চূড়ান্ত অসংগঠিত অবস্থা। কর আদায়ের ক্ষেত্রেও কোনও নির্দিষ্ট মান নেই। ফলস্বরূপ ঠিকমতো ভ্যাট বাবদ কর জমা পড়ে না। অতিরিক্ত কাগজ-নির্ভরতা জটিলতা বাড়ায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দমন এবং দিউ-এর ভ্যাট সংগ্রহ বিভাগ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি-নির্ভর বাণিজ্যিক কর প্রশাসন চালু করার উদ্যোগ নেয়।
এই মিশন মোড প্রকল্পটি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের প্রকল্প। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল, সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের কর আদায়ের পদ্ধতিকে একটি নির্দিষ্ট মানে আনা ও নাগরিককেন্দ্রিক পরিষেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এই প্রকল্পের কেন্দ্রবিন্দু হল রাজ্যের বাণিজিক কর প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উন্নত পরিষেবা প্রদান।
প্রকল্পের অংশ হিসাবে দমন ও দিউ-এর ভ্যাট বিভাগ ‘ওয়ান স্টপ সল্যুশন’ নামে একটি পোর্টাল চালু করে। এর মাধ্যমেই মূলত ভ্যাট সংক্রান্ত কাজ চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই পোর্টালের মাধ্যমে যে ই-পরিষেবাগুলি পাওয়া যায় তার মধ্যে রয়েছে ই-রেজিস্ট্রেশন, ই-রির্টান, ই-পেমেন্ট, ই-টিডিএস, অনলাইনে সংবিধিবদ্ধ ফর্মের ইস্যু, ই-রিফান্ড, ই-অডিট এবং অ্যাসেসমেন্ট। এর ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পরিবর্তন দেখা দেয়। জটিলতা কমে। কাজের মান বাড়ে। উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়ে কর আদায়ের পরিমাণ।
তবে এটি নতুন একটি ব্যবস্থা। তাই একে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। লাগাতার প্রচার চালানো হয়েছে। শিল্প সংগঠনগুলির মধ্যে আগ্রহবৃদ্ধিকারী অনুষ্ঠান করতে হয়েছে। প্রথমে দিকে নতুন একটি ব্যবস্থাকে মেনে নিতে গ্রাহক এবং ভ্যাট বিভাগের কর্মী, উভয় তরফ থেকেই বাধা এসেছে। তবে সময় যত গেছে আগ্রহ তত বেড়েছে। প্রকল্পে অনেকটাই সাফল্য মিলেছে। আগামী দিনে ই-গভর্ন্যান্সের সক্রিয় বাস্তবায়নের মাধ্যমে দমন-দিউকে ই-জেলা হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্য রয়েছে। তারই প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে ই-ভ্যাট নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।
সূত্র : http://nisg.org/files/documents/UP1418302819.pdf
বিভিন্ন ঝুঁকি এবং চ্যালেঞ্জ বাদ দিয়ে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এই মিশন মোড প্রকল্পকে সাফ্যলের সঙ্গে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। প্রথম দিকে ডিলাররা কাগজে তাদের রির্টান ফাইল করছিলেন। এর পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের জন্য ইলেকট্রনিক মাধ্যমেও রির্টান ফাইল করার সুবিধা পাওয়া যাচ্ছিল। দু’টি পদ্ধতিকে সমান্তরাল ভাবে না বজায় রাখলে অনর্থক জটিলতার সৃষ্টি হবে। নতুন এই পদ্ধতিকে মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের তরফ থেকে বিরোধ আসবে। যা প্রথম দিকে কিছুটা এসেছিলও। আস্তে আস্তে যখন অধিকাংশ ডিলার অনলাইনে ই-রিটার্ন ফাইল করতে শুরু করলেন তখন প্রকল্পে গতি এল।
অধিকাংশ ডিলার যাঁদের ক্ষেত্রে ই-রির্টান ফাইল করা বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছিল তাঁরা যাতে এই পোর্টালটিকে আরও ভালো ভাবে ব্যবহার করতে পারেন তার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল।
