তাঁদের হাতের ছোঁয়ায় সেজে ওঠেন রুপোলি পর্দার তারকারা। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁদের পরিচিতি মেক-আপ আর্টিস্ট হিসেবেই। ‘কনস্টিটিউশন অফ দ্য সাইন কস্টিউম মেক আপ আর্টিস্ট অ্যান্ড হেয়ারড্রেসার্স অ্যাসোসিয়েশন’ (সিসিএমএএ)-এর ভিত্তিতে এত দিন বলিউডে পুরুষরাই মেক-আপ আর্টিস্ট হিসেবে স্বীকৃতি পেতেন। মহিলাদের পরিচয় সীমাবদ্ধ থাকত ‘হেয়ারড্রেসার’ হিসেবেই। আর এই দুই পরিচয়ের ফারাকে পারিশ্রমিকেরও ফারাক হয় বিস্তর। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, বৈষম্যমূলক এই শর্ত তুলে নিয়ে মহিলাদেরও মেক-আপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজের সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু তার পরও কি বদলেছে টালিগঞ্জের গ্রিনরুমের চিত্র? বাস্তব কিন্তু তেমন বলছে না। টলিউডে বেশ কয়েক বছর ধরে ‘হেয়ারড্রেসারের’ কাজ করছেন মহুয়া জানা। মহুয়ার কথায়, ‘মেয়েরা মেক-আপ আর্টিস্ট গিল্ডের সদস্যপদের জন্য আবেদন করলেও সহজে তা পাওয়া যায় না। সে তুলনায় হেয়ারড্রেসার গিল্ডের সদস্যপদ পাওয়া মেয়েদের পক্ষে সহজ। কিন্তু এক বার হেয়ারড্রেসার হিসেবে ইন্ডাস্ট্রিতে এলে তাঁকে আর অন্য কাজ করতে দেওয়া হয় না। যতই মেক-আপের কাজ জানি, তা করার সুযোগই দেওয়া হয় না। মেক-আপের কাজ করে মেক-আপ আর্টিস্টের ছুটি। তার পর হিরো-হিরোইনদের পোশাক, মেক-আপ উঠে যাওয়ার সমস্যা এ সব আমাদেরই সামলাতে হয়। অনেক সময় ছোটখাটো মেক-আপও সেরে দিতে হয়। অথচ মেক-আপ আর্টিস্টের তুলনায় আমাদের পারিশ্রমিকও কম, যোগ্য সম্মানও জোটে না।’ হেয়ারড্রেসার হেনা মুন্সির মত অবশ্য একটু আলাদা। ১৯৯২ সাল থেকে তিনি টালিগঞ্জে কাজ করছেন। তিনি মনে করেন, মেয়েরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মহিলাদের মেক-আপ করতে স্বচ্ছন্দ। কিন্তু মেক-আপ আর্টিস্টের ক্ষেত্রে এ ধরনের ভেদাভেদ চলবে না। এই ‘কমফোর্ট জোন’-এর জায়গা থেকেই মেক-আপের দুনিয়ায় পুরুষদের আধিপত্য বেশি। অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রও মনে করেন, এ ক্ষেত্রে মহিলাদের সাহসের অভাব কিছুটা রয়েছে। তবে একই সঙ্গে তিনি স্বীকার করেছেন, যে গিল্ডের মাধ্যমে মেক-আপ আর্টিস্টরা কাজ পান, সেখানে অনেক ক্ষেত্রেই বাবা-ছেলে পরম্পরায় কাজ চলে। সে ক্ষেত্রে মহিলারা এলে প্রতিযোগিতা বাড়ার চিন্তা তো থাকেই।
অভিনেত্রী গার্গী রায়চৌধুরী অবশ্য মনে করেন, আগে পুরুষরাই হেয়ারড্রেসার ও মেক-আপ ম্যানের কাজ করতেন, এখন মহিলারা হেয়ারড্রেসারের জায়গা নিয়েছেন। এটাই ইতিবাচক পদক্ষেপ। সে রকম ভাবেই মেক-আপের ক্ষেত্রেও হয়তো কাজের গুণেই মেয়েরা নিজেদের জায়গা করে নিতে পারবেন। অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মনে করেন, দীর্ঘদিনের চলে আসা রীতি থেকেই মেক-আপের ক্ষেত্রে ছেলেদের আধিপত্য। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই রীতি নিশ্চয়ই বদলাবে৷ মেক-আপের কাজে মহিলারা একেবারে নেই সে কথা বলা ভুল। সম্প্রতি কিছু মহিলা মেক-আপের কাজ করছেন, তবে সংখ্যাটা নেহাতই হাতেগোনা এবং তাঁদের মধ্যেও অধিকাংশই মেক-আপ আর্টিস্টের সহকারী হিসেবেই দীর্ঘদিন কাজ করে চলেছেন। মেক-আপের জগতে পরিচিত মুখ অভিজিৎ চন্দ অবশ্য মনে করেন, ‘মহিলাদের এই পেশায় আসার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই। কারও যোগ্যতা থাকলে তিনি আসতেই পারেন।’ একই মত মেক-আপ আর্টিস্ট বিমান বিশ্বাসেরও। তাঁর কথায়, ‘মহিলারা মেক-আপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করতে আসেন খুব কম।’ তবে এক জন হেয়ার ড্রেসার মেক-আপ করতে পারেন মানেই তিনি মেক-আপ আর্টিস্টের বিকল্প হয়ে উঠতে পারেন না, সে কথাও স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন বিমানবাবু। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সর্বত্রই নারীদের অগ্রগতির জয়গান। সেখানে এত দিনের রীতি ভেঙে মেক-আপের দুনিয়াতেও কি তারা পারবে পুরুষদের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিতে? একুশ শতকে দাঁড়িয়েও সে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।
সূত্র: এই সময়, ৭ মার্চ, ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/18/2020