বাল মিত্র গ্রাম কৈলাস সত্যার্থীর মস্তিষ্কপ্রসূত একটি অভিনব উদ্যোগ। ২০১০ সালে এই উদ্যোগ নেওয়া হয় যার লক্ষ্য ভারতের প্রতিটি গ্রাম ও শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডকে শিশুশ্রম মুক্ত করা। এই গ্রামে স্কুলে যাওয়ার মতো বয়সি প্রতিটি ছেলে-মেয়ে স্কুল শিক্ষা পাবে। শৈশব বাঁচাও আন্দোলনের অঙ্গ হিসাবে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে যার চূড়ান্ত লক্ষ্য হল শিশু শ্রমের সম্পূর্ণ অবসান। এতে বাল পঞ্চায়েত গঠনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে শিশুরা উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের ব্যাপারে নিজেদের মতামত দিতে পারবে। এই ধরনের পঞ্চায়েত শিক্ষার ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য, শিক্ষার গুণমান প্রভৃতি বিষয়ে নিজেদের মতামত দিতে পারবে। ফলে শিশুশিক্ষার ক্ষেত্রে কোথায় ত্রুটি হচ্ছে তা সহজেই বের করা সম্ভব হবে। সরকার বিষয়গুলি সম্পর্কে নিস্পৃহ ভূমিকা গ্রহণ করলে শিশু সংসদ বা শিশু পঞ্চায়েত বিষয়গুলি বারবার তুলে ধরে সরকারি পর্যায়ে সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। এই গ্রামের শিশুরা শিশুশ্রমিকদের উদ্ধার করার ব্যাপারে বারবার সরব হয়েছে। মিড ডে মিল প্রকল্পের দুর্নীতির ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। পাশাপাশি নারী শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলে আলাদা শৌচাগারের ব্যবস্থা করা, পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা করার বিষয়গুলি নিয়েও আন্দোলন গড়ে তুলেছে। স্কুলে গ্রন্থাগার তৈরি করা, পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের মতো বিষয়গুলি নিয়েও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। স্কুলের ফি বৃদ্ধির নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের মতো বিষয়গুলি নিয়ে বাল মিত্র গ্রামের শিশুরা রীতিমতো আন্দোলনে সামিল হয়েছে।
বাল মিত্র গ্রাম সর্বপ্রথম শিশুদের সঙ্গে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পরিচয় ঘটিয়ে দিয়েছে। গোড়ায় পরীক্ষানিরীক্ষা স্তরে থাকলেও ক্রমশ বোঝা গিয়েছে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে শিশুদের অন্তর্গত করে নিলে তারা নিজেদের উন্নয়নের ব্যাপারে নিজেরাই সচেতন হয়ে উঠতে পারবে। এ পর্যন্ত ৩১৭টি গ্রামকে বাল মিত্র গ্রাম পর্যায়ভুক্ত করা হয়েছে। এই গ্রামগুলি ইতিমধ্যেই শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। আরও আশিটি গ্রামকে এই পর্যায়ে উন্নীত করার প্রক্রিয়া চলছে।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/15/2020