক্যাল ফাইবার পাতা হলে যাতে ‘রাইট অব ওয়ে’ কর আদায় করা না হয়, সে জন্য কেন্দ্র এর মধ্যেই রাজ্যগুলিকে বুঝিয়ে বলেছে, গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ব্রডব্যান্ড পৌঁছলে রাজ্যের যাবতীয় পরিষেবাও গ্রামের মানুষের হাতের মুঠোয় চলে আসবে। সে জন্য অধিকাংশ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই ওই কর তুলে দিতে সম্মত হয়েছেন। ফলে বাড়তি অর্থের বোঝা চাপেনি প্রকল্পের ঘাড়ে। তবু কাজ  না এগোনোর কারণ মূলত লাল ফিতের ফাঁস।

গতি বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ঠিক হয়েছে, আগামী বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে দেড় লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতে ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দিতে হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি এক লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতে কাজ সেরে ফেলতে হবে।

যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “আমরাই গ্রাম পঞ্চায়েত পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছি।” রবিশঙ্করের কথায়, “জাতীয় অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক তৈরি করে তা চালানো ও দেখাশোনার জন্য ভারত ব্রডব্যান্ড নিগম নামের একটি পৃথক সংস্থা তৈরি হয়েছে। তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিএসএনএল, রেলটেল ও পাওয়ার গ্রিড নিগমও কাজ করছে।”

সূত্র : নিজস্ব সংবাদদাতা, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৭ মার্চ ২০১৫

ডিজিটাল ইন্ডিয়া

নজর যেখানে

  • প্রত্যেক নাগরিকের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান হিসাবে ভিত্তিক ডিজিটাল পরিকাঠামো
  • চাহিদা অনুযায়ী প্রশাসন এবং পরিষেবা
  • নাগরিকদের ডিজিটাল ক্ষমতায়ন

মূলত তিনটি এলাকায় এর লক্ষ্যকে কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে

  • প্রত্যেক নাগরিকের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান হিসাবে ডিজিটাল পরিকাঠামো
  • চাহিদা অনুযায়ী প্রশাসন এবং পরিষেবা
  • নাগরিকদের ডিজিটাল ক্ষমতায়ন

প্রত্যেক নাগরিকের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান হিসাবে ভিত্তিক ডিজিটাল পরিকাঠামো

  • পরিষেবা প্রদানের জন্য দ্রুতগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট
  • প্রত্যেক নাগরিকের জন্য অনন্য, জীবনব্যাপী, অনলাইন এবং বিশ্বাসযোগ্য ডিজিটাল পরিচয়পত্র
  • আর্থিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণে নাগরিকের মোবাইল ফোন এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ব্যবহার
  • কমন সার্ভিস সেন্টারের সহজলভ্যতা
  • সরকারি ক্লাউড ভাগ করে নিয়ে ব্যক্তিগত স্থান
  • নিরাপদ এবং সুরক্ষিত সাইবার স্পেস

চাহিদা অনুযায়ী প্রশাসন এবং পরিষেবা

  • প্রতিটি বিভাগ এবং তার এলাকাকে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জুড়ে দেওয়া
  • অনলাইন এবং মোবাইল প্লাটফর্ম থেকে বাস্তব সময়ে পরিষেবার প্রাপ্যতা
  • সরকারি ক্লাউডে প্রত্যেক নাগরিকের সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা
  • ব্যবসাকে সহজ করার জন্য সরকারি পরিষেবাকে ডিজিটালে রূপান্তরকরণ
  • আর্থিক লেনদেনকে নগদবিহীন এবং বৈদ্যুতিনে রূপান্তর
  • সিদ্ধান্ত সমর্থন পদ্ধতি এবং উন্নয়নের জন্য জিআইএসের ওঠানামা

নাগরিকদের ডিজিটাল ক্ষমতায়ন

  • সর্বজনীন ডিজিটাল সাক্ষরতা
  • সমস্ত ডিজিটাল সম্পদের সর্বজনীন লভ্যতা
  • ক্লাউডে সমস্ত সরকারি নথি/শংসাপত্রের প্রাপ্যতা
  • ভারতীয় ভাষায় ডিজিটাল সম্পদ/পরিষেবার প্রাপ্যতা
  • অংশগ্রহণমূলক প্রশাসনের জন্য সহযোগিতামূলক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম
  • ক্লাউডের মাধ্যমে ব্যক্তির জন্য সমস্ত এনটাইটেলমেন্টের পোর্টেবিলিটি

ডিজিটাল ভারতের এক্তিয়ার

ডিজিটাল ভারত কর্মসূচির সামগ্রিক এক্তিয়ারের কথা এখানে বলা হয়েছে।

এই কার্যক্রমের সার্বিক এক্তিয়ার হল :

  • জ্ঞান-নির্ভর ভবিষ্যতের জন্য ভারতকে প্রস্তুত করা
  • আইটি (ইন্ডিয়ান ট্যালেন্ট) + আইটি (ইনফরমেশন টেকনোলজি)= আইটি (ইন্ডিয়া টুমরো)--এই সমীকরণে পৌঁছনোর প্রয়াস
  • প্রযুক্তিকে কেন্দ্রে রেখে পরিবর্তন
  • এক ছাতার তলায় বিভিন্ন বিভাগকে এনে কার্যক্রম পরিচালনা
  • একাধিক ভাবনা-চিন্তাগুলোকে একটি বৃহৎ লক্ষ্যের অধীনে এনে কার্যক্রম পরিচালনা, যাতে প্রতিটি ভাবনা-চিন্তা ওই লক্ষ্যের অংশীদার হতে পারে। প্রতিটি উপাদান তার স্বকীয়তা বজায় রেখে একটি বিশাল ছবির অংশ হতে পারে।
  • এইগুলি এক সঙ্গে মিশনের রূপান্তরকে সম্পূর্ণতা দেবে
  • ডিজিটাল ভারত কার্যক্রম বর্তমানে চালু প্রকল্পগুলিকে সুসহংত ভাবে পুনর্গঠন করবে। ডিজিটাল ভারত হিসাবে কার্যকমের সাধারণ ব্র্যাডিং তাদের রূপান্তরের প্রভাব তুলে ধরবে।

ডিজিটাল ভারতের ন’টি স্তম্ভ

ডিজিটাল ভারত তার ন’টি স্তম্ভের উন্নয়নে জোর দেবে। এই স্তম্ভগুলি হল :

  • ব্রডব্যান্ড হাইওয়ে
  • মোবাইল সংযোগে সর্বজনীন প্রবেশাধিকার
  • জনগণের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারের কার্যক্রম
  • ই-গর্ভন্যান্স: প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রশাসনের সংস্কার
  • ই-ক্রান্তি : বৈদ্যুতিন মাধ্যমে পরিষেবা প্রদান
  • সকলের জন্য তথ্য
  • বৈদ্যুতিন উৎপাদন
  • কাজের জন্য তথ্য প্রযুক্তি
  • দ্রুত বিস্তৃতি

ডিজিটাল ভারত গড়তে এক সঙ্গে কাজ করবে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

ডিজিটাল ভারত গড়ে তোলার জন্য এক সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে ঐকমত্য হল ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।

মার্কিন-ভারত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সংক্রান্ত ওয়ার্কিং গ্রুপের দু’দিনের বৈঠকে, ভারতীয় প্রতিনিধি দলের প্রধান তথ্যপ্রযুক্তি সচিব আর এস শর্মা এইচ ওয়ান বি ভিসা এবং বিপুল সংখ্যক দক্ষ ভারতীয় পেশাদারের ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান নিয়ে তাঁদের উদ্বেগের কথা জানান।

যৌথ বিব‌তিতে জানানো হয়েছে, ডিজিটাল পরিকাঠামো বাড়িয়ে, ই-গভর্ন্যান্স ও ই-পরিষেবা চালু করার মাধ্যমে ডিজিটাল ভারত গড়ে তুলতে এক সঙ্গে কাজ করতে একমত হয়েছে ভারত ও আমেরিকা। আর্থিক সুযোগ ব‌দ্ধ, কাজের সুযোগ বৃদ্ধি, উৎপাদন বাড়ানো ও নাগরিকদের ক্ষমতায়নের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে বৈঠকে একমত হয়েছে দুই পক্ষ। মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেত‌‌ৃত্বে ছিলেন আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও তথ্য সংক্রান্ত নীতি বিভাগের দফতরের কোঅর্ডিনেটর ড্যানিয়েল সেপালভেডা।

দুই প্রতিনিধি দল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ও টেলি কমিউনিকেশন নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করে। আলোচনায় গুরুত্ব পায় ব্রডব্যান্ডের প্রয়োগ, মোবাইল যুগের উপযুক্ত স্পেকট্রাম নীতি। ই-গভর্ন্যান্স ও আইসিটি ও টেলি কমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রণ নীতির ক্ষেত্রে সেরা অভিজ্ঞতাগুলি নিয়েও মতামত আদানপ্রদান হয়।

ভারতের দক্ষ পেশাদারদের বিদেশে কাজ করতে যাওয়া আসার সমস্যা নিয়েও এই বৈঠকে আলোচনা হয়। এ ব্যাপারে ভারতীয় প্রতিনিধিরা তাঁদের উদ্বেগের কথা জানান এবং মার্কিন প্রশাসন এই পেশাদারদের ভিসা সংক্রান্ত সমস্যার দিকটি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন বলে কথা দেন।

অন্য দিকে মার্কিন প্রতিনিধিরা উপকরণের পরীক্ষা ও শংসাপত্র দেওয়ার ব্যপারে কিছু সমস্যা নিয়ে তাঁদের উদ্বেগ জানান।

আইসিটি-র ব্যবহার বৃদ্ধি, তথ্যকে দেশের সীমানায় আটকে না রাখা এবং ইন্টারনেটকে অর্থনৈতিক উন্নতির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা বিষয়ে দু’পক্ষের ঐকমত্য হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

সরাসরি সরকারের সঙ্গে যুক্ত নন, এমন কয়েক জন বিশেষজ্ঞের একটি প্যানেল ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ ও ‘ডিজিটাল ভারত’ উদ্যোগকে সফল করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতি তৈরি করার ব্যাপারে তাদের মতামত দেন।

