শিক্ষকদের আত্মসমালোচনাগুলি থেকে জানা যায় যে শিক্ষকদের কর্তব্যের ত্রুটি মূলত আনন্দদায়ক পাঠদানে যথাযথ ভূমিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে আন্তরিক ভাবে অংশ গ্রহণ করার প্রশ্নে, বিদ্যালয়ে থাকাকালীন পঠনপাঠনে সঠিক মনোযোগ দেওয়ার বিষয়ে এবং ঠিক ঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়াকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। জলপাইগুড়ি জেলার শিক্ষক তুষার সরকার লিখেছেন, ‘গতানুগতিক পদ্ধতিতে পাঠদানের অভ্যাস এখনও আমরা সকলে ত্যাগ করেত পারিনি। আকর্ষণীয়, আনন্দদায়ক পাঠদান করে প্রাণবন্ত শ্রেণিকক্ষ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মানসিকতার ঘাটতি বর্তমান।’ শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিগুলিতে শিক্ষকদের অংশগ্রহণে আন্তরিকতার অভাবের কথা বলতে গিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার এক শিক্ষক লিখেছেন, ‘শিক্ষক শিক্ষিকারাও দেরিতে এসে টিফিন বা মিল খেয়ে কত তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে পারেন এ বিষয়ে আগ্রহী।’ এই জেলারই আর এক জনের কলমে উঠে আসে, ‘আমাদের শিক্ষক/শিক্ষিকাদের মধ্যেও (সকলের নয়) রয়েছে ক্লাস বিমুখতা। অনেক শিক্ষক/শিক্ষিকা শ্রেণিকক্ষের বদলে অফিসঘরে সময় কাটানোতেই বেশি আগ্রহী।’ শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে সঠিক সময়ে উপস্থিত না হওয়ার বিষয়ে মালদা জেলার এক শিক্ষক লিখেছেন :
‘বিদ্যালয়ে যোগদানের পরের দিন অর্থাৎ ১৭ ফেব্রুয়ারি বেলা ঠিক ১০.৪৫ মিনিটে বিদ্যালয়ে পৌঁছে দেখি শিশুরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে যে যার ইচ্ছামতো দৌড়াদৌড়ি কিংবা খেলাধূলা চিৎকার করছে। তখনও বিদ্যালয়ের অফিসঘর/শিক্ষকদের বসার ঘর কিম্বা কোনও শ্রেণিকক্ষের তালা খোলা হয়নি। ... ঠিক ১১টার সময় ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা মহাশয়া এসে বলেন, তুমি চলে এসেছো ! এ রূপ মন্তব্যে আমি স্বাভাবিবক ভাবেই বিচলিত হই।’
কোনও কোনও শিক্ষক, শিক্ষকশিক্ষিকাদের কর্তব্যের এই গাফিলতির সাথে উচ্চশিক্ষার এক ধরনের সম্পর্ক খুজেঁ পেয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী, যে সমস্ত শিক্ষক তুলনামূলক ভাবে বেশি শিক্ষিত তাঁদের এই পেশার প্রতি মনোযোগ কম থাকছে। তাঁরা আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে এই পেশায় আসছেন বটে কিন্তু তাঁদের মন এই পেশায় থাকছে না। কোনও কোনও শিক্ষক সমস্যাটি গ্রামে শিক্ষকতা করে আসা শহরের শিক্ষকের মধ্যে দেখতে পেয়েছেন।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/16/2019