"রেখা কালিন্দী"। আজ থেকে ছ’ বছর আগেই পুরুলিয়ার এই মেয়ের নাম জেনেছিল সারা দেশের মানুষ। তরুণী থেকে কিশোরী, সবাই উজ্জীবিত হয়েছিল রেখা কালিন্দীর সাহস ও সংগ্রামের কথা শুনে। এত দিন পর আবার সারা পৃথিবীর কচিকাঁচারা জানবে তার কথা। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে এ বার আন্তর্জাতিক স্তরেও উঠে আসছে পুরুলিয়ার ঝালদার বড়রোলা গ্রামের এই সাহসিনীর নাম। আগামী নভেম্বর মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জের শিশু অধিকার সংক্রান্ত ঘোষণাপত্রের (ডিক্লারেশন অফ দ্য রাইট্স অফ দ্য চাইল্ড) ২৫ তম বার্ষিকী উপলক্ষে আমস্টারডামে প্রকাশিত হতে চলেছে একটি বই। এই বইয়ে পাকিস্তানের কন্যা মালালা ইউসুফজাইয়ের জীবনীর পাশাপাশি সঙ্গে স্থান পাচ্ছে ভারতের এক প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে রেখার জীবনকথাও। ‘চিলড্রেন হু চেঞ্জড দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামে এই বইটি লিখেছেন নেদারল্যাণ্ডের ‘হানডেলসব্লাড’ সংবাদপত্রের সাংবাদিক আলেটা আন্দ্রে। সারা বিশ্বের ২০ জন সাহসী শিশু ও কিশোর-কিশোরীর অসামান্য সাহসিকতার উপাখ্যান নিয়ে রচিত হয়েছে ‘চিলড্রেন হু চেঞ্জড দ্য ওয়ার্ল্ড’ বইটি। বইয়ের প্রথমেই স্থান পেয়েছে মালালা ইউসুফজাইয়ের কথা। ভারত থেকে একমাত্র রয়েছে রেখা কালিন্দী। ২০০৮ সালে পুরুলিয়ার ঝালদা-২ নং ব্লকের বড়রোলা গ্রামের বিড়ি শ্রমিক বারো বছরের বালিকা রেখা পরিবারের সবার বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। তার বিয়ের দিন ঠিক হয়ে যাওয়ায় রেখাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসাতে আত্মীয়স্বজনরাও ঝাঁপিয়ে পড়ে। তবু একরত্তি মেয়ে রেখা দমে যায়নি। গ্রামের কয়েক জন শিক্ষকের সহায়তায় সে যোগাযোগ করে শ্রম দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে। রেখা জানিয়ে দেয় লেখা পড়া করে স্বাবলম্বী হবে সে। মালালার সঙ্গে একই বইয়ে স্থান পাওয়ায় আরও উদ্বুদ্ধ এই কিশোরী। রেখা বলে, তার জীবনের কথা শুনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মেয়েরা নিজেরাই যদি বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তবে সেটাই হবে তার সব থেকে বড় পাওনা। নিজের দেশ তার স্মরণাতীত সাহসিকতার জন্য আগেই দিয়েছিল স্বীকৃতি। ২০১০ সালেই রেখা জাতীয় সাহসিকতার পুরস্কার পায় তত্কালীন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা দেবী সিং পাটিলের হাত থেকে। এর পর এল আন্তর্জাতিক স্তর থেকেও বড় সম্মান। আজ সেই অবাধ্য মেয়ের জন্যই পরম গর্বিত রেখার বাবা কর্ণ কালিন্দী। রেখা এখন দশম শ্রেণীর ছাত্রী। কর্ণবাবু চান, মেয়ে পড়াশোনা করুক যত দিন সে চায়। আর কোনও নাবালিকার যেন বাল্যবিবাহ না হয়।
চলুন দেখেনি রেখা কি বলছে
সূত্র : দূরদর্শন
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/9/2022