সূত্র: http://www.igovernment.in

ই-সঙ্গম

ই-সঙ্গম ব্যবহারকারী এবং মূল প্রকল্পের মধ্যে কার্যত সেতু হিসাবে কাজ করে। এই ধরনের সেতু ছাড়া ই-গভর্ন্যান্স প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করা বেশ সমস্যার। ই-গভর্ন্যান্সের ক্ষেত্রে ই-সঙ্গমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৮ সালের অগস্ট মাস থেকে ই-সঙ্গম কাজ করতে শুরু করেছে। ২০১৫-এর এপ্রিল মাসে এই প্রকল্প ফেজ-২-এ পা রাখবে। ই-সঙ্গমের লক্ষ্য হল ই-ক্রান্তির নীতি মেনে ই-গভর্ন্যান্সের ক্ষেত্রে যেগুলি নাগরিককে পরিষেবা প্রদান করে সেগুলি নিয়ে কাজ করা। ই-গভর্ন্যান্স উদ্যোগের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মুক্ত অ্যাপলিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস নীতি অনুযায়ী ভারত সরকার সমস্ত সরকারি অফিসে মুক্ত সফটওয়্যার ব্যবহারের জন্য উৎসাহ দিয়ে থাকে। বর্তমানে ২৫ রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ই-গভর্ন্যান্স প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত ২৯ পরিষেবা প্রদানের জন্য নথিভুক্ত করা হয়েছে।

মূল কার্যক্রম

ই-সঙ্গম ই-গভর্ন্যান্সের ক্ষেত্রে মধ্যবর্তী বা পরিষেবা নির্ভর কাঠামোরূপে কাজ করে । এটি থাকার ফলে ডিপার্টমেন্টের কাজও বেশ কিছুটা সুবিধাজনক হয়ে যায়। এর মূল কাজগুলি হল: কয়েকটি ক্ষেত্রে অদৃশ্য কর্মপদ্ধতির সুবিধা প্রয়োজন তবে তা সময়সাপেক্ষ, যেমন ম্যাসেজিং লোড ম্যানেজমেন্ট, অফলাইন ম্যাসেজ ডেলিভারি, অডিট লগিং এবং মনিটারিং।পুনর্ব্যাবহারযোগ্য উপাদানের সহজলভ্যতা।ডিপার্টমেন্টগুলি সফটওয়্যারের কাজকর্মের উপর ধ্যান দিতে পারে। ফলে কাজ আরও সুবিধাজনক হয়ে যায়।

বৈশিষ্ট্য

ই-সঙ্গমের বেশ কয়েকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি হল:

  • বিক্রেতার বাধা ছাড়াই মুক্ত মঞ্চ
  • সমলয় এবং অসমলয় ম্যাসেজ আদান-প্রদানের সহয়তা
  • ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বজায় রাখে
  • স্যাপ অ্যাপ্লিকেশনের অনুমোদন
  • পিকেআই সহায়তা
  • ক্লায়েন্ট এবং গেটওয়ের মধ্যে দ্বিমুখী ম্যাসেজ প্রবাহ সুরক্ষিত করার জন্য এসএসএল
  • এক্সএমএল সিগনেচার সহায়তাযুক্ত
  • অডিট লগিং এবং টাইম স্টাম্পিং
  • আইএসও/আইইসি ২৭০০১:২০০৫ (আইএসএমএস)অনুবর্তী
  • কোনও ডাটা নষ্ট ছাড়াই কাজের ধারাবাহিকতা
  • পরিবর্তনযোগ্য কাঠামো
  • সুনিশ্চিত সবরাহ এবং লেনদেন লগ

ই-ক্রান্তি বা জাতীয় ই-গভর্ন্যান্স পরিকল্পনা ২.০

ই-ক্রান্তির নীতি

ই-গর্ভন্যান্স পরিকল্পনাকে সফল ভাবে রূপায়িত করতে ক্রমবিকাশমান প্রযুক্তি যেমন ক্লাউড কমপিউটিং এবং মোবাইল প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সে দিকে লক্ষ্য রেখেই জাতীয় ই-গর্ভন্যান্স পরিকল্পনাকে (এনইজিপি) আরও সমৃদ্ধশালী করতে জাতীয় ই-গর্ভন্যান্স পরিকল্পনা ২.০ (এনইজিইপি ২.০) বা ই-ক্রান্তি নেওয়া হয়েছে। বিগত আট বছরে এনইজিপি-কে প্রয়োগ করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা গেছে তার উপর ভিত্তি করেই এর কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে।

ই-ক্রান্তি বা এনইজিপি ২.০-র নীতিগুলি হল --

  • অনুবাদ নয় রূপান্তর
  • একক নয় সমন্বিত পরিষেবা
  • প্রত্যেক মিশন মোড প্রোগ্রামে(এমএমপি)জিপিআর বাধ্যতামূলক
  • চাহিদা অনুযায়ী পরিকাঠামো
  • স্বাভাবিক ভাবে ক্লাউড
  • মোবাইলকে অগ্রাধিকার
  • দ্রুত অনুমোদন
  • বাধ্যতামূলক মান এবং প্রোটোকলের মান্যতা
  • স্থানীয় ভাষার ব্যবহার
  • জাতীয় জিআইএস
  • নিরাপত্তা এবং বৈদ্যুতিন ডাটা সংরক্ষণ
  • জাতীয় ই-গর্ভন্যান্স অ্যাকাডেমি
  • ই-গর্ভন্যান্স জ্ঞান পোর্টাল
  • ই-গর্ভন্যান্সের প্রভাব সংক্রান্ত ইনডেক্স তৈরি করা
  • সোশ্যাল মিডিয়ার কার্যকর ব্যবহার

প্রয়োগ এবং প্রদান

  • প্রদানের মাধ্যমগুলির রূপান্তর : এটা ধরে নেওয়া খুবই যুক্তিসঙ্গত যে আগামী অন্তত দশ বছর নাগরিকরা, বিশেষ করে, গ্রামের বাসিন্দারা বিভিন্ন ধরনের পরিষেবার জন্য এজেন্ট দ্বারা পরিচালিত বিভিন্ন ই-কিয়স্কের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন।
  • সচেতনতা এবং যোগাযোগ : এনইজিপি-র মাধ্যমে বৃহৎ সংখ্যায় লেনদেন হলেও এখনও সে ভাবে এই প্রকল্প পরিচিত হয়ে উঠতে পারেনি। কারণ এর মনে দাগ কাটার মতো কোনও ব্র্যান্ড নাম নেই। তাই একে জনপ্রিয় করতে ই-ক্রান্তির মতো ব্র্যান্ড নাম দেওয়া হয়েছে।
  • নতুন ধরনের ব্যবসায়িক মডেল প্রবর্তন : এনইজিপি-র একটি অন্যতম দুর্বলতা হল প্রযোগের ক্ষেত্রে এবং কিছুটা পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সঠিক মান বজায় রাখা। সময়মতো পরিষেবা না দেওয়া গেলে তা উপভোক্তাদের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। পিপিপি এবং আউটসোর্স মডেলে এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যাবে।
  • জাতীয় উৎপাদনশীলতার উপর নজর : দেশীয় ভাবে উৎপাদিত তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রেই জোর দেওয়া হবে, সমস্ত উৎপাদন ক্ষেত্রে বিশেষত ছোট এবং মাঝারি শিল্পে।
  • ডিজিটাল ভারত কার্যক্রমের অধীনে ন’টি স্তম্ভের মধ্যে একটি ই-ক্রান্তি। ডিজিটাল ভারত কার্যক্রমের মধ্যে একে ঢোকানোর জন্য খসড়া ক্যাবিনেট নোট সংশোধন করা হচ্ছে।
  • পরিষেবার ক্ষেত্র বাড়াতে আরও মিশন মোড প্রোগ্রামকে (এমএমপি) অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

ই-ক্রান্তির অন্তর্ভুক্ত মিশন মোড প্রকল্প

১৫টি এমএমপি পরিষেবা প্রদান করছে। এর মধ্যে রয়েছে :

  • গেটওয়ে
  • সিএসসি
  • ইন্ডিয়া পোর্টাল
  • ইডিআই
  • এফআই
  • পাসপোর্ট
  • ভিসা
  • আয়কর
  • এমসিএ ২১
  • বিমা
  • শুক্ল বিভাগ
  • জাতীয় আইডি
  • পেনশন
  • ব্যাঙ্কিং
  • সড়ক পরিবহন

৯টি এমএমপি যেগুলি অংশত পরিষেবা প্রদান করছে।

  • ই-প্রোক
  • ই-কোর্ট
  • ই-অফিস
  • ই-জেলা
  • কৃষি
  • পুরসভা
  • বাণিজিক কর
  • জমি রেকর্ড
  • ট্রেজারি

৫টি এমএমপি বাস্তবায়নের পথে।

  • ই-বিজ
  • ই-পোস্ট
  • গ্রাম পঞ্চায়েত
  • পুলিশ
  • সরকারি বণ্টন ব্যবস্থা

৩টি এমএমপি পরিকল্পনা এবং বিকাশের পথে।

  • এনজিআইএস
  • সিএপিএফ
  • এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ

৯টি ক্ষেত্রে এমএমপির সুযোগ রয়েছে।

  • রাহি
  • সামাজিক সুবিধা
  • ই-সংসদ
  • ডব্লু ও সি উন্নয়ন
  • গ্রামোন্নয়ন
  • কৃষি ২.০
  • ই-বিধান
  • শিক্ষা
  • স্বাস্থ্য

ডিজিটাল ভারত প্রকল্পে ই-ক্রান্তিকে (এনইজিপি ২.০) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই প্রকল্পের ৪ এবং ৫ নম্বর স্তম্ভে অন্তর্ভুক্ত কার্যক্রমের নাম দেওয়া হয়েছে যথাক্রমে ই-গভর্ন্যান্স: প্রযুক্তির মাধ্যেমে প্রশাসনের উন্নয়ন এবং ই-ক্রান্তি। বর্তমানে ৪১ এমএমপি-র মধ্যে ২৪ এমএমপি নাগরিককে পরিষেবা দিচ্ছে। ১০ এমএমপি বিভিন্ন ধাপে বিকাশের পথে রয়েছে। ১৮ মার্চ, ২০১৪-এ ই-ক্রান্তি কাঠামোর মধ্যে ১০ এমএমপিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মাইগভ

