মায়ের ঠিক পিছনেই মেয়ের সিট। মা সনজিদা ও মেয়ে সুবহানা দু’জনেই স্থানীয় নয়াপাড়া হাইস্কুলের ছাত্রী। একই সঙ্গে উস্তির উত্তর কুসুম হাইস্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন তাঁরা ! নিম্নবিত্ত পরিবারের বধূ সনজিদা। স্বামী গওসুল আনম হালদার একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে পোশাক তৈরির কাজ করেন। মাস গেলে আয় হাজার আটেক টাকা। ১৯৯৫ সালে ডায়মন্ড হারবারের মোহনপুরের বাসিন্দা সনজিদার বিয়ে হয় গওসুলের সঙ্গে। তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়তেন তিনি। ইচ্ছে ছিল আরও পড়ার। কিন্তু বাধ সাধল সংসার। পাশাপাশি, বিয়ের বছর ঘুরতে না-ঘুরতেই সন্তানসম্ভবাও হলেন। জন্ম হল সুবহানার। তারও পরে জন্মাল আর এক পুত্রসন্তান। সন্তানদের দেখভালের চাপে থমকাল পড়াশোনার বাসনা।
থমকাল বটে, কিন্তু পুরোপুরি থামল না। তাই ২০১০ সালে মনের জোর সম্বল করে রবীন্দ্র মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় বিভাগে মাধ্যমিক পাশ করলেন সনজিদা। শুরু হল এক নতুন অধ্যায়। ভর্তি হলেন স্থানীয় নয়াপাড়া হাই মাদ্রাসায়। তত দিনে মাধ্যমিক পাশ করে মায়ের স্কুলেই ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেয়েও। ফলে, দু’জনেই এক সঙ্গে কলা বিভাগের ছাত্রী হলেন। আর চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীও তাঁরা।
কেমন ছিল এই পথ চলা ? প্রশ্ন শুনে স্বভাবে মুখচোরা সুবহানা মৃদু হেসে বলল, ‘আমি টিউশন পড়ে ফিরে এলেই মা আমার থেকে জেনে নিত পড়া। পড়তে বসলেই, মা পাশে এসে বসত। আমার নোটসগুলোও দেখে নিত।’ এ ভাবেই চলেছে পরীক্ষার প্রস্তুতি। সনজিদা বলেন, ‘ক্লাস এইটে পড়ার সময়ে বাড়ির চাপে বিয়ে করতে হয়। তখন থেকেই মনের মধ্যে পড়ার জন্য আকুতি অনুভব করতাম। সন্তানরা একটু বড় হতে তাই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিই। পাশও করে যাই। পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। ভবিষ্যতে কলেজেও ভর্তি হব।’ অবশ্য, স্বামী গওসুল আনমের সাহায্য ছাড়া যে এই যাত্রা সম্ভব ছিল না, তাও জানাতে ভোলেন না সনজিদা। স্বামী গওসুল বলেন, ‘স্ত্রীর অদম্য ইচ্ছায় সব সময় উত্সাহ দিয়েছি আমি।’ সেই উত্সাহের জোরেই মা-মেয়ের স্বপ্ন ছোঁয়ায় খুশির ঝিলিক তাঁর হাসিতেও।
সূত্র : শুভেন্দু হালদার, এই সময়, ১৯ মার্চ, ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020