অধ্যাপক অমর্ত্য সেন এই অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে তাঁর ভাষণে বলেন, যে কোনও ব্যাপারেই আলোচনার একটি আলাদা মাধুর্য রয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে অনেক কিছু শেখা যায়। তাঁর প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র জীবনের উদাহরণ দিয়ে বলেন, সেই সময় সহপাঠীদের মধ্যে বিশেষ ভাবে মনে পড়ে অধ্যাপক বরুণ দে, সুখময় চক্রবর্তী, পার্থ গুপ্তদের কথা। এঁদের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি প্রচুর জিনিস শিখতে পেরেছিলেন। বহু বিষয়ে তাঁর সম্যক জ্ঞান লাভও সম্ভব হয়েছিল। অধ্যাপক সেনের বিনীত মন্তব্য, ‘জানি না তাঁরা আমার কাছ থেকে কিছু শিখেছিলেন কিনা, কিন্তু আমি তাঁদের কাছে প্রচুর কিছু শিখেছি।’
শিক্ষাক্ষেত্রে আলোচনার মাধ্যমে কী কী ভুল ধারণা নিরসন করা সম্ভব সে সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করে বলেন তিনি। অধ্যাপক সেনের মতে, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আলোচনার প্রয়োজনীয়তা আরও অনেক বেশি। জনস্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তুলতে গেলে বিভিন্ন স্থায়ী বা সমসাময়িক বিষয়গুলি নিয়ে গ্রাম বা পাড়া স্তরে আলোচনা করা দরকার। এতে শুধু যে তথ্যের আদানপ্রদান হয় তা-ই নয়, অনেক সময় সমস্যার সমাধানে জ্ঞান লাভ করাও সম্ভব হয়।
অধ্যাপক সেন বলেন, গত কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে ফার্টিলিটি রেট কমছে। শেষতম তথ্য অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের ফার্টিলিটি রেট কেরলের চেয়েও কম। কী ভাবে এটা সম্ভব হল তা সবার জানা দরকার। এই বিষয় নিয়ে বিস্তৃত আলোচনার অবকাশ থাকলে লক্ষ্যে পৌঁছনোর আরও সহজ উপায় খুঁজে বের করা সম্ভব হবে। এর জন্য সর্বস্তরে উদ্যোগ দরকার। শুধুমাত্র নীতিপ্রণয়নকারীদের মধ্যে বিষয়টিকে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। অধ্যাপক সেনের মতে, তথ্য আহরণই শুধু নয়, তথ্য একেবারে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ায়ও একটা বড় কাজ। এর ফলে নিজেদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে অন্যের অভিজ্ঞতাকে যাচাই করে নেওয়া সম্ভব হয়।
অধ্যাপক সেন বলেন, দুঃখের বিষয় হল ভারতে স্বাস্থ্য খাতে রাষ্ট্রের ব্যয় যথেষ্ট কম। ফলে শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা থেকে শুরু করে আরও জরুরি ব্যাপারে দেশ শক্তপোক্ত পরিকাঠামো তৈরি করতে পারছে না। তিনি বলেন, চিনে জিডিপির তিন অংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করার ব্যবস্থা রয়েছে। ভারতে কিন্তু তা জিডিপির মাত্র এক অংশ। দীর্ঘদিন ধরে ভারতে স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়েনি। সম্প্রতি আবার শোনা যাচ্ছে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দের টাকা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেটা বেশ দুর্ভাগ্যজনক।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020