বিভিন্ন নীতি, কর্মসূচি, প্রকল্প সম্পর্কে তাঁদের ধ্যানধারণা, অভিজ্ঞতা জানিয়ে এবং পরামর্শ দিয়ে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির কাজে সরকারের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে বিভিন্ন প্রান্তের নাগরিকরা যাতে অংশ নিতে পারেন তার জন্যই এই ‘মাইগভ’ পরিকল্পনা।

প্রযুক্তির সহায়তায়, ভারতের উন্নয়নের লক্ষ্যে, সরকার এবং নাগরিকের মধ্যে অংশিদারিত্ব গড়ে তুলতে ‘মাইগভ’ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি একটি প্রযুক্তি নির্ভর মঞ্চ যার মাধ্যমে নাগরিকরা সুপ্রশাসন গড়ে তোলার কাজে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এর মাধ্যমে দেশের নাগরিকরা উন্নয়নের কাজে সহযোগিতা করতে পারবেন। দরিদ্র থেকে দ্ররিদ্রতর মানুষের আশা-আকাঙ্খা পূরণে অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠবে এই মঞ্চ।

‘মাইগভ’ মূলত একটি ওয়েবপোর্টাল। এর মাধ্যমে দেশবাসী একাধারে যেমন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মত বিনিময় করতে পারবেন, তেমনি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজেও অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এর জন্য রয়েছে দু’টি বিভাগ ‘ডিসকাস’ (আলোচনা) ‘ডু’(কাজ করা)।

‘মাইগভ’ নাগরিকের কাছে একাধিক রাস্তা খুলে দিচ্ছে। তিনি যেমন বিভিন্ন কাজের স্বেচ্ছাসেবক হতে পারেন, তেমনি কাজের ভাবনাও এখানে রাখতে পারেন। তার এই ভাবনা অন্যান্য সদস্য এবং বিশেষজ্ঞরা পর্যালোচনা করবেন। কাজটি অনুমোদিত হলে, ‘মাইগভ’-এর অন্য সদস্যরা সেটা ভাগ করে নেবেন এবং সম্পন্ন করবেন। প্রত্যেটি অনুমোদিত কাজ সম্পন্ন হলে ক্রেডিট পয়েন্ট পাওয়া যাবে।

বর্তমানে এই মঞ্চটি বেশ কয়েকটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলি হল, পরিষ্কার গঙ্গা, শিশু কন্যার শিক্ষা, স্বচ্ছ ভারত, দক্ষ ভারত, ডিজিটাল ভারত, কাজের সুযোগ। প্রতিটি গ্রুপে অবদানকারীর নেওয়া কর্মপদ্ধতির মধ্যে থাকবে অনলাইন এবং মাঠে নেমে কাজ। প্রতিটি গ্রুপেরই লক্ষ্য হল জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে গুণগত পরিবর্তন। সময়ের সঙ্গে গ্রুপ, কাজ এবং আলোচনার সংখ্যা বাড়বে।

২৬ জুলাই ২০১৪ ‘মাইগভ’-এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নতুন সরকারের ক্ষমতায় থাকার ৬০ দিন যে দিন সম্পূর্ণ হল, সে দিন এই উদ্যোগের সূচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনসাধারণের অংশগ্রহণ ছাড়া গণতন্ত্রের সাফল্য অসম্ভব। উদ্বোধনের পর থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে ছ’লক্ষের বেশি মানুষ ‘মাইগভ’-এর বিভিন্ন আলোচনা এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছেন।

আধার-ভিত্তিক বায়োমেট্রিক উপস্থিতি কী ?

ডিজিটাল ভারতের অংশ হিসাবে দিল্লিতে অবস্থিত কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিটি অফিসে সাধারণ বায়োমেট্রিক উপস্থিতি পদ্ধতি (বিএএস) বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। তবে পরবর্তীকালে রাজ্য সরকারি অফিস এবং অন্যান্য সরকারি অফিসে এই বায়োমেট্রিক উপস্থিতি পদ্ধতি চালু করা হবে। এই পদ্ধতিতে একজন কর্মীকে তার বায়োমেট্রিক (হাতের ছাপ/চোখের মণি) দিয়ে উপস্থিতি নথিভুক্ত করতে হবে।

বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত সরকারি অফিসগুলিতে কর্মীদের উপস্থিতির হিসাব রাখা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। কম খরচে এ কাজ করা রীতিমতো চ্যালঞ্জ। বর্তমানে যে ধরনের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে কর্মীদের উপস্থিতির হিসাব রাখা হয় তারও প্রযুক্তিগত কিছু দুর্বলতা আছে। এই পদ্ধতিতে প্রতিটি সরকারি অফিসে উপস্থিতির হিসাব সমন্বিত ভাবে রাখা যায় না। আধার-ভিত্তিক বায়োমেট্রিক প্রমাণীকরণের মাধ্যমে কর্মীদের উপস্থিতির বর্তমান অবস্থা একটি পোর্টালে (attendance.gov.in) দেখা যাবে। এর ফলে স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা যাবে এবং সরকারি অফিসে কর্মসংস্কৃতি আনা সম্ভব হবে। কর্মীর আধার নম্বর অনুযায়ী ইউআইডিএআই-এ রাখা ডাটাবেসের সঙ্গে বায়োমেট্রিক ছাপ মিলিয়ে অনলাইনে তা যাচাই হয়ে যাবে।

বায়োমেট্রিক উপস্থিতি রূপায়ণের ধাপ

  • বায়োমেট্রিক উপস্থিতি পদ্ধতি চালুর প্রথম ধাপ হিসাবে প্রতিটি সরকারি সংস্থার একটি নোডাল অফিস থাকবে। যার মাধ্যমে সংস্থাটি attendance.gov.in সাইটে তার কর্মীদের নথিভুক্ত করতে পারবে।
  • দ্বিতীয় ধাপের প্রথমে ইউআইডিআই আধার অনুযায়ী নথিভুক্ত কর্মীদের যাচাই করবে। পরে সংশ্লিষ্ট নোডাল অফিসার যাচাই করবেন।

এই দু’টি ধাপের পরেই কর্মীরা স্থানীয় বায়োমেট্রিক টার্মিনাল থেকে উপস্থিতি নথিভুক্ত করতে পারবেন। প্রথম পর্যায়ে যে সমস্ত সরকারি অফিস নাম নথিভুক্ত করতে পারবে না তারা দ্বিতীয় পর্যায়ে নথিভুক্ত করতে পারবে। সমস্ত সরকারি অফিস এনআইসি ডাটা সেন্টারে বসানো সাধারণ ব্যাক-এন্ড পরিকাঠামো প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারবে।

বায়োমেট্রিক উপস্থিতি পদ্ধতির বৈশিষ্ট্

  • ক্লাউড-নির্ভর উপস্থিতি রাখার সফটওয়্যার বসানো হবে। এটি পরিচালিত হবে এনআইসি এবং জাতীয় ডাটা কেন্দ্র থেকে।প্রমাণীকরণের জন্য জাতীয় ডাটা কেন্দ্র এবং ইউআইডিএআই মধ্যে একটি বিশেষ এবং নিরাপদ যোগাযোগের ব্যবস্থা করবে এনআইসি।ভবনে সংযোজিত এনআইসি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রতিটি মন্ত্রক/দফতর/অধস্তন সংস্থাগুলি এটি ব্যবহার করতে পারবেন।যাঁরা এই পদ্ধতিতে উপস্থিতি রাখবেন তাঁদের প্রত্যেকেই বায়োমেট্রিক সুবিধাযুক্ত টার্মিনাল/যন্ত্র রাখতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় টার্মিনালের সংখ্যা এবং অবস্থান সংশ্লিষ্ট অফিসকেই ঠিক করতে হবে। এই যন্ত্রগুলি রক্ষণাবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট অফিসই করবেন।
  • টার্মিনালগুলির সংযোগ জিপিআরএস/ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে করতে হবে।
  • কর্মীদের স্তর অনুযায়ী উপস্থিতি রাখার ব্যবস্থা তৈরি করবে ইউআইডিএআই/এনআইসি।
  • পাবলিক ডোমেনে প্রয়োজন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ভাবে উপস্থিতির সংকলন এবং প্রকাশ করা হবে।

প্রধান বৈশিষ্ট্য

সাধারণ বায়োমেট্রিক উপস্থিতিতে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য থাকছে :

  • আধারের উপর নির্ভর করে এই পদ্ধতি গড়ে উঠেছে। (আঙুলের ছাপ বা চোখের মণির উপর ভিত্তি করে প্রমাণীকরণ করা হবে)
  • এটি বাস্তব-সময়ে পর্যবেক্ষণ চালানোর সুবিধাযুক্ত উপস্থিতির পদ্ধতি।
  • বিস্তৃত তথ্য পরিচালনা পদ্ধতির (এমআইএস)সুবিধা রয়েছে।
  • খুবই হালকা ব্যবস্থা। এর জন্য বিশেষ কোনও হার্ডওয়ারের প্রয়োজন নেই।
  • একাধিক প্লাটফর্মের (উইনডোজ,অ্যান্ড্রয়েড ইত্যাদি) এবং একাধিক যন্ত্রে (ল্যাপটপ, ডেক্সটপ, ট্যাবলেট ইত্যাদি) একে ব্যবহার করা যাবে।
  • অল্প বিদ্যুৎ যেমন ট্যাবলেটেও ব্যবহার করা যাবে।
  • উপস্থিতি রেকর্ড করতে এক থেকে দু’ সেকেন্ড সময় লাগে, জিপিআরএস সিমের মাধ্যমে ওয়াইফাইতে আট থেকে ১১ সেকেন্ড।

ফেজ-১-এ নিম্নলিখিত কাজ সম্পন্ন করা গেছে :

একটি সাধারণ বায়োমেট্রিক উপস্থিতির পোর্টাল attendance.gov.in তৈরি করা গেছে। প্রথম দফায় ১৫০ কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসে ৫৫,০০০ কর্মীদের নাম নথিভুক্ত করা গেছে। ইউআইডিআই একটি ব্যাক-এন্ড পোর্টাল এবং ক্লায়েন্ট সাইড অ্যাটেডেন্স সফটওয়্যার তৈরি করেছে। ১০০০ শক্তপোক্ত বায়োমেট্রিক টার্মিন্যাল এবং ৫০০০ ডেক্সটপ এসটিকিউসি শংসাপত্রপ্রাপ্ত যন্ত্র বসানো সম্ভব হয়েছে।