এই প্রকল্প কতটা সফল? এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে কত জন ডিলার এই প্রকল্পটিকে ব্যবহার করছেন তার সংখ্যা দিয়ে। দেখা গেছে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ। খুব স্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে কর আদায়ের পরিমাণও। অনলাইনে ২০১২ সালে প্রায় ৪১৬২ লক্ষ টাকা কর আদায় হয়েছে। নয়া এই পদ্ধতিতে কতটা আগ্রহ বেড়েছে তা বোঝা যাবে কর আদায়ের পরিমাণ দেখে। শুধু তা-ই নয়, প্রতি বছর কাগজ চালানের মাধ্যম কর আদায়ের একটি পরিমাপ থাকে, দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ২০১২ সালে অনলাইনে কর আদায়ের পরিমাণ তাকে ছাপিয়ে গেছে।
সেই অর্থে শক্তসার্মথ্য এই সফটওয়্যারের ‘বেটা সংস্করণ’ লাইভ পরিষেবা দেয়। যা এই প্রকল্পের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। তবে জটিলতাও রয়েছে। সফটওয়্যারটি একেবারে থামিয়ে দিয়ে কোনও পরিবর্তন করা যাবে না। কোনও স্বনির্ধারণ বা পরিবর্তন করতে হলে সময়ের সীমাবদ্ধতার মধ্যেই কাজ করতে হয়।
সূত্র : http://nisg.org/files/documents/UP1418302819.pdf
এই প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে যা সুসংবদ্ধ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তার পিছনে মূল ভাবনা ছিল জনগণের মধ্যে ই-গভর্ন্যান্স উদ্যোগের প্রসার ঘটানো।
এই প্রকল্প চালু করার আগে রির্টান ফাইলের সমস্ত প্রক্রিয়াটাই ছিল প্রচণ্ড অসংগঠিত এবং কাগজ-নির্ভর। সমগ্র প্রক্রিয়ার নির্দিষ্ট কোনও মান ছিল না। কর আদায়ের পদ্ধতির ক্ষেত্রের পাশাপাশি কী পরিমাণ কর ধার্য হবে তার হিসাবের ক্ষেত্রেও। ব্যক্তিগত চালান রাখা হত না এবং কর আদায় করা হত দু’টি পদ্ধতিতে — কেনা এবং বেচা। সামগ্রিক বিক্রি এবং কেনাকাটার উপর করের হিসাবে হত। আলাদা আলাদা বিভাগের পণ্যদ্রব্যের জন্য আলাদা ভাবে কর ধার্য হত না। কাগজের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াতেই কর আদায় চলত। আন্তঃরাজ্য এবং আন্তর্দেশীয় বিক্রি ও কেনার উপর আলাদা কোনও পার্থক্যরেখা ছিল না। এর সঙ্গে পণ্যদ্রব্যের শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী আলাদা কর কাঠামো মেনে চলা হত না। ফলে কর আদায়ও কম হত।
কাগজের মাধ্যমে রির্টান জমা দেওয়ার আরও কতগুলি অসুবিধা ছিল। জমা দেওয়া রির্টান ভালো করে যাচাই করা কার্যত এক দুরূহ কাজ ছিল ডিলারদের কাছে।
এই এমএমপি যে প্রকল্প অনলাইন কর আদায় সফটওয়্যারের নকশা তৈরি করেছে, তা নিম্নলিখিত কাজকে নিশ্চিত করে :
এই সমস্ত ই-পরিষেবারই উদ্দেশ্য ছিল অন্য রাজ্যগুলির মতো সঠিক ট্যাক্স আদায়কে নিশ্চিত করা। তবে সমস্ত স্টেকহোল্ডারের সফল ভাবে ভ্যাট অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ব্যবহারের উপর এই প্রকল্পের সাফল্য নির্ভর করছে।
সূত্র : http://nisg.org/files/documents/UP1418302819.pdf
যে কোনও সরকারি প্রসেস রি-ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্প (জিপিআর) মূল কতগুলি ধাপ মেনে চলে। এই ধাপগুলি হল পরিকল্পনা—কাজ—পরীক্ষা—অ্যাক্ট—পুনর্মূল্যায়ন—কাজ। এ ক্ষেত্রেও সে ভাবে কাজ এগিয়েছে। একটি সাধারণ ই-গভর্ন্যান্স প্রকল্প যে জীবনচক্র মেনে চলে এ ক্ষেত্রে সেই ভাবেই কাজ এগিয়েছে। উল্লেখিত জীবনচক্রের ধাপগুলি নিম্নরূপ :
এই জিএপি বিশ্লেষণ রিপোর্ট তৈরি করা হয় গ্রাহকের চাহিদা, স্থানীয় কর ব্যবস্থা, স্টেকহোল্ডারদের সুবিধা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ভ্যাট অফিস যে যে পরিষেবা দেয় তার উপর ভিত্তি করে এই জিএপি রিপোর্ট প্রকল্পের জন্য একটি প্রাথমিক খাঁচাও তৈরি করে।
