ফের ফল-বিভ্রাট স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে! পড়ুয়াদের একাংশের অভিযোগ, এ বারও গত বছরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। অনলাইনে প্রকাশিত ফলে বাছাই করা কয়েক জন পড়ুয়াকে বাড়তি নম্বর দেওয়া হয়েছে , আবার কিছু কিছু পড়ুয়ার নম্বর কমে গিয়েছে। তবে উপাচার্য ভবতোষ বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘পুরো বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। কী কারণে বারবার ফল-বিভ্রাট হচ্ছে , তা চিহ্নিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মানুষের ভুলে এমনটা হচ্ছে কি না তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত ডাক্তারির শেষ বর্ষের (ফাইনাল প্রফ পার্ট-১) পরীক্ষার ফল অনলাইনে প্রকাশিত হয়। প্রায় ১২০০ পড়ুয়া সেই পরীক্ষা দিয়েছিলেন। পডুয়াদের অভিযোগ, এক ঘণ্টার মধ্যেই সেটি মুছে ফেলা হয়। অল্প কিছু ক্ষণ পর ওয়েবসাইটে নতুন রেজাল্ট আপলোড করা হয়। কিন্তু নতুন রেজাল্ট দেখে তাজ্জব হয়ে যান অনেকে। দেখা যায়, বহু পড়ুয়া যাঁরা প্রথম বার অনার্স ফল দেখেছিলেন, তাঁরা নতুন রেজাল্টে অনার্স পাননি। যেমন হয়েছে এসএসকেএমের ছাত্রী কুমারী অংশুলতার। এই ছাত্রী প্রথম বার ওয়েবসাইটে দেখেছিলেন যে, তিনি অনার্স নম্বর পেয়েছেন। কিন্তু নতুন ফল প্রকাশের পর দেখেন, তাঁর নম্বর কমে গিয়েছে। অনার্স-এর পরিবর্তে তিনি ‘পাস’ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। একই অভিজ্ঞতা হয়েছে আরও অনেক ছাত্রছাত্রীর। এর উল্টো চিত্রও দেখা গিয়েছে। এও অভিযোগ, বেশ কিছু পড়ুয়া প্রথম দফায় অকৃতকার্য হলেও পরে তাঁদের নম্বর বেড়ে গিয়েছে। ছাত্র সংগঠন ডিএসও-র রাজ্য সভাপতি মৃদুল সরকার বলেন, ‘কয়েক দিন আগে ডেন্টালের পরীক্ষায় এ রকম নিয়মবহির্ভূত ভাবেই শাসক দলের ঘনিষ্ঠ এক নেতাকে পাশ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন প্রত্যেক বছর এমন বিভ্রাট হবে ?’ স্বচ্ছতা আনতে গত বছর থেকে পরীক্ষার ফল অনলাইনে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু সে বারও একই রকম বিভ্রাট হয়েছিল।
দু-দু’বার আপলোড করা হয়েছিল পড়ুয়াদের ফল। ছাত্রদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, বেশ কিছু পড়ুয়াকে (বিশেষত যাঁরা শাসক দলের ঘনিষ্ঠ) বাড়তি নম্বর দিয়ে পাশ করানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তখন প্রযুক্তিগত বিভ্রাটের যুক্তি দিয়েছিলেন। কাউকে বাড়তি নম্বর দেওয়া হয়নি বলেও দাবি করেছিলেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ দিনও দাবি করেছে , কারও নম্বরেই কোনও কারচুপি করা হয়নি। গত বার প্রথম দফায় আপলোড করার পরই দেখা গিয়েছিল যে, অসম্পূর্ণ রেজাল্ট আপলোড হয়েছে। কিন্তু কেন অসম্পূর্ণ ফলাফল আপলোড হল, তার সদুত্তর কেউ-ই দিতে পারেনি। আর এ দিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তাদের দাবি, ওয়েবসাইটে যে ফল প্রকাশিত হয়েছে, তা ইতিমধ্যে প্রত্যেক মেডিক্যাল কলেজে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারও সন্দেহ থাকলে তা দেখে নিতে পারেন।
উপাচার্য ভবতোষ বিশ্বাসের আশ্বাস, বিভ্রাটের পিছনে যে কারণই থাক না কেন, তা নির্মূল করতে সব ধরনের চেষ্টা করা হবে। তবে পড়ুয়ারা এবং ছাত্র সংগঠনগুলি জানিয়েছে, ফল প্রকাশে অস্বচ্ছতার অভিযোগ নিয়ে তাঁরা আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠী এবং মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার দ্বারস্থ হবে।
পড়ুয়াদের একাংশ বলছেন, সেখানেও সুরাহা না হলে তাঁরা আইনের পথ নেবেন।
সূত্র: এই সময়, ১৩ মার্চ, ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020