প্রথম দফায় যন্ত্র বসানো এবং অন্যান্য খরচাপাতি করেছে এনআইসি এবং ইউআইডিএআই।

জীবন প্রমাণ

জীবন প্রমাণ কী ও কেন

পেনশনপ্রাপকদের জন্য আধারভিত্তিক ডিজিটাল জীবন শংসাপত্র হল জীবন প্রমাণ। দেশের প্রায় এক কোটিরও বেশি পেনশন প্রাপকদের ঝামেলাহীন ভাবে পেনশন পেতে এই ডিজিটাল শংসাপত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।

লক্ষ্য

এই প্রকল্পের লক্ষ্য হল :

এই ডিজিটাল শংসাপত্র থাকলে প্রতি বছর নভেম্বর মাসে পেনশনপ্রাপককে আর পেনশনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য শংসাপত্র দেখাতে হবে না।আধারনির্ভর এই ডিজিটাল জীবন শংসাপত্র থাকলে প্রবীণ নাগরিকদের প্রতি বছর জীবন শংসাপত্র দেখানোর জন্য যে ঝঞ্ঝাট পোহাতে হয়,তা বন্ধ হবে।এই সমগ্র প্রক্রিয়াটির জন্য ডিপার্টমেন্ট অফ ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড আইটি একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছে। যে সফটওয়্যারের মাধ্যমে পেনশনপ্রাপক তাঁর কমপিউটার এবং মোবাইল থেকে নিজের আধার নম্বর এবং বায়োমেট্রিক তথ্য রেকর্ড করতে পারবেন। তারিখ, সময় এবং বায়োমেট্রিক তথ্য সহ পেনশন প্রাপকের মূল তথ্য এন্টি করার সময়ই কেন্দ্রীয় ডাটাবেসে আপলোড হয়ে যাবে। পেনশন দাতা সংস্থা ডিজিটাল শংসাপত্র হিসাবে এই তথ্য দেখতে পারবেন। এর ফলে প্রমাণীকরণের সময় তিনি যে জীবিত ছিলেন তা বোঝা যাবে।

এর আগে পেনশন প্রাপককে পেনশন দাতা সংস্থার সামনে উপস্থিত থাকতে হত বা সেন্ট্রাল পেনশন অ্যাকাউন্টিং অফিস (সিপিএও) কর্তৃক নির্দিষ্ট সংস্থার ইস্যু করা জীবন শংসাপত্র দেখাতে হত। বর্তমানে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে পেনশন পান। রাজ্যগুলি এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রায় সমসংখ্যক ব্যক্তি পেনশন পান। ২৫ লক্ষেরও বেশি অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী পেনশন পান।

কী ভাবে কাজ করবে জীবন প্রমাণ

  • নাম নথিভুক্ত করুন
  • আধারের প্রমাণীকরণ
  • জীবন শংসাপত্র
  • আপনার শংসাপত্রটি সংগ্রহ করুন
  • পেনশন দাতা এজেন্সি
  • ইলেকট্রনিক ডেলিভারি

জীবন প্রমাণ একটি ডিজিটাল আধারভিত্তিক জীবন শংসাপত্র। নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে এটি কাজ করে থাকে।

নাম নথিভুক্ত করুন

নাম নথিভুক্ত করার জন্য পিসি/মোবাইল অ্যাপলিকেশন ডাউনলোড করুন অথবা নিকটবর্তী জীবন প্রমাণ কেন্দ্রে গিয়ে আপনার নাম নথিভুক্ত করুন।

এ জন্য তথ্য হিসাবে আপনার আধার নম্বর, পেনশন পেমেন্ট অর্ডার নম্বর, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর, ব্যাঙ্কের নাম এবং আপনার মোবাইল নম্বর সরবরাহ করতে হবে।

আধারের প্রমাণীকরণ

আপনার বায়োমেট্রিক হিসাবে আঙুলের ছাপ অথবা চোখের মণির মাধ্যমে নিজেকে সনাক্তকরণের প্রমাণ দিন। (অনলাইন প্রমাণীকরণের জন্য জীবন প্রমাণ আধারকেই ব্যবহার করে।)

জীবন শংসাপত্র

সফল ভাবে বৈধতাকরণের পর আপনার স্বীকৃতি স্বরূপ আপনার মোবাইলে একটি এসএমএস আসবে। যে এসএমএসে জীবন প্রমাণ শংসাপত্রের আইডি থাকবে। আপনার শংসাপত্রটি জীবন শংসাপত্র হিসাবে জমা থাকবে যাতে পেনশন প্রাপক বা পেনশন দাতা সংস্থা উভয়েই যে কোনও সময় যে কোনও জায়গা থেকে এটি ব্যবহার করতে পারবেন।

আপনার শংসাপত্রটি সংগ্রহ করুন

জীবন প্রমাণ ওয়েবসাইট থেকে আপনি শংসাপত্রটি পিডিএফ কপি ডাউনলোড করতে পারেন। এ জন্য আপনাকে জীবন প্রমাণ আইডি বা আধার নম্বর দিতে হবে।

পেনশন দাতা এজেন্সি

পেনশন দাতা এজেন্সি জীবন প্রমাণ ওয়েবসাইট থেক জীবন শংসাপত্র ডাউনলোড করতে পারবেন।

ইলেকট্রনিক ডেলিভারি

কোনও মধ্যস্থতা ছাড়াই জীবন শংসাপত্র ইলেকট্রনিক মাধ্যমে পেনশন দাতা এজেন্সিকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। (ই-ডেলিভারি সুবিধার জন্য এজেন্সিকে আমাদের টিমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে) মোবাইল বা কমপিউটার ছাড়াও এই সুবিধা কমন সার্ভিস সেন্টার থেকেও পাওয়া যাবে। এর ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে আধার-প্রাপ্ত ব্যক্তিরা এই সুবিধা নিতে পারবেন।

ডিজিটাল লকার

ডিজিটাল মাধ্যমে দেশের এক জন নাগরিক নিরাপদে তার সমস্ত নথি পরিষেবা প্রদানকারীকে দিতে পারেন। ওই পরিষেবা প্রদানকারী বৈধ্য পথে ইকেট্রনিক মাধ্যমে নথিগুলিকে ব্যবহার করতে পারবেন।

কাগজপত্রের নথি ব্যবহার কম করার জন্য ডিজিটাল লকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সমস্ত নথি আপলোড করার ফলে সেগুলি একাধিক এজেন্সি ব্যবহার করতে পারবে। এই পদ্ধতিতে ভুয়ো শংসাপত্র, ডিগ্রি ইত্যাদির ব্যবহার কমবে। কারণ প্রত্যেকটি নথিই ডিজিটাল মাধ্যমে প্রমাণীকরণের ব্যবস্থা থাকছে।

ডিজিটাল লকার হল একাধিক নথির ভাঁড়ার যেখানে পরিষেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষগুলি একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাটে নথি আপলোড করবে। ব্যক্তিগত লকার একটি মঞ্চ হিসাবে কাজ করে যে লিঙ্ক থেকে সরাসরি সমস্ত নথি ব্যবহার করা যাবে। এর ফলে নাগরিক তাঁর সমস্ত নথি নিরাপদে পরিষেবা প্রদানকারীকে দিতে পারবেন।

সমস্ত প্রক্রিয়াটিকে মসৃণ ভাবে কার্যকর করার জন্য ডিজিটাল লকার টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন (ডিএলটিএস) তৈরি করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ডিজিটাল লকারের দু’টি পাইলট প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রথম প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে মহারাষ্ট্রে। প্রস্তাবিত দ্বিতীয় প্রকল্পটি নেওয়া হবে ন্যাশনাল সিককিউরিটিস ডিপজিটরি লিমিটেড (এনএসডিএল)-এ।

ই-ভাষা

ই-ভাষা মিশন মোড প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে ভারতীয় ভাষাগুলির জন্য প্রযুক্তি উন্নয়ন কর্মসূচির অভিজ্ঞতা থেকে। ই-ভাষার লক্ষ্য ভারতীয় ভাষায় কমপিউটার প্রযুক্তির প্রকাশ, বিষয়বস্তু তৈরি, জ্ঞানের আদান-প্রদান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে জন পরিষেবা প্রদান। বিস্তৃত ভাবে ই-গভর্ন্যান্সের উদ্যোগ ছড়িয়ে দিতে ই-ভাষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়ে ই-গভর্ন্যান্সের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অনেক সহজতর হবে। ই-ক্রান্তিকে তার লক্ষ্যে পৌঁছতে ই-ভাষা বিশেষ জোর দেবে।

ই-ভাষা এমএমপি সমস্ত ই-গভর্ন্যান্স এমএমপি-র গুণগত মান এবং স্থানীয় ভাষায় এমএমপি রূপায়ণের জন্য প্রশিক্ষণে সহায়তা করবে। ই-ভাষা এমএমপি-কে বাস্তবায়িত করতে সেন্টার অফ এক্সলেন্স ফর লোকালাইজেশন ইন ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজেস স্থাপন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

ই-ভাষার প্রধান উদ্দেশ্য হল :

  • বিভিন্ন স্তরে স্থানীয় ভাবে সক্ষমতা তৈরি করা।
  • প্রযুক্তির ফাঁকগুলি খুঁজে বার করার চেষ্টা করা এবং গবেষণা, বিশেষত বলা এবং মোবাইল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ইন্ধন দেওয়া।
  • আন্তর্জাতিক সফটওয়্যার তৈরির নকশা এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয় সফটওয়্যার জীবনচক্রের বিকাশ ।
  • শিল্প এবং শিক্ষা ক্ষেত্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগে স্থানীয়করণ।
  • এক জানলা তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে নির্মাণের মান বজায় রাখা।
  • উদ্ভাবনী এবং বহুভাষিক পণ্যের নকশা ও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোগকে যুক্ত করা।

ডিজিটাল পরিচয়পত্র হিসাবে মোবাইল

  • আধারে সঙ্গে মোবাইলের সংযোগ ঘটিয়ে
  • মোবাইল ডিজিটাল স্বাক্ষর
  • মোবাইল ভয়েস (কণ্ঠস্বর) বায়োমেট্রিক
  • আর্থিক লেনদেনে মোবাইলের অন্তর্ভুক্তি