সূত্র : http://nisg.org/files/documents/UP1418302819.pdf
একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে খুব স্বাভাবিক ভাবে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে যার কিছুটা মনুষ্যগত এবং কিছুটা প্রযুক্তিগত। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল কর দফতরের কর্মী এবং গ্রাহকদের নতুন ব্যবস্থা সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলা। পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাধা আসছিল ভেতর বাইরে দু’দিক থেকেই। ভেতরের বাধা যদি কর্মীরা হন তবে বাইরের বাধা হচ্ছিলেন ডিলার, ব্যবসা-মালিক এবং ট্যাক্স কনসালটেন্টরা।
রির্টান জমা দেওয়ার পদ্ধতি, রেজিস্ট্রেশন, পেমেন্ট এবং বিভিন্ন বিধিবদ্ধ ফর্মে নেওয়া বা জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে আগে একটি পদ্ধতি মেনে চলা হত। গ্রাহক এবং কর্মীদের কাছে নয়া ব্যবস্থাকে সুবিধাজনক ভাবে তুলে ধরতে সমগ্র কর ব্যবস্থাটিকে পুরনো পদ্ধতি অনুযায়ী সাজানো হচ্ছিল। প্রকল্পের বাস্তবায়নে এটি আরও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
এ ছাড়া ডিলারদের ডেটা ব্যাঙ্ক তৈরি, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড তৈরি সব চেয়ে কষ্টসাধ্য কাজ ছিল। এর জন্য প্রয়োজনীয় ভালো পরিকাঠামো পাওয়া জরুরি ছিল। এর পাশাপাশি গ্রাহকদের অনুরোধে বিভিন্ন সময় নানা পরিবর্তন এবং স্থানীয় অবস্থার জন্য স্বনির্ধারণ করা একটি ঝক্কির কাজ ছিল। অ্যাপ্লিকেশনকে আরও ব্যবহারকারী-বান্ধব করে তুলতে এই ধরনের পরিবতর্নের প্রয়োজনও ছিল। আরও একটি চ্যালেঞ্জ ছিল জনগণের মধ্যে কম্পিউটার শিক্ষার প্রসার। কম্পিউটার না জানার ফলে অনেক ক্ষেত্রে এর বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে আরও পিছিয়ে দিচ্ছিল। তা ছাড়া আইনগত পরিবর্তন, পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা, পরিকাঠামো এবং ব্যবহারের দিক থেকে সিস্টেমের ক্ষমতা তৈরিও একটি জটিল কাজ ছিল।
দফতরে থাকা সমস্ত পুরনো ডেটার ডিজিটাইজেশন এবং সংযুক্তি করতে গিয়ে মাঝেমাঝে প্রযুক্তিগত কারণে দেরি হয়ে যাচ্ছিল। এর প্রধান কারণ হল পর্যাপ্ত পরিকাঠামোর অভাব। প্রক্রিয়া শুরুর ক্ষেত্রে এটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
সূত্র : http://nisg.org/files/documents/UP1418302819.pdf
স্টেকহোল্ডারদের আগ্রহী করে তোলার জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে :
সূত্র : http://nisg.org/files/documents/UP1418302819.pdf
রূপান্তর ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য থাকে, সচেতনতা তৈরি, তার পরই সফটওয়্যারটি সম্পর্কে জ্ঞান বদ্ধির মাধ্যমে এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। ভ্যাট সফটওয়্যারটির ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি পালন করা হয়েছে।
নানা ভাবে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জ্ঞান বন্টন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রশিক্ষণ:
তবে এ সব সত্ত্বেও ব্যবহারকারীরা ব্যবহারের সময় সমস্যা পড়েছেন। সেই সমস্যার সমাধানে তাঁদের সহায়তা করার জন্য অফিসের সময়ভিত্তিক হেল্প ডেস্ক তৈরি করা হয়েছিল। মোবাইল ফোনে এবং ই-মেলের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের সহায়তা করেছে উইপ্রোর একটি টিম।
এই প্রকল্পের প্রয়োজনে প্রচুর পরিমাণে ডেটাবেস কম্পিউটার-বন্দি করা হয়েছে। যা ভবিষ্যতে অন্য প্রকল্পের জন্যও কাজে লাগবে।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020