দেশজুড়ে মানুষের মধ্যে মোবাইলের ব্যবহার বাড়ছে। তাই বিভিন্ন জনপরিষেবা পাওয়ার জন্য মোবাইলকে ডিজিটাল পরিচয় পত্র হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, বৃহৎ অর্থে এটি আমাদের গতিশীল জীবনে চলমান পরিচয়পত্র হবে উঠবে।

সম্ভাব্য তিন ভাবে মোবাইল আমাদের ডিজিটাল পরিচয়পত্র হয়ে উঠতে পারে।

আধারে সঙ্গে মোবাইলের সংযোগ ঘটিয়ে

অনলাইন প্রমাণীকরণের জন্য ইতিমধ্যেই আধার নম্বরের ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। একটি স্বতন্ত্র সনাক্তকারী সংস্থা ইউআইডিএআই এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সাহায্য দিচ্ছে। কোনও ব্যক্তির মোবাইল নম্বর যদি তার আধার নম্বরের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া হয় তবে, কোনও লেনদেনের সময় প্রত্যেক বার আধার নম্বর দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। তার মোবাইল নম্বরটি আধার নম্বরেরই প্রতিনিধিত্ব করবে। ইউআইডিএআই বা সরকার বা পাবলিক পরিষেবা প্রদানকারী বা টেলকম সার্ভিস প্রোভাইডার (টিএসপি)–তে এটি সম্ভব হতে পারে এসএমএসের মাধ্যমে আধার নির্ভর কেওয়াইসি ব্যবহার করে। পরবর্তীকালে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড এবং পিন—যেগুলির শুধু ব্যবহারকারী জানবেন, এই ব্যবস্থাগুলি যুক্ত করা যেতে পারে।

মোবাইল ডিজিটাল স্বাক্ষর

ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০০০ এবং তথ্যপ্রযুক্তি (সংশোধনী) আইন ২০০৮ অনুযায়ী ডিজিটার স্বাক্ষর শংসাপত্র (ডিএসসি) বৈধ। বর্তমানে এটি ইউএসবি ডিভাইসের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়। তবে এই শংসাপত্র মোবাইলের সিমেও স্টোর করে রাখা যায়। একে বলা হয় মোবাইল ডিএসসি। এর জন্য বিভিন্ন ধরণের এম্বেড প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যবহারকারীর ‘ব্যক্তিগত কি’ সিমে (ক্রিপ্টোগ্রাফিক সিম) সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এই প্রযুক্তিতে মোবাইল থেকে নিরাপদে তথ্য প্রদান করা যায়। ডিজিটাল শংসাপত্র প্রমাণীকরণের সব চেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি এবং ডিজিটাল স্বাক্ষর করা নথি (স্মার্ট ফোনে) আইনত বৈধ্যও বটে। চলমান অবস্থায় এটিকে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্যক্তিগত ‘কি’ নিরাপদ ‘ক্লাউডে’ সংরক্ষিত রাখা হয় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা যেতে পারে।

মোবাইল ভয়েস (কণ্ঠস্বর) বায়োমেট্রিক

প্রতিটি ব্যক্তির কণ্ঠস্বরের আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাই প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ভয়েস বায়েমেট্রিক অনলাইন প্রমাণীকরণের একটি শক্তিশালী পদ্ধতি হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক কালে একাধিক দেশ এই পদ্ধতিকে প্রমাণীকরণের পদ্ধতি হিসাবে গ্রহণ করছে। ভয়েস বায়োমট্রিককে যদি মোবাইল নম্বরে টেক্সট নির্ভর প্রমাণীকরণের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যায় তবে তা অনেক বেশি শক্তিশালী প্রমাণীকরণ পদ্ধতিতে পরিণত হয়। যা ই-প্রমাণ কাঠামোর নির্দেশিত প্রমাণীকরণের তিন নম্বর ধাপের সমান বা তার বেশি নির্ভরযোগ্য হয়। এটি ব্যবহারের জন্য কোনও ব্যক্তির কণ্ঠস্বর রের্কড করতে হবে এবং তাকে মোবাইল নম্বরের অধীনে স্টোর করতে হবে।

আর্থিক লেনদেনে মোবাইলের অন্তর্ভুক্তি

বিদ্যমান পদ্ধতিগুলির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে গ্রামাঞ্চলে এটিএমএ/ মাইক্রো এটিএম তৈরি। কিন্তু বিদ্যুতের সমস্যা, নিরাপত্তা, নগদ পরিচালনা এবং ক্যাশ ইন/ক্যাশ আউট পয়েন্ট তৈরির বাঁধা কাটিয়ে ওঠা রীতিমতো একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আবার অন্য দিকে মোবাইল প্রযুক্তি এবং টেলি কোম্পানিগুলির মোবাইল পরিষেবা ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক এই সমস্যা সমাধান করতে পারে। এর জন্য ব্যাঙ্ক যে সমস্ত সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলবে সেগুলি যাতে মোবাইলের মাধ্যমে পরিচালনার করা যায় তার ব্যবস্থা থাকতে হবে। তবে এই সমাধানগুলির পর্যালোচনা করতে হবে প্রতিটি ধাপে প্রয়োগের নিশ্চয়তা, চ্যালেঞ্জ এবং ঝুঁকি, বিদ্যামান ও প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানিক এবং আইনি কাঠামো, বাজারের বাস্তুতন্ত্রকে মাথায় রেখে।

‘ই-বস্তা’

স্কুলের বই থেকে ই-বই

কাদের জন্য এই প্রকল্প, কী সুবিধা তাঁরা পাবেন তা এখানে বলা হয়েছে।

ই-বস্তা অ্যাপ

এই পোর্টাল থেকে ডাউনলোড করা ই-বস্তা অ্যাপ যে কোনও অ্যানড্রয়েড ট্যাবলেটে চলবে।

স্কুলের বই থেকে ই-বই

  • কাদের জন্য ?
  • প্রকাশক
  • স্কুল
  • ছাত্র-ছাত্রী

সরকারের ডিজিটাল ভারত উদ্যোগের অন্যতম হল ই-বস্তা। এই প্রকল্পে স্কুলের বই ডিজিটাল মাধ্যমে ই-বইয়ের আকারে ট্যাবলেট বা ল্যাপটপে পড়া যাবে। এর মূল উদ্দেশ্য হল বিভিন্ন প্রকাশক (বাণিজিক প্রকাশনা সংস্থাও) এবং স্কুলকে এক প্ল্যাটফর্মে আনা। এর জন্য পোর্টালের পাশাপাশি, গোটা বিষয়টি পরিচালনার জন্য একটি পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ট্যাবলেটে এটি ব্যবহারের জন্য একটি ওয়েব নির্ভর অ্যাপ্লিকেশনও তৈরি করা হয়েছে।

কাদের জন্য ?

  • স্কুলগুলির ব্যবহারের জন্য প্রকাশকরা তাদের বই-পত্র এখানে প্রদর্শন করতে পারবেন।
  • স্কুলগুলি, ক্লাস অনুযায়ী তাদের বাছাই করা সম্পদ একসঙ্গে করে ই-বস্তা হিসাবে জমা রাখতে পারবেন।
  • ছাত্র-ছাত্রীরা এই ই-বস্তা পোর্টাল থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন অথবা স্কুল তাদের এসডি কার্ডের মাধ্যমে দিয়ে দেবে।

পোর্টালের এই কাঠামোর মধ্যে তিন ধরনের স্টেক হোল্ডারকে আনা হচ্ছে। এটি তাদের প্রাথমিক ভাবে নিম্নলিখিত সুবিধাগুলি দেবে :

প্রকাশক

মেটাডাটা সহ ক্লাস, ভাষা, বিষয়, দাম এবং কয়েকটি পৃষ্ঠা আপলোড করবেন ই-বিষয়বস্তু হিসাবে। প্রকাশের পূর্বেও বিষয়বস্তু রিভিউয়ের জন্য আপলোড করা হবে। তবে তা ডাউনলোড করা যাবে না। প্রকাশকরা তাদের বিষয়বস্তুর উপর ব্যবহারকারীর বিভিন্ন মন্তব্য এবং রেটিং দেখতে পাবেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ই-বিষয়বস্তুর পরিসংখ্যানও ডাউনলোড করতে পারবেন।

স্কুল

স্কুলের অনুমোদিত শিক্ষকরা এই পোর্টাল থেকে ক্লাস অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বিষয়বস্ত এক সঙ্গে রেখে দিতে পারবেন। বিভিন্ন প্রকাশকের আপলোড করা বিষয়বস্তু থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী খুঁজে শিক্ষকরা সংগঠিত ভাবে ই-বস্তা তৈরি করতে পারবেন। প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য আলাদা আলাদা নাম দিয়ে ই-বস্তা পোর্টালে রেখে দেওয়া যাবে। পরে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের নিজস্ব ই-বস্তা ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

ছাত্র-ছাত্রী

ছাত্র-ছাত্রীরা এই পোর্টালে এসে তাদের নির্দিষ্ট ই—বস্তা ডাউনলোড করতে পারবে। তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী এই পোর্টাল থেকে বিষয়বস্তুও ডাউনলোড করতে পারবে। যদি কোনও বিষয়বস্তু কিনতে হয়, তবে কেনার জন্য নির্দিষ্ট ‘পেমেন্ট’ পোর্টালে নিয়ে যাওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট অর্থ প্রদানের পর তারা সেই বিষয়বস্তু ডাউনলোড করতে পারবে। একাধিক ই-বস্তার ক্ষেত্রে আশা করা হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা নির্দিষ্ট অ্যাপটি ডাউনলোড করে নেবে।

ই-বস্তা অ্যাপ

  • যে প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়
  • সুবিধা
  • স্কুল
  • ছাত্র-ছাত্রী

এটি ই-বস্তার জন্য একটি বিশেষ অ্যাপ। নির্দিষ্ট পোর্টাল থেকে এই ই-বস্তা অ্যাপ ডাউনলোড করা যাবে। ডাউন লোড করা ই-বস্তা অ্যাপ যে কোনও অ্যানড্রয়েড ট্যাবলেটে বা মোবাইলে চলবে। এর মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রী খুব সহজে পোর্টালে তৈরি ই-বস্তা ব্যবহার করতে পারবে। ই-বস্তা অ্যাপের মাধ্যমে যে সমস্ত বিষয়বস্তু পাওয়া তা সবই নির্দিষ্ট স্কুল/শিক্ষক আগে থেকে নির্দিষ্ট করে রাখবেন। ই-বস্তার সঙ্গে যুক্ত ইবিএস ফাইলে ক্লিক করলে অ্যাপটি খোলা যাবে।

যে প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়

দ্রুপল সিএমএস সংস্করণ ৭.৩৩ ব্যবহার করে এই পোর্টালটিকে তৈরি করা হয়েছে। একে ই-বস্তা কাঠামো এবং সংশ্লিষ্ট কাজকর্ম চালনা করার জন্য আরও বিস্তৃত করা হয়েছে। ই-বস্তা অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে অ্যানড্রয়েড ৫.০ এপিআই লেভেল ২১ নির্ভর জাভা ৭-এ।

সুবিধা

স্কুল এবং ছাত্র-ছাত্রী উভয়ের জন্য ই-বস্তা অ্যাপে বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। সেই সুবিধাগুলি হল

স্কুল

  • শিক্ষকরা তাদের প্রাধান্য অনুযায়ী বিষয়বস্তু বাছাই করে এক সঙ্গে রেখে দিতে পারবেন।
  • সমৃদ্ধ এবং বিভিন্ন ধরনের বিষয়বস্তু পাওয়া যায়। যার মধ্যে রয়েছে অ্যানিমেশন, অডিও বুক এবং ভিডিও।
  • দ্রুত আপডেট সংস্করণ পাওয়া যায়।
  • কম শিক্ষক রয়েছে যে স্কুলগুলিতে তারা ভালো স্কুলগুলির সম্পদ ব্যবহার করতে পারে।

ছাত্র-ছাত্রী

  • বাস্তব বইয়ের ভার কমায়।
  • স্কুলের তৈরি সংগঠিত সম্পদ ব্যবহার করা যায়।
  • দীর্ঘমেয়াদি খরচ কমে।
  • অ্যানিমেশন, অডিও বই, ভিডিও-র মতো বিস্তৃত সম্পদ পাওয়া যায়।
  • অন্য স্কুলের ই-বস্তা ব্যবহার করা যায়।

মোবাইলের যুগে অ্যাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ই-বস্তা অ্যাপ শিক্ষকদের যেমন ছাত্রবন্ধু হয়ে উঠতে সুযোগ করে দেবে, তেমনি বাস্তব বইয়ের বোঝা কমিয়ে ছাত্র-ছাত্রীকে লেখাপড়ায় আরও আগ্রহী করে তুলবে। যেহেতু ই-বস্তায় মাল্টিমিডিয়ার সহায়তা নেওয়া হয়, তাই পাঠ্যবিষয় ভিত্তিক পড়াও ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে আরও আকর্ষণী হয়ে উঠবে।

ই-জিসিএফ (ই-গভর্ন্যান্স সক্ষমতা কাঠামো)

জাতীয় ই-গভর্ন্যান্স পরিকল্পনা সফল ভাবে রূপায়ণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেহেতু এটি সম্পূর্ণ একটি নতুন পদক্ষেপ তাই রাজ্যগুলির অংশগ্রহণ এর জন্য বিশেষ ভাবে জরুরি। এই পরিকল্পনা রূপায়ণের জন্য ২০০৮ সালের ১০ জানুয়ারি একটি সক্ষমতা তৈরি (ক্যাপাসিটি বিল্ডিং সংক্ষেপে সিবি) প্রকল্প নেয় ভারত সরকার। ই-গভর্ন্যান্সকে প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির পারদর্শিতায় যে ফাঁক রয়েছে তা পূরণ করাই এর উদ্দেশ্য। পেশাদারি সহায়তার জন্য তৈরি করা হয়েছে স্টেট ই-গভর্ন্যান্স মিশন টিম (এসইএমটিএস)। যার কাজ হবে রাজ্যে প্রকল্পগুলির পরিচালনা এবং পর্যবেক্ষণ।

ই-গভর্ন্যান্স সক্ষমতা কাঠামোর উদ্দেশ্য

ই-গভর্ন্যান্স সক্ষমতা কাঠামোর লক্ষ্য হল ই-গভর্ন্যান্সের কোনও প্রকল্পে কী ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন তা চিহ্নিত এবং সংজ্ঞায়িত করা। প্রাথমিক ভাবে এই কাজটি না করলে ই-গভর্ন্যান্স পরিকল্পনাকে সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে না। চিহ্নিতকরণ এবং সংজ্ঞায়িত করার উপর ভিত্তি করে সক্ষমতা তৈরির কর্মসূচিকে শক্তিশালী করা যাবে।

ই-জিসিএফ ই-গভর্ন্যান্সকে প্রয়োগের জন্য টুলকিট প্রকাশ করবে। এই টুলকিট ই-গভর্ন্যান্সকে কার্যকরী ভাবে প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি নির্দিষ্ট কাঠামো মেনে ধাপে ধাপে কী ভাবে একটি ই-গভর্ন্যান্স ব্যবস্থা তৈরি করা যাবে তা বলে দেবে এই টুলকিট।

এই কাঠামোর মধ্যে ই-গভর্ন্যান্সে প্রাথমিক ভাবে ১৯ কাজের ভূমিকা খুঁজে পাওয়া গেছে। কাজগুলিকে দু’টি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রশাসনিক/ পরিচালকের ভূমিকা এবং প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রের ভূমিকা।

যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যগুলিকে যদি ই-গভর্ন্যান্স উদ্যোগের ক্ষেত্রে সক্রিয় না করা যায় তবে এর বাস্তবায়ন কখনই সম্ভব নয়। সে কারণে ই-গভর্ন্যান্সকে প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির পারদর্শিতাকে তৈরি করা জরুরি এবং আশু কাজ। পারদর্শিতার ক্ষেত্রে যে ফাঁক রয়েছে তা পূরণ করতে সরকার সক্ষমতা তৈরির একটি প্রকল্প নেয়। ই-গভর্ন্যান্স পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি এই সক্ষমতা তৈরির প্রকল্পও একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে চালিয়ে যেতে হবে। না হলে মূল লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না।

মোবাইল সেবা

দেশে মোবাইল গভর্ন্যান্সকে প্রশাসনিক কাজের মূলধারায় আনতে মোবাইল সেবা একটি উদ্ভাবনী উদ্যোগ। এটি মোবাইলের মাধ্যমে দেশের নাগরিক এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে সমস্ত সরকারি সংস্থা এবং বিভাগের পরিষেবা পৌঁছে দিতে একটি সমন্বিত মঞ্চ হিসাবে কাজ করে। এসএমএস, ইউএসএসডি, আইভিআরএস এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে এই পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যায়।

মোবাইল গভর্ন্যান্স ইলেক্ট্রনিকস ও তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের (ডিইআইটি) অন্যতম আগ্রহের জায়গা। কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে মোবাইলের ব্যবহার ক্রমশ বাড়তে থাকায় ডিইআইটি একে গুরুত্ব দিয়েছে। বিভিন্ন ইলেকট্র্নিক পরিষেবা ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে মোবাইল বিশেষত গ্রামীণ বাসিন্দাদের মধ্যে। তা ছাড়া এলাকাভিত্তিক পরিষেবার জন্য মোবাইল একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ২০১২-র ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডিইআইটি মোবাইল গভর্ন্যান্স পরিকাঠামো তৈরি করে। সেটিই বর্তমানে দেশ জুড়ে সমস্ত সরকারি বিভাগ এবং সংস্থাগুলিতে মোবাইল গভর্ন্যান্সের চালুর ক্ষেত্রে অন্যতম চালক হিসাবে গৃহীত হয়েছে।

এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য হল, পৃথক পৃথক উদ্যোগ গ্রহণ ছাড়াই কেন্দ্রীয় ভাবে সমস্ত কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারি সংস্থাগুলিকে মোবাইল গভর্ন্যান্সের সুযোগ করে দেওয়া।

মোবাইল সেবা একটি সাধারণ ই-গভর্ন্যান্স কাঠামোর মধ্যে সমন্বিত মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ব্যাবহারকারীকে পরিষেবা প্রদান করবে। এর ফলে কম খরচে সমস্ত বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় সাধন অনেক সহজ হবে।

মোবাইল সেবার অংশ হিসাবে কেন্দ্রীভূত মোবাইল সার্ভিস ডেলিভারি গেটওয়ে (এমএসডিজি) জুলাই ২০১১ থেকে কাজ করছে। বর্তমানে এটিকে মোবাইল সেবার মূল পরিকাঠামো ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০১১ সালের জুলাই-তে এমএসডিজি অধীনে এসএমএস চ্যানেলও করা হয়েছে।

‘পুল এসএমএস’ পূর্বে বিন্যাস করা একটি নাগরিক প্রবর্তিত এসএমএস। ‘পুশ এসএমএস’ ব্যবহার করে বিভিন্ন সরকারি বিভাগ/সংস্থা। ১৯০০-এর বেশি বিভাগ/সংস্থা এর মধ্যে রয়েছে এবং ২০০ কোটিরও বেশি এসএমএস নোটিফিকেশন নাগরিক/ব্যবসায়ী সংস্থাকে পাঠানো হয়েছে।

জানুয়ারি ২০১২-তে মোবাইল সেবা পোর্টাল চালু করা হয়েছে। এই পোর্টালে দিনভর নাগরিক এবং সরকারি সংস্থার বিভিন্ন তথ্য লাইভ আপ-টু-ডেট-এর ভিত্তিতে দেওয়া হয়। পোর্টালের ডিপার্টমেন্ট সার্ভিসেস ট্যাবে আগ্রহী বিভাগ/সংস্থা অনলাইনে দ্রুত নিজেদের নথিভুক্ত করে মোবাইল সেবা পরিষেবা নিতে পারবে। ২০১২–তে কেন্দ্রীভূত অ্যাপ স্টোর হিসাবে এমএসডিজি বিভিন্ন সরকারি পরিষেবার অ্যাপ চালু করে। বর্তমানে ফ্রি ডাউনলোডের জন্য ৩১৫ অ্যাপ রয়েছে। মোবাইল সেবা ২০১৪ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের জন পরিষেবা পুরস্কার পেয়েছে।

ডিজিটাল সাক্ষরতা উদ্যোগ

  • ইলেকট্রনিক্স এবং আইসিটি অ্যাকাডেমি স্থাপনে আর্থিক সহায়তা
  • জাতীয় ডিজিটাল সাক্ষরতা মিশন
  • ডিজিটাল ভারতের অন্তর্ভুক্ত সাক্ষরতা অভিযান (দিশা)

ইলেকট্রনিক্স এবং আইসিটি অ্যাকাডেমি স্থাপনে আর্থিক সহায়তা

>

এই প্রকল্পের লক্ষ্য হল আইআইটি, আইআইআইটি, এনআইটি ইত্যাদিতে সাতটি ইলেকট্রনিক্স এবং আইসিটি অ্যাকাডেমি স্থাপন করা। এই অ্যাকাডেমির লক্ষ্য হবে ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্টস, কমার্স, সায়েন্স কলেজ এবং পলিটেকনিক সহ অন্যান্য ইনস্টিটিউটে বিশেষ প্রশিক্ষণ।

এই অ্যাকাডেমি জোর দেবে ইলেকট্রনিক্স এবং আইটিসি ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদীয়মান প্রযুক্তির ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ এবং পুনর্প্রশিক্ষণে। পাশাপাশি এনপিই ২০১২ এবং এনপিআইটি ২০১২ নির্দেশিত উদীয়মান শিল্প/বাজারের প্রয়োজন অনুযায়ীও প্রশিক্ষণ এবং পুনর্প্রশিক্ষণ চলবে।

জাতীয় ডিজিটাল সাক্ষরতা মিশন

আইটি ২০১২-র জাতীয় নীতির লক্ষ্য হল দেশের প্রতিটি ঘরে এক জন করে মানুষকে ই-সাক্ষর করে তোলা। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হল দু’ধাপ সাক্ষরতা কার্যক্রমে ১০ লক্ষ ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া। রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বাছাই করা ব্লকে প্রতিটি যোগ্য পরিবারে অন্তত এক জন ব্যক্তিকে ই-সাক্ষর করে তোলা।

এই প্রকল্পের সময়সীমা ধরা হয়েছে ১৮ মাস। বাজেট ৯৭.০২ কোটি। প্রকল্পটি চালু হয়েছে ২০১৪-র অগস্টে। সমাজের অনগ্রসর শ্রেণি সহ সাধারণ নাগরিকের ডিজিটাল সাক্ষরতা মিশনের কর্মসূচি হিসাবে ই-লার্নিংপ্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

ডিজিটাল ভারতের অন্তর্ভুক্ত সাক্ষরতা অভিযান (দিশা)

ডিজিটাল সাক্ষরতা অভিযানের উদ্দেশ্য হল বাছাই করা পরিবারের ৪২.৫ লক্ষ ব্যক্তিকে সাক্ষর করে তোলা। এই লক্ষ্যের বাইরেও প্রায় ৪ লক্ষ ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দেবে শিল্প সংস্থা বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাদের নিজস্ব সম্পদ ব্যবহার করে। বাকি ৩৮.৫ লক্ষ ব্যক্তি প্রশিক্ষণ দেবে সরকার। এর জন্য বাজেট অনুমোদন করা হয়েছে ৩৮০ কোটি টাকা।

হার্ডওয়্যার উৎপাদন

ডিজিটাল ভারত প্রকল্পের যে রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে তার লক্ষ্য হল সমাজের ডিজিটাল ক্ষমতায়ন এবং জ্ঞান অর্থনীতির বিকাশ। এই প্রকল্পের একটি স্তম্ভ হল ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনকে উৎসাহ দান। সেই লক্ষ্যে সরকার ২০১২ সালের ২৫ অক্টোবর ইলেকট্রনিক্সের জাতীয় নীতি (এনপিই) ২০১২ অনুমোদন করেছে। ২০২০-এর মধ্যে ভারতে ইলেকট্রনিক্স দ্রব্যের চাহিদা ৪০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের বর্তমান অবস্থায় ২০২০ সালের মধ্যে মাত্র ১০ হাজার কোটি ডলার চাহিদাকে ছোঁয়া যাবে। তাই সরকার ইলেকট্রনিক্স এবং আইটি উৎপাদনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বৃদ্ধি এবং কাজের সুযোগ বাড়বে। এই প্রকল্পের মোট বাজেট ৯,৫০৯ কোটি টাকা।

মুখ্য কয়েকটি কার্যক্রম

  • ইলেকট্রনিক্সের জাতীয় নীতি ২০১২-র লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক ইলেকট্রনিক্স সিস্টেম ডিজাইন অ্যান্ড মেনুফ্যাকচারিং শিল্প স্থাপন। যার মাধ্যমে দেশের চাহিদা পূরণ এবং বিদেশের বাজারকে ধরা।
  • পরিবর্তিত বিশেষ ইনসেনটিভ প্যাকেজ প্রকল্প (এম-এসআইপিএস) এই সেক্টরকে আর্থিক সহয়তা করবে সমস্ত দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা এবং বিনিয়োগ টানার জন্য।
  • ভারতে দু’টি সেমি কন্ডাক্টার ওয়াফের ফ্যাবরিকেশন উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
  • সরকারের নিজস্ব কাজকর্মের জন্য দেশে তৈরি ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র কেনার নীতি গ্রহণ করেছে। ন’টি এরকম যন্ত্রের মধ্যে থাকছে, ডেক্সটপ পিসি, ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টার, ট্যাবলেট পিসি, স্মার্ট কার্ড, এলইডি পণ্য, বায়োমেট্রিক অ্যাকসেস কন্ট্রোল ডিভাইসেস, বায়োমেট্রিক ফিঙ্গার প্রিন্ট সেনসর ইত্যাদি। দেশে তৈরি এই সমস্ত যন্ত্রাদি কিনে ই-গভর্ন্যান্স কার্যক্রমে ব্যবহার করা হবে।
  • স্বয়ংক্রিয় রুটে ইলেকট্রনিক্স হার্ডওয়্যার মেনুফ্যাকচারিং সেকটরে ১০০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগের অনুমোদন।
  • কন্ডিশনাল অ্যাকসেস সিস্টেম (ক্যাশ)-এর উন্নয়ন জন্য পদক্ষেপ এবং ভারতে উৎপাদিত সেটটপ বক্স, ডিটিএইচ টিভি-র চাহিদাপূরণ।
  • মূল্যায়ন পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করতে ডিইআইটি একটি প্রকল্প নিয়েছে। এই প্রকল্পটি হল ইলেকট্রনিক্স পণ্য পরীক্ষা/গুণমান নিয়ন্ত্রণ ল্যাবরেটরি তৈরি।

ক্লাউড পরিষেবা, মেঘরাজ

  • জাতীয় ক্লাউডের বৈশিষ্ট্য
  • জাতীয় ক্লাউড পরিষেবা যা দিচ্ছে

ক্লাউড কম্পিউটিং ইন্টারনেট ভিত্তিক প্রযুক্তি। যার মাধ্যমে আমরা সফটওয়্যার, ফাইল, কম্পিউটারের অন্যান্য তথ্য ব্যবহার ও শেয়ার করতে পারি। একটু সহজ দৃষ্টিকোণ থেকে মেঘজাল বা ক্লাউড হলে অন্তর্জাল বা ইন্টারনেটের ব্যবস্থার নয়া নামকরণ। ডিস্ট্রিবিউটেড, গ্রিড, ইউটিলিটি কম্পিউটিং, ওয়েব ২·০, ক্লায়েন্ট/সার্ভার এরই সমন্বয় হলো ক্লাউড কম্পিউটিং। খুব স্বাভাবিক ভাবে ই-গভর্ন্যান্স উদ্যোগকে প্রসারিত করতে ক্লাউড কম্পিউটিং-এর ব্যবহার জরুরি। এই ক্লাউড কম্পিউটিং-এর সুবিধা নিতে ভারত সরকার একটি উচ্চাকাঙ্খী উদ্যোগ নিয়েছে যার নাম জিআই ক্লাউড বা মেঘরাজ। এই উদ্যোগের মূল্য লক্ষ্য হল, দ্রুততার সঙ্গে ই-গভর্ন্যান্সের পরিষেবা প্রদান। মেঘরাজের জন্য একটি জাতীয় ক্লাউড পরিষেবা পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে। ই-গভর্ন্যান্স অ্যাপস্টোর এই পোর্টালের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় ক্লাউডের বৈশিষ্ট্য

  • মাল্টি লোকেশন ক্লাউড : এনআইসি-র জাতীয় ডাটা সেন্টারগুলিতে একাধিক ক্লাউড নোড তৈরি করা হবে। এগুলি ব্যবহারকারীকে সন্তোষজনক ভাবে হোস্টিং বা অ্যাপের উন্নয়ন ঘটাতে সাহায্য করবে।সেল্ফ সার্ভিস পোর্টাল : ব্যবহারকারী খুব সহজ ভাবে ক্লাইড সম্পদের বিস্তার এবং পরিচালনা করতে পারে। নিরাপদ ক্লাউড : বহু-স্তরীয় নিরাপদ এই ক্লাউড পরিকাঠামোকে পরিচালনা করবে এনআইসি-র সুদক্ষ সাইবার নিরাপত্তা টিম।
  • সুরক্ষিত ব্যবহার: ব্যবহারকারী যে কোনও জায়গায় যে কোনও সময় তার ডিভাইসে নিরাপদে ক্লাউড অ্যাক্সেস করতে পারবেন।

জাতীয় ক্লাউড পরিষেবা যা দিচ্ছে

জাতীয় ক্লাউড পরিষেবা ব্যবহারকারীদের পূর্বে কনফিগার করা ওয়েব অ্যাপলিকেশন এবং ডাটাবেস সার্ভার থেকে বাণিজিক/ওপেন সোর্স সিস্টেম সফটওয়্যার বেছে নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। অ্যাপ্লিকেশন সিস্টেম যা প্রকৃতিগত ভাবে জেনেরিক, সফটওয়্যার সার্ভিস মডেলের অধীনে একাধিক সরকারি সংস্থার ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে। যে পরিষেবাগুলি দেওয়া হয় :

  • ওয়েব সার্ভার
  • অ্যাপ্লিকেশন সার্ভার
  • ডাটাবেস সার্ভার
  • ডেভেলপমেন্ট সার্ভার
  • বেসিক সার্ভার
  • পরিষেবা হিসেবে স্টোরেজ
  • পরিষেবা হিসেবে সফটওয়্যার

data.gov.in (মুক্ত সরকারি তথ্য মঞ্চ)

প্রশাসনিক কাজকর্মে স্বচ্ছতা আনতে, বিভিন্ন সরকারি তথ্য জনগণের কাছে উন্মুক্ত হওয়া প্রয়োজন। ই-গভর্ন্যান্স এই সুযোগেকে বৃদ্ধি করে। সেই উদ্দেশ্যেই তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন পোর্টাল। এই সব পোর্টালে তুলে দেওয়া তথ্য সহজেই জনগণ দেখতে পারেন। প্রয়োজনে ব্যবহারও করতে পারেন। মূলত সেই লক্ষ্য নিয়েই তৈরি হয়েছে মুক্ত সরকারি তথ্য মঞ্চ data.gov.in। এই পোর্টালে বিভিন্ন মন্ত্রক/বিভাগ তাদের তাদের ডাটা সেট, নথি, পরিষেবা, টুল এবং অ্যাপ্লিকেশন জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য প্রকাশ করতে পারবে। এর উদ্দেশ্য হল সরকারি কাজকর্মে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং সরকারি তথ্যের উদ্ভাবনী ব্যবহারের রাস্তা উন্মুক্ত করা। মুক্ত সরকারি তথ্য মঞ্চ হল ভারত এবং মার্কিন সরকারের যৌথ উদ্যোগ। একে পণ্য হিসাবে প্যাকেজ তৈরি করে বিশ্বব্যাপী অন্যান্য দেশে বাস্তবায়নের জন্য ওপেন সোর্স হিসাবে রাখা হয়।সম্পূর্ণ পণ্যটি ডাউনলোড করা যাবে ওপেন সোর্স কোড শেয়ারিং প্লাটফর্ম, গিটহাব থেকে। চাইলে কোনও দেশ ডাউনলোড করে এটির প্রযোগ করতে পারে। ভারতের মুক্ত সরকারি তথ্য মঞ্চের চারটি প্রধান মডিউল আছে। এদের সম্পর্কে বিস্তারিত নীচে দেওয়া হল :

  • ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ডিএমএস): এই মডিউলটি বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ডাটা ক্যাটালগ জমা দেওয়ার জন্য। নির্দিষ্ট কর্মপদ্ধতিতে অনুমোদন প্রক্রিয়ার পর এটি ওয়েবসাইটে দেখা যায়।
  • কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিএমএস): এই মডিউলটি মুক্ত সরকারি তথ্য মঞ্চের বিভিন্ন বিষয়বস্ত এবং কাজকর্ম পরিচালনা ও আপডেট করার জন্য।
  • ভিজিটর রিলেশনসিপ ম্যানেজমেন্ট (ভিআরএম): বিভিন্ন সময় দর্শক কোনও বিষয়ের উপর মন্তব্য করতে চান। এই মডিউলটি দর্শকদের মন্তব্য প্রতিক্রিয়া পরিচালনার জন্য।
  • কমিউনিটিজ: এই মডিউলটি গোষ্ঠীভিত্তিক ব্যবহারকারীদের জন্য, তাদের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং মতামত সমআগ্রহী ব্যক্তিদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার জন্য।

এর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হল

  • আগ্রহউদ্দীপক ডিজাইন
  • সহজে সম্পদের লভ্যতা
  • মানচিত্র নির্ভর বিশ্বব্যাপী তথ্যসাইট
  • এসএমএস এবং ই-মেল অ্যালার্টের সুবিধা

ই-গ্রিটিংস এবং ই-সম্পর্ক

  • ই-গ্রিটিংস
  • ই-সম্পর্ক

ই-গ্রিটিংস এবং ই-সম্পর্ক সরকার এবং নাগরিককে প্রশাসনিক কাজে সক্রিয় করতে একটি উদ্ভাবনী উদ্যোগ। সমস্ত সরকারি আধিকারিক, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং অন্যান্য পেশাদারদের তথ্য একীভূত আকারে রাখতে প্রথম উৎসর্গীকৃত উদ্যোগ ই-সম্পর্ক। প্রশাসনিক কাজকে আরও মশৃণভাবে করতে কর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নত হওয়া প্রয়োজন। সরকারের বিভিন্ন স্তরে ব্যক্তিগত ভাবে পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য উদ্যোগ হল ই-গ্রিটিংস।

ই-গ্রিটিংস

ই-গ্রিটিংসের লক্ষ্য হল পরিবেশবান্ধব মাধ্যমে বিভিন্ন জাতীয় ছুটি এবং অন্যান্য উৎসবের দিনগুলিতে সরকারি আধিকারিক, সহকর্মী এবং বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানানো। এর বিভিন্ন টেমপ্লেট থেকে একাধিক অনুষ্ঠানে ট্যাগ লাইন যোগ করে শুভেচ্ছা পাঠাতে পারবেন। পাশাপাশি ব্যবহারকারী বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক দিবসে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাতে পারবেন। শিক্ষা এবং তথ্যমূলক বার্তাও নাগরিকদের দিতে পারবেন। এই পারস্পরিক শুভেচ্ছা আদান-প্রদানের মাধ্যমে সরকারি কর্মী এবং ব্যবহারকারীর মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করতে সাহায্য করে ই-গ্রিটিংস। এই গ্রিটিংস আদান-প্রদানের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসের গুরুত্ব সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল হন কর্মী ও ব্যবহারকারীরা। পাশাপাশি আন্তর্বিভাগীয় কর্মীদের মধ্যে সম্পর্কও সুদৃঢ় হয়।

ই-সম্পর্ক

দেশ জুড়ে জনপ্রতিনিধি, সরকারি আধিকারিক এবং পেশাদারদের মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ গড়ে তোলার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে ই-সম্পর্ক। এর দু’টি উপাদান :

  • বিভিন্ন মন্ত্রক,বিভাগ, রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির নোডাল অফিসারদের বিস্তারিত যোগাযোগে তথ্য আপলোড করার সুযোগ দেয়।
  • ই-সম্পর্কে নথিভুক্ত আধিকারিক ই-মেল এবং এসএমএস পাঠাতে পারবেন। পেশা, মন্ত্রক, ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী মেল এবং এসএমএস পাঠানোর সুযোগ করে দেয়।

নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া ই-গভর্ন্যান্স উদ্যোগের সাফল্য সম্ভব নয়। দু’টি উদ্যোগই নাগরিকদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। সরকারি অধিকারিকদের যোগাযোগের একীভূত কোনও ডাটাবেস না থাকায় বর্তমানে কোনও মন্ত্রক বা বিভাগের তাদের কর্মীদের কাছে সব সময় পৌঁছতে পারেন না। ই-গভর্ন্যান্স কাঠামোর মধ্যে এই দু’টি পদ্ধতি সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।

অন্য প্রকল্প

  • জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সমন্বয় কেন্দ্র
  • ক্রমাগত এবং দ্রুত মূল্যায়ন
  • ভার্চুয়াল ক্লাসরুম
  • ভৌগোলিক তথ্য প্রদান পদ্ধতি(জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম সংক্ষেপে জিআইএস)

জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সমন্বয় কেন্দ্র

বিভিন্ন ই-গভর্ন্যা্ন্স প্রকল্পকে নিরাপদ করতে নিয়মিত নজরদারি গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য প্রয়োজন একটি সাইবার নিরাপত্তা কেন্দ্রের। দেশের সমস্ত রাজ্যে ই-গভর্ন্যান্স প্রকল্পগুলি যাতে নিরাপদে চলতে পারে সেই জন্য এই কেন্দ্র নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সমন্বয়কারীর ভূমিকা নেবে। দেশের মধ্যে নিরাপদ ভাবে সাইবার স্পেস ব্যবহারের জন্য এটি স্থাপন করা হবে।

ক্রমাগত এবং দ্রুত মূল্যায়ন

ই-গভর্ন্যান্স পরিষেবাগুলির দ্রুত এবং ধারাবাহিক মূল্যায়ন গুরুত্বপূর্ণ। সেই মূল্যায়ন চালুর জন্য একটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়মিত তার প্রতিক্রিয়া জানাবে। যা পরিষেবাকে আরও উন্নত করতে সাহায্য করবে।

ভার্চুয়াল ক্লাসরুম

ভার্চুয়াল ক্লাসরুম অনলাইনে পাঠের একটি পদ্ধতি। এটি দু’ধরনের হতে পারে, একটি ওয়েব নির্ভর এবং অন্যটি সফটওয়্যার নির্ভর। সাধারণ একটি ক্লাস রুমের মতোই ভার্চুয়াল ক্লাসরুমেও ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষক-শিক্ষিকাকে প্রশ্ন করতে পারে। ভারত সরকার দেশের স্কুলগুলিতে ভার্চুয়াল ক্লাসরুম তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। সিটিসি সক্রিয় ট্রেনিং, শিক্ষাদান এবং মূল্যায়ন এই পরিষেবার মধ্য রয়েছে। কার্যকরী কমিটি ৩৫০০ স্কুল এবং ৫০ ডিআইইটিএস-এ ভার্চুয়াল ক্লাসরুম তৈরির সুপারিশ করেছে।

ভৌগোলিক তথ্য প্রদান পদ্ধতি (জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম সংক্ষেপে জিআইএস)

ই-গভর্ন্যান্স প্রকল্পে সরকারি পরিষেবা আরও ভালো ভাবে পাওয়া যেতে পারে জিআইএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে। জিআইএস হল ভৌগলিক তথ্য ব্যবস্থা। এটি ভূপৃষ্ঠের কোনও স্থান সম্পর্কিত উপাত্ত সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য গৃহীত প্রযুক্তি।এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানচিত্র এবং উপগ্রহ চিত্রে উপস্থাপিত তথ্যের বিভিন্ন লেয়ার বা স্তর সহজে ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ করা যায়। জাতীয় ইনফরমেশন সিস্টেম (এনজিআইএস) বাস্তবায়িত হচ্ছে একাধিক সংস্থার ভূ-স্থানিক তথ্য একীভূত করে। এই সংস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে, সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স সেন্টার, এনআরএসএ এবং ভূবিজ্ঞান মন্ত্রক। এরা ই-গভর্ন্যান্সের জন্য জিআইএস প্লাটফর্ম তৈরি করেছে। এটি পরিষেবা হিসাবে বিভিন্ন মিশন মোড প্রকল্প এবং অন্য ই-গভর্ন্যান্স প্রকল্পকে সহায়তা করে।

সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম

সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/15/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate